What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

যে কারণে বিপদে বন্ধুর কাঁধে হাত রাখবেন (1 Viewer)

HouTosp.jpg


মন খারাপের সময় কাছের মানুষের স্পর্শ খুব দরকার হয়। মডেল: দীপ ও ইমন

সেদিন কীভাবে পার হয়েছিলাম আমার সেই দুঃস্বপ্নের প্রহর, ভাবলেই কয়েকটি মমতাময় হাতের স্পর্শ এখনো যেন শীতল করে দেয় আমাকে, আজ এত দিন পরও। ১০ বছর আগের একদিন। অকস্মাৎ আমার বোন যেদিন আত্মহত্যা করল, সে সময় তার মৃতদেহের পাশে আমি ছাড়া আর কেউই নেই। কী যে অসহায় লাগছিল! এ সময় কীভাবে, কোথা থেকে খবর পেয়ে ছুটে এল বন্ধুরা। অপঘাতে একজন মানুষ মারা গেলে যা যা করা লাগে, যেসব আয়োজন সম্পন্ন করতে হয়, তার কিছুই করার মতো মানসিক অবস্থা তখন আমার ছিল না। বন্ধুরাই করেছিল আমার সব কাজ—কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, আমার পাশে দাঁড়িয়ে। আর বন্ধুদের কাছে পেয়ে তীব্র এক অসহায় সময়েও পেয়েছিলাম খানিকটা উপশম, অন্তত কাঁদতে তো পেরেছিলাম তাদের কাঁধে মাথা রেখে।

বন্ধুর বিপদে, তার অসহায় মুহূর্তে বন্ধুত্বের এই স্পর্শমূলক উপশম নিশ্চয় এখনো পাওয়া যায়, পান কেউ কেউ। কলকাতার কবি উৎপলকুমার বসু হয়তো এই সব অভিজ্ঞতা মনে রেখেই একদা লিখেছিলেন:

'বন্ধু, তোমার হাতের উপর হাত রাখলেই আমি টের পাই তোমার বাজারে অনেক দেনা, ছেলেটা উচ্ছন্নে গেছে, মেয়ে রাত করে বাড়ি ফেরে, আজ যা-বলার আছে তুমি আমাকেই বলো, স্ত্রীর মুখরতার কথা বলো, সহকর্মীদের শঠতার কথা বলো, রাতে ঘুম হয় না সেই কথা বলো, আর যদি কাঁদতেই হয় তবে এই কাঁধে মাথা রেখে কাঁদো, বন্ধু।'

নিজেদের অসহায়কালে, বিপদে–আপদে আমরা তো বন্ধুর হাতের মায়াবী স্পর্শই চাই। তবে এখন অনলাইন দুনিয়ার প্রাবল্যে পাল্টে গেছে নাকি অনেক কিছু! করোনা–পরবর্তী 'নতুন স্বাভাবিক' বাস্তবতাও বদলে দিচ্ছে নানান আচার। যেমন হরহামেশায় ফেসবুকের নিউজ ফিডে রক্ত চেয়ে পোস্ট দেন অনেকে, দেখি।

দিন কয়েক আগের ঘটনা। আমাদের এক বন্ধুর মায়ের মরণাপন্ন অবস্থা। রক্ত লাগবে। আকুলভাবে রক্ত চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে বন্ধুটি। আর আমরা তাঁকে একের পর এক কোথায় পাওয়া যাবে এমন লিঙ্ক দিয়ে সাহায্য করেছি।

আবার এর উল্টো ঘটনা যে ঘটে না, এমন তো নয়। তবে অনেকে বলেন, বন্ধুত্ব আগের মতো থাকলেও বন্ধুত্বের স্পর্শ, কাছাকাছি পাশাপাশি বসে থাকা আর আগের মতো নেই। 'তুমি আমার পাশে বন্ধু হে, একটু বসিয়া থাকো'—এই গানের মধ্যে স্পর্শের জন্য যে হাহাকার, তা তো শাশ্বত। কিন্তু অনলাইন যোগাযোগমাধ্যম সুলভ হওয়ায় শরীরিকভাবে আমাদের একে–অপরের দেখাসাক্ষাতের প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে কমেছে, এ সত্যও অস্বীকারের জো নেই। উল্টো পাশে স্পর্শের মাজেজা কী, স্পর্শ কেন জরুরি—তা নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে বিস্তর। বলা হচ্ছে, মানবজীবনে স্পর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের টাচ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মনোবিদ টিফানি ফিল্ড এ বিষয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা করছেন। এক গবেষণাপত্রে তাঁর অভিমত, প্রিয় মানুষের স্পর্শ, ভালবাসার মানুষের স্পর্শ চাপ কমাতে সহায়তা করে।

