What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

রমজানে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে যা যা করবেন না (1 Viewer)

Nirjonmela

Administrator
Staff member
Administrator
Joined
Mar 1, 2018
Threads
2,762
Messages
23,248
Credits
825,298
Pistol
Crown
Thread Title Style (One)
Profile Music
blC5Tgb.jpg


রমজান মাসে আমাদের দৈনন্দিন রুটিন অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। খাবারের, ঘুমের ও ব্যায়ামের সময় অনেক পরিবর্তিত হয়। রোজা রাখলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া কমে যায়, শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়ে চর্বি ভাঙ্গতে থাকে। ফলে, রোজায় একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ্য মানুসের স্বাস্থ্য ঠিক রেখে সারা মাস কিভাবে রোজা রাখা ও পরবর্তিতে ফিটনেস ধরে রাখা যাবে, তা বিশেষ ভাবে নজর দেয়া উচিত। রোজায় কি ভাবে খাবার খাওয়া ও অন্য কাজগুলো করা উচিত, অর্থাৎ রোজায় লাইফস্টাইল কেমন হওয়া উচিত আমাদের সে ব্যাপারে মনোযোগ দেয়া উচিত।

অনেকেই রোজায় ইফতার বা সেহরির সময়ে অতিরিক্ত খাবার খান, যার প্রয়োজন নেই । তাই আমরা রমজান মাসে যে সব ভুল করি, তা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।

ভুল গুলো ও তার প্রতিকার:

১. ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া:অনেকে মনে করেন ইফতারে ভাজা পোড়া না থাকলে ইফতারই হবে না। কিন্তু একটু চিন্তা করেন তো ভাজা পোড়া একবারে এতো বেশি খেলে কি হবে? সারাদিন রোজা রেখে আমাদের পাকস্হলি খুব ক্ষুধার্ত ও দুর্বল থাকে। তারপর যদি এত রকম গুরুপাক খাবার একসাথে খাওয়া হয় তাহলে কি অবস্থা হবে? অনেক সময় ধরে না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের এনজাইম, যা হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হয়,তা বন্ধ থাকে। তাছাড়া পাকস্থলীর ভিতরের মিউকাস আবরণও সংকুচিত অবস্থায় থাকে, ফলে যদি কোনো ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত, গরম, গুরুপাক খাবার হঠাত করে পেটে পড়ে, তবে পেটে জ্বালা পোড়া করতে পারে। পেটের সমস্যা,মাথাব্যাথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, অবসাদ, ulcers, acidity, হজমের সমস্যা, ইত্যাদি হবে রোযার নিত্য সঙ্গী। তাছাড়া এই খাবারগুলোর ক্যালোরিমান অনেক। ফলে ওজন বাড়তে বাধ্য। জেনে নিন ইফতারের খাবার গুলোর ক্যালরির মান।

সঠিক নিয়ম: ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে সহজপাচ্য খাবার, যেমন: চিড়া-দই, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, নুডুলস, নরম খিচুড়ি ইত্যাদি খেতে পারেন, সাথে সবজি, ফল, সালাদ, মাছ বা মাংশ বা ডাল বা ডিম থাকবে।

২.চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় খাওয়া: চিনি যুক্ত খাদ্য ও পানীয় আমাদের শরীরে দরকার নেই, চিনি যুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। কারণ এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির(ইনসুলিন) মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে সাময়িকভাবে ব্রেইনে শক্তি জোগালেও একটু পরেই তা স্তিমিত হয়ে যায় এবং শক্তিহীন মনে হয়। তাছাড়া চিনি একটি পরিশোধিত শর্করা, যা শরীরের বিভিন সমস্যা সৃষ্টি করে, যেমন:ওজন বাড়ায়। অনেক খাবার, যেমন: মিষ্টি, ফালুদা জিলাপি,কেক, বিস্কিট,কর্নফ্লেক্স ইত্যাদি রোজায় খাওয়া হয়, কিন্তু এগুলো প্রচন্ড চিনিযুক্ত ও ক্যালোরীবহুল। এগুলো রোজায় প্রতিদিন খাবেন না।

