What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

লন্ডনের ৪০ ডিগ্রির ওপরের তাপমাত্রায় ভারতবর্ষের পাংখাপুলারদের শোষণের ইতিহাস (1 Viewer)

Status
Not open for further replies.
কখনো কখনো পাখাওয়ালাদের বসার স্থানে চিনি ছিটিয়ে দেওয়া হতো। তারা ঘুমিয়ে পড়লে পিঁপড়া এসে তাদের ঘামে ভেজা শরীরে কামড় বসাতো। আরেকটি ব্যবস্থা ছিল পাখাওয়ালার বাহুতে একটি হাঁস রাখা। কাজের সময় যাদের হাত থেকে ওই হাঁস ছুটে যেত, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হতো।
pakhawala.jpg

পা দিয়ে পাখা টানছেন পাংখাপুলার, কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রামের চেষ্টা। ছবি: এলসওর্থ হান্টিংটন, দ্য হিউম্যান হ্যাবিট্যাট, ভায়া উকিমিডিয়া কমনস

ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ ও ইউরোপীয়রা যখন ভারতবর্ষে আসতেন, তখন এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের প্রথমদিকে বেশ অসুবিধা হতো। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত বছরের প্রায় অর্ধেক সময় রাতে তাদের ভালো করে ঘুম আসতো না। ভারতবর্ষের গরম, মশার কামড়, মাছি, এখন-তখন ঝড় এসবের কারণে তাদের ঘুমের দফারফা হয়ে যেত।
কম ঘুমের কারণে অনেক ব্রিটিশ অফিসার সকালবেলা দেরিতে কাজ শুরু করতেন, সারাদিন তাদের মনমেজাজ তিরিক্ষে হয়ে থাকত। জনৈক মিশনারি এ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, 'পরের দিনের কাজটা বোঝা হয়ে দাঁড়াত।'
১৯ শতকের মধ্যবর্তী সময় থেকে ভারতবর্ষের শৈলশহরগুলো গড়ে উঠতে থাকে। কিন্তু এসব শহরে সব শ্বেতাঙ্গ আমলা বা ধর্মপ্রচারকদের পদায়ন করা যেত না। উত্তর ভারতের সমভূমি বা অন্যান্য উষ্ণ এলাকায় অনেককে গরম কাটাতে হতো। এই গোরা অফিসারেরাই ঘুম নিয়ে পুরো একটি অর্থনীতি গড়ে তুলেছিলেন এসব অঞ্চলে।
ব্রিটিশরা ভারতে আসার আগে থেকেই ভারতবর্ষে হাতপাখার প্রচলন ছিল। কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলে এই ব্যজনই হয়ে উঠল একটি নিষ্ঠুর শ্রমসাধ্য কাজ।
ব্রিটিশদের ঘুম অর্থনীতির আরও অংশ ছিল ভারতীয় পাতলা পোশাকের ব্যবহার, ঠান্ডা পানিতে গোসল, কবোষ্ণ অ্যালক্যালাইন গোসল, জানালা ও উঁচু ছাদের বাড়ি, মশা ও হিম নিবারক মশারি, বিশেষভাবে তৈরি বিছানা, রাত্রিকালীন খাবার ইত্যাদি।
karikal_court.jpg

১৮৯৫ সালে ফ্রেঞ্চ ইন্ডিয়ার কারিকাল কোর্টে পাখা টানছেন মেঝেতে বসা এ ব্যক্তি। ছবি: উকিমিডিয়া কমনস

গরম থেকে আরাম পাওয়ার জন্য ব্রিটিশরা ভারতীয় ভৃত্য রাখতেন। এদেরকে 'পাংখাওয়ালা' বা 'পাখাওয়ালা' বলা হতো। এই পাখাওয়ালাদের কাজ ছিল সারা দিনরাত তাদের শ্বেতাঙ্গ মনিবদের বাতাস করে যাওয়া। বড় বড় পাখার সঙ্গে লম্বা দড়ি বাঁধা থাকতো, তারা সেই দড়ি ধরে টেনে টেনে পাখার বাতাস করতেন। কেবল ভোরবেলা আর সন্ধ্যাবেলা বিশ্রাম পেতেন তারা।

এ প্রকাণ্ড পাখাগুলো লাগানো হতো কোর্ট-কাচারি, ব্যারাক, ব্রিটিশ দপ্তর, স্কুল, ইউরোপীয় ও বনেদি ভারতীয়দের ঘর ইত্যাদি স্থানে।

