সংগ্রামী এক মায়ের গল্প শুনিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিলভিয়া আফরীন।
মায়ের সঙ্গে লেখক
আমার বাবা ছিলেন একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। বাবা যখন বেঁচে ছিলেন, আত্মীয়স্বজনেরা অনেকে আমাদের বাসায় থেকে পড়ালেখা করত। অথচ আকস্মিকভাবে বাবা মারা যাওয়ার পর কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। একা সংসারের হাল ধরেছেন আমার মা নাসরিন আহমেদ।
আত্মীয়স্বজন অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে বলেছিল। বলেছিল, ‘কীভাবে সংসার চালাবে? ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ দেবে কীভাবে?’ কিন্তু মা চ্যালেঞ্জটা নিতে চেয়েছিলেন। সে সময় পাশের বাসার এক খালার সহায়তায় মা ছোট্ট এক রুমের একটা বাসা ভাড়া নেন। সেই খালাই রামপুরায় একটা পোশাকের দোকানে মায়ের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। মা সেখানে হাতের কাজ করতেন।
আমাদের বাসা ছিল কল্যাণপুরে। সেখান থেকে মা শেওড়াপাড়া পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে রামপুরার বাস ধরতেন। এমন অনেক দিন গেছে, মাকে কর্মস্থলে হেঁটেই যেতে হয়েছে। আবার বাড়ি ফিরেও অনেক রাত জেগে তিনি কাজ করতেন। আমাদের ছোট বারান্দায় বসে, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয়।
একবার আমার স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেল, সামনে ছিল ঈদ। মায়ের কাছে নতুন স্যান্ডেলের আবদার করেছিলাম। মা রাজি হয়েছিলেন। সে জন্য তাঁকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়েছিল। ঈদের দুই দিন আগে তাঁর হাতে কিছু টাকা আসে। আমাকে দোকানে নিয়ে গিয়ে খুব সুন্দর এক জোড়া গোলাপি রঙের জুতা কিনে দিয়েছিলেন সেবার। সেই স্মৃতি এখনো মনে পড়ে।
সংসারে অভাব অনটনের জন্য এমন অনেক দিন গেছে, আমার মা হয়তো না খেয়ে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন। সে সময় আমরা ছোট ছিলাম, এত কিছু বুঝতাম না। জানতে চাইলে মা বলতেন, 'আমার খিদে নেই' বা ‘খেতে ইচ্ছে করছে না’।
এই অচেনা শহরে মাকে সবকিছুই নতুন করে চিনে নিতে হয়েছিল। প্রথম দিকে তো তেমন কিছুই চিনতেন না। একদিন কর্মস্থলে যাওয়ার পর মা ফেরার পথে হারিয়ে গিয়েছিলেন। সারা দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে রাত প্রায় বারোটার পর বাসায় ফিরেছিলেন।
একটা বিষণ্ন স্মৃতি এখনো আমার মনে পড়লে খুব কষ্ট হয়। একদিন কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় মা পা ফসকে পড়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার প্লাস্টার করে দিলেন, বলেছিলেন মাকে বিশ্রাম নিতে। কিন্তু আমাদের তো মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। জীবিকার তাগিদে এক সপ্তাহের মধ্যেই মাকে বেরোতে হয়েছে। মায়ের পায়ের ব্যথা এখনো আছে। সেই সঙ্গে আমাদের কষ্টগুলোও।
মাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকেই টিউশনি করে মাকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করে বৃত্তি পেয়েছিলাম। সেই বৃত্তির প্রথম টাকায় মাকে একটা ব্লেন্ডার কিনে দিয়েছি। পরের বৃত্তির টাকা পেলে তাঁর জন্য একটা মোবাইল কিনব। আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় মায়ের একটা ছোট স্ট্রোক হয়েছিল। সে সময় তাঁর বাঁ হাত অবশ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না।
আমরা দুই ভাইবোন পড়ালেখা শিখছি। চেষ্টা করছি মায়ের স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি। মা অনেক কষ্টে আমাদের মানুষ করেছেন। সংসারে একেকটা দিন কাটানো নিয়ে প্রতিদিন তাঁকে টেনশন করতে হয়েছে। আমি মায়ের সব টেনশন, দুশ্চিন্তা দূর করে দিতে চাই।
