What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চোখ জুড়ানো জুড়ী (1 Viewer)

qrA6zmG.jpg


লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে এই সড়ক

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গিয়েছিলাম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। উপজেলা শহর পেরিয়ে ভানুগাছ রোড হয়ে রাধানগরে আমাদের তিন রাতের ঠিকানায় উঠলাম। এই রাধানগর গ্রাম মাত্র ৮-১০ বছর ধরে লেবুবাগান থেকে শ্রীমঙ্গল বেড়াতে আসা মানুষের রাতযাপনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখানে পাঁচ তারকা মানের হোটেল-রিসোর্ট থেকে বাংলো, বুটিক হোটেল, ইকো কটেজ ও সাধারণ মানের হোটেল আছে। রাধানগর থেকে শ্রীমঙ্গলের সব জনপ্রিয় পর্যটন স্থান, যেমন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক ও মৌলভীবাজারের অন্য উপজেলায় সহজেই যাতায়াত করা যায়।

আগে কয়েকবার ভ্রমণের কারণে শ্রীমঙ্গলের প্রায় সব জায়গায় যাওয়া হয়েছে। তাই এক বন্ধুর পরামর্শে জুড়ীর লাঠিটিলা এবারের গন্তব্য। গুগল ম্যাপ অনুযায়ী কমলগঞ্জ-শমশেরনগর-কুলাউড়া-জুড়ী হয়ে প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথের দুই ঘণ্টার যাত্রা। নাশতা শেষে সকাল ৯টায় হোটেল থেকে বের হয়ে লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করলাম, হালকা শীতের সকালে ঘন সবুজ উদ্যানের বুক চিড়ে মসৃণ পিচঢালা পথ।

2Vz2cn2.jpg


চলতি পথে দেখা মুগ্ধতা ছড়ানো প্রকৃতি

উঁচু-নিচু উদ্যানের পথ পেরিয়ে সমতলে আসতেই চারদিকে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, আধপাকা ধানে পরিপূর্ণ। কমলগঞ্জ অতিক্রম করে অপেক্ষাকৃত সমতল চা-বাগানের ভেতর দিয়ে শমশেরনগরে প্রবেশ করলাম। শমশেরনগর পেরিয়ে কুলাউড়া হয়ে দেড় ঘণ্টায় জুড়ী পৌঁছে গেলাম। ভারতের ত্রিপুরা থেকে জন্ম নিয়ে কুলাউড়া দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা জুড়ী নদীর নাম অনুসারে এই উপজেলার নামকরণ।

oZCbyoZ.jpg


গাছপাকা কমলার স্বাদ নেওয়ার সুযোগ হলো জুড়ী ভ্রমণে এসে

জুড়ী থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন শামীম, যিনি চাকরিসূত্রে জুড়ীতেই থাকেন। উপজেলা শহরের বাজার পেরিয়ে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা চা-বাগানের এলাকায় প্রবেশ করলাম। ঘন বনাঞ্চল আর চা-বাগান দেখতে দেখতে আসাম সীমান্তবর্তী বাজারে এসে থামলাম। এখানে জনবসতি খুবই কম আর রাস্তাও বেশ ভালো। বাজার থেকে কিছু দূরে কমলাবাগান দেখতে চাষিদের টিলাবাড়িতে গেলাম, যেখানে প্রতিটি টিলাতেই নানা ধরনের গাছের সঙ্গে প্রচুর কমলাগাছ রয়েছে। আমাদের জন্য বাংলাদেশে এভাবে কমলা ভরা গাছ দেখার অভিজ্ঞতা এই প্রথম, তাই অনেক উৎসাহ নিয়ে ছবি তুললাম। স্থানীয় যুবক তোফায়েলের মাধ্যমে অনেক ধরনের গাছ সম্বন্ধে জানলাম ও তাঁর ব্যবস্থাপনায় চাষিদের থেকে কিছু কমলা কিনলাম। এখানে কমলাগাছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ও পোকামাকড় দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। মৌসুম শেষ হওয়া, তাপমাত্রা ও কুয়াশার তারতম্যের কারণে সদ্য পেড়ে আনা কমলার মিষ্টতা কম ছিল, কিন্তু ঘ্রাণ ছিল মনে রাখার মতো।

6n2UFCe.jpg


আগর চাষে বড়লেখার পরে এখন জুড়ীর নাম আসে

টিলা থেকে নেমে আশপাশে ঘোরাঘুরি করে আবার গাড়িতে উঠে আগরবাগান দেখতে থামলাম, আগর চাষে বড়লেখার পরে এখন জুড়ীর নাম আসে। আগরগাছ রোপণের ছয়-সাত বছরের মধ্যে পোকার আক্রমণে প্রাকৃতিকভাবে আগর কস উৎপন্ন হয়, যা থেকে আগর উড, আগর তেল বা আগর পাউডার তৈরি করা যায়, যেগুলো সুগন্ধি ও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে এই আগর চাষ অনেক লাভজনক, তাই সরকারি বনাঞ্চলে অংশীদারের ভিত্তিতে আগর চাষের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। আগরবাগান থেকে আসামের সীমান্ত পর্যন্ত যত দূর বিশেষ অনুমতি ছাড়া যাওয়া যায়, সেখানে গিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম।

এবারের গন্তব্য শুকনাছড়া মাঠ, যা স্থানীয়ভাবে কাশ্মীরি মাঠ নামে পরিচিত। ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেরই জানা। কুচাই চা-বাগানের উল্টো দিকে কাঁচা রাস্তা ধরে ধানখেতের মধ্য দিয়ে মাঠের সামনে পৌঁছে আমরা অবাক হয়ে গেলাম, অনেকটাই গ্রীষ্মের ছোটখাটো কাশ্মীরের উপত্যকা, বিশেষ করে শ্রীনগর এয়ারপোর্টের কাছাকাছি অবস্থিত দুধপাথরী উপত্যকার মতো দেখতে। গাছপালায় ঘেরা সবুজ টিলা আর মাঠের সামনে শীতকালের শীর্ণকায় প্রবহমান ছড়া, যার কারণেই শুকনাছড়া নাম। প্রচণ্ড রোদে বুঝতে বাকি রইল না যে বিকেলে বা বৃষ্টিভেজা এই মাঠ ও টিলা আসলেই দেখার মতো। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে ছবি তুলে আমরা আবার ঘুরপথে জুড়ী উপজেলা সদরের দিকে যাত্রা করলাম। সোনারুপা চা-বাগান ও ধামাই চা-বাগানের আঁকাবাঁকা পথে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি নিমেষেই সব ক্লান্তি দূর করতে বাধ্য। চা-বাগান আর পাকা সোনালি ধানের খেত দেখতে দেখতে মিনিট বিশেকেই চলে এলাম জুড়ী।

ভ্রমণসঙ্গী শামীমের ঠিক করে রাখা মিনিস্টার নামের রেস্তোরাঁয় হাওরের বোয়াল মাছ দিয়ে ভরপেট খাবার খেয়ে আরও কয়েকবার জুড়ী বেড়াতে আসার পরিকল্পনা করতে করতে সন্ধ্যার আগেই শ্রীমঙ্গলে ফিরে এলাম।

লেখক: এ এস এম শাহীন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top