What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made ভৌতিক ব্যপার-০২ (রহমত কাকা) (1 Viewer)

Joined
Apr 9, 2022
Threads
100
Messages
100
Credits
7,417
২. রহমত কাকা

.....

আজ অনেকদিন পর বাড়ী ফিরছে সৌরভ। পড়াশোনার জন্য তাকে শহরে একলা থাকতে হয় এবং তার পরিবার গ্রামে থাকে।

...

কলেজে পরীক্ষা চলার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে পরিবারের সাথে তার দেখা হয়নি।

আজ পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে তাই আর দেরী না করে আজই রওনা হয়েছে তার বাড়ীর উদ্দেশ্যে।

...

দুপুরে পরীক্ষা শেষ করে সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে বের হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়।

তাই উপায় না পেয়ে রাত ৮ টায় তাদের গ্রামে যাওয়ার শেষ বাসটি ধরতে হয় তাকে।

শহর থেকে তাদের গ্রামে যেতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘন্টার মত।

...

রাত ৮ টার বাসে রওনা দেয় সৌরভ, কিন্তু পথে তার বাসটি নষ্ট হয়ে যায়।

বাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সেটি ঠিক করতে অনেক সময় লেগে যায় যার ফলে তার পৌছাতে অনেক দেরী হয়।

...

বাস তাকে তার নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।

বাস থেকে যখন নামে তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।

...

বাস থেকে নামার পর সৌরভ তার হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় ২টা বেজে গিয়েছে।

গ্রামে রাত ২টা মানে মাঝ রাত বললে চলে।

......

বাস স্ট্যান্ড থেকে সৌরভদের বাড়ী কিছুটা দূরে তাই সেখানে যাওয়ার জন্য ভ্যান অথবা রিকশার প্রয়োজন।

এদিকে অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় আশেপাশে এখন কোনো ভ্যান অথবা রিকশা পাওয়া যাবে না।

এখন এত রাত্রে বাড়ী ফিরবে কী করে ভাবতে থাকে সৌরভ। তাই সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার বাবাকে জানানোর জন্য কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়,মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে চার্জ নেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এখন নিজেই নিজের কপাল চাপড়াচ্ছে তাছাড়া তার বাড়ী ফেরার খবর কেউ জানেও না। বাড়ীর সবাইকে অবাক করে দিবে এইজন্য কাউকে না জানিয়ে এসেছে কিন্তু এখন নিজেকে নিজের বোকামীর খেসারত দিতে হচ্ছে।

...

কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আশেপাশে দেখতে থাকে যদি কিছু পাওয়া যায় কিন্তু এত রাত্রে কেউ তার জন্য বসে নেই এখানে।

যখন কিছু পেল না তখন আর উপায় না পেয়ে কাধে তার ভারী ব্যাগটি নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে হাটতে শুরু করল।

...

কিছুদূর হেটে যাওয়ার পর সৌরভ থেমে যায় কারণ সে আর এভাবে হাটতে পারছেনা। কাধে এত ভারী ব্যাগ এবং এতটা পথ জার্নি করে এসে তার ক্লান্ত শরীর আর কিছুতে সাড়া দিচ্ছে না।

এখনও অনেক পথ বাকি রয়েছে তার বাড়ী যেতে। কিন্তু তার পা আর চলতে চাইছে না, এক ঝাক ক্লান্তি এসে তাকে ঘিরে ধরেছে।

তাই আর উপায় না পেয়ে রাস্তার পাশেই একটি বড় পুরাতন বটগাছ রয়েছে সেই গাছের গোড়ায় বসে পড়ল বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।

গাছের ডালে পিঠ দিতেই তার মনে শান্তি বিরাজ করতে শুরু করে মনে হচ্ছে কতটা শান্তির জায়গা এখানে, তাই আরামে দুচোখ বন্ধ করে বসে থাকে।

......

