What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মুক্তাগাছায় এক চক্কর (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
xy7hl8G.jpg


মুক্তাগাছা পৌরসভার সামনে টেম্পোস্ট্যান্ডে নামলাম। বাজারের অজস্র মানুষের ভিড় এড়িয়ে হাঁটতে থাকি মহারাজা সড়কে। স্থানীয় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে এগোলাম। গন্তব্য মুক্তাগাছার জমিদারবাড়ি। সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একসময় মূল ফটক পেয়ে গেলাম। মাঠ পেরোতেই চোখে ধরা দিল মুক্তাগাছার জমিদারবাড়ি।

জমিদারি লোপ পেয়েছে অনেক দিন আগে। তবে স্থাপনাগুলো আজও মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, জমিদারদের প্রভাব–প্রতিপত্তির ইতিহাস। মুক্তাগাছার এই জমিদারবাড়ি তেমনই একটি স্থাপনা।

Xo93j7h.jpg


রাজবাড়ির প্রবেশমুখেই বিশাল ফটক

ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে প্রথমে রাজা ও পরে মহারাজা উপাধি পেয়েছিলেন মুক্তাগাছার তৎকালীন জমিদার। জমিদারের বাসভবনকে তাই ডাকা হতো 'রাজবাড়ি'। রাজবাড়ির প্রবেশমুখেই বিশাল ফটক। রাজবাড়িতে বিবির ঘর ছাড়াও বিশাল আয়তনের পুকুর 'বিষ্ণুসাগর', প্রাচীন স্থাপনা যুগল মন্দির, চান খাঁর মসজিদ, সাত ঘাটের পুকুর, জল টং, রসুলপুর বনসহ অনেক দর্শনীয় নিদর্শন রয়েছে। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির দেয়ালের প্রাচীন কারুকাজগুলোও দেখার মতো।

জানা যায়, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নানা কারণে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর চার ছেলে রামরাম, হররাম, বিষ্ণুরাম ও শিবরাম বগুড়া থেকে ময়মনসিংহে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। বসতি স্থাপনের আগে তাঁরা এ পরগনার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। শেষে মুক্তাগাছায় বসতি স্থাপনের মনস্থির করেন। সে সময়ে ওই এলাকায় খুব একটা জনবসতি ছিল না। চারদিকে ছিল জঙ্গল আর জলা।

3Rxu1wx.jpg


অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভূমিকম্পে বাড়িটি ভেঙে যায়

সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি নির্মাণ করা হয় মুক্তাগাছার জমিদারবাড়ি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভূমিকম্পে বাড়িটি ভেঙে যায়। ইংল্যান্ড ও ভারত থেকে কারিগর এনে ভূমিকম্পসহিষ্ণু করে বাড়িটি আবার নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়ি স্থাপনাশৈলীর অনন্য নিদর্শন। মুক্তাগাছার জমিদারিকে ১৬টি ভাগে ভাগ করা যায়। ১৬ জন জমিদার এখানে শাসন করতেন।

১৯৪৭ সালের পর মুক্তাগাছার জমিদারদের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর ১৬ জন বংশধরের প্রায় সবাই চলে যান ভারতে। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে তাঁদের নির্মিত ১৬টি বাড়ি। ক্রমে প্রধান বাড়িটি বাদে অন্য বাড়িগুলোতে গড়ে তোলা হয় শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নবারুণ বিদ্যানিকেতনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

ChhBhAG.jpg


প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়ি স্থাপনাশৈলীর অনন্য নিদর্শন

জমিদারবাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্তাগাছার মন্ডার নাম। জমিদারবাড়ির কাছেই মুক্তাগাছার ঐতিহ্যবাহী ও প্রসিদ্ধ গোপাল পালের মন্ডার দোকান। দোকানে ঢুকেই দেখতে পেলাম এর প্রতিষ্ঠাতার কাঠের প্রাচীন প্রতিকৃতি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের শংসাপত্র ও ছবি। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, গোপাল পাল ১২৩১ বঙ্গাব্দে (১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দ) প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করে তখনকার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীকে উপহার দেন। এই মন্ডা এতই সুস্বাদু ছিল যে জমিদারদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মন্ডা দিয়েই আপ্যায়ন করা হতো। জনশ্রুতি আছে, সে সময় জমিদারবাড়ির হাতিকেও এই মন্ডা খাওয়ানো হতো।

আজও সেই মন্ডার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন গোপাল পালের বংশধরেরা। এই মন্ডা আসলে একধরনের সন্দেশ। ছানা ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এ মন্ডার খ্যাতি। দেশ–বিদেশের বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি মুক্তাগাছার মন্ডা খেয়ে প্রশংসা করেছেন। গোপাল পালের দোকানের বর্তমান মালিক তাঁর পঞ্চম বংশধর রমেন্দ্রনাথ পালের মৃত্যুর পর তাঁর ছোট ভাই রবীন্দ্রনাথ পাল এটি তত্ত্বাবধান করছেন। মুক্তাগাছা ছাড়া দেশের আর কোথাও মন্ডা তৈরি হয় না। বর্তমানে প্রতি কেজি মন্ডা ৫৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। ১ কেজিতে ২০ পিস। প্রতি পিসের দাম ২৮ টাকা। দুই টুকরা মন্ডা মুখে দিয়ে সফরের ইতি টানলাম।

6ywV7Lt.jpg


এই মন্ডা আসলে একধরনের সন্দেশ

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে ময়মনসিংহ। সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। বাসভাড়া ১৮০ থেকে ৩০০ টাকা। চাইলে তিস্তা, মোহনগঞ্জ, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র বা হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে তিন থেকে চার ঘণ্টায় ময়মনসিংহে যেতে পারবেন। শ্রেণিভেদে ১২০ থেকে ৩৬০ টাকা ভাড়া পড়বে। ময়মনসিংহে এসে টাঙ্গাইলগামী বাস, সিএনজি অথবা অটোরিকশায় চড়ে ৪০ থেকে ৫০ মিনিটে সরাসরি যাওয়া যায় মুক্তাগাছায়। মুক্তাগাছায় নেমে বাজারের ভেতর দিয়ে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলে অথবা রিকশা বা ভ্যানে চেপে জমিদারবাড়ি ও মন্ডার দোকানে পৌঁছানো যাবে।

লেখক: বেনজীর আহমেদ সিদ্দিকী
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top