What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাবুঘাট সংলগ্ন অফিসপাড়ার ইতিহাস। কলকাতার পথে পথে। (1 Viewer)

5sNhh9j.jpg


যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত তথ‍্য দিয়েছি। প্রচুর বাদ গেছে জানি। তবু কভার করলাম যদি কোনো একদিন কেউ পায়ে হেঁটে কলকাতা দেখতে আসে এ চত্বরে, তার কথা ভেবে।

বাবুঘাট- রাণী রাসমণির স্নানঘাট এটি। তার স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাসের বানানো। তাই নাম বাবুঘাট। জানবাজার থেকে কর্পোরেশন স্ট্রীট (এখন S.N.Banerjee Road) হয়ে, রাজভবনে বাঁক খেয়ে অকল‍্যান্ড প্লেস (ক্ষুদিরাম বসু সরণী) হয়ে স্ট্র‍্যান্ডরোড ছুঁয়ে এই বাবুঘাট।
লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক রাজচন্দ্রের নামে নির্মাণ করেন ফলক। আর সুদৃশ্য থামঘেরা যে ছাউনিটায় যাবতীয় পুজো আচ্চা ধর্মীয় কাজ করা হয়, ওটা রাণী রাসমণির নির্মাণ করা, স্বামীর স্মৃতিতে।

বাবুঘাটে চক্ররেল বরাবর গঙ্গার উপর একটা দারুণ ডিজাইনের ছোটো ব্রীজ আছে। সিডনি হারবার ব্রীজের অনুকরণে করা। সামরিক বিভাগের শর্তানুযায়ী উচ্চতা 30 ফুটের মধ‍্যে ও যেকোনো সময় খুলে ফেলা যাবে।
ফটোগ্রাফির জন‍্য ভালো। হাঁটতে পারেন।

এরপর উল্টোদিকে ইডেনের পিছন গেটে প‍্যাগোডা আছে। দেখুন। এই প‍্যাগোডা সারা পৃথিবীতে মাত্র দুটো। একটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়, আরেকটি এটা।

তার বাঁদিক বরাবর বিধানসভা, হাইকোর্ট বাইরে থেকে দেখে সোজা টাউন হল। টাউন হল দেখতে ঘন্টাখানেক।

আর হাইকোর্টের বাইরের থামগুলো যদি দেখেন, বিধানসভার দিকটা একেকটা একেক রকম স্ট্রাকচার, উপরের দিকটা খেয়াল করবেন। মোট বারোটা থাম।
পাশে শূণ‍্যে অটোমেটিক চলমান রাস্তা, যেরকম এয়ারপোর্টে থাকে। হাঁটতে হয়না। সেন্টিনারি বিল্ডিং থেকে হাইকোর্ট পুরোনো বিল্ডিং যান ওটায় জাস্টিসরা।
হাইকোর্টের ভেতরে দোতলায় গথিক আর্কিটেকচার। আছে গোপন ঘোরানো পথ, কুখ্যাত বা বিখ্যাত অভিযুক্তকে নিরাপদে আদালত কক্ষে হাজির করানোর সুব‍্যবস্থা।

তবে এখন হাইকোর্টে এন্ট্রি রেসট্রিকটেড। আর মাঝের বাগানটা অপূর্ব ছিল, শীতকালে দেখার মতো ফ্লাওয়ার শো হত। এখন বিল্ডিং তুলছে, পুরো শো টা নষ্ট হয়ে গেছে। তাও ঢুকতে পারলে দেখবেন। আই কার্ড রাখবেন।

তারপর চলে আসুন সোজা রাস্তায় সেন্ট জনস চার্চ। ওখানে জোব চার্ণক ফুল ফ‍্যামিলি শেষশ‍য‍্যায় শায়িত। সুন্দর সৌধ।
তার পাশে মাঠের মধ‍্যে অন্ধকূপ হত‍্যার ব্ল‍্যাক মিনার ও ঘড়ি। এই ঘটনাই পলাশীর যুদ্ধ শুরুর ট্রিগার ফ‍্যাক্টর ছিল।
চার্চে খুব সুন্দর পরিবেশ। চার্চের ভেতরে ফ্রেস্কোর কাজ মুগ্ধ করবে। লাস্ট সাপারের একটা রেপ্লিকা আছে। বাগান চারপাশে।

এটা দেখে বেরিয়ে পিছনে রাজভবন। ছবি তুলে, আবার সামনে গঙ্গার দিকে সিভিল কোর্টের রাস্তায় এগোবেন বাঁ হাতে এজি বেঙ্গল, পে অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস সহ পরপর হেরিটেজ বিল্ডিং। সোজা এলেই আবার গঙ্গার ধারের রাস্তায় পড়বেন। বাঁহাতে নিউ সেক্রেটারিয়েট, মাথায় বিশাল বল বসানো যেটার জাপানি প্রযুক্তির জন‍্য সারা কলকাতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস দেওয়া সম্ভব হয়। বিল্ডিং টার ভিউ মোড়ের কোণাকুনি দাঁড়িয়ে তুলবেন। দারুণ।

বাঁদিকে সেক্রেটারিয়েট রেখে, আপনি ওই মোড়ের ডানদিকে ফুটপাথ ধরে গেলেই মিলেনিয়ামের গেটের উল্টোদিকে মেটকাফ হল। ভিতরটা দেখবেন। বহু দুষ্প্রাপ্য বস্তুর সংগ্রহশালা। ন‍্যাশানাল লাইব্রেরী স্থাপনের পূর্বে এটাই কলকাতার বৃহত্তম পাবলিক লাইব্রেরি ছিল।

