What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ভ্রমণ বিভ্রাট - ২ (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
95
Messages
10,873
Credits
102,558
LittleRed Car
Camera photo
T-Shirt
Thermometer
Glasses sunglasses
Strawberry
ভ্রমণ বিভ্রাট - ২
মুল লেখকঃ ডাঃ আফতাব হোসেন



আমি এমন কোনো মা দেখিনি, যে তার বাচ্চার খাওয়া নিয়ে সন্তুষ্ট। তো, সে বাচ্চা যত মোটা তাজাই হোক, আর যত ভালোই খাক। খেতে খেতে বেচারা বাচ্চাটার পেট ফুলে ঢোল হয়ে যায়, তার পরও মা তাঁকে টিপে টিপে খাওয়ায়। গিন্নীর ব্যাগ গোছাতে দেখে আমার সেই বাচ্চা খাওয়ানোর কথা মনে পড়ে গেল। ব্যাগের পেট ভরে গেছে অনেক আগেই। অথচ তখনও সে সমানে এখানে সেখানে, সামনে পিছনে, বামে ডানে, যেখানে পারছে, ফর্দ মিলিয়ে টিপে টিপে জিনিষ পত্র ঢুকিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চারা তাও কাঁদতে পারে, দৌড়াতে পারে, প্রতিবাদ করতে পারে। প্রাণহীন অসহায় ব্যাগগুলো তাও পারে না। ফলে এক একটা ব্যাগ ফুলে ফেঁপে পোটকা মাছের মতো হয়ে গেল। আমারও অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিচ্ছু করার নেই। কেন নেই? আগের পর্বে তার একটা উদাহরণ দিয়েছি। এবার আর একটা দেই।
খুব ছোট বেলায় যে দিন বইতে পড়েছিলাম, হিলারি ও তেনজিং হিমালয়ের সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট জয় করেছেন, সে দিন থেকেই স্বপ্ন দেখি, চূড়ায় চড়তে না পারি, একদিন খুব কাছ থেকে হিমালয়কে দেখব আমি। অনেকেই স্বপ্ন দেখে, আবার ভুলেও যায়। আমি স্বপ্নগুলোকে সাজিয়ে রাখি বুকের আঙ্গিনায়। সযত্নে লালন করি এই বিশ্বাসে, একদিন এই স্বপ্নই আমাকে পৌঁছে দেবে সেই স্বপ্নের দেশে।
সুযোগ এসে গেলে বছর দুই আগে। একুশ জনের একটা চৌকশ দল জুটে গেল, যাবে আমার সাথে হিমালয়ের দেশে, হিমালয় কন্যা নেপালে। স্বাভাবিক নিয়মেই দলের সবাই আমার চেয়ে বিশ পঁচিশ বছরের ছোট। না, শুধু পুরুষ নয়, সে দলে নারী ও শিশুরাও ছিল। বয়সে, বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, অভিজ্ঞতায়, সব বিবেচনায়, নেতৃত্ব, সুযোগ সুবিধা, সব আমারই পাওয়ার কথা। অথচ বাংলাদেশের মানুষ এখন নারী নেতৃত্বে বিশ্বাসী। তাই আমার দলের লোকজন আমাকে নয়, গিন্নীকেই তাঁদের নেত্রী মেনে নিলো। এ দলের অনেকেই আগের বছর আমাদের সাথে ইন্ডিয়া ট্যুরেও ছিল। সেই ট্যুরে তারা পরিচিত হয়েছিল বয়স চুরি করা এই মহিলার বাৎসল্য ও ছেলেমানুষির সাথে। তারা বুঝে গিয়েছিল, পঞ্চাশ বছরের এই শিশুটিকে খুশি রাখতে পারলেই ভ্রমণের খুশি তাদের কানায় কানায় পূর্ণ হবে। সবাই আমাকে চাচা বলে ডাকলেও তাকে আপু বলে ডাকে। চাচার বউ আপু কেমন করে হয়, আর কেউ না জানলেও আমি জানি। তাই ব্যাখ্যা চেয়ে বয়াতি বংশের পোলার ইজ্জতের আরেক দফা ফালুদা করার ইচ্ছে হয়নি।
মাঘের হাড় কাঁপানো এক শীতের সকালে, দলবল নিয়ে হাউ কাউ করতে করতে বাংলাদেশ বিমানের এক ফ্লাইটে চড়ে বসলাম। মুহূর্তে ফ্লাইটের এক কোনে ছোটখাটো এক হাট বসে গেল। সবাই জানালার পাশে বসতে চায়। এক ধমক দিয়ে বললাম,
- এটা কী বাস না ট্রেন, যে জানালা দিয়ে গাছপালা, ঘর বাড়ি দেখতে দেখতে যাবে?
