What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হেরিটেজ কলকাতার হেরিটেজ খাদ্য বিপনী (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
দশকের পর দশক ধরে পরিষেবা দিয়ে যাওয়া কলকাতার অতি বিখ্যাত ১৪টি খাবারের দোকানকে হেরিটেজ তকমা দিল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ (ইনট্যাক)। ❤❤

এই হেরিটেজ তকমার জন্য কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের অন্তর্গত এমন কতকগুলি খাবারের দোকানকে বাছাই করা হয়েছে, যারা ঠিকানা বদল না করে ১৯৬০ সাল বা তারও আগে থেকে আজ অব্দি একই জায়গায় থেকে ব্যবসা করে চলেছে এবং যাঁদের অবশ্যই একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। এই সূত্রে এই ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে নীল রঙের বিশেষ ফলক দেওয়া হল। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই প্রথম ইনট্যাক খাবারের দোকানকে হেরিটেজ শিরোপা দিল। কারণ এতদিন পর্যন্ত এই শিরোপা মূলত কোনও সরকারি বিল্ডিংকে দেওয়া হয়ে এসেছে।

তালিকা

নিচে প্রতিষ্ঠা সালের হিসেবে সেই ১৪টি দোকানের নাম, বন্ধনিতে তাদের প্রতিষ্ঠা সাল, ঠিকানা, তাদের সেরা খাবার ও অন্যান্য বিষয়ে জানানো হল-

১) ভীম চন্দ্র নাগ (১৮২৬)

ঠিকানা: ৫, নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০১২ (বউবাজার মোড়ের কাছে) খোলা থাকে: সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা ।

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: পান্তুয়া

বিবরণ: হুগলী জেলার জনাই থেকে প্রাণ চন্দ্র নাগ কলকাতার বউবাজারে একটি ছোট্ট মিষ্টির দোকান খোলেন। পরে পুত্র ভীম চন্দ্র নাগ সেই দোকানের দায়িত্ব নেন। মিষ্টির ইতিহাসে কড়াপাক নামের অধ্যায়ের সংযোজনে ভীম নাগের ভূমিকা অপরিসীম। ১৮৫৬ সালে লেডি ক্যানিং-এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভীম নাগ এক বিশেষ ভাজা মিষ্টি তৈরি করেন। সেই মিষ্টি গভর্নর জেনারেলের স্ত্রীর এত ভাল লেগে যায় যে তাঁর প্রিয় ডেজার্টের তালিকায় ঢুকে যায় এই মিষ্টি। প্রতিটি অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি উপস্থিত থাকত। লেডি ক্যানিং-কে সম্মান জানিয়ে ভীম নাগ এই মিষ্টির নাম রাখেন 'লেডি ক্যানিং', লোকমুখে যা হয়ে দাঁড়ায় লেডিকেনি। এই দোকানে একটি বাংলায় ডায়াল লেখা ঘড়ি আছে, যার মাঝে লেখা 'কুক অ্যান্ড কেলভি'। ১৮৫৮ সাল নাগাদ লন্ডনের কুক অ্যান্ড কেলভি যখন একচেটিয়া ব্যবসায় ভারত-সহ বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তখন একবার সেই কোম্পানির মালিক চার্লস কেলভি ভীম চন্দ্র নাগের দোকানে মিষ্টি খান। সেই মিষ্টি খেয়ে তিনি একেবারে মোহিত হয়ে পড়েন। দেওয়ালে তাকিয়ে কোনও ঘড়ি দেখতে না পেয়ে তার কারণ জানতে চান। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে ভীম নাগ তার অপারগতার কথা জানালে সাহেব বলেন যে, তিনি খুশি হয়ে এই দোকানে একটা দেওয়াল ঘড়ি উপহার দেবেন।

নাগমশাই সন্তর্পণে জানান, তাঁর কর্মচারিরা ইংরেজি পড়তে পারেন না। তাই সম্ভব হলে বাংলায় লেখা ঘড়ি দেওয়া হলে সকলের সুবিধে হবে। সেই মতো লন্ডন থেকে বাংলা হরফে লেখা ডায়াল তৈরি হয়ে আসে। সেই ঘড়ি এখনও শোভা পাচ্ছে ভীম নাগের দোকানে।