llSxgvX.jpg


বহু সমস্যার সমাধানে স্পর্শের কোনো জুড়ি নেই। মডেল: আজিম ও ঐশী

স্পর্শের কেরামতি নিয়ে আরও একটি গবেষণা হয়েছে সম্প্রতি। সেখানে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব, দম্পতি ও প্রেমিকযুগলের মধ্যে গবেষণাটি করেছেন। প্রথমে একা ঘরে বসিয়ে প্রত্যেকের মস্তিষ্কের তরঙ্গ পরীক্ষা করা হয়েছে। পরে একসঙ্গে দুজনকে বসিয়েও চালানো হয়েছে পরীক্ষা। এতে দেখা গেছে, দুটি ক্ষেত্রে তরঙ্গের গতিপথে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। যখন দুজনকে একত্রে বসতে দেওয়া হয়েছে এবং পরস্পরের হাত ধরার সুযোগ পেয়েছে, সে সময় তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গে বিরাট বদল ঘটেছে। তাই স্পর্শের পক্ষে, শারীরিক যোগাযোগের সপক্ষে এখন সাফাই গাইছেন মনোবিদেরাই, 'বহু সমস্যার সমাধানে স্পর্শের কোনো জুড়ি নেই।'

গুগল মামার বদৌলতে এ তথ্যগুলো যখন জানতে পাই, তখন নিজের জীবনের সঙ্গেও তা মেলাতে চেষ্টা করি। মেলাতে গিয়ে আবারও বন্ধুদের সেই স্পর্শ—যা আমি পেয়েছিলাম ১০ বছর আগে, আমার এক ভেঙে পড়া সময়ে—সেই সব খুব মনে পড়ে।

তবে এখন কি বন্ধুর বিপদে বন্ধুরা আদতেই স্পর্শময় অনুভূতি নিয়ে পাশে দাঁড়ায় না? নাকি বেশির ভাগই অনলাইনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে?

প্রশ্নটি করেছিলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে। ধরা যাক ওর নাম অনিলা। প্রশ্নটি করতেই সে আমার ওপর খেপে গেল, 'আমাদের মানুষ মনে হয় না আপনার? কী মনে করেন? এখন দুনিয়া বদলেছে। সব সময় সব কি একই রকম থাকবে?'

একনাগাড়ে ক্ষোভ ঝেড়ে শান্ত হয় অনিলা নামের মেয়েটি। পরে গুমর ফাঁস করার মতো করে বলে সেই কথাটি, যা জানতে চেয়ে তীব্র ঝাড়ি খেলাম, 'আমরাও বন্ধুর পাশে বন্ধু হয়ে দাঁড়াই, তবে দাঁড়ানোর ভাষা ও ভঙ্গিটা হয়তো আপনাদের মতো না। আগে আপনার বন্ধুর যখন রক্ত লাগত, আপনারা কী করতেন? অনলাইন ছিল না, খোঁজখবর করার মাধ্যমগুলোও এখনকার মতো সহজ ছিল না। ফলে আপনারা হয়তো বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে রক্ত সংগ্রহ করতেন। আপনাদের এই কর্মকাণ্ড, দৌড়াদৌড়িগুলো দৃশ্যমান আকারে ছিল। কিন্তু আমাদের তো এই সময়ে এগুলোর দরকার নেই। এখন মুঠোফোনে গুগল করেই আমরা অনেক তথ্য পাই। পরে প্রয়োজনে সেই বন্ধুর পাশেও দাঁড়াই, যার পাশে দাঁড়ানো দরকার। তবে, আমাদের এই দাঁড়ানোটা আপনাদের মতো দৃশ্যমান হয় না। আমরা দৃশ্যমান করতেও চাই না।'

না, দৃশ্যমান হওয়ার একবিন্দুও জরুরত নেই। বন্ধু হয়ে, মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়ালেই হলো। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় কবিতায় যেমন বলেছিলেন: 'মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও, /...তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে, /সন্ধে হলে মনে পড়ছে, রাতের বেলা মনে পড়ছে। /মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও'। —তেমনিভাবে একলা মানুষের পাশে তার বন্ধুরাও দাঁড়ায়, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও দাঁড়ায় বটে। তারপরও বলা যায়, আমারে, আপনারে এবং সব শেষ তারেও বলা যায়, মানুষ হিসেবে মানুষকে স্পর্শ করার আকাঙ্ক্ষা তো আমাদের চিরকালীন। সেই আকাঙ্ক্ষার নৌকায় পাল উড়িয়েই তাই হয়তো আমরা বারবার বলি:

'রোদের মধ্যে রোদ হয়ে যাই, জলের মধ্যে জল

বুকের মধ্যে বন্ধু একটা নিঃশূন্য অঞ্চল

তুমি আমার পাশে বন্ধু হে

বসিয়া থাকো

একটু বসিয়া থাকো

আমি পাতার দলে আছি, আমি ডানার দলে আছি।

আমি পাতার দলে আছি, আমি ডানার দলে আছি।

তুমিও থাকো বন্ধু হে

বসিয়া থাকো

একটু বসিয়া থাকো...'

লেখক: আলতাফ শাহনেওয়াজ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top