এরপর মিলেনিয়ামে (শিপিং এর লঞ্চঘাট) বিকেলের বিশেষ জলযানে গঙ্গাভ্রমণ করতে পারেন। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, স্ন‍্যাক্স দেয়। সন্ধ‍্যের হাওড়া ব্রীজের লাইটিং অনবদ‍্য।

তবে তার আগে জিপিও মহাকরণের দিকটা পাশের রাস্তা দিয়ে সোজা এসে ফটোগ্রাফি করতে পারেন। ওদিকে আরো হেরিটেজ আছে। আছে লালদীঘি। ব‍্যপ্তিস্ট চার্চটাও। কারেন্সি বিল্ডিং (বর্তমানে ঘরেবাইরে সংগ্রহশালা), আবার সেন্ট জনসের দিকে হাঁটতে থাকলে, পড়বে ফ‍্যান্সি লেন ( আসলে ফাঁসি লেন, ইংরেজ আমলে প্রকাশ‍্যে ফাঁসি হত ওই লেনে, উল্টোদিকের বিল্ডিংটা জাস্ট চার্চের আগেই যতদূর জানি জেলখানা ছিল।

জিপিও ছিল আগেকার ফোর্ট উইলিয়াম। এখনও জিপিওতে উঠবেন, সে লোহার লাইন আছে একটা সরু বর্ডার, পুরো চাতালে। পাশে পুঁচকে কামান আছে, লোকে তাতে থুতু ফেলে এখন।

খাওয়া দাওয়া প্রচুর দোকান। ফুটপাথে, বাট খুব ভালো। চন্দননগরের মৃত‍্যুঞ্জয়ের মিষ্টি থেকে কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া সব নিয়ে ট্রেনে আসেন ব‍্যবসায়ীরা। এখনো 20-50 টাকায় ভাতের মিল যেমন পাবেন, খিচুড়ি পাঁচরকম ভাজা পাবেন, রুটি লুচি বা কচুরির আইটেম, ধোসা উত্থাপমের দোকান, মুড়ির আইটেম, অসাধারণ কাস্টমাইজড স‍্যান্ডউইচ, এছাড়া রোল চাউ তো আছেই। পে অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস এর সামনে ঘুগনি ডিমসেদ্ধ নিয়ে সিঁড়িতে বসতেন একজন। কাস্টমাইজ করে সাজাতেন। অপূর্ব খেতে।
এছাড়া টাটকা ফ্রুট স‍্যালাড, ফল, বসিরহাটের ডাব, কি নেই বলুন তো।

রেস্তোরাঁ লিটল প্লেস আছে চাইনিজের জন‍্য। খুব ছোট্ট, নন এসি কিন্তু খাবার দুর্দান্ত ভালো।
মাঝে একটা ফ্রুটশেক এর দোকান খুলেছিল। দুর্দান্ত সব শেক। এখন বন্ধ সম্ভবত।

ব‍্যাঙ্কশালের উল্টোদিকে বিখ‍্যাত বিনোদবিহারীর মিষ্টির দোকান। কচুরি, ডাল, আলুরদম, ক্ষীরের শিঙাড়া, অবশ্যই খান‍।
এর ঠিক পাশেই আরেকটা রেস্তোরাঁ আছে এসি।
এছাড়া বিরিয়ানির জন‍্য বিনোদবিহারীর ফুটেই only alibaba এর একটা ব্রাঞ্চ আছে। তবে আমার ভালো লাগে না।
বিরিয়ানি কাবাব লাভার হলে সোজা দশমিনিট হেঁটে চাঁদনি ক্রশিং এলে আলিয়া বেটার। আরো অনেক রেস্তোরাঁ আছে।
গ্রেট ইষ্টার্ণের গলিতে ঢুকেই ডানহাতে শিবমন্দিরের পাশের গলিতে চিত্তদার সুরুচি রেস্টুরেন্ট। ডায়মন্ড ফিসফ্রাই, চিকেন স্টু খাবেন। ডালহৌসিতে ভোজ কোম্পানিও ভালো।
রেস্ত বেশি থাকলে ফ্লোটেলে খান। গঙ্গায় ভাসমান রেস্তোরাঁ।

ইতিহাস কথা কয় এখানে। নিউ সেক্রেটারিয়েট এর উল্টোদিকেই ভাঙাচোরা পঞ্চায়েত ভবনে এখনো গোপন সুড়ঙ্গ আছে ফাঁসির পরে বডি চলে যেত গঙ্গায় সোজা।
টাউন হল হাইকোর্টের জংশনে পুরোনো ডাকবাক্স, টেলিগ্রাফ মেশিন, হেলায় পড়ে ফুটপাথে, লোকে এখন ময়লা ফেলে তাতে।

স্বামীজির বাবার চেম্বার দেখবেন? সেও আছে এখানে। এখন যদিও অন‍্য অফিস, তবে স্ট্রাকচারে আলাদা করা যায়।
ঠিক সিটি সিভিল কোর্টের উল্টোদিকে মুঘল গার্ডেন রেস্তোরার উপর দোতলায় একটা বড় দরজার সাইজের জানলা দেখবেন একদম আলাদা দেখতে, ওটাই।

একদিন পায়ে পায়ে ছুঁয়ে আসুন কলকাতা। ব‍্যস্ত অফিসপাড়ার বুকে ঘুমিয়ে আছে ইতিহাস।


©অন্বেষা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top