What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ছিন্নমূল /কামদেব (1 Viewer)

kamdev

Exclusive Writer
Story Writer
Joined
Feb 5, 2020
Threads
9
Messages
424
Credits
73,711
0


গ্রামের নাম মাহিদিয়া পুর। হিন্দু মুসলিম অধ্যুষিত আমাদের গ্রাম ।আম কাঠাল জাম জামরুলে ঘেরা গ্রাম।কাছেই দীঘি তিনদিকে জঙ্গল একদিকে বাধানো সিড়ি।সিড়িতে বসে গ্রামের বউ-ঝিরা আছড়ে কাপড় কাচতো।হাসের দল ভেসে বেড়াতো।আমরা অল্প বয়সী ছেলেরা হুটোপুটি করে স্নান করতাম।রাসু ইয়াকুব স্বপন জমিল আমরা এক বয়সী।সন্ধ্যেবেলা চাদনী আলোয় ভরে যেতো উঠোন।তালগাছ হতে ঝুলতো বাবুইপাখীর বাসা। আমার বাবা বরদারঞ্জন বোস কলেজে অধ্যাপনা করে ছাত্র-ছাত্রী মহলে বিআরবি নামে পরিচিত।শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকায় সকলেই সম্মানের চোখে দেখতো। মোশারফ হোসেন গ্রামের মাতব্বর প্রায়ই আসতেন আমাদের বাড়ীতে।বাবাকে বলতেন মাস্টার।ওর বোন নাদিয়া আমার মায়ের শৈশবের খেলার সাথী।একসঙ্গে সারা গ্রাম ঘুরে বৈচি ফল সংগ্রহ করতো।দুজনে সেজন্য বৈচিমিতা পাতিয়েছিল।এখন বিয়ে হয়ে অন্যত্র চলে গেছে।আমাকে খুব ভালোবাসতেন, তেল মাখিয়ে স্নান করিয়ে দি্তেন।এসব আমার মনে নেই,সব মায়ের কাছে শোনা।আমার মায়ের রান্নার সকলে প্রশংসা করতো।মোশারফ সাহেবও মায়ের হাতের রান্না খেয়ে মজা পেয়েছে।
শান্তশিষ্ট গ্রাম একদিন চঞ্চল হয়ে উঠল। মোশারফ সাহেব প্রথম-প্রথম বাবাকে ভরসা দিত,মাস্টার চিন্তা কোরনা,আমরা তো আছি।তারপর তিনিও আর আসেন না। সন্ধ্যা হলেই খান সেনাদের ভারী বুটের শব্দ।সেই সঙ্গে রাজাকার বাহিনী তো আছেই।ওদের ভয়ে বৌ-ঝিরা বনে বাদাড়ে লুকিয়ে থাকে।এর মধ্যে একটা খারাপ খবর এল।
আমি ছোটো বলে এড়িয়ে চললেও জানতে পারি মায়ের বৈচিমিতা দুপুরবেলা মাঠ সারতে গেছিল।সেই সময় ঝোপের পাশ দিয়ে কয়েকজন সেনা যেতে যেতে বৈচিমাসীর অস্তিত্ব টের পায়।শৌচ করার সুযোগটুকু না দিয়ে জানোয়ার গুলো খোলা আকশের নীচে বৈচিমাসীর উপর তাদের লালসা ঢেলে দিল।জঙ্গলের মধ্যে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ধরাধরি করে কয়েকজন বাড়ী পৌছে দিলেও তার বীর পুঙ্গব স্বামী সেদিনই বাপের বাড়ী পাঠিয়ে দিল।বৈচিমিতার খবর পেয়ে মা কাদতে কাদতে ছূটলো মোশারফ সাহেবের বাড়ী।তখন আমার বয়স দশ-বারো হলেও ধীরে ধীরে বুঝতে শিখলাম নারী-পুরুষের চোদাচুদি ব্যাপারটা,তার আগে জানতাম না কিভাবে বংশ বিস্তার হয়। মেহেতাব হোসেন হিন্দুস্থানে থাকেন মোশারফ সাহেবের ভাই।গ্রামের লোকের আপত্তিতে বৈচিমাসীকে হিন্দুস্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হল।পেচ্ছাপ করতে কষ্ট হোতো চিকিৎসারও দরকার ছিল।
বাবাকে দেখতাম সারাক্ষন কি সব চিন্তা করছে। বাবার প্রতি মায়ের ছিল গভীর আস্থা।সেজন্য মা আলাদা করে কিছু চিন্তা করতো না।চুপচাপ রান্না করতো স্বামী সন্তানকে খেতে দিত একটা বড় বাটিতে কালুকে খেতে দিতেও ভুল হতো না।কুকুর এক অদ্ভুত প্রাণী নিজে নিজে এসে বছর তিনেক আগে আমাদের বাড়ীতে আস্তানা গেড়েছিল। বাবা বেরোলে বাবার পিছু পিছু অনেকটা পথ যেতো তারপর ফিরে আসতো।এসব অনেক পুরানো কথা অনেক কথার সঙ্গে জড়িয়ে জট পাকিয়ে আছে।একদিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে আজও।