শোনা যায়, রাজা রামমোহন, রানি রাসমনি, বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখার্জি সকলেই ভীম নাগের সন্দেশের ভক্ত ছিলেন। আশুতোষ নাকি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ সেরে প্রতি সন্ধেতেই ভীম নাগের দোকানে ঢুঁ মারতেন। ইতিহাসবিদদের মতে, ভীম নাগের মিষ্টি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও খুব ভালবাসতেন। তাই রানী রাসমণি যখনই পরমহংসের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন, সঙ্গে থাকত এক হাঁড়ি ভীম নাগের মিষ্টি। মন্দির প্রতিষ্ঠালগ্নে নাকি ভীম চন্দ্র নাগ থেকে তিন মণ মিষ্টি নৌকা পথে দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিল। প্যাঁড়া, ক্ষীরের পুতুলের পাশাপাশি এই প্রজন্মের পেস্তা সন্দেশ, স্ট্রবেরি সন্দেশের মতো ফিউশনাল মিষ্টিতেও জমে উঠেছে আজকের ভীম নাগ।

২) গিরিশ চন্দ্র দে ও নকুর চন্দ্র নন্দী (১৮৪৪)

ঠিকানা: ৫৬, রামদুলাল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০৬ (হেদুয়ার বেথুন কলেজের কাছে)। খোলা থাকে: সকাল ৭টা থেকে রাত ১০.৩০।

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: সন্দেশ

বিবরণ: গিরিশ চন্দ্র দে আর নকুর চন্দ্র নন্দী মিলিতভাবে একটি মিষ্টির দোকান তৈরি করেন। প্রথম থেকেই এরা জলভরা, কাঁচাগোল্লা, শাঁখসন্দেশ পরিবেশন করে বাঙালি রসনা তৃপ্ত করে চলেছেন। নরম পাকের সন্দেশের এই দোকান কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ও সেরা। বিবেকানন্দ থেকে সত্যজিৎ অথবা অভিষেক থেকে অমিতাভ বচ্চন, কোয়েল মল্লিক সকলেই নকুরের মিষ্টির ভক্ত। অভিষেক বচ্চনের বিয়ের অনুষ্ঠানে এই দোকান থেকেই নাকি সন্দেশ গিয়েছিল।

৩) দিলখুশা কেবিন (১৯১৮)

ঠিকানা: ৮৮, মহাত্মী গান্ধী রোড, কলকাতা ৭০০ ০০৯ (কলেজ স্ট্রিট ও মহাত্মা গান্ধী রোডের সংযোগস্থলের কাছে)। খোলা থাকে: বেলা ১২টা থেকে রাত ৮.৩০

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: কবিরাজি কাটলেট

বিবরণ: কলকাতার কবিরাজি কাটলেটের যে কালচার তাতে অন্যতম সেরা নাম দিলখুশা কেবিন। চুনীলাল দে আজ থেকে প্রায় ১০২ বছর আগে এই কেবিন তৈরি করেন। কেবিনের বাইরে এখনও দেওয়ালের গায়ে সিমেন্টে-খোদাই করে দোকানের নাম লেখা আছে। পুরনো কাঠ-পাথরের চেয়ার টেবিল, জানলায় টকটকে লাল পরদা, সেকেলে মেঝে, দেওয়ালে বেলজিয়াম গ্লাসের আয়না। তবে আগের সেই ঢাকাওয়ালা কেবিন আর নেই। সব মিলে এক মুহূর্তে পুরনো কলকাতার ছবিটা জ্বলজ্বল করে ওঠে।

দিলখুশা কেবিনের সেরা আইটেম কবিরাজি বাদ রাখলে মাটন চপ, ডেভিল, ব্রেস্ট কাটলেটও মনে রাখার মতো। একসঙ্গে ৬৫ জন বসতে পারেন। কবিদের আড্ডা, থিয়েটার পাড়ার লোকজনের আনাগোনা সব মিলিয়ে এ যেন মিনি কফিহাউস।