চারিদিকে অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এত রাত্রে বাইরে কোনো মানুষের আনাগোনা নেই শুধু রয়েছে কয়েকটি বিড়াল এবং কুকুর আর রয়েছে ঝিঝিপোকাদের ডাকাডাকি।

সেই অন্ধকারের মাঝেই একটি গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছে সৌরভ। তার সারা শরীর জুড়ে রয়েছে ক্লান্তি আর দূর্বলতা।

......

"বাবা সৌরভ তুমি এইখানে কী করতেছ?"

হঠাত কারও ডাকে একটু নড়ে চড়ে উঠে সৌরভ। কন্ঠ স্বরটি তার কাছে খুব চেনা চেনা লাগছে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না।

......

কাউকে দেখতে না পেয়ে মনের ভূল ভেবে আবারও চোখ বন্ধ করে গাছের সাথে পিঠ লাগিয়ে দেয়।

চোখ বন্ধ করার পর আবারও সেই একই কন্ঠে কেউ বলল "কী বাবা শরীর খারাপ?"

এবার এই কন্ঠ শুনে সৌরভ আর থেমে রইল না সঙ্গে সঙ্গে চোখ মেলে তাকায়।

চোখ মেলে তাকিয়ে সে অবাক হয়ে যায় কারণ তার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি আর কেউ নয় তারই পরিচিত "রহমত মিয়া"

......

রহমত মিয়া হলেন একজন রিকশাচালক এবং অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। তার এবং সৌরভদের বাড়ী পাশাপাশি এমন কী তাদের প্রধান ফটক একই।

...

এত অন্ধকারের মাঝেও সৌরভ খুব পরিষ্কারভাবে রহমত মিয়ার মুখ দেখতে পারছে। এতক্ষণ ক্লান্ত থাকার পরও রহমত মিয়াকে দেখতে পেয়ে তার মুখে হাসি ফুটল।

তাই আর দেরী না করে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সৌরভ বলল-

সৌরভঃ- আসসালামু আলাইকুম,কাকা।

রহমতঃ- ওয়ালাইকুম আসসালাম,বাবা সৌরভ তুমি এত রাতে এইখানে কী কর?

সৌরভঃ- কাকা আমি ত বাড়ী যাচ্ছিলাম বাস থেকে নেমে কোনো ভ্যান-রিকশা পাই নাই তাই হাটতেছিলাম কিন্তু এই পর্যন্ত আসার পর শরীর খারাপ লাগতেছিল তাই বসে পড়ছিলাম ঐ গাছের নিচে।

রহমতঃ- আহারে,তুমি আসো আমার রিকশাতে একসাথে বাড়ী যাই দুজনে।

সৌরভঃ- আচ্ছা কাকা চলেন আপনাকে পেয়ে আমার ভালো হল নাহলে এই রাত এখানে বসে থাকতে হত আমাকে।

এরপর সৌরভ রহমত মিয়ার রিকশায় উঠে বসে এবং রহমত মিয়া রিকশা চালিয়ে তাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে এগোতে থাকে।

......

কিছুক্ষণ দুজনে চুপ করে থাকার পর রহমত মিয়া নিজে থেকে বলতে শুরু করল-

রহমত মিয়াঃ- তা বাবা তোমার পড়াশোনা কেমন চলতেছে?

সৌরভঃ- জ্বী কাকা আপনাদের দোয়াতে খুব ভালোই চলছে। আপনার কথা বলেন কেমন আছেন আর বাড়ীর সবাই কেমন আছে?

রহমত মিয়াঃ- এই আছে কোনোভাবে আমি... (থেমে যায়)

সৌরভঃ- কিছু বললেন কাকা?

রহমত মিয়াঃ- নাহ, আচ্ছা তুমি এত রাত্রে বাড়ী আসতেছ তা কাউকে জানাও নাই?

