কেবিন ক্রূ পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি উদযাপন করা হয় কেবিন ক্রুদের সম্মানে। বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান এয়ারলাইন্সে দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেয়া হয়েছে বিশেষ কর্মসূচী। তবে করোনা মহামারীর দরুন এবারের কর্মসূচীতে ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কেবিন ক্রুর পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত। সুশিক্ষিত ও আলট্্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু এ্যাসোসিয়েনের সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বলেছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর ঝুঁকিতে শীর্ষে থাকা কেবিন ক্রুদের জীবন বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। একেকটি ল্যান্ডিং যেন একেকটি নিউলাইফ। এবারও বাংলাদেশে করোনা মহামারীর মাঝে সীমিত আকারে পালন করা হচ্ছে দিবসটি।
এ উপলক্ষে আজ কেবিন ক্রু এ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে অনলাইনে প্রতিটি সদস্যকে শুভ্চ্ছো বিনিময় করা হবে। দিবসটি তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।
শুধু বাংলাদেশ নয়- বিশ্বব্যাপীই কেবিন ক্রু পেশাকে দেখা হয় বিশেষ মর্যাদাকর ও চ্যালেঞ্জিং হিসেবে। পেশাটি অনেক রোমাঞ্চকর ও জৌলুসপূর্ণ মনে হলেও এর অন্তরালে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ ও কঠিন বাস্তবতা। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে চল্লিশ হাজার ফুট ওপরে ভাসমান শত শত যাত্রীর দীর্ঘ আকাশ ভ্রমণের ঘরের সেবা নিশ্চিত করার প্রধান দায় দায়িত্ব যাদের ওপর নির্ভর করে- তাদের জীবন কতটা বৈচিত্র্যময় সে কৌতূহল চিরকালের। যাত্রী সাধারণের ইচ্ছামতো সেবাই যাদের ব্রত তাদের সুখদুঃখের জীবনও সাধারণ মানুষের মতোই। তাদের রয়েছে সাধারণ মানুষের মতোই জীবনাচারণ। আকাশ পথে যে পেশার মানুষ যাত্রীদের জীবন নিরাপত্তার জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে রাতদিন সেবা দিয়ে যান- তারা হলেন কেবিন ক্রু। অনেক শ্রম-ঘাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা চড়াই-উৎরাই পার করেই এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং ও সম্ভাবনাময় পেশায় ক্যারিয়ার হিসেবে একজন কেবিন ক্রু পা বাড়ায়। বিমানে বহনকারী যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দেয়াই কেবিন ক্রুর মূল কাজ। এ পেশায় যোগদান করতে উপস্থিত বৃদ্ধি, ধৈর্য ও সহনশীলতা যে কোন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা, বিরক্তিকর মুহূর্তেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার ক্ষমতা থাকতে হয়। সুরক্ষা পেশাদার হিসেবে যে কোন বিপদ দেখা দিলে তারা সর্বদা কাজ করতে প্রস্তুত। জরুরী চিকিৎসা সেবা ও অক্সিজেন প্রদান, আগুন নিয়ন্ত্রণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পরিচালনা, জরুরী অবস্থায় যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে অপসারণ, সহিংসা যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ, বোমা নিষ্পতি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ রোধ, সন্দেহভাজন যাত্রীদের আচরণ পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য অসংখ্য প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় একজন কেবিন ক্রুকে।
বর্তমানে বেশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়েও কেবিন ক্রুগণ বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতপূর্বক সম্মুখসারীর যোদ্ধা হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসিমুখে যাত্রী সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। নিজ ও পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন রাত ভূ-পৃষ্ঠ হতে ৩৯,০০০ ফুট উচ্চতায় যাত্রীদের সেবা ও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করছেন যেন যাত্রীরা তাদের পরিবারের সঙ্গে এই দুর্যোগ মুহূর্তে পুনরায় মিলিত হতে পারে। তাছাড়া যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিভন্ন দেশ থেকে যাত্রীদের পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন দেশে জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময়েও তারা ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকেন। তাছাড়াও রাষ্ট্রের ও বিভিন্ন দেশের ভিভিআইপি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন মিশনে ফ্লাইটও পরিচালনা করতে হয় প্রায়শই।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার সাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত, অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরী অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে অপসারণ সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত। উন্নত যাত্রীসেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আকাশে শান্তির নীড় প্রতিষ্ঠিত হোক কেবিন ক্রুর হাত ধরেই এবং সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে হাসিমুখে যাত্রীসেবা প্রদান করে যাক আগামীতে।