৪) প্যারামাউন্ট (১৯১৮)

ঠিকানা: ১/‌১/‌১/‌ডি, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলেজ স্কোয়ার, কলকাতা ৭০০ ০৭৩ খোলা থাকে: বেলা ১২টা থেকে রাত ৯.৩০

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: শরবত

বিবরণ: বরিশালের নীহাররঞ্জন মজুমদার ১৯১৮ সালে প্যারামাউন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। তবে কলকাতার এই বিখ্যাত শরবতের দোকানের আদি নাম ছিল প্যারাডাইস। সময়টা স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিযুগ। তখন শরবতকে সামনে রেখে দোকানের পেছনে স্বদেশী কাজকর্ম হত। বিপ্লবী সতীন সেন এটিকে স্বদেশী অনুশীলন কেন্দ্র বানিয়েছিলেন। আসতেন বাঘাযতীন ও পুলিনবিহারী দাসের মতো প্রথমসারীর বিপ্লবীরাও। এসেছেন সুভাষ বসু, জগদীশচন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বসু,। তবে বেশিদিন ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের ফাঁকি দেওয়া গেল না। পুলিশ বন্ধ করে দিল এই দোকান।

১৯৩৭ সালে আবার খুলল দোকান। 'প্যারাডাইস' হল প্যারামাউন্ট। নজরুল ইসলাম এই দোকানে বার বার আসতেন। সত্যজিৎ রায় ছাড়া এখানে আসতেন উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, শচীনদেব বর্মন, বিকাশ রায়। আসতেন সৌমেন ঠাকুর, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, অমর্ত্য সেন, নবনীতা দেবসেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিষ্টুচরণ ঘোষ, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, মনোহর আইচ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, এমনকী সৌরভ গাঙ্গুলি। বিশিষ্টদের টান ছিল ডাবের শরবতে। এই শরবতের রেসিপি দিয়েছিলেন স্বয়ং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় নীহাররঞ্জন মজুমদারকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে বসিরহাট থেকে আনা ডাবের শাঁস মিশিয়ে শরবতে নতুন স্বাদ আনতে হয়। ভাবা যায়!

৫) অ্যালেন কিচেন (১৯২০)

ঠিকানা: ৪০১/১, যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেনিউ, কলকাতা ৭০০ ০০৬ (সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একেবারে ওপর। গ্রে স্ট্রিট মোড় থেকে ধর্মতলার দিকে এগোলে বাঁ দিকে) খোলা থাকে: বিকেল ৪.৩০ থেকে রাত ৯.৩০

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: কাটলেট

বিবরণ: এ দোকান আদতে ছিল স্কটিশ সাহেব মিস্টার অ্যালেনের। চার পুরুষ আগে জীবনকৃষ্ণ সাহা স্পেনসেস হোটেল ছেড়ে এখানে কাজ করতে আসেন। অ্যালেন সাহেব দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় দোকানের স্বত্ব দিয়ে যান জীবনবাবুকে। অ্যালেনের প্রায় কুড়িটা আইটেমের মধ্যে স্পেশাল প্রন বা ভেটকি কাটলেট, চিকেন-মাটন স্টেক, কবিরাজি কিংবা অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ঘরানার মাছ-মাংসের পুর দেওয়া চপ বিখ্যাত। ছোট্ট দোকানে গ্রিলের দরজা। ঢুকেই রান্নাঘর। মাতাল করা খুসবু পেরিয় ভেতরে ঢুকলেই কাঠের চৌকো চারটে টেবিলে বসার জায়গা। খাদ্যপ্রেমিক নেতা, আমলা, সাংবাদিক, সঙ্গীতকার, কবি, অভিনেতারা সব গাড়ি হাঁকিয়ে চলে আসেন অ্যালেনের ডেরায়।

৬) নিরঞ্জন আগার (১৯২২)

ঠিকানা: ২৩৯/এ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউ, কলকাতা ৭০০ ০০৬ (গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনের কাছে) খোলা থাকে: বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: এগ ডেভিল