সৌরভঃ- নাহ কাকা কাউকে জানানো হয় নাই। তাছাড়া আজকে দুপুরে পরীক্ষা শুরুর আগে আব্বুকে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু ধরে নাই আর আম্মুর ফোনও বন্ধ ছিল, পরে পরীক্ষা শেষ করে ভাবলাম আর কী করব এখন ত অনেক লম্বা ছুটি পাচ্ছি তাই ঐ রাত্রেই রওনা দিলাম। পথে আবার বাস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখানে পৌছাতে অনেক দেরী হয়ে যায় যার জন্য কোনো ভ্যান-রিকশা পাচ্ছিলাম না। এদিকে আব্বুকে ফোন দিতে যেয়ে দেখি আমার ফোনে চার্জ নাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাই আর উপায় না পেয়ে হাটতে শুরু করলাম। কিন্তু বেশিদূর আসতে পারলাম না ক্লান্ত লাগছিল তাই ঐখানে বসে ছিলাম এরপর ত আপনাকে পেলাম।

রহমত মিয়াঃ- মেলা পথ পাড়ি দিয়ে আসছ ত তাই ক্লান্ত হয়ে গেছিলে। তুমি যদি একবার বাড়ী জানাইতে তাহলে তোমার আব্বা যাইয়া দাঁড়ায় থাকতেন তাইলে আর সমস্যা হইত না।

সৌরভঃ- জ্বী কাকা কিন্তু ভূল ত এইটাই করছি সবাইকে চমক দিতে যেয়ে নিজেই গ্যাড়া কলে পড়ছিলাম।

রহমত মিয়াঃ- হা হা এখন আর চিন্তা নাই আমি আছি ত।

সৌরভঃ- হ্যা কাকা আপনিই আমার শেষ ভরসা। তা কাকা এত রাত্রে আপনি এখানে কী করেন? আমার জানা মতে আপনি এত রাত্রে কখনও রিকশা নিয়ে বের হন না। খুব দ্রুত বাড়ী ফিরে যান।

রহমত মিয়াঃ- আল্লাহ আমাকে পাঠাইছে তোমার কাছে হিল্লা হিসেবে।

সৌরভঃ- তা ঠিক বলেছেন কাকা, আপনি না এলে আমার সারারাত ঐখানে বসে থাকতে হত নাহলে হেটে বাড়ী যেতে হত।

রহমত মিয়াঃ- হ্যা এই জন্যইত আমি এসেছি তোমাকে নিয়ে যেতে।

সৌরভঃ- আমি চির কৃতজ্ঞ কাকা।

এরপর আর দুজনে কোনো কথা না বলে চুপচাপ এগিয়ে চলল।

......

কিছুক্ষণের মধ্যেই সৌরভ তাদের বাড়ীর প্রধান দরজার কাছে এসে পৌছায়।

সেখানে পৌছানোর পর সে রিকশা থেকে নেমে যায় এবং দেখে রহমত মিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন।

তাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে জিজ্ঞাসা করল-

সৌরভঃ- কী ব্যাপার কাকা আপনি বাড়ীতে যাবেন না?

রহমত মিয়াঃ- বাড়ী আর আমার নাই রে বাপ।

সৌরভঃ- ঠিক বুঝতে পারলাম না কাকা।

রহমত মিয়াঃ- ও কিছু না তুমি বাড়ীতে যাও,আমি একটু ঘুরে তারপর বাড়ী আসতেছি।

সৌরভঃ- আচ্ছা কাকা পরে দেখা হবে।

কথা শেষ করার সাথে সাথেই রহমত মিয়া খুব দ্রুত রিকশা চালিয়ে চলে যান।

...

এদিকে সৌরভ আর দেরী না করে তাদের বাড়ীর প্রধান ফটক অতিক্রম করে ভিতরে ঢুকে।

তাদের বাড়ী যাওয়ার আগে রহমত মিয়ার বাড়ী আসে।

প্রতিবারের মত এবারও সৌরভ সেই রহমত মিয়াদের বাড়ীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু এবার তার কাছে কেন যেন অন্য রকম লাগছে।

তার নাকে আগরবাতি এবং গোলাপজলের ঘ্রাণ আসে। এত বছরে তাদের বাড়ীর আশেপাশে এমন ঘ্রাণ কখনও পাওয়া যায় নাই। শেষবার এমন ঘ্রাণ পেয়েছিল যখন তার দাদী মারা যান তখন, এরপর তাদের বাড়ীতে কেউ আগরবাতি অথবা গোলাপজল নিয়ে আসেনি।

তবুও সে আর কিছু না ভেবে নিজের বাড়ীতে গিয়ে পৌছায়।

......

