What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ: জেলার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ (1 Viewer)

BKCf25l.jpg


জেলা শহরের প্রধান সড়কের পাশেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ। এখানকার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ। রাস্তায় দাঁড়িয়েই চোখে পড়ে ছেলেমেয়েদের জটলা, শোনা যায় গল্প, আড্ডা আর হইচই। প্রাঙ্গণে পা রাখতেই চোখে পড়ল শহীদ মিনার। স্বাগত জানাল কলেজের চোখজুড়ানো সবুজ।

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ফেনী কলেজে অবস্থান নেন ব্রিটিশ সৈন্যরা। সে সময় কলেজ ভবন যুদ্ধকালীন মিত্রবাহিনীর সামরিক হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তখন কয়েক বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে ফেনী কলেজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থানান্তর করা হয়। যুদ্ধ শেষে সেই কলেজ আবার ফেনীতে স্বস্থানে ফিরে যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ তখন উচ্চশিক্ষার জন্য এখানে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ১৯৪৮ সালে স্থানীয় গুণীজনদের উদ্যোগে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ। ঢেউটিন দিয়ে তৈরি হয়েছিল কলেজের প্রথম ক্লাসরুম। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। ধীরে ধীরে কলেজের পরিসর বড় হয়েছে, বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কয়েক বছর আগে এখানে আরও সাতটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। চলছে একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। নতুন একাডেমিক ভবনগুলোর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়েছে পুকুর, গাছপালা, মসজিদ, খেলার মাঠ ও চারদিক দিয়ে তৈরি পাকা রাস্তা।

কেমন চলছে পড়ালেখা

কলেজের আয়তন ৬ দশমিক ৭২ একর। বর্তমানে এখানে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও ১৬ বিষয়ে স্নাতক (সম্মান), ১৩ বিষয়ে স্নাতকোত্তর, ডিগ্রি পাস কোর্সের বিএ, বিএসএস, বিবিএস, সাতটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতি) প্রিলিমিনারি কোর্সে পাঠদান করা হচ্ছে। নিয়মিত শিক্ষার্থী ১৬ হাজার ৫৩৬ জন। ১৬টি স্নাতক (সম্মান) বিষয়ে আসন আছে মোট ১ হাজার ৩৩৫টি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা—প্রতি বিভাগের জন্য আছে ৯০০ আসন। ৬ অধ্যাপকসহ এখানে শিক্ষকের সংখ্যা ৮৪। ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার বললেন, 'প্রতি বিভাগে ইনকোর্স পরীক্ষা ও মাসিক মডেল টেস্ট চালু আছে, এটাই আমাদের পড়াশোনার সবচেয়ে ভালো দিক। শিক্ষকেরা সব সময় অনুপ্রেরণা দেন।'

নানান রকম সহশিক্ষা

সহশিক্ষা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সারা বছরই সরব থাকে কলেজ প্রাঙ্গণ। কলেজে নিয়মিত সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চা হয়; অনুষ্ঠিত হয় রচনা প্রতিযোগিতা, একক বক্তৃতা, হামদ, নাত ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। আছে রেড ক্রিসেন্ট, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটের মতো সংগঠন। ২০১৮ সালে বিভাগীয় পর্যায়ের কলেজের র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ প্রথম এবং জাতীয় পর্যায়ে পঞ্চম হয়। ২০২১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চাকতি নিক্ষেপে ইংরেজি বিভাগের রত্না আক্তার এবং উচ্চ লাফে রসায়ন বিভাগের ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম হন। ২০১৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় নৃত্য ও হামদ-নাতে প্রথম হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ। ২০১৮ সালে কাবাডিতে জাতীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় হন এই কলেজের শিক্ষার্থী। শীলন কলেজ বার্ষিকী নামে একটি প্রকাশনা ২০১৪ সাল থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

স্মৃতিতে কৃতীরা

শহীদ বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতসহ বহু গুণীজন পড়েছেন এই কলেজে। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষক এ কে লুৎফর রহমান এই কলেজে থেকে ১৯৫৫ সালে আইকম পাস করেন। ১৯৬৪ সালের ১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। কলেজের বিজ্ঞান ভবনটির নাম তাঁর নামে রাখা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবীর, চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত প্রয়াত হেদায়েতুল হক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রফিকুল ইসলাম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য আতিকুল ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রয়াত সাংবাদিক হাবিবুর রহমান এই কলেজের ছাত্র ছিলেন।

কী আছে, কী নেই

কলেজে ক্যানটিন নেই, লাইব্রেরিতে নতুন বই নেই, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য যথেষ্ট পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না বলেও আক্ষেপ রয়েছে। মেয়েদের একটি কমনরুম থাকলেও ছেলেদের কোনো কমনরুম নেই। আর প্রায়ই মোটরসাইকেলে করে বহিরাগত আর বখাটেরা কলেজে আসে।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আল আমিন বলেন, 'কলেজের পরিবেশ আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে। শিক্ষার মানও বাড়ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে কলেজে আসার আগ্রহ কম।'

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভূতিভূষণ দেবনাথ বলেন, 'শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু সিলেবাসের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থেকে পড়াশোনার জায়গা নয়। এটি সাহিত্য-সংস্কৃতি-ক্রীড়াচর্চা এবং মানবিক শিক্ষা অর্জনেরও আলয়। আমি চাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন ও গবেষণাকর্মে নিজেদের নিয়োজিত করুক। বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করুক। এ বছরের জুলাই মাসের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার বর্গফুটের একটি অত্যাধুনিক লাইব্রেরি গড়ে তুলতে পারব বলে আশা করছি, যেখানে শিক্ষার্থীরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে বিশ্বনাগরিক হিসেবে নিজেদের তৈরি করবে।'

লেখক: শাহাদৎ হোসেন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top