বীরবল কোনো কল্পিত নয়, ঐতিহাসিক চরিত্র। সম্রাট আকবর ও বীরবল ছিলেন হরিহর আত্মা। আবার কোনো কোনো বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে যে কখনো মনোমালিন্য হয়নি, এমন নয়। হয়েছে। কিন্তু সে শুধু সাময়িকসময়ের জন্য। কারণ, রাজকাজ পরিচালনায় সম্রাট আকবরের কাছে বীরবল ছিলেন এক অনিবার্য মন্ত্রণাদাতা।
*** বুদ্ধির দৌড়ে দুজন ***
একদিন প্রাসাদের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বেশ গম্ভীরভাবেই বাদশাহ আকবর বীরবলকে বললেন, 'দোতলায় পা দেওয়ার আগে যদি তুমি আমাকে হাসাতে পারো, তাহলে তোমাকে খুবই ভালো জাতের একটি আরবি ঘোড়া উপহার দেব।'
এই কথা বলে বাদশাহ যখন ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন, তখন বীরবল তাঁকে অনেক মজার মজার কথা বলতে লাগলেন। যত রকমের রসাল গল্প তাঁর জানা ছিল, বাদশাহকে হাসানোর জন্য তার প্রায় সবই উজাড় করে দিলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে হাসাতে ব্যর্থ হলেন।
অবশেষে যখন বাদশাহ সিঁড়ির শেষ ধাপে উঠলেন, বীরবল আচমকা বলে উঠলেন, 'যাচ্ছে যাচ্ছে, গেল গেল—গাধার বাচ্চা চলে গেল।'
বীরবলের এ কথায় উত্তেজিত হয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে আকবর বললেন, 'নরকের কীট, গাধার বাচ্চাটা কে?'
'না না, সত্যি সত্যিই কেউ না', বীরবল উত্তর দিলেন, 'আপনাকে শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে হাসতে না দেখে আমি ভাবলাম, আরবি ঘোড়াটা পাওয়ার আশা আর নেই। মনের যন্ত্রণায় তাই আমি বলে ফেললাম, গাধার বাচ্চা!'
বীরবলের মনের মধ্যে হতাশা আসায় বাদশাহ খুশি হয়ে হেসে ফেললেন।
বীরবল তখন চিৎকার করে বলে উঠলেন, 'ওই ঘোড়াটি তো তাহলে এখন আমারই হলো। আপনি যে এখন সিঁড়ির শেষ ধাপে আছেন, জাহাঁপনা।' বাদশাহ নিচের দিকে তাকালেন এবং নিজের বোকামির জন্য নিজেকে ধিক্কার দিলেন।
আর ওদিকে তখন ফিকফিক করে হাসছেন বীরবল।
*** বীরবলের রাজা চেনা ***
বীরবলের খ্যাতি শুনে জেশুলমিয়ারের রাজা বাদশাহ আকবরের কাছে অনুরোধ করলেন, বীরবলকে যেন দিন কয়েকের জন্য তাঁর কাছে পাঠানো হয়। আকবরের মধ্যে কখনোই সৌজন্যের অভাব ছিল না। তিনি বীরবলকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। বীরবলের হাতে তাঁর জন্য কিছু মূল্যবান উপহারও পাঠালেন।
জেশুলমিয়ারে পৌঁছামাত্র বীরবল রাজাকে খবর দিলেন। রাজা বীরবলের বুদ্ধির পরীক্ষা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। তিনি খবর পাওয়ামাত্রই সিংহাসন থেকে নেমে এসে সাধারণ একজন সভাসদের পোশাক পরে সভাসদদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। বীরবল রাজসভায় এসে দেখলেন সিংহাসন শূন্য। তিনি তো বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন—কাকে অভিবাদন জানাবেন?