রোজই শুনছি আজ অমুকরা কাল তমুকরা বাড়ী ছেড়ে চল যাচ্ছে। বাবা সাধারণত সন্ধ্যের আগেই বাসায় ফিরে আসে।সেদিন সন্ধ্যে হয়ে গেল বাবা ফিরছেনা দেখে মা অস্থির হয়ে উঠল।রাত হতে হ্যারিকেনের আলো কমিয়ে দরজা বন্ধ করে রুদ্ধশ্বাস ঘরে বসে আছি।বাইরে বারান্দায় কালু।মাঝে মাঝে কালু ঘেউ ঘেঊ করে উঠছে অমনি সজাগ হই বাবা ফিরল নাকি?মায়ের দিকে তাকিয়ে মনে হল চোখের কোলে জল থমকে আছে।রান্না হয়ে গেলেও খাইনি বাবা এলে খাবো।এতরাত হচ্ছে কেন অনুমান করে হদিশ পাইনা।ধুতি পাঞ্জাবী পরা বাবার মুখটা চোখের সামনে ভাসছে।বাবা বরাবর ধুতি পরে।শোওয়ার সময়ও তাই পায়জামা কিম্বা লুঙ্গি কখনো পরতে দেখিনি।
বাইরে থেকে আওয়াজ এল,সুমন।
আমার মায়ের নাম সুমনা।আমি লাফিয়ে উঠে দরজা খুলে চমকে উঠলাম।লুঙ্গি পরে দু-জন দাড়িয়ে।সম্বিত ফিরতে চিনতে পারলাম বাবাকে।ঘরে ঢুকে বাবা সঙ্গের ছেলেটিকে বসতে বলল।ছেলেটির হাতে ধরা ধুতি নিয়ে বাবা অন্য ঘরে চলে গেল।কিছুক্ষন পর ধুতি পরে লুঙ্গিটা ছেলেটির হাতে দিতে ছেলেটি বলল,স্যার আপনাকে লুঙ্গি পরাতে হবে কখনো ভাবিনি।
--শোনো মইদুল তোমার কথা আমার মনে থাকবে।
মইদুল বাবার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে উঠে দাড়াতে বাবা বলল,শোনো মইদুল ভিতরের মানুষটাকে দেখো।কোনোদিন যেন শয়তানের কাছে আত্মসমর্পন না করে।
--আসি স্যার।
--সাবধানে যেও।
মইদুল চলে গেল।পরে জেনেছি কলেজ পাড়ায় দাঙ্গা লেগেছিল বাবার ছাত্র মইদুল বাড়ীতে আশ্রয় দিয়েছিল।তারপর পাছে কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য লুঙ্গি পরিয়ে বাড়ি পৌছে দিয়ে গেল।পরদিন বাবা কলেজ গেলনা।দুপুরবেলা একবার বেরিয়ে কোথায় যেন গেছিল।বিকেলবেলা ফিরে মাকে বলল,সুমন গোছগাছ করো আজ রাতে বেরোতে হবে।গ্রামে মায়ের রূপের বেশ খ্যাতি আছে সেজন্য মাকে নিয়ে বাবার খুব চিন্তা।
মা কোনো প্রশ্ন করেনা।আমার মনে কৌতুহল মাহিদিয়া ছেড়ে কোথায় যাবো?রাতেই বা কেন?খাট আলমারি এসব কি হবে?বাবা বললেন,কপালে থাকলে সব আবার হবে।
আচমকা সিদ্ধান্তে কাউকে জানাতে পারনি,জমিলরা এসে ফিরে যাবে। খাওয়া-দাওয়া করে জেগে বসে আছি।কখন যাবো কিভাবে যাবো প্রশ্ন করতে ভরসা পাচ্ছিনা।কালু ডেকে উঠল পর মুহূর্তে বাইরে থেকে কে যেন ডাকল,স্যার।
--কে রফিক মিঞা?
--হ্যা স্যার।
বাবা দরজা খুলতে ষণ্ডাগণ্ডা চেহারা একজন ঢূকলো।সামনে মাকে এক নজর দেখে বলল,খালা গয়না খোলেন ওগুলো পরা যাবেনা।আর এইটা পরেন।মায়ের হাতে একটা বোরখা এগিয়ে দিল।
মা বোরখা হাতে অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকাতে বাবার ইঙ্গিতে মা অন্য ঘরে গিয়ে বোরখা গায় দিয়ে গয়নাগুলো একে একে সব গয়না খুলে ফে্লে একটা পুটুলি করে এ ঘরে এসে পুটুলিটা রফিক মিঞাকে দিল।আমার মা এমনিতে দীর্ঘাঙ্গী বাবার মাথায় মাথায়, বোরখায় আরও লম্বা লাগছে।গয়নাগুলো রফিক মিঞা একটা কাপড়ে জড়িয়ে আমাকে বলল,খোকা এখানে আসো।
আমি এগিয়ে যেতে জামা তুলে কাপড়টা আমার কোমরে বেধে দিল।এই বাড়ী ঘর দোর ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে আমার চোখে জল চলে এল।নিশুতি রাতে চারটে ছায়া মূর্তি পথে নামলো।আমাদের অনুসরণ করছে কালু।গ্রামের বাইরে যেতে মা বলল কালু বাজান তুমার আর আসনের দরকার নাই।তুমি ফিরে যাও।
