What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected এক ঘন্টার শাস্তি (1 Viewer)

Able31

Community Team
Elite Leader
Joined
Sep 21, 2021
Threads
25
Messages
5,639
Credits
31,893
Automobile
Mosque
Audio speakers
Watermelon
Thermometer
Pistol
গল্প: এক ঘন্টার শাস্তি
লেখা: দোলনা বড়ুয়া তৃষা


টানা দুইঘন্টা ঝগড়ার পর আমার স্বামী রাতুল যখন বলল,
- মিরা চলো আমার ডির্ভোস নিয়ে ফেলি, এইসব ঝগড়া ঝামেলা আর ভালো লাগছে না। আমি সত্যিই ক্লান্ত।

ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি প্রথম রিয়ালাইজ করলাম, আমার ওর প্রতি আর কোন টান অনুভব হচ্ছে না। ওর এই কথায় আমি মোটেও কষ্ট পাচ্ছি না। কারণ আমি নিজেও অনেকবার ভেবেছি। আর পারা যাচ্ছে না।

রাতুল ভেবেছে আমি কোন বাঁকা উত্তর দেবো৷ কিন্তু হঠাৎ চুপ হয়ে সায় দেওয়াতে ও অবাক না হলেও স্বস্তি পেলো। দুইজনে মাথা নেড়ে সায় দিলাম। কাল এই ব্যাপারে ফ্যামিলির সাবাইকে জানাবো। ঘুমন্ত বাচ্চাদের দিকে আজকের মতো আমরা শান্ত হলাম।

দশবছরের সংসার। এরেঞ্জ ম্যারেজ। তাও বিয়ের আগে তিনমাস ভালোই প্রেম করেছি দুজন। বিয়ের পর ও ভালোই স্বাভাবিক ছিলাম। প্রথমে বড় মেয়েটা হওয়ার পর থেকে আমি মেয়ে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পরি দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। মেয়ে নাকি বাবার ভাগ্য আনে, এই শুনিয়ে রাতুলেও বড় পোস্ট পেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাসায় ফিরলে মেজাজ থাকে তুঙ্গে। প্রথমে আমি চুপ থাকলেও সারাদিনে বাসায় মেয়ের পেছনে ঘুরে, ঘরের কাজ সামলে আমার মেজাজ ও সপ্তম আকাশে৷ বছর দুয়েক পর ছেলেও হলো। সব চাহিদা ঠিকঠাক পূরণ করলেও দুজনের মধ্যে প্রায় কথা কাটাকাটি, ঝগড়া, ঝামেলা লেগেই থাকে৷
বিশাল কোন কারণ লাগে না সামান্য বিষয়েই আমরা বিশাল ঝামেলা করে ফেলি। প্রথমে একজন চুপ থাকলেও অন্য জনের কথার খোটায় দুজনেরেই বাঁধ ভাঙ্গে। তখন থামানো যায় না কাউকেই।
এমন না যে কেউ অন্য কারো প্রতি আসাক্ত তাও নিজেদের মধ্যে কোন টানেই যেন আর নেই। আমাদের চেয়ে ভালো সম্পর্ক আমাদের সাথে কাজের লোকেদের।
এইটা ধীরে ধীরেই হয়েছে, একদিনে নয়। কারো থাকা না থাকা যেন মেটারেই করে না আমাদের কাছে।

দুইজনের রুম ও আলাদা হয়ে গেলো। তাও আমাদের ঝগড়া থামে না। মানসিক অশান্তির চাপ আমাদের ছাড়িয়ে বাচ্চাদের মধ্যেও পড়ছে আমরা ভালোই বুঝতে পারি।তবে রাগ হলে নিজেদের থামাতে পারি না। এই সমস্যা শুধু আমাদের নয়। এমন অনেকে ফ্যামিলিতেই আছে।

পরের দিন মা বাবার রুমে গিয়ে আমাদের ডির্ভোস এর কথা বলায়, মা তার উলের কাটা থামিয়ে আমাদের দিকে একবার তাকালো, বাবাও বইয়ে পাতা উল্টে একবার তাকিয়ে বলল-
- তোমারা দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক৷ তোমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া পূর্ণ অধিকার আছে।

আমি আর রাতুল একজন আরেকজনের দিকে তাকালাম। মা বাবার এমন ভাবলেশ কথায় আমরা যেন আহত হলাম কেন বুঝতে পারলাম না। আমি বললাম,

-আপনাদের কোন সমস্যা নেই?

