What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সাইলেন্ট কিলার! (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
98
Messages
10,957
Credits
103,594
LittleRed Car
Camera photo
T-Shirt
Thermometer
Glasses sunglasses
Strawberry
*সংগৃহীত*
মূল লেখকঃ ডাঃ আফতাব হোসেন

বহুদিন লেখালেখি করি না। হাতটায় কেমন জং ধরে গেছে। বসে বসে হাত কচলে জং তোলার চেষ্টা করছিলাম আর ভাবছিলাম কী লেখা যায়। এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। দেখি মোল্লা ভাইয়ের নূরানি চেহারা। ইদানীং তেমন কেউ আমার খোজ খবর করে না। রোগে শোকে কদাচিৎ এই বেকার ডাক্তারকে কেউ কেউ স্মরণ করেন। মোল্লা ভাই তাদের একজন। তাই ফোন তুলেই জিজ্ঞেস করলাম,
- হ্যালো, কেমন আছেন মোল্লা ভাই ?
- আর কইয়ে না ভাইডি। বিলাড ফ্রেসারডা বোদহয় বাড়িছে।
- কী করে বুঝলেন?
- সকাল থেকেই ঘাড়ডা ব্যতা করতিছে।
- ব্লাড প্রেশার বাড়লে ঘাড়ে ব্যথা করে এটা কোথায় পেলেন মোল্লা ভাই?
- ইডা তুমি কী কলা ডাক্তার? ছোটবেলা থেকে শুইনে আসতিছি বিলাড ফ্রেসার বাড়লি ঘাড়ে ব্যতা করে।
- সে তো আমিও শুনেছি। কিন্তু ঘাড়ে ব্যথার সাথে ব্লাড প্রেশারের সম্পর্কটা যে কী, সেটাই তো এখনো খুঁজে পেলাম না।
- এই বুদ্দি নিয়ে তুমি লন্ডনে ডাক্তারি কী কইরে করলে, সিডা তো এহোন আমিও খুইজে পাতিছি না।
- আপনি তো জানেন মোল্লা ভাই। বুদ্ধিশুদ্ধি আমার বরাবরই একটু কম। নইলে বিলাত ফেরত ডাক্তার হয়ে কেউ বেকার বসে থাকে?
- সিডা কই নাই ডাক্তার। কচ্চি কী, বিলাড ফ্রেসার বাইড়ে গেলিই তো ঘাড়ের রগ ফুইলে যায়। সেই জন্যিই তো ঘাড়ে ব্যতা করে। ঘাড়ের রগ ছিইড়ে কত মানুষের স্ট্রোক পর্যন্ত করে শুনিছি। আর তুমি কচ্চো, হাই ফ্রেসারের সাতে ঘাড়ে ব্যতার কোনো সম্পক্ক নাই?
- মোল্লা ভাই, এই যে সারাক্ষণ শিরায়, ধমনীতে রক্ত কণিকা দৌড়ে বেড়াচ্ছে, আপনি কি টের পাচ্ছেন? এই যে সারাক্ষণ হাতের নাড়ী লাফাচ্ছে, আপনি কি কিছু টের পাচ্ছেন? আসলে রক্তের নালীর মধ্যে কোনো অনুভূতি নাই। তাই রক্তের নালী একটু সংকুচিত হলে কিংবা ফুলে গেলে আমাদের টের পাওয়ার কথা নয়। আর ব্যথা পাবার তো প্রশ্নই ওঠে না।
- তাহলি আমি যে ফার্মেসীতে যাইয়ে ফ্রেসার মাপাইয়ে দেকলাম, একশ পঞ্চাশ বাই নব্বই !
অকাট্য যুক্তি! শুধু মোল্লা ভাই নন, কী উচ্চ শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, সম্ভবত নিরানব্বই ভাগ বাঙ্গালির এই একই ধারণা। অনেকে তো এও বলে যে রাতে বাথরুমে পড়ে গিয়ে ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে স্ট্রোক করেছে। অথচ উল্টোটাই ঘটে। আগে স্ট্রোক করে, তারপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তবে বয়স্ক মানুষ পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেলে খুলির নীচে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় Sub-dural Haematoma বলি। কিছুদিন আগে আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক ইথারীয় বন্ধুর বেলায় ঘটেছে। তবে সেটা অবশ্যই স্ট্রোক নয়। সে অন্য প্রসঙ্গ। ব্লাড প্রেশারে ফিরে আসি। হেসে বললাম,
- শোনেন মোল্লা ভাই। ব্লাড প্রেশার হলো একটা উপসর্গ-বিহীন রোগ। তবে প্রেশার খুব হাই হলে যেমন, ১৮০/১২০ এর উপরে উঠলে, মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, বুক ধড়ফড়ানি জাতীয় সিম্পটম হতে পারে। তাও সবার বেলায় নয়। ঘাড়ে ব্যথা তো অবশ্যই নয়। আর আপনার প্রেশার তো খুবই সামান্য।
- কও কী ? তালি আমার ফ্রেসার বাড়ল ক্যান? আগে তো ছেলো না।
- সম্ভবত উলটো কারণে।
- মানে?
