What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made গল্পের নাম: একজন বাবার বিচার (1 Viewer)

Joined
Apr 9, 2022
Threads
100
Messages
100
Credits
7,417
গল্পের নাম: একজন বাবার বিচার

লেখক: মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম

................................................................

রাত তখন ২টা বেজে গিয়েছে বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। থানায় এখন শুধু দারোগা শফিক সাহেব এবং ছয়জন কনস্টেবল রয়েছেন, তাদের আজকে রাত্রে দায়িত্ব পড়েছে। এই রাত্রে তেমন কাজ না থাকায় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ চলে যাওয়ায় সবাই বসে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে,ঠিক তখনই থানার সদর দরজায় কেউ একজন এসে দাঁড়ায়। সামনে বসে থাকা দুইজন কনস্টেবল বিষয়টি লক্ষ্য করে, এরপর তারা উঠে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করে তখনই তারা বাইরে বিদ্যুৎ চমকানোর জন্য দেখতে পায় একজন বৃদ্ধলোক দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু তার হাতে রয়েছে এক রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র আর শরীরে বিভিন্ন জায়গায় রক্তের দাগ।

কনস্টেবলরা দ্রুত লোকটির কাছে যায় এবং বাকীদেরকে ডেকে নিয়ে এসে লোকটিকে গ্রেফতার করে।

শফিক সাহেব তার অফিসে চেয়ারে বসে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করছিলেন বলতে গেলে তার চোখ জোড়া লেগে গিয়েছিল ঠিক তখনই তাকে একজন এসে ডাক দিয়ে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি বলে। সব শুনে তিনি বললেন যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে তার কাছে নিয়ে আসার জন্য।

তার কথা মতো কনস্টেবলরা আসামীকে নিয়ে আসে। শফিক সাহবে আসামীর দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে রয়েছেন। মোমের আলোতে লোকটিকে দেখে বোঁঝা যাচ্ছে তার বয়স কম করে হলেও ৬০ বছর হবে তার চেহারাটি উস্কখুস্ক এবং ক্লান্তির একটা ছাঁপ রয়েছে।

শফিক সাহেব এবার সেই বৃদ্ধলোকটিকে তার সামনের চেয়ারে বসতে বললেন। আসলে লোকটি আসামী হলেও বয়সে তার থেকে অনেক বড় তাই তাকে বসতে বললেন।

লোকটি তার কথা মতো চেয়ারে বসলেন এবং মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলেন।

ইতিমধ্যে শফিক সাহেব তার কনস্টেবলদের দ্বারা জানতে পারলেন যে লোকটি এই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা নাম জহিরুল ইসলাম। তার স্ত্রী অনেক বছর আগে মারা গিয়েছেন এবং তার একটি ছেলে রয়েছে যার নাম আকাশ। গ্রামের সবাই জহির সাহেবকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে চেনে কিন্তু তার ছেলে আকাশ তার বাবার মতো হতে পারে নাই সে হয়েছে অন্যরকম, সারাদিন বন্ধুদের সাথে বাজে কাজ করাটাই তার মূল উদ্দেশ্য। জহির সাহেব তার ছেলেকে ভালো পথে নিয়ে আসার জন্য ছেলেকে বিয়ে করান কিন্তু ঘরে বউ রেখে আকাশ আগের মতো খারাপ কাজ করে বেড়ায়।

সব শুনে শফিক সাহেব ভাবছেন এমন কী হল যে উনি আজকে থানায় এসেছেন এই অবস্থাতে।

তাই তিনি জহির সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন " মুরব্বি আপনি এখানে কেন এসেছেন? তাও আবার এইভাবে, বাড়ির সবকিছু ঠিক আছেত?

জহির সাহেব এবার মুখ তুলে তাকালেন শফিক সাহেবের দিকে কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি খুব তৃষ্ণার্ত।

শফিক সাহেব বিষয়টি বুঝতে পেরে তার সামনে থাকা পানি ভর্তি গ্লাসটি জহির সাহেবের দিকে এগিয়ে দিয়ে পানি পান করতে বললেন।

জহির সাহেব কিছু না বলেই দ্রুত গ্লাসটি হাতে নিয়ে এক চুমুকেই সবটুকু পানি পান করে নিলেন কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার তৃষ্ণা এখনও মিটে নাই এজন্য শফিক সাহেব আরও এক গ্লাস পানি তাকে দিলেন। পানি পান করা শেষে গ্লাসটিকে টেবিলের উপর রেখে মাথা তুলে শফিক সাহেবের চোখের দিকে তাকান এবং বলেন " কিছুক্ষণ আগে আমি আমার ছেলে আকাশকে খুন করেছি ঐ ধারালো অস্ত্রটি দিয়ে"

জহির সাহেবের মুখে এমন কথা শুনে শফিক সাহেবসহ বাকীরা অবাক হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকে সবাই।

ঘোর কাটিয়ে এবার শফিক সাহেব নিজে থেকে জিজ্ঞাসা করলেন-

শফিক সাহেব: কেন নিজের ছেলেকে এভাবে হত্যা করেছেন?