দুজনেই একসাথে বলে উঠলো, আমাদের কি সমস্যা থাকবে?

বাবা বইয়ের পাতা উল্টে বললেন, তোমাদের জীবন, তোমাদের সিদ্ধান্ত। আর প্রতিদিন ঝামেলা হওয়ার থেকে এইটাই ভালো। আমরাও একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো রাতে৷ নয়েজ লেস।

আমরা বেশ লজ্জায় পেলাম। আসলে ঝগড়া করার সময় আমাদের খেয়াল থাকে না পাশে রুমে মা বাবার অসুবিধা হয়।

রাতুল বলে উঠল, আর বাচ্চারা?

মা উঠে উনার সুতার বক্সে কাটা রাখতে রাখতে বলে, ওরা কি? ওরা তো কোন সমস্যা না। সমস্যা তোমাদের মধ্যে। তোমরা সিদ্ধান্ত নেবে কার কাছে কত দিন রাখবে। ওদের উপর দায় চাপিয়ে নিজেদের জীবন নষ্ট করার কোন মানে হয় না। এইভাবে চলতে থাকলে ওদেরেই লাইফে বিরাট প্রভাব ফেলবে।

মা বাবার এমন কথায় আমরা অবাক না হয়ে পারছি না। মা আবার বলল-

-তবে তোমরা যদি আমাদের থেকে অনুমতি চাও। আমাদের একটা শর্ত তোমাদের পালন করতে হবে।
- কি শর্ত?

-তেমন কঠিন কিছু না৷ এক মাস তোমাদের এক ঘন্টা করে একটা রুমে কাটাতে হবে।

দুজনেই তাচ্ছিল্য একটা হাসি দিলাম যেন কোন ছেলেমানুষী আবদার। বাবা এইবার গম্ভীর গলায় বলে,
- উই আর সিরিয়াস।

বাবার কথার উপর কোন কথা হয় না। মা বলল-
-দশ বছর একঘরে এক বেডে কাটিয়েছো। আমাদের জন্য একটা ঘন্টা কাটাবে তোমরা একা। রুমে তোমরা কি করছো এইটা মেটার করে না। যে যার মতো থাকবে। কথা না বলে। জাস্ট একঘন্টা পর তোমরা বেড়িয়ে আসবে। এরপর যা ইচ্ছে কর।
রাতুল আট টায় ফিরে। তোমরা নয় টা থেকে দশটা একঘন্টা রুমে কাটাবে। এরপর যে যার রুমে।

-তখন রান্নাবান্না, বাচ্চাদের পড়ালেখা-

মা হাত তুলে থামিয়ে বলে, সন্ধ্যা থেকে এনাফ টাইম থাকে। রান্না শেষ করবে। না পারলে আমি আছি, আর বাচ্চাদের তো তোমাদের ছাড়া থাকতেই হবে।তোমাদের এক সাথে পাবে না। তাছাড়া তোমরা নতুন জীবন ও শুরু করবে। তখন ওদের তোমাদের ছাড়া থাকতে হবে, এখন অল্প অল্প করে অভ্যাস করালে তো তোমাদেরেই সুবিধা।

মা কথাটা সত্য বললেও, শুনতে খুব একটা ভালো লাগছে না। মা বাবার কথা অমান্য কেউ করি না। তাই অগত্য মাথা নেড়ে সায় দিলাম। নিত্য কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম, মায়ের শর্ত ভুলে গেলাম। রাতুল অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বসার পর মা এসে বলল,
-যাও তোমাদের টাইম শুরু হচ্ছে এখন।

রাতুল খেলা দেখছিলো, বিরক্ত সুরে বলে, এইসব ছেলে মানুষীর কোন মানে হয় না মা। এইসবে আমাদের সর্ম্পকে কোন প্রভাব ফেলবে না। ইট জাস্ট ফিনিশ।

আমি রিধিকে হোমওয়ার্ক করাচ্ছিলাম। মা আমাকেও টেনে তুলে রুমে ডুকিয়ে দিলো। রাতুল কেও। রাতুল বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
-আজীবন জ্বালিয়ে মারবে তোমরা আমাকে। খেলাটাও দেখতে দিচ্ছো না।

মা রিধির সামনে বসে হোম ওয়ার্কের খাতাটা টেনে নিয়ে বলে, ল্যাপটপে দেখো। আর হ্যাঁ কেউ কারো সাথে কথা বলবে না কিন্তু।