- মানে, হাই প্রেশারের জন্য ঘাড়ে ব্যথা নয়, ঘাড়ে ব্যথার জন্য হাই প্রেশার। অর্থাৎ ব্যথা, রাগ, উত্তেজনা, স্ট্রেস, এক্সারসাইজ, ইত্যাদি কারণে শরীরে এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয় যা মানুষের হার্টের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তের নালী সংকোচিত করে। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য ব্লাড প্রেশার বেড়ে যেতে পারে।
- তালি কচ্চো, চিকিতসে করার দরকার নেই?
- না, তা বলছি না। আপনার বয়স কত হলো মোল্লা ভাই?
- তা ষাটের মতো হবি বোদহয়।
শুনে আমি মুচকি হাসি। একটা বয়সে এসে পুরুষরাও মেয়েদের মতো বয়স লুকাতে চায়। চুল দাড়িতে মেহেদী লাগিয়ে কিংবা কলপ করে রঙিন সাজতে চায়। আমি হলফ করে বলতে পারি, সেটা অবশ্যই তার বয়স্ক বউকে দেখানোর জন্য নয়! কে জানে, হয়ত মনে কোনে, অতি সংগোপনে, আর একবার পানি গ্রহণের ইচ্ছাটা বসে আছে। হাসি চেপে বলি,
- শেষ কবে ব্লাড প্রেশার চেক করেছেন মোল্লা ভাই?
- তা বছর দুই আগে। তুমি তো জানো, আমার কোনো রোগ বালাই নেই। আর ডাক্তারদের কাছে গেলিই তো এক গাদা টেস্ট দেয়। খালি খালি পয়সা নষ্ট। সেই জন্যি তো তোমারে ফোন করিছি। তোমার চেম্বারও নেই। পার্সেন্টেজও পাবা না। টেস্টও দেবা না। হা হা হা।
দরাজ গলায় হেসে ওঠেন মোল্লা ভাই। হাসলেও এটা এই উপমহাদেশে এক করুণ চিত্র। কিছু অর্থলোভী ডাক্তারের অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেয়ার কারণে অধিকাংশ ডাক্তারের দেয়া প্রয়োজনীয় টেস্ট করাতেও রুগীদের অনীহা। আমি গম্ভীর স্বরে বলি,
- শোনেন মোল্লা ভাই। হাইপার-টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক। করোনা ভাইরাসের চেয়েও ভয়ঙ্কর। গত দুই বছরে সারা পৃথিবীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে চব্বিশ কোটির মতো, আর মৃত্যু বরণ করেছে আটচল্লিশ লাখ। মানে বছরে চব্বিশ লাখ। অথচ ডব্লিউ এইচ ও এর ভাষ্য মতে, এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে প্রায় তেরোশো কোটি লোক হাইপার-টেনশনে আক্রান্ত, যার অর্ধেক মানুষ জানেই না যে তাদের হাইপার-টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ আছে। আর এই উচ্চ রক্তচাপ জনিত জটিলতার কারণে বছরে পৃথিবীতে প্রায় আশি লক্ষ মানুষ মারা যায়।
- কও কী ? শুইনে তো আমার মাথা ঘুরতিছে।
- হ্যাঁ। মাথা ঘোরার মতোই অবস্থা। উচ্চ রক্তচাপে কোনো উপসর্গ নেই বলেই পঁয়ষট্টি কোটি লোকের ডায়াগনোসিস হয় না। আর এদের অধিকাংশই আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের লোক।
- তালি তুমি এট্টা ওষুধ কইয়ে দাও। এহোনই মরার ইচ্ছে নেই আমার।
- আমিও চাই না মোল্লা ভাই। তবে আগে ডায়াগনোসিসটা তো হতে হবে। আজকের ব্লাড প্রেশার আপনার ঘাড়ে ব্যথার জন্যও হতে পারে। ঘাড়ে ব্যথা ভালো হলে আবার মাপতে হবে। তবে মুশকিল হলো আমাদের দেশের অনেক ডাক্তারই একবার ব্লাড প্রেশার হাই পেলে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ লিখে দেন। প্রেশার খুব বেশি হাই না পেলে (১৬০/১০০ এর উপরে) ওষুধ না লিখে দুই তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আরও দুই তিনবার প্রেশার মাপা উচিত। যদি