রোজায় অনেকে চিনিযুক্ত কোমল পানীয় পান করেন, যা ঘুমের সমস্যা,acidity, ulsers, ওজন বাড়া, ইত্যাদির কারণ।

সঠিক নিয়ম: চিনি মুক্ত খাবার ও পানীয় খান, যেমন: ফলের শরবত, ফল ইত্যাদি। কোমল পানীয় না পান করে,ইফতার থেকে সেহেরী পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন। ডাবের পানি পান করতে পারেন ।

৩.জটিল শর্করা না খাওয়া: শর্করা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়, তাই অনেকে রোজায় বেশি বেশি শর্করা খান, যেমন: ভাত বেশি করে খান। আমাদের দেশে সাধারনত: সাদা ভাত বা সাদা আটা খাওয়া হয়। যা শরীরে ইনসুলিন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে একটু পরেই খেতে ইচ্ছা করে, তাছাড়া এগুলো হজম হতে সময় কম লাগে, ফলে ক্ষুধা তাড়াতাড়ি লাগে।

সঠিক নিয়ম: সাদা শর্করা বাদ দিয়ে লাল শর্করা: যেমন: লাল আটা, লাল চাল, এগুলো খান। এগুলোতে low-glycaemic index থাকে,তাইহজম হয় আস্তে আস্তে, এবং অনেক সময় পরে ক্ষুধা লাগে| রক্তে চিনির পরিমান তাড়াতাড়ি বাড়ে না ।

৪. গুরুপাক খাবার খাওয়া: অনেকে ভাবেন ভাজাপোড়া খাবার খাবেন না, কিন্তু পরিবর্তে অন্য গুরুপাক খাবার, যেমন: বিরিয়ানি, তেহারি, হালিম, ছোলা ভুনা, জাঙ্কফুড ইত্যাদি খান।

সঠিক নিয়ম:ফাইবার সম্দৃধ্য ও সহজপাচ্য খাবার, যেমন: লাল আটা, বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, দুধ, মিষ্টি আলু, ডাল, ফল, সবজি, সালাদ ইত্যাদি খেতে হবে কম তেলে রান্না করে। প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে অন্তত এক বেলা মাছ খেতে চেষ্টা করুন। খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর ও সব গ্রুপের খাবার থাকতে হবে, যেমন: আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেলস, ফাইবার ইত্যাদি খেতে হবে নিয়ম মত|সুষম খাবার(balance diet)খেতে হবে। অতিরিক্ত ঝাল মশলা যুক্ত, ভুনা ও লবনাক্ত খাবার বাদ দিন। হজম হতে সময় নেয় যে সব খাবার: যেমন:লাল আটা, লাল চাল, ডাল,বিনস,বাদাম, দুধ, চর্বিবিহীন মাংশ ইত্যাদি এগুলো খান।

My Plate অথবা আমার প্লেইট – প্রতি বেলার প্রধান খাবার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন|

সারাদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন রকম পুষ্টিকর খাবার রাখুন সম্পর্কে জানুন।

৫.একবারে অনেক খাবার খাওয়া বা ক্যালোরি মেপে খাবার না খাওয়া : সারাদিন রোজা রেখে সবাই আমরা ইফতারের সময়ের অপেক্ষায় থাকি। ভাবি ইফতারের সময়ে পাগলের মতো খাব। এই পাগলের মতো বা বেশি মাত্রায় খাওয়ার ফলে, রোজার যে আসল উদ্দেশ্য–সংযম, সেই সংযম কিন্তু এতে নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে নষ্ট হয় আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া। তাছাড়া একসাথে এতরকমের ও এত বেশি খাবার খাওয়ার ফলে, ওজনও বেড়ে যায়। পেটের সমস্যা,গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদিও হতে পারে।