জহির সাহেব: এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না স্যার।

শফিক সাহেব: কী এমন হয়েছিল যে নিজের ছেলেকে মেরে ফেললেন?

জহির সাহেব: শুনবেন সে কাহিনী?

শফিক সাহেব: জ্বী অবশ্যই বলুন কোনো সমস্যা নেই আমরা সবাই শুনব আপনার কথা।

এরপর জহির সাহেব বলতে আরম্ভ করলেন-

আমার স্ত্রী সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা যায়। সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে কিন্তু রেখে গিয়েছে তার আর আমার ভালোবাসার ফল আকাশকে। আকাশ আমার একমাত্র সন্তান। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর পরিবার থেকে অনেক চাপ দেওয়া হয় আবার বিয়ে করার জন্য কিন্তু আমি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করি নাই কারণ ঘরে সৎ মা এলে আমার ছেলেকে সে ভালোবাসবে না। তাই ছেলেকে নিয়ে রাতের আধারে আমি বাড়ি ছেড়েছিলাম নাহলে আমার পরিবার আমাকে বাধ্য করত আবার বিয়ে করার জন্য।

ছেলেকে নিয়ে চলে আসি এই গ্রামে এরপর অনেক কষ্টে টাকা রোজগার করে ছেলেকে বড় করতে থাকি। কখনও তাকে আমি শাসন করি নাই কারণ তার মা নেই এখন আমি যদি তাকে রাগ করি তাহলে সে কার কাছে যেয়ে কষ্টের কথাগুলো বলবে। ও যখন যা চেয়েছে সবকিছু এনে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দিন দিন ও বড় হতে থাকে এবং আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয়ে যায়। আগের মতো আমার সাথে তেমন কথা বলে না এবং বাড়িতেও অনেক রাত্রে ফিরে। তবুও তাকে কিছু বলি নাই কারণ ছেলে বড় হচ্ছে তাকে একটু স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন, কিন্তু এটাই ছিল আমার জীবনের সব থেকে বড় ভূল। আকাশের সাথে কিছু বাজে ছেলে মেশাতে সেও তাদের মতো বাজে কাজ করতে শুরু করল। প্রথমে নেশা করতে শুরু করে এরপর আমার কাছ থেকে নানাভাবে টাকা নিয়ে এসব নেশা করত কিন্তু পরে যখন আমি বুঝতে পারলাম যে ও এমন কাজ করে তখন থেকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলাম তারপরও সে ঠিক হল না ঘরের মাল জিনিস চুরি করে বিক্রি করতে শুরু করে এবং কিছুদিন পর বাইরের লোকের বাড়ি থেকে চুরি ডাকাতি শুরু করে শুধুমাত্র নেশা করা এবং জুয়া খেলার জন্য।

তার জন্য গ্রামের মানুষ আমাকে বিচার দিতে আসত আমি তাকে অনেক বুঝাতাম কিন্তু সে নিজের মতো চলত আমাকে কখনও পাত্তা দিত না। ততদিনে পড়াশোনা সব বাদ দিয়ে খারাপ কাজ করতে শুরু করল। আমি ওকে নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে যাই তখন আমাকে গ্রামের লোকজন বলল যে আকাশকে বিয়ে দিয়ে ঘরে বউ নিয়ে আসলে হয়ত সে ভালো হয়ে যাবে আর এমন কিছু করবে না। আমিও তাদের কথামতো ছেলেকে বিয়ে দিলাম। কিন্তু বিয়ে দেওয়ার পর আমার নিজের কাছে নিজেকে বড় পাপি মনে হতে থাকে। কারণ বিয়ের পরে আকাশের কোনো পরিবর্তন হল না বরং তার বউকে প্রতিদিন রাত্রে নেশা করে এসে অত্যাচার করত এবং তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য বলত।

প্রথম প্রথম বউমা বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে ওর হাতে তুলে দিত কিন্তু তারপরও আমার ছেলের অত্যাচার থেকে মেয়েটা নিস্তার পেত না। টাকা শেষ হলে আবার তাকে বলত টাকা নিয়ে আসার জন্য এবং যতদিন টাকা না এনে দিত ততদিন তার উপর চলত অত্যাচার। এভাবে বার বার টাকা দিতে দিতে তার বাবার বাড়ি থেকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিল যা আমার বউমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিদিন রাত্রে মেয়েটার উপরে আমার ছেলেটা অত্যাচার চালায় টাকার জন্য। আমি এসব প্রতিদিন রাত্রে পাশের ঘর থেকে শুনতে পাই এবং মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে আরও কথা শুনিয়ে ঘর থেকে বের করে দিত। আমার ছেলে যখন আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয় তখন মনে হয় যে এই দিন দেখার জন্য ছেলেকে বড় করেছি এটা ভাবতেও আমার ঘৃণা করে।

