What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কী করে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন অ্যালার্জি (1 Viewer)

5ILz4U8.jpg


সুনির্দিষ্ট কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসার কারণে দেহে সংঘটিত অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই হলো অ্যালার্জি। ব্যক্তিভেদে এই বস্তু সুনির্দিষ্ট। অর্থাৎ একজনের যাতে অ্যালার্জি হয়, অন্যজনের তাতে না-ও হতে পারে। অ্যালার্জি যে কারণে হয়, তাকে বলে অ্যালার্জেন। শ্বাস নেওয়ার সময় এটি নাকের ভেতর পৌঁছালে অ্যালার্জির নানা রকম উপসর্গ দেখা যায়।

কীসে অ্যালার্জি

নানা কিছুর সংস্পর্শেই হতে পারে অ্যালার্জি। ধুলাবালু, ফুলের রেণু, তুলার আঁশ, প্রাণীর লোম, পাখির পালকের আঁশ, ঘাস, খড় প্রভৃতি অ্যালার্জির সাধারণ কিছু কারণ। ধুলাবালু যেমন রাস্তা থেকে আসতে পারে, তেমনি আবার এর উৎস হতে পারে ঘরের কার্পেট, পর্দা ইত্যাদি। পরিবেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তারতম্যের কারণেও হতে পারে অ্যালার্জি। প্রসাধনসামগ্রী এমনকি বৈদ্যুতিক রেজার ব্যবহারেও কারও কারও অ্যালার্জি হয়। বিভিন্ন খাবার (যেমন দুধ, ডিম, ইলিশ মাছ, চিংড়ি) ও ওষুধ, তামাক, পান, সুপারি, জর্দা, অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে গলা, পাকস্থলী এবং খাদ্যনালির বিভিন্ন অংশে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

নাক, কান ও গলার অ্যালার্জি

অ্যালার্জিজনিত কারণে নাকের প্রদাহ হলে তাকে বলে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে ভোগেন। অনেক ক্ষেত্রেই এমন রোগীর পরিবারে নানা ধরনের অ্যালার্জির ইতিহাস থাকে।

অ্যালার্জি উদ্রেককারী বস্তুর সংস্পর্শে এলে রোগীর নাক ও চোখ চুলকাতে পারে, ঘন ঘন হাঁচি হতে পারে। অতিরিক্ত হাঁচিতে দম আটকে যাওয়ার মতো অনুভূতিও হতে পারে। নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে, বন্ধ হয়ে যেতে পারে নাক, সর্দি, নাকের ভেতর কিছু আটকে আছে বলে মনে হতে পারে বা অস্বস্তি হতে পারে। কেউ কেউ আবার কোনো গন্ধই পান না। শুকনা কাশি ও গলা খুসখুস ভাব হতে পারে। হতে পারে শ্বাসকষ্টও। নাক ও চোখ ছাড়া শরীরের অন্য অংশেও চুলকানি হতে পারে। কারও কারও জ্বর জ্বর ভাব হয়, শরীর ম্যাজমেজ করে, মাথাব্যথা হয়, মাথা ঘোরায়।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গ দেখা দিতে পারে দুভাবে।

একটি ঋতুভিত্তিক। শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম বা বর্ষার শুরুতে দেখা দেয়। ঋতু পরিবর্তনের সময় বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের রেণু, ছত্রাকের স্পোর—এগুলোর সংস্পর্শে আসা মাত্রই রোগীর উপসর্গ দেখা দেয়। শিশুদের এ রোগে বেশি ভুগতে দেখা যায়।

অপরটিতে সারা বছরই রোগী এই অস্বস্তিকর সমস্যায় ভুগতে থাকেন। ঘরের ধুলা, আলমারি থেকে নামানো পুরোনো কাপড়, ঘরে জমে থাকা ধুলায় 'মাইট' নামক ক্ষুদ্র ছত্রাক থেকে এ রকমটা হয়। এ ধরনের রোগীর প্রাণীর লোম ও পাখির পালক থেকেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

উভয় ক্ষেত্রেই রোগীর স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। শিশুদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। তবে ৫০ পেরোনোর পর নতুন করে কারও এমন সমস্যা হওয়ার প্রবণতা কম। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, অ্যাজমা এবং একজিমা (ত্বকের অ্যালার্জি)—কারও এই তিনটির একটি থাকলে অন্যটি থাকতে দেখা যায়।

কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জিজনিত কারণে কান চুলকায়, গলা খুসখুস করে, কাশি হয়। মনে হয় যেন গলায় কিছু বিঁধে আছে। এই সমস্যাগুলো অ্যালার্জিজনিত অন্যান্য সমস্যার মতো নির্দিষ্ট বস্তুর সংস্পর্শে এলেই হয়।

অ্যালার্জির চিকিৎসা

অ্যালার্জিজনিত রোগ কখনো সম্পূর্ণ সারে না। তবে চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোগী নিজেই বুঝতে চেষ্টা করবেন কিসে তাঁর অ্যালার্জি হয় এবং যতটা সম্ভব সেটি এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করবেন। রোগী কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে চিকিৎসক তা বের করার চেষ্টা করবেন। অ্যালার্জির উৎস বের করার জন্য বিশেষ পরীক্ষা রয়েছে।

জীবনযাত্রার পরিবর্তনই এ রোগ নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র। যাঁর ধুলায় অ্যালার্জি, তাঁর বাড়িতে যেন ধুলা না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত বিছানার চাদর ও বালিশের ওয়াড় বদলে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে কার্পেট বর্জন করতে হবে। আর্দ্রতা স্বাভাবিক রাখতে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

গলায় সমস্যা হলে লবণ-পানি দিয়ে গড়গড়া করতে পারেন, নিতে পারেন গরম পানির ভাপ। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহারের কারণে সমস্যা হলে সেটিও এড়িয়ে চলুন যতটা সম্ভব। এ ছাড়া উপসর্গ কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।

যা করা যাবে না

• অধৈর্য হবেন না। বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এই রোগ জীবনব্যাপী, তাই চিকিৎসক বন্ধ করতে না বলা পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন।

• চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত বাজারে প্রচলিত (নাক বা কানের) ড্রপ ব্যবহার করবেন না। দোকানদারের পরামর্শে স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ সেবন করবেন না।

• কান খোঁচানো যাবে না। কটনবাড দিয়েও নয়।

জেনে রাখুন

অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে নাকের স্বাভাবিক একটি অংশ (ইনফেরিওর টারবিনেট) ফুলে যেতে পারে, অনেকেই যেটিকে পলিপ বা মাংসপিণ্ডের বৃদ্ধি ভেবে ভুল করেন। অনেকেই এর অস্ত্রোপচারের পরামর্শও দেন, যার ফলে রোগী পরবর্তী সময়ে ভোগেন আরও বেশি। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

এই অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এর উপসর্গ দিন দিন বেড়ে যেতে দেখা যায়। দীর্ঘদিনের অবহেলায় একসময় সত্যি সত্যিই রোগীর পলিপ হয়ে যেতে পারে। পলিপ হলে সেটির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

লেখক: অধ্যাপক ডা. এ এফ মহিউদ্দিন খান | সাবেক বিভাগীয় প্রধান, নাক কান গলা বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল | অনুলিখন: ডা. রাফিয়া আলম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top