মা দরজা লক করে দিতেই রাতুল আমার দিকে বিরক্ত চোখের তাকিয়ে ল্যাপটপ খুলে খেলা দেখতে শুরু করলো।
আমি টুকটাক ঘর গুছিয়ে রাখলাম। কেউ কোন কথা বলছি না। যেন আমাদের কোন কথায় নেই বলার জন্য।

সময় টা যেন যাচ্ছে না। আমি বিছানায় শুয়ে পড়লাম। রাতুলের ল্যাপটপে খেলার শব্দে ঘুমাতে পারছি না।
মা কথা বলতে নিষেধ করেছে। জানি এখন ভলিউম ছোট করতে বললে, ঝগড়া হবে। তাই মাথায় বালিশ চাপা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। কখন ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়াল নেই। যখন মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল তখনও রাতুল খেলা দেখছে।

এইভাবে মা চার দিন টেনে ধরে আমাদের রুমে ডুকিয়ে দেয়, আমি ঘুমিয়ে পরি, রাতুল ল্যাপটপ খেলা দেখে কিংবা কাজ করে।
বাচ্চারা প্রথমে বিরক্ত করলেও কয়েক দিন ওরা নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

আমি ঘুমিয়ে পড়তাম রুমে সে এক ঘন্টা। খেয়াল করলাম রাতুল ভলিউম ছোট করে দিতো আমি যখন বিছানায় যাই।

শরীর টা কেমন যেন ফ্রেশ মুডে থাকে এখন। খিটখিটে ভাবটা কিছুটা কমেছে। ঘুম আসছে না পরের দিন। তাই বইয়ের তাকে ধুলো জমা বইগুলো ঝেড়ে নিয়ে আবার পড়তে শুরু করলাম। একসময় রোজ বই পড়তে হতো। ভাত না খেলেও চলবে তবে বই যেন থাকে।
পাক্কা সাত আট বছর পর হাত পড়লো বইয়ে। বই ও কিনি না অনেক বছর৷ রাতুল তখন প্রতি জম্মদিন এক গাদা বই দিতো। এখন তো মনেই থাকে না৷

রাতুল আজ অফিসের কাজ নিয়ে বসেছে। আমি বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে বই পড়ছি।
কেউ কারো সাথে কথা বলি নি পাঁচ দিন।

মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছি। পাতা উল্টাতেই টুপ করে নিচে পড়লো একটা শুকনো গোলাপ আর চিরকুট। রাতুলেই দেওয়া, কোন এক জম্মদিনে।

আমি খুব উৎসাহ নিয়ে রাতুল কে ডাক দিলাম, এই দেখ -?

রাতুল কাজ করতে করতে বিরক্ত চোখে ফিরে তাকালো, গোলাপ আর চিরকুট টা দেখে উঠে আলতো হেসে হাতে নিলো।

- কবের এইটা?

চিরকুটের পাতা উল্টে দেখলাম লেখা আছে 2011, দুজনের মধ্যে একটা নস্টায়েলজিয়া ভাব এলো। বই গুলো উল্টে উল্টে দেখতে লাগতাম আমি। আরো অনেক গুলো চিরকুট বেড়িয়ে এলো।
আমি ব্যঙ্গ সুরে বললাম, কি বিশ্রী হাতের লেখা!
অন্য সময় হলে রাতুল রেগে যেতো, আজ বলল, এই বিচ্ছিরি হাতের লেখায় তো প্রেমে গদগদ হতে।

আমি ফিক করে হেসে দিলাম, রাতুল ও দাঁড়িয়ে হাসছে। আমি ওর দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখতে ও থেমে গেল। মনে হলো কত বছর আমাদের নিজেদের এক সাথে হাসাও হয় না।

আরো দুই চারদিন যাওয়ার পর, মাকে আর জোর করে আমাদের রুমে পাঠাতে হয় না। আমরাই চলে আসি রুমে। রাতুলের সাথে খুব যে কথা হচ্ছে তা কিন্তু না। তবে ওর ওখানে বসে থাকাটাও যেন ভালো লাগছে। তবে আমি মোটেও তা প্রকাশ করছি না।

খেয়াল করলাম আমাদের কথা না হলেও একটা টান অনুভব করছি। ও অফিস গেলে আমি ওকে মিস করছি।
অনেক বছর হলো মোবাইলে আমাদের দরকার ছাড়া কথা হয় না। তার ডিউরেশন মিনিট দুয়েকের বেশি হয় না।