আবার অনেকে সেহেরিতেও অনেক বেশি খান,মনে করেন, বেশি খেলে পরে ক্ষুধা লাগবে না, এটি ভুল ধারণা। একবারে বেশি খেলে ওজন বাড়বেই ।
সঠিক নিয়ম: অন্য সময়ের মতই রমজানে বারে বারে অল্প করে পরিমিত পরিমানে খান।যেমন: ইফতার অল্প করুন, একটু পরে অল্প রাতের খাবার খান,সেহেরীতেও পরিমিত খান। ইফতার, রাতের খাবার ও সেহেরী এই তিন বেলাই খাবার খাবেন। কোনো বেলা খাবার খাওয়া বাদ দিবেন না। তাহলে দুর্বল হয়ে যেতে পারেন। রোজার মাসেও স্বাভাবিক সময়ের মতো ক্যালরি মেপে, পরিমিত পরিমানে খেতে হবে। যার যার শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী স্বাভাবিক নিয়মে ক্যালোরির চাহিদা অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।

রমজানে রোজা ভাঙ্গার স্বাস্থ্যসম্মত উপায় জানুন।

খাদ্যের ক্যালরি এবং আমাদের শরীরে প্রভাব সম্পর্কে জানুন।

৬. সেহেরী না খাওয়া: সেহেরিতে একেবারেই না খাওয়া ঠিক নয়, প্রথমত, সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সেহেরী না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। অনেকে মনে করেন, একবেলা, ইফতারে খেলে ওজন কমবে। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হবে, শরীর দুর্বলতো হবেই, ওজন কমবে না, বরং বাড়বে। তাছাড়া সেহেরী না খেলে বিপকক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে শরীরের সঞ্চিত শক্তি ক্ষয় হয়, ফলে দেহে ক্লান্তি আসে ও রোজা রাখতে অনেক কষ্ট হয়।

সঠিক নিয়ম: কষ্ট হলেও সেহেরি খান। একটু পানি, ফল বা দুধ হলেও খান।

নমুনা ইফতার এবং সেহেরি কেমন হবে, তা জানতে ক্লিক করুন।

৭. ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় বা খাদ্য খাওয়া:রোজায় চা, কফির মাত্রা কম হতে হবে। তা না হলে পানিশুন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুমের সমস্যা হতে পারে। কারণ, ক্যাফেইন হলো diuretic, যা শরীর থেকে পানি বের করে দেয়।

সঠিক নিয়ম: চা বা ক্যাফেইন খেতেই হলে, হালকা ক্যাফেইনযুক্ত খান, যেমন:গ্রিন টি। সেহেরিতে ক্যাফেইন খাবেন না, সারাদিন তাহলে পানি পিপাসা লাগবে। শরীরে পানিশুন্যতা হবে।

৮.রোজা রেখে ব্যায়াম করা : অনেকে রোজা রেখে ব্যায়াম করেন, এটি খুবই খারাপ অভ্যাস। কারণ ব্যায়ামের আগে, পরে আমাদের শরীরে পুষ্টিকর খাবার দরকার। রোজা রেখে ব্যায়াম করলে শরীর তা পাবে না। তাছাড়া ব্যায়ামের সময় শরীরে যে পানি দরকার, তাও পাবে না। ফলে হিতে বিপরীত হবে–শরীর দুর্বল হয়ে যাবে, মেটাবলিজম কমে যাবে ও মাসেল নষ্ট হয়ে, শেপ নষ্ট হয়ে যাবে।
সঠিক নিয়ম: ইফতারের কিছু সময় পরে অল্প সময় ধরে, হালকা ব্যায়াম করুন। অতিরিক্ত সময় ধরে বা খুব ভারী ব্যায়াম করবেন না। কারণ একে তো সারাদিন না খেয়ে শরীর দুর্বল, আবার বেশি ভারী ব্যায়াম করলে রাতে ঘুম আসবে না।