প্রতিবারই হাই পায়, তাহলে ওষুধ শুরু করতে হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে আমি ডাক্তারদের দোষ দিই না। কারণ শুধু প্রেশার মাপতে বারবার আসতে বললে আপনারা বলবেন ডাক্তারের পয়সা কামাইয়ের ধান্দা। আপনি বরং একটা ডিজিটাল বিপি মেশিন কিনে সাত থেকে দশ দিন, দিনে তিন চার বার প্রেশার মাপুন ও একটা কাগজে লিখে রাখুন। পরে সেই ডাটা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার সাহেবের আপনার ব্লাড প্রেশারের ধরণ বুঝতে সুবিধা হবে।
- ইডা ভাল কইছ ডাক্তার। আজই একটা মেশিন কিনতি হবি।
- শুধু তাই নয়। আপনাকে কিছু টেস্টও করতে হবে।
- আবার টেস্ট কেন? আমার তো অন্য কোনো অসুবিধা নাই।
- ঐ যে বললাম না, হাইপার-টেনশন হলো সাইলেন্ট কিলার। উচ্চ রক্তচাপ রক্তের নালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে রক্তের নালী চিকন হয়ে যায়। ব্রেইন, হার্ট, কিডনিতে রক্তের সাপ্লাই কমে যায়। রক্ত জমাট বেধে নালী বন্ধ হয়ে স্ট্রোক কিংবা হার্ট এটাক হতে পারে। কিডনি ফেইল করতে পারে। আমরা বলি End Organ Damage. সুতরাং আপনাকে কিছু রক্তের পরীক্ষা ও ইসিজি করে দেখতে হবে শরীরের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্গানগুলো এফেক্টেড হয়েছে কিনা। সেই অনুযায়ী ডাক্তার সাহেব ব্যবস্থাপত্র দেবেন।
- তোমার সাতে কতা কতি যাইয়ে তো কেঁচো খুড়তে সাপ বারায়ে পড়ল ডাক্তার। আমার তো হাত পা ঠাণ্ডা হইয়ে আসতিছে।
- আপনাকে ভয় দেখানো আমার উদ্দেশ্য নয় মোল্লা ভাই। সাবধান করতেই এ সব বলা। এখন মানা না মানা আপনার ব্যাপার।
- তোমারে আমি ছোট ভাইয়ের মতো জানি। তুমি যহোন কইছো, মানতি তো হবিই। শুনিছি, হাই ফ্রেসার থাকলি লবণ কাঁচা লবণ খাওয়া ঠিক না?
- কাঁচা লবণটা আবার কী জিনিষ মোল্লা ভাই?
- তোমার এই কতায় কতায় প্যাঁচ মারার অভ্যাসটা আরা গ্যালো ডাক্তার। কাঁচা লবণ মানে আলগা লবণ। ঐ যে তোমরা ইংরেজিতে কও, টেবিল সল্ট। ওডা বাদ দেবো। বউরে কবো, তরকারিতি এট্টু বেশি কইরে লবণ দিতি। তালি আর কাঁচা লবণ খাতি হবি না।
শুনে আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারি না। আমি তো এও শুনেছি, কেউ কেউ কাঁচা লবণ না খেয়ে ভাজা লবণ খায়। হাসতে হাসতেই বললাম,
- মোল্লা ভাই, লবণের কোনো কাঁচা পাকা নাই। লবণ হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড। যার মধ্যে সোডিয়ামটা রক্তচাপ বাড়ায়। সুতরাং আপনি কাচাই খান আর রেঁধেই খান, সোডিয়াম তো আর বদলে পটাসিয়াম হয়ে যাবে না। মোট কথা, লবণ যে ভাবেই খান, কম খাবেন। তাছাড়া আমাদের দৈনন্দিন খাবারেও প্রচুর সোডিয়াম থাকে।
- আমার ঘাড়ে ব্যতা না হলি তো এতো কিছু জানতি পারতাম না ডাক্তার।
- আপনার সাথে কথা বলে আমিও একটা লেখার মওকা পেয়ে গেলাম। মনে রাখবেন, পঞ্চাশোর্ধ প্রতিটা মানুষের, পুরুষ কিংবা নারী, বছরে কমপক্ষে দুইবার ব্লাড প্রেশার চেক করা উচিত। কেউ জানে না, কার ভেতর ঘাপটি মেরে আছে এই "সাইলেন্ট কিলার"।
বিদ্রঃ মোল্লা ভাই চরিত্রটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কেউ নিজের সাথে কিংবা অন্যের সাথে মেলাতে চেষ্টা করবেন না।

*সংগৃহীত*
 

Users who are viewing this thread

Back
Top