বিবরণ: নিরঞ্জন আগারের খদ্দের তালিকা শুনলেও চোখ কপালে উঠবে। মান্না দে, বিকাশ রায়, উৎপল দত্ত, তরুণকুমার, অপর্ণা সেন প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা এখানে প্রায়ই আসতেন। উৎপল দত্ত ও অপর্ণা সেন ডিমের ডেভিল, তরুণকুমার মাংসের কোপ্তা, বিকাশ রায় মটন ব্রেস্ট কাটলেট পছন্দ করতেন। মিনার্ভা থিয়েটারে রিহার্সাল চলাকালীন সমস্ত খাবার যেত এই দোকান থেকেই। এ ছাড়া এই দোকানের ডিমের ডেভিল মাপে এবং স্বাদে নজরকাড়া, কষা মাংস, ফিশ ফ্রাই-এর সুনাম তো আছেই। এই দোকানের ভেজিটেবল চপ 'বোমা' নামে পরিচিত। স্বাদ ও আকারে তা বোমারই মতো বড়ো। নিরঞ্জন আগারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নিরঞ্জন হাজরা। তাঁর নামেই দোকানের নাম। আগার কথাটির মানে খাবারের জায়গা।

৭) ইউ চাউ রেস্টুরেন্ট (১৯২৭)

ঠিকানা: ১২, গনেশ চন্দ্র অ্যাভেনিউ, কলকাতা ৭০০ ০১৩ (চৌরঙ্গী নর্থ, বো ব্যারাকের কাছে) খোলা থাকে: বেলা ১২টা থেকে ৩টে ও সন্ধে ৬.৩০ থেকে রাত ১০টা

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: চাইনিজ

বিবরণ: এসপ্ল্যানেডের কাছে চাইনিজ বিপ্লব। ৫৫ জন বসার উপযোগী ইউ চিউ রেস্টুরেন্ট শহরের সবচেয়ে পুরনো চাইনিজ জয়েন্ট। নানকিং, হোউ হোয়া, চাং ওয়া-র মতো দোকানগুলি উঠে যাওয়ার পর এই দোকানটির হেরিটেজ ট্যাগ প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে কলকাতার চাইনিজ খাবারের দোকানের জন্য শুভসংবাদ নিয়ে আসবে। 'ইউ চাউ' কথাটির অর্থ 'ইউরোপ ইন ম্যান্ডারিন'। এই যে ইউরোপিয়দের জন্য ভাবনা এটাই প্রমাণ করে এই দোকানের ভাবনার সুর প্রথম থেকেই অন্যরকম ছিল। তাই বিশুদ্ধ চাইনিজ খাবারের পাশে এখানে ব্রিটিশ ভারতের ইউরোপিয় খদ্দেরদের জন্য ছিল কাটলেট ও পর্ক চপের ব্যবস্থা। বিশ শতকের প্রথমদিকে দক্ষিণ চীনের মই ইয়েন গ্রাম থেকে যে চীনা দম্পতি এই শহরে পা রাখেন তাঁরাই ১৯২২ সালে কম পয়সার খাবারের দোকান খোলেন। এই দোকানে তখন মূলত চীনা অভিবাসীরাই খেতে আসতেন।

তবে এই দোকানের বহিরাবরণ দেখে আপনার ভাল না লাগতেই পারে। হয়ত এর আশপাশ দিয়ে আগে বহুবার গেছেন কিন্তু কখনও খেয়াল করেনি দোকানটিকে। আসলে দৃষ্টি আকর্ষণকারী কোনও কিছুই নেই এ দোকানের। মনে হয় সময় থমকে আছে। লম্বা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হবে। আর ভেতরটা কিন্তু বেশ চমত্কার। এখানকার জিভে জল আনা খাবারগুলির মধ্যে চিমনি স্যুপ, চিলি পর্ক, চিকেন চিলি, হানি লেমন চিকেন, ফিস ইন চিলি ব্ল্যাক বিন, জোসেফাইনস নুডলস বিখ্যাত।