রোজার ব্যায়াম কেমন হবে, তা জানতে ক্লিক করুন।

৯.রমজানে অনেক পরিশ্রম করা ও দৈনন্দিন রুটিন অন্য সময়ের মতো রাখা : অনেকে মনে করেন রোজা রেখেও সারাদিন অনেক কাজ করবেন। রমজানে অফিস টাইম কিন্তু কমিয়ে দেয়া হয় এ জন্যে যে, দুপুরের পরে ব্রেইন এর কাজ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

সঠিক নিয়ম: কষ্টকর কাজগুলো সকালে করে ফেলুন, যখন ব্রেইন ঠান্ডা থাকে। দুপুরের পরে শরীর ও ব্রেইন নিস্তেজ হয়ে পড়ার আগেই।

১০.রোজা রাখাকে ওজন কমানোর উপায় মনে করা: অনেকে মনে করেন রোজা রেখে ডায়েট করবেন ও ওজন কমাবেন। এটি ভুল, কারণ রোজা রেখে আপনি আল্লাহর ইবাদত করছেন, আল্লাহ রোজার মাস দিয়েছেন বেশি বেশি ইবাদাত বন্দেগী করতে, আত্মশুদ্ধি করতে। রোজা রাখলে এমনিতেই শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায় ও রোজার অনেক শারীরিক উপকারিতাও আছে। তাছাড়া রোজা রাখলে কিছু ক্যালোরি খরচও হয়। তাই রোজার মাসকে ডায়েটিং এর মাস না মনে করে আল্লাহতালা আখিরাতকে লাভ করার যে অপূর্ব সুযোগ দিয়েছেন, তা আমাদের গ্রহণ করা উচি।

সঠিক নিয়ম: ডায়েটিং এর দিকে নজর না দিয়ে পরিমিত,পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খেয়ে ইবাদাত বন্দেগিতে মনোযোগ দিন। রোজায় আপনার ওজন কমানো বা বাড়ানোর দিকে নজর না দিয়ে ফিটনেস ধরে রেখে সারা মাস রোজা রাখা ও রোজার পরে শরীর সুস্থ্য রাখার দিকে নজর দিন।
রোজার খাওয়া দাওয়া, নমুনা ইফতার এবং সেহেরি,রমজানে রোজা ভাঙ্গার স্বাস্থ্যসম্মত উপায় -এই পোস্টগুলোও রোজায় আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।

মনে রাখবেন, রোজায় সুস্থ্য থাকতে পরিমিত খাওয়া, স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, কর্মচঞ্চল থাকা, আর নিয়মিত সঠিক ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া দরকার| রোজার মাস হতে পারে আমাদের সংযমী হয়ে খাওয়া ও ইবাদত বন্দেগির মাস|

অনেকে হয়তো ভাববেন বাসার সবাই যেমন, তেমন ভাবে চলতেই হবে, যেমন:ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া, কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই আমরা অভ্যাস বদলাতে পারি এবং পরিবারের সবাইকে সঠিকভাবে চলার উত্সাহ দিয়ে সবার উপকার করতে পারি| আবার আমরা রোজায় যেনো খাবারের আয়োজনে উন্মত্ত হয়ে যাই|কিন্তু এটি খুব ভুল অভ্যাস|খাবার নিয়ে অর্থ ও সময়ের অপচয় না করে ইবাদত বন্দেগিতে মন দেয়া উচিত ও রমজানের সংযম শিক্ষা করে, নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত|তবেই আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারবো এবং নিজের যত্ন নিয়ে, নিজের ও পরিবারের সবার দিকে লক্ষ্য রাখতে পারবো|মনে রাখবেন–অভ্যাস মানুষের দাশ, মানুষ অভ্যাসের দাশ না|তাছাড়া রোজায় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কিন্তু ইসলামের শিক্ষা নাে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top