গবেষক রিতম সেনগুপ্ত তার গবেষণায় গার্হস্থ্য শ্রম, ঔপনিবেশিক শোষণ, ও ভৃত্যদের সাথে কটু আচরণের দিকগুলো তুলে ধরেছেন। মানুষের ঘুমকাঠামোর কারণে এভাবেই ভারতবর্ষে তৈরি হয়েছিল একধরনের নিষ্ঠুর জাতিগত সহিংসতা।

ঔপনিবেশিক অফিসারেরা, তা তিনি ভারতীয় হন বা গোরা, গ্রীষ্মকালের রাত ৯টা-১০টার মধ্যে বিছানায় যেতেন। শ্বেতাঙ্গ কর্মকর্তারা দাপ্তরিক কাগজপত্র দেখা বা ব্রিটেনে পরিবারের কাছে চিঠি লেখার কারণে আরেকটু দেরিতে ঘুমাতে যেতেন। উত্তর প্রদেশের একজন খ্রিস্টান মিশনারির স্ত্রী আরএল জনসন এপ্রিলে গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার সময় তার পরিবারকে চিঠিতে লিখেছিলেন:

'...বাবুটার নতুন দুটো দাঁত উঠেছে, এ নিয়ে ছয়টা দাঁত হলো তার। ...এখন বিছানায় পাখার নিচে হাতপা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। প্রতি সকালে ওকে গোসল করাই। এখানকার গরমে পানি খুবই আরাম দেয়। ...গত গ্রীষ্মে রাতের বেলা ঘুম না এলে আমি উঠে গিয়ে ঠান্ডা পানিতে গোসল করতাম। ...মাঝেমধ্যে এখানে ধুলোঝড় হয়, তখন ওপরতলা থেকে নিচে নেমে আসতে হয়। ধুলোর চোটে চোখ খোলা রাখা যায় না। সেজন্য আমরা তাবু টানিয়ে নিচতলায় ঘুমাই এখন। ...বাইরের পরিবেশ অবশ্য ভেতরের তুলনায় বেশ শীতল।'

বাচ্চার কারণে ঘুমাতে অসুবিধা হওয়ায় জনসনের পরিবার গরম, মশা-মাছি, ও অন্যান্য পতঙ্গ তাড়ানোর জন্য বাড়িতে বাঁধা পাখাওয়ালা রেখেছিলেন। এই পাখাওয়ালাদের নিতান্ত অল্প মাইনে দিয়ে রাখা যেত। দেশি এ মানুষগুলো সারারাত জেগে থেকে তাদের মনিবদের পাখার বাতাস করতেন। জনসন লিখেছিলেন, 'পাখার নিচে আমরা লিখি, পড়ি, খাই, ঘুমাই, সেলাই করি।'

সাধারণত দিন ও রাতে কমপক্ষে দুইদল পাখাওয়ালার দরকার হতো। এই পাখাওয়ালা ও তাদের মনিবদের মধ্যে এক ধরনের চোর-পুলিশ খেলা চলত। মনিবের ঘুম এসে গেলে ক্লান্ত পাখাওয়ালারাও অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়তেন। তখন গরমে ব্রিটিশ মনিবের ঘুম ভেঙে গেলে আবার বাতাস শুরু করতে হতো। জনৈক টিএস অ্যাবটের লেখা থেকে জানা যায়:

'...আবার একটু চোখ লেগে এলে পাখাওয়ালা পাখা বন্ধ করে দিত। অনেকবার এমনটা ঘটলে মনিব রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে এলে পাখাওয়ালা দৌড়ে পালাত। বাইরে খুঁজতে গিয়ে দেখা যেত, পাখাওয়ালা ততক্ষণে মার্বেলের ঠান্ডা মেঝের ওপর নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়েছে। এরকম হলে আপনি ব্যাটাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে কষে একটা লাথি বা মাথায় একটা গাঁট্টা মারবেন।'

বিরক্ত হয়ে পাখাওয়ালার দিকে অ্যাবট পানির জগও ছুঁড়ে মারতেন। অনেকে মাটির পানির পাত্র ভাঙতেন তাদের পাখাওয়ালাদের গায়ে। এ পাখাগুলো থেকে যে বাতাস পাওয়া যেত সেগুলোও আবার ভিন্নরকমের ছিল, ডাকাও হতো বিভিন্ন নামে। পাখার যেদিকে পাখাওয়ালা বসতেন, সেটার নাম ছিল বোম্বে সাইড, অন্যপাশটা ছিল বেঙ্গল সাইড।