৮) নবীন চন্দ্র দাস (১৯৩৫)

ঠিকানা: ৭৭, যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেনিউ কলকাতা ৭০০ ০০৫ (শোভাবাজার) খোলা থাকে: সকাল ৭.৩০থেকে রাত ১০টা

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: রসগোল্লা

বিবরণ: বাগবাজারের নবীন চন্দ্র দাস রসগোল্লাকে বিশেষ স্বাদযুক্ত করে বাজারজাত করেন। যদিও তিনি প্রথমে সন্দেশ বানিয়েছিলেন। তার পর তৈরি করেন রসালো মন ভরানো রসগোল্লা। প্রথম প্রথম বাঙালী নবীন দাসের রসগোল্লাকে ভাল করে নেয়নি। একদিন ভগবান দাস বগলা নামে জনৈক ব্যবসায়ী গ্রীষ্মের দুপুরে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাগবাজারের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে প্রচণ্ড গরমে খুবই পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে তাঁর পুত্র। এমন সময় তিনি নবীন দাসের দোকান দেখতে পান। বগলার ছেলে তখন এতই তৃষ্ণার্ত যে চলার শক্তিও তার ছিল না। বাধ্য হয়ে বগলা দোকানদারের কাছে এক গ্লাস জল চাইলেন।

দোকানী ছেলেটিকে জলের সঙ্গে একটি রসগোল্লাও খেতে দেন। শিশুটির সে মিষ্টির স্বাদ দারুণ লাগে। ছেলের খুশি দেখে বাবাও খেয়ে ফেলেন একখানা রসগোল্লা। তার পর আরও একটা। রসগোল্লার অপূর্ব স্বাদে মুগ্ধ হয়ে পিতা-পুত্র মিলে পেটভরে খেলেন মিষ্টি। বগলা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ মিষ্টির অর্ডারও দিয়ে দিলেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি নবীন দাসকে। দেখতে দেখতে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গেল তাঁর রসগোল্লার খ্যাতি। 'বাগবাজারের নবীন দাস' হয়ে উঠলেন 'রসগোল্লার কলম্বাস'।

৯) কে সি দাস (১৯৩৫)

ঠিকানা: ১১ এ এবং বি, চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউ, কলকাতা ৭০০ ০৬৯ (ধর্মতলার মোড়ের কাছে) খোলা থাকে: সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: রসগোল্লা

বিবরণ: নবীন দাসের ছেলে কে সি দাস ও নাতি সারদাচরণ দাস মিলে ধর্মতলায় একটি বড়সড় মিষ্টির দোকান চালু করেন। তাঁদের চেষ্টাতেই রসগোল্লার আর একটি নতুন সংস্করণ বাজারে এলো— রসমালাই। কে সি দাসের কথা উঠবে আর 'রসগোল্লা'র আবিষ্কর্তা তাঁদের বাবা নবীন চন্দ্র দাসের কথা উঠবে না, তাও কি হয়? রসগোল্লার সেই সনাতন স্বাদ দিব্যি বহাল রেখেছে এই দোকান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রসগোল্লার রকমফের ঘটেছে। যেমন, স্ট্রবেরি রসগোল্লা। এ ছাড়াও এঁদের নলেনগুড়ের সন্দেশ, নলেরগুড়ের রোল, ল্যাংচা না খেলে কলকাতার মিষ্টির স্বাদ অধরা থেকে যাবে। শীতের স্পেশালিটি গুড় রায়টাকলি, গুড়ের শঙ্খ, গুড়ের তালশাঁস, অমৃতকুম্ভ।

১০) মোকাম্বো (১৯৪১)

ঠিকানা: ২৫বি, পার্ক স্ট্রিট, গ্রাউন্ড ফ্লোর, কলকাতা ৭০০ ০১৬ (ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও পার্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলের কাছে) খোলা থাকে: বেলা ১১.১৫ ৯টা থেকে রাত ১১.১৫

