What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other অবশেষে রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন পেলেন বাবু (1 Viewer)

XBuwLzY.jpg


মৃত্যুর ৩১ বছর পর একুশে পদক পেলেন নজরুল ইসলাম বাবু

'সব কটা জানালা খুলে দাও না', 'একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার', 'আমায় গেঁথে দাও না মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা', কিংবা 'পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই'—অসাধারণ গানগুলোর শিল্পীর নাম সবাই জানলেও এ প্রজন্মের বেশির ভাগ মানুষ জানেন না এর স্রষ্টার নাম। তিনি নজরুল ইসলাম বাবু। বছরের পর বছর তাঁর লেখা দেশের গান গাওয়া হয়। আধুনিক, চলচ্চিত্রের গানগুলোও মানুষের মুখেমুখে। এ মানুষটিকে রাষ্ট্রীয় মূল্যায়নের জন্য অনেক আগেই দাবি ছিল। অবশেষে আজ পেলেন রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালের একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাঁর মধ্যে শিল্পকলায় (সংগীত) নজরুল ইসলাম বাবুর নাম ঘোষণা করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

58o0OOz.jpg


নজরুল ইসলাম বাবু

বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় প্রয়াত এ গীতিকারের স্ত্রী শাহীন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'গতকাল আমরা জানতে পারি। ভাবতে ভালো লাগছে যে অনেক বছর পর হলেও অবশেষে তিনি স্বীকৃতি পেলেন। আজ আমাদের জন্য বিশেষ স্মরণীয় দিন। তিনি থাকলে হয়তো আরও বেশি খুশি হতেন।' শাহীন আক্তার জানালেন, নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে আবেদন করা হয়েছে।

fWR9cRM.jpg


একদিন চলচ্চিত্রের গানের রেকর্ডিংয়ে মনতাজুর রহমান আকবর, নজরুল ইসলাম বাবু,অ্যান্ড্রু কিশোর এবং শেখ সাদী খান

১৯৪৯ সালের ১৭ জুলাই জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের চরনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নজরুল ইসলাম বাবু। ১৯৯০ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। তখন মাত্র ৪১ বছর বয়স ছিল তাঁর। মহাকাল তাঁকে বেশি দূর যেতে দেয়নি ঠিকই, কিন্তু নজরুল ইসলাম বাবু সেই মানবসন্তান, যিনি হয়ে উঠেছেন কালোত্তীর্ণ। এই বাংলায় তিনি প্রতিদিন ফিরে আসেন, সকাল-সন্ধ্যায়। ফিরে আসেন গানের চরণে, শব্দে। কেননা তাঁর লেখা গান ও স্মৃতি আজও শ্রোতাদের মননে স্থায়ী হয়ে আছে।
বাবা বজলুল কাদের ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মা রেজিয়া বেগম গৃহিণী। বাবা বজলুল কাদেরের সংগীতের প্রতি অনুরাগ ছোটবেলা থেকেই বড় সন্তান নজরুল ইসলাম বাবুকে প্রভাবিত করে। চার ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বাবু ছিলেন সবার বড়। স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে মামার কর্মস্থল বরিশালে চলে যান। বরিশাল বি এম স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক এবং পরে জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও বিএসসি ডিগ্রি নেন।
২১ বছরের টগবগে তরুণ নজরুল ইসলাম বাবু। দেশে তখন মুক্তির লড়াইয়ের প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে। সে সময়, অর্থাৎ ১৯৬৯ সালে তৎকালীন সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের ছাত্রনেতা হিসেবে বেশ নামডাক তাঁর। একদিন তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তৎকালীন সামরিক জান্তা। একসময় তিনি আত্মগোপন করেন। চলে যান ভারতে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ক্যাম্পে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে তুরার পাহাড়ে বসে যুদ্ধে প্রশিক্ষণের অবসরমুহূর্তে গান লিখতেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাম্পের ভয়ংকর এবং কঠোর জীবন নজরুল ইসলাম বাবুকে পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ কবি করে তোলে। ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মসি ও অসি দুটোই সমান চালানোয় দারুণ দক্ষ ছিলেন বাবু। তাঁর অন্যতম দায়িত্ব ছিল বিস্ফোরক দিয়ে ভারী ও মজবুত পুল বা ব্রিজ ধ্বংস করে হানাদারদের যোগাযোগবিচ্ছিন্ন করা। দেশ স্বাধীন হলে তিনি আবার লেখাপড়া, সাহিত্য ও সংগীতচর্চা শুরু করেন।