বাড়ীর দরজায় দাঁড়িয়ে সৌরভ তার মাকে ডাক দেয়।

একবার,দুইবার,তিনবার এবং চারবার ডাক দেওয়ার পর দরজা খোলার শব্দ পায় সে।

দরজা খোলার পর সৌরভ দেখতে পায় ওপর পাশে তার বাবা ঘুম ঘুম চোখে দাড়িয়ে রয়েছেন।

...

এত রাত্রে ছেলেকে দেখতে পেয়ে সৌরভের বাবা মইনুদ্দিন অবাক হয়ে যান। তার চোখের ঘুম উধাও হয়ে যায়। সে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে তার ছেলে এত রাত্রে এখানে এসেছে।

...

বাবাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সৌরভ বলল "কেমন আছো আব্বু?"

মইনুদ্দিন এবার সৌরভের মুখ থেকে "আব্বু" ডাক শুনে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করেন-

মইনুদ্দিনঃ- কী রে বাপ তুই এত রাত্রে কোত্থেকে এলি?

সৌরভঃ- শহর থেকে এসেছি আব্বু।

মইনুদ্দিনঃ- তাই বলে না জানিয়ে এভাবে এত রাত্রে চলে এসেছিস?

সৌরভঃ- ভালো লাগছিল না তাই চলে এলাম তবে এবার আমাকে ভিতরে ঢুকতে যাও অনেক্ষণ ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি মশায় কামড়াচ্ছে।

মইনুদ্দিনঃ- ওহ হ্যা ভিতরে আয় বাবা।

......

সৌরভ আর কথা না বাড়িয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।

এদিকে সৌরভের মা রাহেলা বেগম ঘুমিয়ে ছিলেন তার ঘরে কিন্তু হঠাত করে কারও ডাকে তার ঘুমে ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে তার কাছে কেন যেন মনে হচ্ছিল পরিচিত কেউ ডাকছে তাই বিছানা থেকে উঠে তার স্বামী মইনুদ্দিন'কে ঘুম থেকে তুলে পাঠিয়ে দেন দরজা খোলার জন্য এবং তিনিও পিছু পিছু এসে আড়াল করে দাড়ান।

তবে যখন দেখলেন সৌরভ এসেছে তখন আর তিনি আড়ালে না থেকে সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন-

রাহেলাঃ- বাবা সৌরভ তুই এত রাত্রে এখানে কোত্থেকে এলি?

সৌরভঃ- মা শহর থেকে এসেছি,এখন আর কিছু জিজ্ঞাসা কর না আমার প্রচন্ড খুদা লেগেছে কিছু খেতে দাও সারাদিনে কিছুই খাওয়া হয়নি।

রাহেলাঃ- আচ্ছা বাবা তুই হাত-মুখ ধুয়ে এসে খাবার টেবিলে বস আমি খাবার গরম করে দিচ্ছি।

সৌরভঃ- আচ্ছা মা।

এরপর সৌরভ হাত-মুখ ধুতে চলে যায় আর তার মা খাবার গরম দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

...

হাত-মুখ ধুয়ে এসে সৌরভ খাবার টেবিলে বসে খেতে আরম্ভ করে এবং তার মা-বাবা সামনে বসে তাকে দেখছে।

খাওয়ার এক পর্যায়ে মইনুদ্দিন, সৌরভকে জিজ্ঞাসা করলেন-

মইনুদ্দিনঃ- আমি ভেবে পাচ্ছি না তুই এত রাত্রে কীভাবে এলি? তাছাড়া তোর এই সময় আসতেই বা হল কেন?