দুপুরে রাতুল ফোন দিলো৷ খেয়েছি কিনা? বাচ্চারা খেয়েছে কিনা?
আর কোন কথা খুঁজে না পেয়ে রেখে দিলেও যেন ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছে টা বাড়ছে।

সেদিন রাতুল অফিস থেকে যখন ফিরলো, বাসা ভর্তি গেস্ট, আর এক ঘন্টা কাটানোর সুযোগ নেই। আমি রান্না ঘরেই ছিলাম। মা গল্প করতে ব্যস্ত উনার মেয়ের সাথে। বাচ্চারা ব্যস্ত ননদের ছেলের মেয়ের সাথে।

রাতুল রান্না ঘরে এসে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আমি হেসে বলি,
- এক ঘন্টার শাস্তি ভোগ করতে এসেছো?
রাতুল কিছু বলল না, মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে রইলো, আমারো কেন যেন খুব ভালো লাগছে ওর এইভাবে আসাটা।যেন মনে মনে চাইছিলাম।

টুকটাক জিনিস পত্র এগিয়ে দিচ্ছে। এরমধ্যে কথাও হচ্ছে। কোন মজার কথা নেই তাও যেন ভালো লাগছে। হয়ত অনেক বছর পর এইভাবে ঝগড়া ছাড়া কথা হচ্ছে তাই।

দশ দিন পার হয়ে গেলো। আমরা ঘন্টা পার হওয়ার পর ও যেন রুম থেকে বের হতে চাই না। কাছাকাছি পাশাপাশি বসে নেই। তাও-

বই পড়তে পড়তে আমি বলে উঠি,
- কত বছর কোন মুভি দেখি না -

রাতুল ওর ল্যাপটপ সামনে এনে বলে,
- বাংলা দেখবে নাকি হিন্দি?
দুজনেই সার্চ দিয়ে ভালো একটা মুভি দেখা শুরু করলাম, মুভি শেষ হতে হতে অনেক রাত। দুজনেই জেগে রইলাম। মুভির নেশায় পেয়ে বসলো, পরের দিন আবারো একটা নতুন মুভি।
এখন পাশাপাশি ঘেষাঘেষি করতে বসতে যেন কোন বাধা নেই। আড়ষ্টতা নেই। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরি একজন আরেক জনের গায়ে। রোমেন্টিক সিনে চোখে চোখে তাকিয়ে হেসে উঠি। সারাদিন অফিস শেষে রাতুল ক্লান্ত থাকে,চোখ লাল হয়ে যায়। আমারও। তাও আমারা সাথে জেগে থাকি। আর আলাদা রুমে যাওয়া হয় না ওর। মেয়ের পাশেই শুয়ে পরে।

এই একটা ঘন্টার জন্য যেন আমরা অপেক্ষা করা শুরু করলাম। পনের দিন শেষ, রাতুল রুমে থেকে বের মুভি দেখার জন্য ডাকলো, মা বলে উঠলো,
-পনের দিন শেষ , এখন আর শাস্তি ভোগ করার দরকার নেই।
রাতুল অবাক হয়েই বলল- শাস্তি?

- হ্যাঁ। তোদের একঘন্টা থাকার জন্য যে শাস্তি দিয়েছিলাম।

রাতুল বলল, তুমি এক মাস বলেছিলে।
- বলেছিলাম, তবে এখন কমিয়ে এনেছি। ভাবলাম অত্যাচার করে ফেলেছি। শুধু শুধু ছেলেমানুষী করছি। তোরা কাল গিয়ে ডির্ভোস ফাইল করতে পারিস।

রাতুল আর আমি চোখাচোখি হলাম, আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম আমরা কেন এইটা শুরু করেছিলাম।

মা আয়েশী ভঙ্গিতে সোফার উপর পা তুলে বলে,
- আর যাওয়া লাগবে না মিরার ঐ রুমে। যাও বৌমা আমার জন্য একটু ডিম ভুনা কর।।দুপুরে মাছে লবণ বেশি দিয়েছিলে খেতে পারি নি। রান্নায় তোমার মনোযোগ নেই আজকাল৷

আমি উঠতেই রাতুল আমার হাত ধরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
- তুমি এক মাস বলেছিলে কিন্তু, মিরা এখন রান্নাঘরে যাবে না। রুমে যাবে।