কিন্তু মুহূর্তে বীরবলের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। চারদিকে ইতস্তত তাকিয়ে বীরবল সরাসরি রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানালেন। তারপর এমন ভাব দেখালেন যেন রাজাকে অনেক দিন ধরে চেনেন। এতে রাজার বিস্ময়ের সীমা থাকল না। বীরবলের কাছে তিনি জানতে চাইলেন, কীভাবে রাজার এই গোপনীয়তা তিনি ধরে ফেললেন। দুজনের কেউ তো কাউকে কোনো দিন দেখেননি।
বীরবল উত্তর দিলেন, 'মহারাজ, চোখ থাকলেও অনেকে দেখতে পায় না, মগজ থাকতেও অনেকে বুঝতে পারে না। এটা খুবই সহজ ব্যাপার। আমি লক্ষ করলাম, আপনি সবার দিকে তাকাচ্ছেন আর অন্য সবার চোখ আপনার দিকে স্থির রয়েছে। এ থেকে সহজেই বুঝতে পারলাম শূন্য সিংহাসনটি কার।'
বীরবলের বুদ্ধির প্রমাণ পেয়ে রাজা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। এক সপ্তাহ ধরে আনন্দোৎসবের পর তিনি বীরবলকে রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান 'আক্কেল বাহাদুর' উপাধিতে ভূষিত করলেন। তারপর বহু মূল্যবান উপঢৌকনসহ তাঁকে আকবরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
* সংকলন ও সম্পাদনা: আখতার হুসেন | প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত রসের রাজা বীরবলের সেরা গল্প বই থেকে
*** বুদ্ধির দৌড়ে দুজন ***
একদিন প্রাসাদের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বেশ গম্ভীরভাবেই বাদশাহ আকবর বীরবলকে বললেন, 'দোতলায় পা দেওয়ার আগে যদি তুমি আমাকে হাসাতে পারো, তাহলে তোমাকে খুবই ভালো জাতের একটি আরবি ঘোড়া উপহার দেব।'
এই কথা বলে বাদশাহ যখন ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিলেন, তখন বীরবল তাঁকে অনেক মজার মজার কথা বলতে লাগলেন। যত রকমের রসাল গল্প তাঁর জানা ছিল, বাদশাহকে হাসানোর জন্য তার প্রায় সবই উজাড় করে দিলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে হাসাতে ব্যর্থ হলেন।
অবশেষে যখন বাদশাহ সিঁড়ির শেষ ধাপে উঠলেন, বীরবল আচমকা বলে উঠলেন, 'যাচ্ছে যাচ্ছে, গেল গেল—গাধার বাচ্চা চলে গেল।'
বীরবলের এ কথায় উত্তেজিত হয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে আকবর বললেন, 'নরকের কীট, গাধার বাচ্চাটা কে?'
'না না, সত্যি সত্যিই কেউ না', বীরবল উত্তর দিলেন, 'আপনাকে শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে হাসতে না দেখে আমি ভাবলাম, আরবি ঘোড়াটা পাওয়ার আশা আর নেই। মনের যন্ত্রণায় তাই আমি বলে ফেললাম, গাধার বাচ্চা!'
বীরবলের মনের মধ্যে হতাশা আসায় বাদশাহ খুশি হয়ে হেসে ফেললেন।
বীরবল তখন চিৎকার করে বলে উঠলেন, 'ওই ঘোড়াটি তো তাহলে এখন আমারই হলো। আপনি যে এখন সিঁড়ির শেষ ধাপে আছেন, জাহাঁপনা।' বাদশাহ নিচের দিকে তাকালেন এবং নিজের বোকামির জন্য নিজেকে ধিক্কার দিলেন।
আর ওদিকে তখন ফিকফিক করে হাসছেন বীরবল।
*** বীরবলের রাজা চেনা ***
বীরবলের খ্যাতি শুনে জেশুলমিয়ারের রাজা বাদশাহ আকবরের কাছে অনুরোধ করলেন, বীরবলকে যেন দিন কয়েকের জন্য তাঁর কাছে পাঠানো হয়। আকবরের মধ্যে কখনোই সৌজন্যের অভাব ছিল না। তিনি বীরবলকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। বীরবলের হাতে তাঁর জন্য কিছু মূল্যবান উপহারও পাঠালেন।
জেশুলমিয়ারে পৌঁছামাত্র বীরবল রাজাকে খবর দিলেন। রাজা বীরবলের বুদ্ধির পরীক্ষা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। তিনি খবর পাওয়ামাত্রই সিংহাসন থেকে নেমে এসে সাধারণ একজন সভাসদের পোশাক পরে সভাসদদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। বীরবল রাজসভায় এসে দেখলেন সিংহাসন শূন্য। তিনি তো বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন—কাকে অভিবাদন জানাবেন?
কিন্তু মুহূর্তে বীরবলের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। চারদিকে ইতস্তত তাকিয়ে বীরবল সরাসরি রাজার কাছে গিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানালেন। তারপর এমন ভাব দেখালেন যেন রাজাকে অনেক দিন ধরে চেনেন। এতে রাজার বিস্ময়ের সীমা থাকল না। বীরবলের কাছে তিনি জানতে চাইলেন, কীভাবে রাজার এই গোপনীয়তা তিনি ধরে ফেললেন। দুজনের কেউ তো কাউকে কোনো দিন দেখেননি।
বীরবল উত্তর দিলেন, 'মহারাজ, চোখ থাকলেও অনেকে দেখতে পায় না, মগজ থাকতেও অনেকে বুঝতে পারে না। এটা খুবই সহজ ব্যাপার। আমি লক্ষ করলাম, আপনি সবার দিকে তাকাচ্ছেন আর অন্য সবার চোখ আপনার দিকে স্থির রয়েছে। এ থেকে সহজেই বুঝতে পারলাম শূন্য সিংহাসনটি কার।'
বীরবলের বুদ্ধির প্রমাণ পেয়ে রাজা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। এক সপ্তাহ ধরে আনন্দোৎসবের পর তিনি বীরবলকে রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান 'আক্কেল বাহাদুর' উপাধিতে ভূষিত করলেন। তারপর বহু মূল্যবান উপঢৌকনসহ তাঁকে আকবরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
* সংকলন ও সম্পাদনা: আখতার হুসেন | প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত রসের রাজা বীরবলের সেরা গল্প বই থেকে