- গাছপালা না থাক, মেঘ তো আছে। মেঘ দেখতে দেখতে যাবো। তোমার কোনো অসুবিধা আছে?
বউয়ের পাল্টা প্রশ্ন। কোথাও যাবার আগে আমি মোটামুটি রিসার্চ করে যাই। শুনেছি, ভাগ্য ভালো থাকলে নেপালের আকাশে বসেই হিমালয় চূড়া দেখা যায়। ইচ্ছে ছিল, বিমানের জানালার পাশে বসে দেখব সে অপূর্ব দৃশ্য। আমার সে আশা ফাটা বেলুনের মতই চুপসে গেল। চুপসানো গলায় বললাম, আমাকেও না হয় মাঝে মাঝে একটু মেঘ দেখতে দিও।
ঢাকা থেকে কাঠমুন্ডু, মাত্র দেড় ঘণ্টার ফ্লাইট। দেখতে দেখতেই নেপালের আকাশে চলে এলাম। খুব বেশী উপর দিয়ে উড়ছে না বিমান। বউয়ের ঘাড়ের উপর দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি, নীল আকাশের বুকে ভাসছে পেঁজা পেঁজা তুলার মত সাদা মেঘ। তারই ফাঁক দিয়ে নিচে, অনেক নিচে, সারি সারি পাহাড়ের চুড়া তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি আরও ঝুঁকে ওদের দেখার চেষ্টা করি। শীতের দিন। প্রায় প্রতিটি পাহাড়ের চূড়ায় জমে আছে বরফ। সূর্যের আলোয় সে চূড়াগুলো যেন এক একটা বিশাল হীরক খণ্ডের মত ঝিকিমিকি করছে। ঘাড়ের উপর আমার এত উৎপাত গায়ে মাখে না বউ। সেও ডুবে আছে প্রকৃতির এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রেমে।
ক্যাপ্টেন যান্ত্রিক কণ্ঠে ঘোষণা দেয়, আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি। বিমান নিচে নামতে শুরু করে। আমি তখনও তাকিয়ে আছি নিচের দিকে। আমার যেন দেখে দেখে আর সাধ মেটে না। অবাক হয়ে ভাবি, উপর থেকেই এত সুন্দর, কাছে থেকে না জানি আরও কত মনোহর! কিন্তু নামবে কোথায়?এ যে শুধু পাহাড় আর পাহাড়, এত পাহাড়ের ভিড়ে সমভূমি কোথায় যেখানে প্লেন ল্যান্ড করতে পারে? হঠাৎ কান্নি মারা ঘুড়ির মতো একটা গোত্তা মেরে বিমান খুব নিচে নেমে আসে। ঝাঁকি খেয়ে ছেলে বুড়ো অনেকেই আর্ত চিৎকার করে ওঠে। দেখি সারি সারি উঁচু উঁচু পাহাড় হাতে হাত ধরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তারই মাঝখানে এক খণ্ড উপত্যকা, ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট। বহুবার বিমানে চরেছি। বহু এয়ারপোর্টে নেমেছি। এমন ভয়ংকর ল্যান্ডিং দেখিনি জীবনে। বিশেষ অভিজ্ঞতা না থাকলে পাইলটদের এমন বন্ধুর বন্দরে নামতে ঘাম ছুটে যাবার কথা।