এভাবেই চলে দিনরাত অত্যাচার আর আমার ছেলের খারাপ কাজগুলো।

প্রতিদিনের মতো আজকে রাত্রেও আমার ছেলে নেশা করে বাড়িতে আসে এবং বউমাকে বলে টাকা দেওয়ার জন্য তখন আমার বউমা প্রথমবারের মতো প্রতিবাদ করে কিন্তু এই প্রতিবাদই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আমার ছেলে যেনো ক্ষ্যাপা ষাঁড় হয়ে যায় এবং বউমাকে ইচ্ছামতো মারতে শুরু করে হয়ত তার উদ্দেশ্য মেরে ফেলার।

আমি পাশের ঘর থেকে এসব শুনে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না আজকে সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে এর একটা বিহীত করতেই হবে।

উঠে ছেলের ঘরে যাই এবং যেয়ে দেখি আমার ছেলে বউমাকে ধরে মারছে আর বউমা মাটিতে পড়ে আছে নিস্তেজ হয়ে হয়ত একটু বেশি মার পড়লে সে মারা যাবে।

আমি আকাশকে ঠ্যাকাতে গেলে সে আমাকে ঠেলে ফেলে দেয় আমি আবার উঠে যাই তাকে থামানোর জন্য কিন্তু সে আমাকে প্রথমবারেরমতো এবারও ফেলে দেয়।

এই বয়সে এমন ধাক্কা সামলাতে কষ্ট হয়ে যায় তাই আমি মাটিতে পড়ে থাকি তখন দেখি আকাশ তার খাটের নিচ থেকে একটি ইট বের করে বউমার দিকে যাচ্ছে হয়ত তাকে এটি দিয়ে আঘাত করবে। বউমা তখন মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে তার কোনো শক্তি নেই উঠে পালানোর।

আকাশের চেহারায় আমি তখন দেখেছি পৈশাচিক ছাপ তাকে দেখে আমার নিজের ছেলে মনে হচ্ছিল না। তখন মনে হচ্ছিল এ আমার ছেলে না এ কোনো শয়তান এর প্রতিচ্ছবি।

আকাশ এগিয়ে গিয়ে বউমার গলার উপর পাঁ দিয়ে পাড়িয়ে ধরে বলে " টাকা যখন দিবি না তাহলে তোকে বেঁচে থাকতে হবে না" এই কথা বলে যখন ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করতে যাবে তখনই আমি মাটি থেকে উঠে পাশে এই ধারালো অস্ত্রটি নিয়ে পিছন থেকে আকাশের ঘাড়ে চালিয়ে দেই।

এরপর আকাশ মাটিতে পড়ে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। জানেন স্যার আমার ছেলেকে খুন করেছি এতে আমার কোনো কষ্ট নেই কষ্টটা হল আমি তাকে মানুষ করতে পারলাম না। তবে একদিক থেকে আমি খুশি যে একজন অসহায় মেয়েকে এক পিশাচের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি এখন আমার যা শাস্তি হবে তা আমি মাথা পেতে নিব।

সব শুনে শফিক সাহেব এবং বাকীরা হতবাক হয়ে গিয়েছে। কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না তখন শফিক সাহেব বললেন-

শফিক সাহেব: দেখুন আপনি যা করেছেন হয়ত সেটি আপনার দিক থেকে ভালো করেছেন কিন্তু আইনের কাছে খুন মানেই অপরাধ। তাই আমরা আপনাকে চাইলেও ছেড়ে দিতে পারব না। এজন্য আপনাকে আদালতে পেশ করা হবে, এখন আদালতে যে শাস্তি দেওয়া হবে তা মেনে নিতে হবে।

জহির সাহেব: আমি এর জন্য প্রস্তুত রয়েছি স্যার।

জহির সাহেবের কথা শুনতে শুনতে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে যায়। সকাল হওয়ার সাথে সাথে শফিক সাহেব এবং বাকীদের ডিউটি শেষ হয়ে যায়। তারা সবাই যার যার বাড়িতে ফিরে যায় এবং জহির সাহেব একা একা থাকেন থানাতে হয়ত খুব শীঘ্রই তাকে আদালতে চালান করা হবে আর সেখানেই ঘোষণা দেওয়া হবে তার শাস্তির।

হয়ত জহির সাহেবের কাছে এটাই একজন বাবার বিচার যিনি তার সন্তানকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে না পেরে হত্যা করলেন।

সব বাবারাই চায় যে তার সন্তান ভালো মানুষ হয়ে সমাজে মাথা উচু করে চলুক। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের এই চেষ্টা বিফলে যায়। সন্তানের ভূলের জন্য সেই সব নির্দোষ বাবাদেরকে নানাভাবে অপমাণিত হতে হয়। যদি সেইসব সন্তানেরা বুঝতে পারত যে তাদের বাবারা কতটা ত্যাগ স্বীকার করে তাদেরকে বড় করেছেন তাহলে হয়ত এমনটি করত না।

সকল বাবাদের প্রতি রইল অনেক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।

উৎসর্গ সকল বাবাদেরকে।

<<<<<< সমাপ্ত >>>>>>>

(ভূলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

Copyright: December 05,2019 at 29 AM.

Maruf Tamim (Author).
 

Users who are viewing this thread

Back
Top