সৌরভঃ- কেন বাড়ীতে আসতে কী নিষেধ আছে আব্বু?

মইনুদ্দিনঃ- আরে না তোকে আসতে নিষেধ করছে কে? তবে তুই যে এত রাত্রে না জানিয়ে চলে এলি তাই বলছিলাম।

সৌরভঃ- আসলে বিকালে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভাবলাম আর থেকে কী করব? তাই রাতের বাসে চলে এলাম।

মইনুদ্দিনঃ- হুম আসবি যখন একটিবার আমাকে জানাতে পারলি না? আমি গিয়ে তোকে বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়ে আসতাম আমার মোটরসাইকেলে করে। তাছাড়া তোর ত আরও আগে আসার কথা ছিল কারণ শহর থেকে আমাদের এখানে আসতে সময় লাগে চার ঘন্টা।

সৌরভঃ- হ্যা আব্বু আরও আগে আসতে পারতাম কিন্তু পথে বাস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এত দেরী হয়ে যায়। তাছাড়া ভেবেছিলাম তোমাদেরকে একটু চমকে দিব তাই আর জানানো হয়নি।

মইনুদ্দিনঃ- ওহ তা বাস থেকে নেমে অন্তত আমাকে ফোন করতি আমি গিয়ে নিয়ে আসতাম তোকে শুধু শুধু এত রাত্রে একা একা এসেছিস, তাছাড়া আমাদের এদিকে ত বেশি রাত হলে আর কোনো ভ্যান-রিকশা পাওয়া যায় না। আচ্ছা তুই এত পথ কীভাবে এসেছিস?

সৌরভঃ- বাস থেকে যখন নেমেছিলাম তখন রাত প্রায় ২টা বেজে গিয়েছিল তাই মোবাইল বের করে তোমাকে ফোন দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু দেখি যে চার্জ না থাকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এরপর আর উপায় না পেয়ে হাটতে শুরু করি। কিছুদূর আসার পর অনেক ক্লান্ত লাগছিল তাই আমাদের গ্রামে যে পুরাতন বটগাছটি রয়েছে ওর গোড়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।

মইনুদ্দিনঃ- কী বলিস এতটা পথ তুই ঐ ভারী ব্যাগ কাধে নিয়ে হেটে এসেছিস?

সৌরভঃ- নাহ পরে ঐখান থেকে রিকশা পেয়েছিলাম আর সেই রিকশা করেই বাড়ী পর্যন্ত আসতে পেরেছি নাহলে আমাকে আজ ঐ গাছতলাতেই রাত পার করতে হত।

মইনুদ্দিনঃ- ওহ যাক তাও ভালো হল এত রাত্রে রিকশা পেয়েছিস আল্লাহ সহায় হয়েছিলেন বলে।

সৌরভঃ- হ্যা আব্বু তা আর বলতে আল্লাহ আমার কষ্ট বুঝেছেন তাই ত হিল্লা হিসেবে রহমত কাকাকে পাঠিয়েছেন আমাকে বাড়ী পৌছে দেওয়ার জন্য।

মইনুদ্দিনঃ- কী বলিস এসব? রহমত কাকা মানে?

সৌরভঃ- আমাদের বাড়ীর পাশে যে রহমত কাকা আছেন না উনিই আমাকে উনার রিকশা করে বাড়ী পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।

মইনুদ্দিনঃ- কী বলছিস? এ কীভাবে সম্ভব?

সৌরভঃ- কেন আব্বু কী হয়েছে?

মইনুদ্দিনঃ- রহমত কীভাবে আসবে?

সৌরভঃ- কেন একটু খুলে বল?

মইনুদ্দিনঃ- তুই কী কিছুই জানিস না? তোর মা তোকে কিছু বলেনি?

সৌরভঃ- আজকে তোমাদের দুজনের সাথে আমার কোনো যোগাযোগই হয়নি। কিন্তু তুমি এভাবে ঘাবড়ে যাচ্ছ কেন আব্বু?