মায়ের সঙ্গে লেখক
আমার বাবা ছিলেন একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। বাবা যখন বেঁচে ছিলেন, আত্মীয়স্বজনেরা অনেকে আমাদের বাসায় থেকে পড়ালেখা করত। অথচ আকস্মিকভাবে বাবা মারা যাওয়ার পর কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। একা সংসারের হাল ধরেছেন আমার মা নাসরিন আহমেদ।
আত্মীয়স্বজন অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে বলেছিল। বলেছিল, ‘কীভাবে সংসার চালাবে? ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ দেবে কীভাবে?’ কিন্তু মা চ্যালেঞ্জটা নিতে চেয়েছিলেন। সে সময় পাশের বাসার এক খালার সহায়তায় মা ছোট্ট এক রুমের একটা বাসা ভাড়া নেন। সেই খালাই রামপুরায় একটা পোশাকের দোকানে মায়ের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। মা সেখানে হাতের কাজ করতেন।
আমাদের বাসা ছিল কল্যাণপুরে। সেখান থেকে মা শেওড়াপাড়া পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে রামপুরার বাস ধরতেন। এমন অনেক দিন গেছে, মাকে কর্মস্থলে হেঁটেই যেতে হয়েছে। আবার বাড়ি ফিরেও অনেক রাত জেগে তিনি কাজ করতেন। আমাদের ছোট বারান্দায় বসে, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয়।
একবার আমার স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেল, সামনে ছিল ঈদ। মায়ের কাছে নতুন স্যান্ডেলের আবদার করেছিলাম। মা রাজি হয়েছিলেন। সে জন্য তাঁকে অনেক বেশি কাজ করতে হয়েছিল। ঈদের দুই দিন আগে তাঁর হাতে কিছু টাকা আসে। আমাকে দোকানে নিয়ে গিয়ে খুব সুন্দর এক জোড়া গোলাপি রঙের জুতা কিনে দিয়েছিলেন সেবার। সেই স্মৃতি এখনো মনে পড়ে।
সংসারে অভাব অনটনের জন্য এমন অনেক দিন গেছে, আমার মা হয়তো না খেয়ে রাত কাটিয়ে দিয়েছেন। সে সময় আমরা ছোট ছিলাম, এত কিছু বুঝতাম না। জানতে চাইলে মা বলতেন, 'আমার খিদে নেই' বা ‘খেতে ইচ্ছে করছে না’।
এই অচেনা শহরে মাকে সবকিছুই নতুন করে চিনে নিতে হয়েছিল। প্রথম দিকে তো তেমন কিছুই চিনতেন না। একদিন কর্মস্থলে যাওয়ার পর মা ফেরার পথে হারিয়ে গিয়েছিলেন। সারা দিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে রাত প্রায় বারোটার পর বাসায় ফিরেছিলেন।
একটা বিষণ্ন স্মৃতি এখনো আমার মনে পড়লে খুব কষ্ট হয়। একদিন কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় মা পা ফসকে পড়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার প্লাস্টার করে দিলেন, বলেছিলেন মাকে বিশ্রাম নিতে। কিন্তু আমাদের তো মা ছাড়া আর কেউ ছিল না। জীবিকার তাগিদে এক সপ্তাহের মধ্যেই মাকে বেরোতে হয়েছে। মায়ের পায়ের ব্যথা এখনো আছে। সেই সঙ্গে আমাদের কষ্টগুলোও।
মাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকেই টিউশনি করে মাকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করে বৃত্তি পেয়েছিলাম। সেই বৃত্তির প্রথম টাকায় মাকে একটা ব্লেন্ডার কিনে দিয়েছি। পরের বৃত্তির টাকা পেলে তাঁর জন্য একটা মোবাইল কিনব। আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় মায়ের একটা ছোট স্ট্রোক হয়েছিল। সে সময় তাঁর বাঁ হাত অবশ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না।
আমরা দুই ভাইবোন পড়ালেখা শিখছি। চেষ্টা করছি মায়ের স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি। মা অনেক কষ্টে আমাদের মানুষ করেছেন। সংসারে একেকটা দিন কাটানো নিয়ে প্রতিদিন তাঁকে টেনশন করতে হয়েছে। আমি মায়ের সব টেনশন, দুশ্চিন্তা দূর করে দিতে চাই।