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: কন্টিনেন্টাল

বিবরণ: ইউরোপের রেস্টুরেন্টগুলো সেরা হয় কারণ, তাদের পরিচালকেরা খুঁতখুঁতে হন এবং সঠিক পথে ব্যবসা কারর দিকে জোর দেন। এই বিশ্বাস থেকে মোকাম্বোর প্রথম শেফ-কাম-ম্যানেজার ছিলেন অ্যান্টোনিও প্রানধে। তিনি ইটালির মানুষ। আর তাই গোড়া থেকেই এই রেঁস্তোরার খাদ্য তালিকায় ইউরোপিয়ান ও ইটালিয়ান খাবারের আধিক্য ছিল।

যেমন, চিকেন সিসিলিয়ান, ক্যানেলোনি কিংবা আও গ্র্যাটিন। আ লা কিয়েভ ও চিকেন স্ট্রোগানফ তো রাশিয়ান খাবার। মিঃ প্রানধে এই রেস্টুরেন্টের প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন। শুরুর সময় এখানে লাইভ মিউজিক ও ডান্স ফ্লোরের ব্যবস্থা ছিল। মনে রাখতে হবে, তখনও ইউরোপে ডিসকো থেক চালু হয়নি। এখন আধুনিক ব্যবস্থায় এখানে মিউজিকের আসর বসে।

১১) সিরাজ (১৯৪১)

ঠিকানা: ১৩৫, পার্ক স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০১৪ (মল্লিক বাজার ক্রসিং-এ নিউরোসায়েন্স হসপিটালের পাশে) খোলা থাকে: বেলা ১২ থেকে রাত ১১.১৫

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: বিরিয়ানি

বিবরণ: বিরিয়ানি ভালবাসেন না, এমন খাদ্যরসিকের সন্ধান পাওয়াই দুষ্কর। জিভে জল আনা যে সব মুঘল খাবার রসনাতৃপ্তির অভিধানে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকে, তার মধ্যে বিরিয়ানি অন্যতম। তবে কলকাতার বিরিয়ানির লক্ষ্ণৌ বা হায়দরাবাদি বিরিয়ানি থেকে কিছুটা আলাদা। বহু বিরিয়ানি রসিকের মতে সিরাজের বিরিয়ানিই সেরা- তা চিকেন হোক বা মাটন। তুলতুলে মাংসের টুকরো আর সুসিদ্ধ আলু দিয়ে তৈরি এই বিরিয়ানির স্বাদ জিভে লেগে থাকে। মোগলাই খানা পরিবেশনের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে বিহার থেকে কলকাতায় আসেন মহম্মদ আরশাদ আলি এবং মহম্মদ হুসেন। এখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা হয় নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের খাস বাবুর্চির বংশধর মহম্মদ সামসুদ্দিনের সঙ্গে। এই তিন জন মিলে বানিয়ে ফেলেন সিরাজ রেস্তোরাঁ। ১৯৫৬ সালে পাকাপাকি ভাবে রেস্তোরাঁর নাম হয় সিরাজ গোল্ডেন রেস্তোরাঁ। কলকাতায় আসা বহু সেলেবের প্রথম পছন্দ সিরাজের বিরায়ানি। এদের খদ্দের তালিকা তাই বেশ বিখ্যাত। আর ডি বর্মন, ফারুক শেখ, আমজাদ খান, মকবুল ফিদা হুসেন থেকে শাবানা আজমি, জাভেদ আখতার, মহেন্দ্র সিং ধোনি, সাবা করিম, শোয়েব আখতার, রণবীর কাপুর, আশিস বিদ্যার্থী, বিপাশা বসু, সুস্মিতা সেন সকলেই সিরাজে ঢুঁ মেরেছেন বা মারেন। শোভা দে তো সিরাজের বিষয়ে টুইট অবধি করেছেন।

১২) ইন্ডিয়ান কফি হাউস (১৯৪২)

ঠিকানা: ১৫, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০১৪ (কলেজ স্ট্রিট প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির বিপরীতে) খোলা থাকে: বেলা ৯টা থেকে রাত ৯টা