একজোড়া পাখাওয়ালা থাকলে একজন একটানা ১২ ঘণ্টা বাতাস করার পর অপরজন শুরু করতেন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে যখন মশা-মাছির উপদ্রব বেড়ে যেত, তখন পাখার দরকার পড়ত বেশি। ধনী ইউরোপীয় পরিবারগুলো শোবার ঘরে, বাথটাবের ওপরে, খাবার টেবিলে, ও দীর্ঘক্ষণ বসার জায়গায় পাখা লাগাতেন।

পাখাওয়ালাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেওয়ার জন্য সহিংসপন্থা অবলম্বন করতেন ইউরোপীয়রা। অনেক মধ্যবিত্ত শ্বেতাঙ্গ দুই দল পাখাওয়ালা রাখতে পারতেন না। জনসনের মতো ধর্মপ্রচারক পরিবারগুলোও পাখাওয়ালাদের ওপর অত্যাচার চালাতেন। এসব সহিংস কাজের মধ্যে ছিল পাখাওয়ালাদের চুল বেঁধে দেওয়া যাতে তারা ঘুমিয়ে না পড়ে।

চাবাগান ও নীলচাষের মালিকেরা দূরের জায়গাগুলোতে বাস করতেন। অত্যাচারের জন্য এরাই বেশি কুখ্যাত ছিলেন। পাখাওয়ালাদের জন্য তাদের নিজস্ব অত্যাচারের ব্যবস্থা ছিল। যেমন কখনো কখনো পাখাওয়ালাদের বসার স্থানে চিনি ছিটিয়ে দেওয়া হতো। তারা ঘুমিয়ে পড়লে পিঁপড়া এসে তাদের ঘামে ভেজা শরীরে কামড় বসাতো। আরেকটি ব্যবস্থা ছিল পাখাওয়ালার বাহুতে একটি হাঁস রাখা। কাজের সময় যাদের হাত থেকে ওই হাঁস ছুটে যেত, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হতো।

ঈগল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, মনিবদের ওপর নিজেদের মতো করে বদলা নিতেন পাখাওয়ালারাও। মাঝেমধ্যে কর্তারা কাগজপত্র নিয়ে কাজে বসলে পাখা চালিয়ে সেগুলো উড়িয়ে দিতেন তারা। ঘরের ভেতর থেকে মনিব আস্তে টানতে হুকুম দিলে আরও জোরে পাখা টানা শুরু করতেন তারা। তারা ভাব ধরতেন, মনিব তাদেরকে জোরে টানার হুকুম দিয়েছে।

১৮৮০-এর দশকে এ পাখাওয়ালারা কেবল তিন রুপি বেতন পেতেন। রাতের বেলা যেসব পাখাওয়ালার কাজ থাকত, তাদেরকে দিনের বেলা বাড়ির কাজ বা অন্যান্য কাজ সারতে হতো। ফলে অনেক সময় তারা রাতে পাখা টানতে টানতে ঘুমিয়ে পড়তেন। ব্রিটিশরা ভাবত তাদের ভৃত্যরা দিনে ইচ্ছে করে ঘুমাত না যাতে রাতে কাজের সময় ঘুমানো যায়।

রাতে কম ঘুম হওয়ায় অনেক সময় দুপুরে খাওয়ার পরও একচোট ঘুমিয়ে নিতেন ব্রিটিশরা। ভারতের গ্রীষ্ম তখন 'পাখার মৌসুম' নামেও পরিচিত হয়েছিল। ১৯ শতকের শেষ দিকে হেনরি এম লেয়ম্যান নামক একজন আমেরিকান ডাক্তার লিখেছিলেন, ভারতের আর্দ্র পরিবেশ ও গ্রীষ্মকাল মিলিয়ে এটি ছিল ইনসমনিয়ার একটি উপযুক্ত কারণ।


স্ক্রল ডটকম থেকে অনূদিত

লেখক: অরুণ কুমার, নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভারত বিষয়ক পণ্ডিত

অনুবাদ: সুজন সেন গুপ্ত

Curtesy: The Business Standard
 
Status
Not open for further replies.

Users who are viewing this thread

Back
Top