এতক্ষণ বাবা এবং ছেলের কথা পাশে বসে শুনছিলেন রাহেলা বেগম কিন্তু তিনি এবার আর চুপ করে থাকতে পারলেন না তাই সৌরভকে উদ্দেশ্য করে বললেন "তোর রহমত কাকা আজকে দুপুরে মারা গিয়েছেন।"

......

মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে সৌরভ যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে কিছুতেই এই কথাটি বিশ্বাস করতে পারছে না। হয়ত তার মা-বাবার কোনো ভূল হচ্ছে তাই সে এবার বলল-

সৌরভঃ- নাহ তোমাদের ভূল হচ্ছে কোথাও,রহমত কাকা মারা যাবেন কেন? যদি মারা যেতেন তাহলে আমাকে রিকশা করে এভাবে বাড়ীতে দিয়ে গেলেন কীভাবে? তাছাড়া পথে কত কথা বললেন আমার সাথে।

মইনুদ্দিনঃ- নাহ রে বাবা আমাদের ভূল হচ্ছে না,আচ্ছা তুই কী বাড়ীতে ঢোকার সময় কোনো নতুন কবর দেখতে পাস নি?

সৌরভঃ- অন্ধকারে ত কিছুই দেখতে পারছিলাম না কোনোভাবে হাতড়ে আমাদের বাড়ী পর্যন্ত আসতে পেরেছি, তবে হ্যা আমার নাকে আগরবাতি এবং গোলাপ জলের ঘ্রাণ এসেছিল।

মইনুদ্দিনঃ- হ্যা ঐ ঘ্রাণটা রহমত ভাইয়ের কবর থেকেই আসছিল। আজকে সকালে ঐ পুরাতন বটগাছের সামনে ট্রাকের সাথে তার রিকশার ধাক্কা লাগে তারপর তাকে হাসপাতালে নিলে দুপুরে মারা যায়। এরপর মাগরিবের সময় আমরা তাকে দাফন করি।

সৌরভঃ- কিন্তু আব্বু আমি ত রহমত কাকাকে দেখলাম উনি আমাকে কত যত্ন করে বাড়ী পৌছে দিলেন। একজন জলজান্ত মানুষ কীভাবে মৃত হতে পারে?

মইনুদ্দিনঃ- বাবা এসব নিয়ে এখন আর ভাবার দরকার নাই তুই খাওয়া শেষ করে ঘরে যেয়ে ঘুমা কাল সকালে তোকে রহমত ভাইয়ের কবরে নিয়ে যাব।

বাবার কথা শুনে সৌরভ আর কোনো উত্তর দিতে পারে না চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর খাওয়া ছেড়ে উঠে হাত ধুয়ে তার ঘরে চলে যায়।

......

এভাবে খাবার ছেড়ে চলে যাওয়ায় রাহেলা বেগম, সৌরভকে আটকাতে যান কিন্তু মইনুদ্দিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন "ওকে ঘরে যেতে দাও আর কিছু বল না এখন। কারণ ওর মনের অবস্থা ভালো না।"

এই কথাটি বলে মইনুদ্দিন তার ঘরে চলে যায়।

......

এদিকে সৌরভ বিছানায় শুয়ে তার বাবার বলা কথাগুলো ভাবতে থাকে। সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না যে রহমত কাকা আর বেঁচে নেই। অথচ কিছুক্ষণ আগেই সে রহমত মিয়াকে দেখেছে এবং তার রিকশায় চড়ে বাড়ীতে এসেছে। কিন্তু সেই রহমত মিয়া নাকি তারও কয়েক ঘন্টা পূর্বে মারা গিয়েছেন।

তাহলে সে কে ছিল????

...

সমাপ্ত...

(গল্পটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই। ভূলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। অন্যান্য গল্প পড়তে আমার ফেসবুক পেজ "Maruf Tamim Author" এ ঘুরে আসতে পারেন।)

...

ভৌতিক ব্যাপার- ০২

লেখকঃ- মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ (তামিম)

...

Copyright: March11,2022 at 12:33 PM.

Maruf Tamim Author.
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top