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: কফি

বিবরণ: ইন্ডিয়ান কফি বোর্ডের উদ্যোগে ১৯৪১-৪২ সালে সেন্ট্রাল এ্যাভিনিউর কফি হাউস খোলার কিছুদিন পরে ১৯৪২ সালে কলেজ স্ট্রিটের অ্যালবার্ট হলে আর একটি কফি হাউস খোলা হয়। পরবর্তীকালে এটি কলেজ স্ট্রিট কফি হাউস নামে জনপ্রিয়তা পায়। এককালের বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের প্রধান আড্ডাস্থল ছিল এই কফি হাউস। সাহিত্যিক, গায়ক, রাজনীতিবিদ, পেশাদার, ব্যবসায়ী ও বিদেশি পর্যটকদের আড্ডা দেওয়ার অবারিত জায়গা হিসাবে এটি খ্যাত।

এখনও কফি হাউস তার ঐতিহ্য বজায় রেখে চলছে। কফির গুণগত মান অটুট আছে। কফি হাউস আর কলেজ স্ট্রিট আজ সমার্থক। কলেজ স্ট্রিট যেমন বইয়ের সূতিকাগার, তেমনি কলেজ স্ট্রিটের প্রাণ এই কফি হাউস।

১৩) সাবির হোটেল (১৯৪৮)

ঠিকানা: ৩ ও ৫ বিপ্লবী অনুকুল চন্দ্র স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০৭২ (চাঁদনি চকের কাছে) খোলা থাকে: বেলা ৯টা থেকে রাত ১১টা

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: রেজালা

বিবরণ: ধর্মপ্রাণ মুসলিম হাজি সাবির আলি ১৯৪৮ সালে চাঁদনি চকে চালু করেন এই খাবার দোকান। তখন হোটেলটি ছোট ছিল আর রসুইখানা ছিল সামনের দিকে। প্রচুর সংখ্যক মানুষ, বিশেষ করে আফগানিস্তানের কাবুলিওয়ালাদের একটা প্রধান আড্ডার ঠেক ছিল এই সাবির হোটেল। মুঘল হেঁসেল থেকে 'রেজালা' নামের খাবারটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তার সেই আদি রেসিপি আর নেই।

কলকাতার রেজালা ঘরানা আবিষ্কর্তা এই হাজি সাবির আলি। এই হোটেলেই তিনি সেই জাদু খাবার বানান। সাদা ঝোলের ঘি, পেঁয়াজ আর বিভিন্ন মসলা সহযোগে খাসির সিনার মাংস দিয়ে তৈরি হয় এই রেজালা। হলুদ থাকে না, থাকে শুকনো লঙ্কা। এদের বিরিয়ানিও ভাল। বেশ ঝরঝরে ও রঙহীন। খেতে পারেন শাহি টুকরা ও ফিরনি। কাবাব ও রোলও মিলবে। রমজান মাসে মেলে হালিম। হোটেলের দোতলা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত।

১৪) কোয়ালিটি রেস্টুরেন্ট

ঠিকানা: ১৭, পার্ক স্ট্রিট, গ্রাউন্ড ফ্লোর, কলকাতা ৭০০ ০১৬ (পার্ক হোটেলের নিচে) খোলা থাকে: বেলা ১০টা থেকে রাত ১১.৩০

সেরা বলে যে খাবার বাছা হল: পাঞ্জাবী/উত্তর ভারতীয় খাবার

বিবরণ: জিভে জল আনা উত্তর ভারতীয়, মুঘলাই ও কন্টিনেন্টাল খাবারের জন্য বিখ্যাত এই রেস্টুরেন্টটির অবস্থান কলকাতার খুব সুন্দর জায়গায়। তাই খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন। এদের উত্তর ভারতীয় খাবারগুলির মধ্যে পিন্ডি চানা, কুলচা, ছোলা বাটুরা, চিকেন ভর্তা, ফিস ওরলি, নান ভাল লাগবে। অথচ শুরুতে এই খাবার দোকানে শুধু চা ও স্ন্যাক্স মিলত। পরবর্তীকালে ঘরে তৈরি আইসক্রিম বিক্রি শুরু হয়।।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top