আমাকে টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দেয়, আমার নতুন বউ দের মতো লজ্জা লাগছে। বিয়ের পর জামাই রুমে ডাকলে নতুন বৌয়ের যেভাবে লজ্জায় মাথা কাটা যায় ঠিক সেভাবে। আমি হাসি চেপে রাগি রাগি মুখ করে বললাম,
- এইটা কি হলো?
- কি হলো? মুভি দেখতে আনলাম আর কি-?
-এইভাবে?
-তো কীভাবে আনবো? তোমার কি ইচ্ছে নেই মুভি দেখার?তাহলে যাও-

আমি হাসি চেপে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই, রাতুল আবার হাত চেপে ধরে বলে উঠলো, খবরদার বের হবে না।

আমি অট্টহাসিতে গড়িয়ে পরি। রাতুল বোকা বোকা মুখ করে তাকিয়ে আছে।

পরের দিন বাবা একটা ফর্ম এনে বলে,
- এই নেয়, আজ একটা কাজে গিয়েছিলাম কোর্টে তাই ফরম টা নিয়ে এলাম পূরণ করে কাল পরশু জমা দিয়ে আসিস তোরা গিয়ে।

আমরা দুজনেই পড়ে দেখলাম বাবা ডির্ভোসের ফরম এনেছে। রাতুল আমার দিকে আহত চোখে তাকালো, যেন আমি কি বলি দেখতে চায় সে। দুজনেই চুপ করে আছি দেখে, বাবা বলে,
- কি রে কি সমস্যা?

আমি আর রাতুল প্রায় এক সাথেই বলে উঠলাম, আমার ডির্ভোস চাই না।

মা বাবা চোখাচোখি হলো, যেন ওরা হাসি চেপে রাখতে চাইছে। বাবা বেশ গম্ভীর মুখে বলল,
- তোমরাই তো বলেছিলে, আবার এখন উল্টে যাচ্ছো।

আমরা যেন কোন কথায় খুঁজে পাচ্ছি না। এখন আমর অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। যেন কোন কিশোরীকে তার মা বলছে তার প্রিয় মানুষটিকে ভুলে যেতে। আমার ভীষণ মন খারাপ লাগছে। একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে বসেছে বুকে। মনে হচ্ছে আর একটা কথা বলতে হলে ছিটকে আমার কান্না বেরিয়ে আসবে।

বাবা আর কিছু বলল না, ফরম টা আবার হাতে তুলে নিয়ে বলল,
-আচ্ছা আর দুই তিন দিন সময় নাও, এরপর ভেবেচিন্তে পূরণ করবে।

আমি যেন পা চালাতেই পারছি না। ধীরে ধীরে রুমে যেতেই রাতুল বলে উঠে,
-তোমার ডির্ভোস চায়?

আমি চুপ করে আছি দেখে ও আমার কাছে এসে বলে, তোমার কি ডির্ভোস চায় এখন মিরা?

আমি কোন শব্দেই যেন বের করতে পারছি না। মুখ তুলে ওর দিকে তাকাতেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো, রাতুলও কোন কথা না বলে গভীর চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আমার তীব্র কাপুনি দিয়ে কান্না বেড়িয়ে আসছে।

রাতুল আরো জোরে জড়িয়ে ধরে আমাকে। মনে হতে থাকে এই মানুষ টা ছাড়া আমি এক মূহুর্তেও থাকতে পারবো না।

বাবাকে গিয়ে বললাম, আমাদের ডির্ভোস চাই না। আমরা এখন ঠিক আছি।

মা বলল, এত দ্রুত কীভাবে সব ঠিক হলো তোমাদের? পনের দিন আগেও একজন আরেক জন কে সহ্য করতে পারতে না।

আমরা মাথা নাড়লাম , জানি না।

মা আর বাবা উচ্চস্বরে হেসে উঠে। আমরা অবাক হয়ে বলি, কি হয়েছে?