বেশ ছোট, সুন্দর, ছিমছাম ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট। তখনও এই বন্দরে সিঁড়ি বেয়ে এয়ার ক্রাফট থেকে নিচে নামতে হয়। হেঁটেই টারমাক পেড়িয়ে টার্মিনালে ঢুকতে হয়। টার্মিনালে ঢোকার পথেই বা পাশে, বিশাল এক বুদ্ধ মূর্তি। বসে আছেন তার চিরায়ত ভঙ্গিমায়। অমনি সব ভুলে মহিলারা লেগে গেল বুদ্ধ দেবের সাথে ছবি তোলায়। কেউ তার পদমূলে বসে, কেউ তার হাত ছুঁয়ে, কেউ বা রীতিমত জড়িয়ে ধরে। ভাগ্যিস, মূর্তিদের কোনো ভাবান্তর হয় না, নইলে বুদ্ধ বাবু এই সব উর্বশী মেনকাদের পাল্লায় পড়ে কতক্ষণ মৌনতা ধরে রাখতে পারতেন, সে ব্যাপারে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
ছোট হলেও বেশ তৎপর এয়ারপোর্টের লোকজন। নেপালের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম উৎস পর্যটন। তাই তারা পর্যটকদের বিশেষ যত্ন নেয়। খুব সহজেই আমাদের ইমিগ্রেশন হয়ে যায়। বাইরে বেরুতে বেরুতে দুপুর দুটো গড়িয়ে গেল। এয়ারপোর্ট থেকে মূল শহর বেশী দূরে নয়। মাইল পাঁচেক পথ। বাসে বা ট্যাক্সিতে যাওয়া যায়। আমরা ছাও পোনা নিয়া আলাদা আলাদা ট্যাক্সিতে যাওয়াটা নিরাপদ মনে করলাম না। তাই দুটো মাইক্রোতে মাল পত্র তুলে রওনা দিলাম শহরের দিকে। এতগুলো মানুষ, হোটেল আমরা আগেই বুক করে রেখেছিলাম। থামেলে, কাঠমুন্ডুতে টুরিস্টরা ওই এলাকাতেই বেশী থাকে।
পথে যেতে যেতে চারিদিকের দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যেতে থাকে। দু বছরও হয়নি, এক ভয়ংকর ভূমিকম্প ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে হিমালয়ের কোলে লুকিয়ে থাকা এই শহরটাকে। কেড়ে নিয়েছে হাজার দশেক মানুষের প্রাণ। চারিদিকে সেই সব হারানোর ক্ষত এখনও দগদগ করছে। রাস্তা ঘাট ভাঙ্গা। ভাঙ্গা বাড়ি ঘর। পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে চারিদিকে পুরা দমে। তারই কারণে ধুলায় ধূসর পুরাটা শহর। শীতের দুপুরে কুয়াশা থাকে না, অথচ ঘন কুয়াশার মত ধুলোর মেঘে ঢেকে আছে কাঠমুন্ডুর আকাশ। আমার মনটাও কেমন এক বিষণ্ণতার মেঘে ছেয়ে যায়!