UUJRjm0.jpg


নজরুল ইসলাম বাবু

যুদ্ধ শেষে আবার লেখাপড়ায় ফিরে গিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। চলে আসেন ঢাকায়। এসেছিলেন কবি হতে। একদিন শাহবাগের বেতার ভবনে পরিচয় সেখানকার কর্মকর্তা শেখ সাদী খানের সঙ্গে। আবুল মিয়ার ক্যানটিনে। পকেট থেকে বের করে একটা গান দিলেন শেখ সাদীকে—'আলো আর এমনি আলো হাজার দুয়ার খুলে গেল।' খুব পছন্দ হলো শেখ সাদী খানের। পরের রোববার আসার পরামর্শ দিলেন। বাবু শিল্পী সুখেন্দু চক্রবর্তীর জন্য লিখলেন, 'না দেখাই ছিল বুঝি ভালো' গানটি। প্রথম গানটি সফল। ব্যস, জুটি হয়ে গেল সুরকার শেখ সাদী খান আর গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবুর। দুজন মিলে গান করতে থাকেন। শাহবাগের বেতারে, রমনা পার্কে, মহিলা সমিতির পাশে ব্যাংকের সিঁড়িতে। একে একে সৃষ্টি হয় সুবীর নন্দীর 'হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে', শাম্মী আকতারের কণ্ঠে 'মনে হয় হাজার ধরে দেখি না তোমায়', আশা ভোসলে ও বেবী নাজনীনের 'কাল সারা রাত ছিল স্বপনেরও রাত', কুমার শানুর কণ্ঠে 'আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা', হৈমন্তী শুক্লার কণ্ঠে 'ডাকে পাখি খোল আঁখি'—এমন জনপ্রিয় সব গান।

সেসব স্মৃতিচারণা করে শেখ সাদী খান বলেন, 'স্বাধীনতার পর যে কয়জন গীতিকার বাংলা গানকে সমৃদ্ধ করেছেন, নজরুল ইসলাম বাবু ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তাঁর অকালে চলে যাওয়া আমাদের সংগীতাঙ্গনে যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে, তা বলে প্রকাশ করা যাবে না।'

5wTo55D.jpg


স্ত্রীর সঙ্গে নজরুল ইসলাম বাবু। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

স্বল্প জীবনকালে নজরুল ইসলাম বাবু সবচেয়ে বেশি গান করেছেন সুরকার শেখ সাদীর সঙ্গে। মূলত আধুনিক গানগুলোই তাঁর সঙ্গে করা। ওই সময়ে নজরুল ইসলাম বাবু ও শেখ সাদী খান এবং আলাউদ্দিন আলী ও মনিরুজ্জামান দুটি জনপ্রিয় জুটি হয়েছিল দেশের সংগীতাঙ্গনে। এক হাতে তিনি লিখেছেন 'দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা বন্ধু চিরকাল', 'কথা বলব না বলেছি, শুনব না শুনেছি', 'কাঠ পুড়লে কয়লা হয় আর কয়লা পুড়লে ছাই', 'পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই', 'কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো, সে কথা তুমি যদি জানতে', 'আমার মন কান্দে, ও আমার প্রাণ কান্দে'সহ অনেক গান। তাঁর গান গেয়েছেন বশীর আহমেদ, সৈয়দ আবদুল হাদী, আশা ভোসলে, সুবীর নন্দী, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, শাম্মী আখতার, দিলরুবা খান, বেবী নাজনীন, সুখেন্দু চক্রবর্তী, অ্যান্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, শুভ্র দেব, কুমার শানুসহ অনেকেই।

একসময় চলচ্চিত্রে গান লিখতে শুরু করেন। 'আঁখি মিলন', 'দুই পয়সার আলতা', 'মহানায়ক', 'প্রতিরোধ', 'উসিলা', 'পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'প্রেমের প্রতিদান'-এর মতো দারুণ সব চলচ্চিত্রের দারুণ দারুণ গান রচনা করেছেন বাবু। ১৯৯১ সালে 'পদ্মা মেঘনা যমুনা' চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র ও বাংলাদেশ প্রযোজক সমিতির পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। ১৯৮৬ সালে যৌথ প্রযোজনায় সমষ্টি চলচ্চিত্রের ব্যানারে একটি চলচ্চিত্র তৈরিতে হাত দেন। এ ছবির চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লিখেছেন তিনি।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top