কি বুঝল কে জানে কালু তবু অনুসরণ করতে থাকে।হাটতে হাটতে মা বারবার পিছন ফিরে দেখে। নদীর ধারে পৌছাতে কালু লেজ নাড়তে নাড়তে মুখ তুলে মায়ের মুখের দিকে চায়।কাতর স্বরে মা বলল,কালু তুমি যাও আমরা কোথায় যাব তার ঠিক নেই।
কালু কুই-কুই শব্দ করে।একটা নৌকা এসে ঘাটে বাধল বুঝতে পারি সব রফিক মিঞার ব্যবস্থা।
--কালু তুই কিছু বুঝিস না,যা বাজান বাড়ী ফিরে যা।
বাবাকে জিজ্ঞেস করল,কালুকে নিয়ে যাবো?
--কি ছেলেমানুষী হচ্ছে। আমরা কোথায় যাব তার ঠিক নেই।বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন।
--স্যার আসেন।রফিক মিঞা নামতে বলল।
ঢাল বেয়ে নীচে নেমে আমরা নৌকায় গিয়ে উঠতে কালু নীচে নেমে এল।রফিক মিঞা ধাওয়া দিতে আবার পাড়ে উঠে গেল।অন্ধকারে বোঝা না গেলেও মনে হল কালু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে।সকাল হলে কালুকে কে খেতে দেবে?কথাটা মনে হতে আমার চোখের পাতা ভিজে গেল।
হাঁটতে হাটতে চলেছি।আগে রফিক মিঞা পিছনে মায়ের কাছ ঘেঁষে আমি শেষে বাবা।রাতের আঁধার ফিকে হতে থাকে।একটা ঝোপের কাছে আসতে ধূমকেতুর মতো একজন সিপাই আমাদের পথ আটকে বলল,ঠাইরিয়ে।
রফিকের সঙ্গে চোখাচুখি হতে সিপাইয়ের ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি খেলে যায়।ঝোপের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তির শব্দ।আমার বুক কেঁপে উঠল। আমার মায়ের সঙ্গে বৈচিমাসীর মতো করবে নাকি? তাহলে মরি মরব জীবিত থাকতে মাকে স্পর্শ করতে দেবনা। মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরি।মাথায় মায়ের কম্পিত হাতের স্পর্শ পাই।রফিক মিঞা বলল,ভয় নাই বাজান।বাবা একপাশে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে।কিছুক্ষণ পর ঝোপের ভিতর থেকে আলুথালু বেশে একজন অফিসার বেরোতে সিপাইটা বলল,সাব রফিকের চালান।
অফিসার এক ঝলক আমাদের দেখে বলল,যানে দেও।
স্বস্তির শ্বাস ফেললাম।রফিক বলল,সালাম সাব।
আমরা আবার চলতে শুরু করি।
ভোর হয় হয় আমরা হিন্দুস্থানের মাটি স্পর্শ করলাম।পথে কোনো অসুবিধে হয়নি।পুলিশের সঙ্গে প্রায় সকলেরই রফিকের পরিচয় ছিল।কাগজে মুড়ে দিতে হয়েছে উপঢৌকন।এক জায়গায় মায়ের কানের দুল জোড়া খুলে দিতে হয়েছে।বোরখা খুলে মা স্বস্তি বোধ করে।
এক গোছা চাবি আর বোরখা রফিক মিঞার হাতে দিয়ে বিদায় নেবার আগে বাবা বলল,রফিক মিঞা ঘর দোর রইল তুমি দেখো।
--স্যার আপনে কুনো চিন্তা করবেন না।ফিরে আসলে যেমন ছিল তেমন ফিরিয়ে দেব।
তখনো ভোর হয়নি।ভ্যান রিক্সায় চেপে পাইকপাড়ায় গিয়ে সুধীর রায়ের বাড়ি খুজে পেতে খুব অসুবিধে হয়নি।সুধীর রায় আমার মামা।তিন দিন ছিলাম আমরা মামার বাসায়।স্পষ্ট করে না বললেও বুঝতে অসুবিধে হয়নি আমাদের থাকা মামীর পছন্দ নয়।মামাই গোপাল নগরে আমাদের বাসা ঠিক করে দিলেন।
আমাদের আর ফিরে যাওয়া হয়নি।এপারে বসে শুনতাম মুক্তিযুদ্ধের কথা।কলেজের চাকরি জুটানো সম্ভব হলনা অনেক চেষ্টায় বাবা হরিচাদ ইন্সটিটিউটে চাকরি পেলেন।
এক ফালি জমি কিনে বাড়ী করলেন।পাকা দেওয়াল টালির চাল।আমিও স্কুলে ভর্তি হলাম।,
 

Users who are viewing this thread

Back
Top