সব শহরেই অতীত ঐতিহ্য লুকিয়ে থাকে তার পুরনো এলাকায়। তাই টুরিস্টরাও ভিড় করে সেই সব জায়গায়। পুরনো শহরে রাস্তা ঘাটও পুরনো। পুরনো বাড়ি ঘর। সরু সরু গলি। নেপালে ট্রাফিক আইন খুব কড়া। অনেক রাস্তাই একমুখী। তার উপরে অনেক গাড়ির ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে কোনো মতে মাইক্রো বাস দুটো আমাদের উগড়ে দিল এক গলির মুখে। এই গলির মাথায় আমাদের হোটেল।
কিছু কিছু স্মৃতি মানুষের মনে গভীর দাগ কেটে যায়। চাইলেও ভুলতে পারে না। যেমন আমি ভুলতে পারিনি ভেনিসের সেই হোটেলের স্মৃতি। এবার বউকে আগে থেকেই ভূগোল পড়িয়ে এনেছি। অনেক মানুষ এক সাথে যাচ্ছি। সবার সামর্থ্য এক রকম নয়। সবার কথা বিবেচনা করেই হোটেলে বুকিং দিতে হয়। বুঝিয়েছি, "টুরিস্টদের যেখানেই রাইত, সেখানেই কাইত" হতে হয়। দল বেঁধে ঘুরতে তারও খুব পছন্দ। তাই খুব একটা রা কাটেনি। কেন যে কাটেনি, তা একটু পরে টের পেয়েছিলাম।
হোটেল রিসেপশনিস্ট সাতটা রুমের চাবি বুঝিয়ে দিল। আমাকে অবাক করে দিয়ে সবাই বলল, আগে আপু রুম পছন্দ করবে। তার পর আমরা রুম নেব। এই অযাচিত অগ্রাধিকারে গিন্নীকে বেশ আপ্লুত মনে হল।
আমি মিচকি হাসি দিয়া মনে মনে বলি, পোলাপাইনগুলা খুব চালাক হইয়া গেছে। কারে কেমনে বশ করতে হয়, ঠিক বুইঝা ফালাইছে। আরও অবাক হয়ে দেখি, গিন্নী এক রুম বয়কে বলছে, সব চাবি লেকে মেরে সাথ আও। হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে বউ আমার চোস্ত হিন্দি বলে। আর নেপালিরাও হিন্দি খুব ভালো বোঝে। বিশ বাইশ বছরের রুম বয় ছেলেটা চাবির গাট্টি নিয়া গিন্নীর পিছে পিছে লাফাতে লাফাতে উপরে চলে গেল।
আমি সবাইকে হোটেল লবিতে বসতে বললাম। কারণ আমি জানি, সাত সাতটা রুম পর্যবেক্ষণ করতে তার কমপক্ষে আধা ঘণ্টা লাগবে। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে পড়ল। কারও ভেতর তেমন কোনো বিরক্তির ভাব দেখতে পেলাম না। ছেলেমেয়েগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মনটা আমার ভরে গেল। ইতিমধ্যে আমি প্রকৃতির ডাক শুনতে পেলাম। সেই সাথে পেটের ভেতর ক্ষুধার মোরগ বাক দিতে শুরু করেছে। ভাবলাম, একেবারে রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে তারপর পেট পূজোর সন্ধানে বেরুতে হবে। জার্নিতে আমার আবার খিধা সহ্য হয় না।
আধা ঘণ্টা নয়, মাত্র বিশ মিনিটেই বাকি ছটা চাবি নিয়ে রুম বয় নিচে নেমে এলো। খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, মেডাম তিন বি পসন্দ কিয়া। যেন ম্যাডামকে রুম পছন্দ করাতে পেরে সে এক অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে। বুঝলাম, অন্য সবার মত এই ছেলেটিকেও সে বশ করে ফেলেছে। এর কপালে ভোগান্তি আছে। কোথায় কী কিনতে পাওয়া যায়, এর কাছ থেকেই সে জেনে নেবে এবং আনিয়ে নেবে। দলের বাকি সবাই এক একটা চাবি নিয়ে নিলো। খুব একটা দেখা দেখির ধার ধারল না কেউ। আমি ছেলেটিকে আমার লাগেজ নিয়ে রুমে আসতে বললাম। চার চারটা লাগেজ। ছেলেটা কত বারে নেবে, তার তোয়াক্কা না করে ওর ঘাড়ে দুটো দিয়ে বাকি দুটো নিজের কাঁধে নিয়ে নিলাম। লিফট নেই। পুরনো আমলের সিঁড়ি, বেশ খাড়া। তিন তলায় উঠতে উঠতে আমার জান খাঁচা ছাড়া!