মা হাসতে হাসতে বলে, আমরাও একবার ঠিক করেছিলাম আর থাকা যায় না এক সাথে এইবার ডির্ভোস নিবো। তখন আমার শ্বশুর শাশুড়ী ঠিক এইভাবে আমাদের একমাস এক ঘন্টা এক সাথে থাকার শাস্তি দিয়েছিলো। আমাদের অবশ্য এক সাপ্তাহেই সব ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। বুঝতে পেরেছিলাম থাকা যাবে না একে ছাড়া।

আমি বসে পড়তেই মা আমার হাত ধরে বলে,
- বৌমা সবাই বলে, মা হওয়া অনেক কঠিন জিনিস মা হতে গেলে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। এইটা আসলে একটার ভুল কথা। এইটার মাধ্যমে আমাদের সমাজে একটা মেয়ের উপর একটা ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েরা এইটা শুনেই বড় হয় মায়েদের সন্তানের জন্য সব করতে হয়। তাই যখন একটা সন্তান আসে আমরা মেয়েরা সব ভুলে সব ধ্যান জ্ঞান সন্তানের পেছনে লাগিয়ে ফেলি। কারো কোন দোষ থাকে না। তাও আমরা সে মানুষ টা থেকে অনেক দূরে চলে যাই যে মানুষটাকে সবচেয়ে বেশি কাছে রাখার দরকার। যখন একটু ফ্রি হয়, চোখ তুলে তাকাই তখন যেন তার কোন রাস্তায় থাকে না তার মনে যাওয়া, নিজেরাই অর্বজনা ফেলে রাস্তা ভরাট করে ফেলি । কেউ কাউকে বুঝতে পারি না। মনে হয় সে আমাকে আর ভালোবাসে না। কেয়ার করে না। অনুভূতি নেই। রাগারাগি, ভুল বুঝাবুঝি সবটা মিলিয়ে তিক্ততা চলে আসে।

কিন্তু যদি পুরো দিনে কিছুটা আমরা একে অপর কে দিই, বিশ্বাস কর নিজেকেই ভাগ্যবান মনে হবে। শুধু সামান্য কিছু সময়। চিন্তা কর তোমরা গত দশ বছরে একসাথে থেকেও এইভাবে টাইম কাটানো হয় নি। অবাক করা ব্যাপার কত গুলো দিন কত গুলো মাস একঘরে থেকেই একঘন্টা নিজের দাও নি তোমরা।

সন্তান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শেষ বয়সে এসে দেখ তোমাদের সাথে আমাদের কোন কথা নেই৷ তোমার মায়ের সাথে তোমার কথা নেই তুমি ব্যস্ত তোমার সংসারে। রাতুল ব্যস্ত ওর কাজে।

কিন্তু আমাদের শেষ সময়ে একজন আরেক জনের সাথেই থাকতে হচ্ছে। ছেলে মেয়েদের সময় দিতে গিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের সময় দিতে ভুলে যাই। কিন্তু একটা ঘন্টায় কিন্তু তুমি বাচ্চা মানুষ করে ফেলছো না। কিংবা এরজন্য ওরা তোমাকে দোষী মানবে না। তোমাদের সর্ম্পক ভালো থাকলে ওদেরেই লাভ।

রাতুল আমার হাত চেপে ধরেছে আবার। মা আবার বলে,

- যে কোন সর্ম্পক একটা ছোট্ট গাছের মতো। একে যত্ন করতে হয়। পানি দিতে হয়, পরিচর্যা করতে হয়। যখন বড় হয়ে শেকড় গেড়ে ফেলে তখন রোজ পানি না দিলেও তাকে আর আলাদা করা যায় না। কিন্তু ছোট থাকতে না দিলে গাছ টা মারা যাবে। শেষ সময়ে গিয়ে যখন ফিরে তাকাবে দেখবে ভুল টা নিজেদেরই ছিলো। বিয়ের আগে সর্ম্পক গুলো ভীষণ ভালো থাকে কারণ তখন আমরা একজন আরেক জন টাইম দিই। কেয়ার করার চেষ্টা করি। বিয়ের পর যেন সব ভুলে যায়। যেন কেয়ার ব্যাপার টা থাকাই উচিত না। একটা সর্ম্পক আপনা আপনি চলে না। একে যত্ন কর‍তে হয়।

এরপর পঁচিশ বছর পার হলো, আমাদের মধ্যে ছোট খাটো ঝামেলা হলেও কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবি নি।

রিধির বিয়ে হলো। আমাদের ছেলে ও বিয়ে করলো, ওদের বিয়ের পাঁচ বছর পর ওরাও এক সকালে এসে বলল-
-ওরা ডির্ভোস নিবে।

আমি আর রাতুল একে অপরের দিকে তাকালাম, রাতুল বলে উঠলো,
-ঠিক আছে, তবে তোমাদের এক মাস এক ঘন্টা করে এক রুমে থাকার শর্ত মানতে হবে।

সমাপ্ত
 

Users who are viewing this thread

Back
Top