রুমে ঢুকে দেখি, তখনও মাইক্রস্কোপিক দৃষ্টিতে এদিক সেদিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে বউ। আমাকে দেখেই কপাল কুঁচকে জানতে চাইল, এত দেরি করলা ক্যান?
কয় কী? দেরি করছি আমি? কিন্তু বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নামার মতো অবস্থা নেই তখন আমার। হাঁপাতে হাঁপাতে কোনো মতে বললাম,
- খাঁড়াও, বইস্যা একটু দম লইয়া লই।
- খবরদার, বসবা না।
- মানে কী?
- মানে, এই বিছানার চাদরে বসবা না। ঠিক মতো ধোয় কিনা কে জানে? আমি চাদর আনছি। লাগেজ খুলে বের করো।
আমি চোখ সরু করে তাকালাম। জানি প্রতিবাদ করা যাবে না। শুধু জানি না, আর কোন কোন শৃঙ্খলার শৃঙ্খলে সে বাঁধবে আমায়। কিন্তু লাগেজ খোলার মতো সময় হাতে নাই আমার। প্রকৃতি নিম্নচাপের দশ নম্বর মহা বিপদ সংকেত টাঙ্গিয়ে দিয়েছে। এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া দরকার। ওয়াশ রুমের দিকে যেই না গিয়েছি, অমনি ফরমান জারি,
- জুতা পায় দিয়া ওয়াশ রুমে যাবা না। কাদা কাদা হয়ে যাবে। নোংরা ওয়াশ রুম আমার একদম সহ্য হয় না।
খুবই যুক্তি সঙ্গত কথা। বাইরের জুতা নিয়া আমিও ওয়াশ রুমে যাইতাম না। একটু ক্রেডিট নেয়ার ভাব করে বললাম,
- বাইরের জুতা পায়ে দিয়া আমি কখনও ওয়াশ রুমে গেছি, কও তুমি? আমি তো জুতা খুইলা এই বাথরুমের স্যান্ডেল পইরা যাইতাম।
বলে বাথরুমের সামনে রাখা, চামড়া ওঠা নেড়ি কুকুরের মতো পড়ে থাকা, এক জোড়া পুরনো স্যান্ডেল দেখালাম।
- না, ওই স্যান্ডেলও পায়ে দিবা না।
- ক্যান? এই স্যান্ডেলে আবার কী দোষ করল?
- কে না কে পায় দিছে, ওই স্যান্ডেল তুমি পায়ে দিবা না।
এবার মনে মনে প্রমাদ গুনি। এ কোন জ্বালায় পড়লাম আমি? এ তো দেখি লুঙ্গি খোলার চাইতেও বিপদ। কাপড় ভিজে গেলে ইজ্জতের ধুলও থাকবে না। রেগে মেগে বললাম,
- পায়ে তো আমার দিব। তাতে তোমার কী?
- পা কি খালি তোমার? ওই পা আমি বুকে নিই না?
মেয়েটা মাঝে মাঝে ফস করে এমন দু একটা কথা বলে ফেলে যে আমার মুখের সব কথা হারিয়ে যায়। আমি অবাক বিস্ময়ে অপলক ওর দিকে চেয়ে থাকি। তাই তো, এমন করে তো ভেবে দেখিনি। এর পর আর কোনো কথা চলে না। কাপড় ভিজে গেলেও না। আমার দুরবস্থা দেখে বুঝি করুণা হয় করুণাময়ীর। গলায় দরদ ঢেলে বলে,
- এক মিনিট। আমিই স্যান্ডেল বের করে দিতেছি।
বোধহয় ততক্ষণে বুঝে গেছে, খুব একটা নড়াচড়া করার অবস্থায় নেই আমি। তাই আমাকে না বলে নিজেই ঝটপট একটা ব্যাগের আউটার পকেট থেকে আমার বাসায় পরা স্যান্ডেল জোড়া বের করে। অন্য পকেট থেকে বের করে লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ। বোকা মেয়েটার এমন উপস্থিত বুদ্ধি আমাকে অবাক করে দিল। জরুরী জিনিষগুলো সে বাইরের পকেটে রেখেছে, যাতে প্রয়োজনে তাড়াতাড়ি বের করা যায়।
ওয়াশ রুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর সবচে আরামদায়ক কাজটি করতে করতে ভাবি, কী নাম দেব এর? ভালোবাসার অত্যাচার? কিছু কিছু অত্যাচার এতটাই মধুর, শত প্রয়োগেও মনে বিতৃষ্ণা জাগে না। আমাকে ভালো রাখার এমন প্রচেষ্টা যার, সে একটু বাতিকগ্রস্ত হলই বা, কী এমন ক্ষতি হবে আমার?
বাইরে বেরিয়ে তো আমার ভিমরি খাবার জোগাড়। খাটে পড়েছে ধবল সাদা বিছানা। নিজেই লাগেজ খুলে বিছানার চাদর বের করেছে। দেখি একটা ছোট ঝাঁটাও এনেছে। তা দিয়ে ঝেটিয়ে সে বিছানা টানটান করছে। আমাকে দেখে মিষ্টি হেসে গলায় মমতা ঢেলে বলে, এবার আরাম করে বসো। আমি খুব সাবধানে বিছানার এক কিনারে বসি। বসে বসে ভাবি, যে বিছানা বসলেই কুঁচকে যাবে, তা এত কসরত করে টানটান করে কী লাভ? আবার ভাবি, পৃথিবীর সব কাজই কি লাভ লোকসানের হিসেব করে হয়? আমি বসে বসে ওর কর্ম কাণ্ড দেখি। ইতিমধ্যেই সে টেবিলের উপর খবরের কাগজ বিছিয়ে তার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র গুছিয়ে রাখছে। বাংলায় লেখা খবরের কাগজ। তার মানে এ ও সে বাংলাদেশ থেকেই সঙ্গে করে এনেছে? আর কী কী আছে ঠাকুমার ঝুলিতে? দেখার জন্য আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকি। আমার বোধহয় অবাক হবার আরও অনেক আছে বাকি। দেখি, এক ফাঁকে সে একটা ছোট্ট নোটবুকে চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর অন্য একটা ব্যাগ খুলে ভেতরের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল। তার মানে, কোথায় কী রেখেছে, তাও নোট করে রেখেছে। যাতে খুঁজে পেতে সব কিছু ওলট পালট করতে না হয়। এই মেয়ের আমার বউ না হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারি হওয়া উচিত ছিল।
দক্ষ ম্যাজেসিয়ানরা যেমন পকেটে হাত ঢুকিয়ে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কিছু বের করে ফেলে, তেমনই সে লাগেজের পকেট থেকে একগাছি শক্ত পোক্ত নাইলনের রশি বের করল। দেখে তো আমার বিস্ময় আকাশ ছাড়িয়ে গেল। ইংরেজি সিনেমায় হোটেল রুমে এমন রশির বহুবিধ ব্যাবহার দেখেছি। তেমন কিছু না তো? ভাবতেই এই বুড়ো শরীরেও একদল তেজী ঘোড় সওয়ার বুক থেকে পেটের উপত্যকা বেয়ে নীচে চলে গেল।
- এই রশিটা একটু টাঙ্গিয়ে দাও তো সোনা।
খুব বিরক্তিকর কোনো কাজ আদায় করতে সে আমাকে সোনা টোনা বলে ডাকে। সেক্সপিয়ারের মুখরা রমণী বশীকরণ নাটক আমি দেখেছি। সে আজ বেঁচে থাকলে এই ঘটনা দেখে হয়ত ত্যাঁদড় স্বামী বশীকরণ নামে আর একটা নাটক লিখে ফেলত! আমি স্বপ্ন ভাঙ্গা হতাশ গলায় জানতে চাই,
- রশি টাঙ্গিয়ে কী হবে?
- বাহ, ভেজা কাপড় নেড়ে দিতে হবে না?
শুনে আমি হাসব না কাঁদব, বুঝতে পারি না।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top