What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made একটি শুভ্র ভালবাসার গল্প (1 Viewer)

Nnur

Exclusive Writer
Story Writer
Joined
Mar 6, 2018
Threads
25
Messages
160
Credits
3,564
আমার স্ত্রী সত্যি সুন্দরী। ফর্সা, নাদুস-নুদুস চেহারার লম্বা মেয়েটির স্বামী হিসাবে গর্বে আমার বুক ফুলে থাকে। যখন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবরা বলে, "ঈশ, সজলের বউটা কি সুন্দর!", তখন ভিতরে ভিতরে আমি আনন্দের ঢেঁকুর তুলি। এমন কথা শুনার পর প্রথম সুযোগেই আমি তাকে সোহাগ করি। সত্যি কথা হলো, বউকে সোহাগ করা আমার এক ধরনের নেশা। সেটা দায়িত্ব বা শারীরিক চাহিদারও ঊর্ধ্বে। এই একটিমাত্র কাজ যাতে আমি অনীহা বোধ করি না। বিষয়টি বেশ ভালই লাগে। সম্ভবত সীমাও উপভোগ করে।
সীমা আমার স্ত্রীর নাম। এটি তার আসল নাম নয়। আমার দেওয়া নাম। প্রথম ডেটিং করতে গিয়ে দিয়েছিলাম নামটি। সেদিন প্রথম দেখা হওয়া মাত্রই আমি তাকে বলেছিলাম, আমি তোমার আকাশের শেষ সীমা। আমার সীমাতেই হবে তোমার ঠিকানা। সেই থেকে ওকে আমি সীমা বলে ডাকি। একমকি ঠিকানা হবার পরেও আজ অবধি তাকে সীমা বলেই ডেকে যাচ্ছি। তবে ইদানীং আপসোস হয়, কেন যে সেদিন তাকে সীমার বলে ডাকিনি? সেদিন সীমার বললেও সে তাই মেনে নিত। কেননা যৌবনের উথলা প্রেমময় সময়ে প্রেমিকের গায়ের ফোঁড়ার দাগ তিলক রূপে শোভিত হতে থাকে। সীমার? সে তো কেবল এক নামের ব্যাপার। পুরুষের ক্ষেত্রেও তাই। মনের মানুষের চেহারায় যারা কাল আর শ্যামলা খুঁজে ফিরে তাঁরা এক নম্বর শত্রু ছাড়া কেউ নয়। কেননা, নিজের চোখে তা চন্দ্রিমার আলো ঠিকরান রূপ।
যা বললাম সবই পুরাতন কথা। ইদানীং এসবে জং ধরেছে। বিয়ের দশ বছরের মাথায় সীমা আমার চক্ষু বিষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে এখন পুরাতন পুরাতন লাগে। খুব সত্যি কথা হলো, সীমা এখন পুরাতন, না-কি আমি, সেটাও বুঝা দুষ্কর হয়েছে। তার তিরিক্কি মেজাজ প্রমাণ করে না যে আমার জন্য তার মনে স্থান আছে। আমার হিসাবও সোজা-সাপটা। আমি যা বুঝি তাতে সীমাকে এখন আমার কাছে সীমারের মতই লাগে। সারাক্ষণ মনে হয় ও আমাকে শেষ করে দিতে চায়। আমার প্রতি আর কোন মায়া-টান অবশিষ্ট নেই। ছেড়ে যেতে পারলেই বাঁচে। তাই সারাক্ষণ ঝগড়া করে। এই যেমন, আজ ঘুম হতে উঠেই সে বলল, ডাক্তারের কাছে যাবে। আমাকে না-কি পরীক্ষা করাতে হবে। আমার না-কি সন্তান জন্ম দেবার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। কাজেই পরীক্ষা করানো দরকার। আমি লেখক মানুষ। বেশ অগোছালো জীবন আমার। বললেই হলো যে এখনই যেতে হবে? আমি এখন একটি উপন্যাস লিখছি। আর সে বলে ডাক্তারের কাছে যেতে! পাগল একটা! পারলে গলা টিপে মেরে ফেলতাম। লোকে খারাপ বলবে, তাই পারি না। এটা তার জ্বালাতনের খুব সামান্য একটা উদাহরণ। ইদানীং সে কথায় কথায় ঝগড়া বাঁধানোর স্বভাব ধরেছে। কোন কিছুই ছাড় দেয় না। সারাক্ষণ খুঁচা দেওয়া বেশ রপ্ত করে নিয়েছে। শুধু তাই না। সে তার শোধও নেয়। আজও তাই হলো, কথা শুনিনি বলে দুপুরে কোন রান্না হয়নি। তাই উপোষ আছি। আমাকে কাবু করার এটাই তার বড় হাতিয়ার। কোন রাগ হলেই রান্না বন্ধ। তখন বাধ্য হয়ে আমি নিশ্চুপ হয়ে যাই। তার লেজে লেজে ঘুরি। তা করেও যদি কিছু খানা জোটে মন্দ কি। কিন্তু আজ তারও সুযোগ নেই। সে বাহিরে চলে গেল। সম্ভবত মার্কেটে গেছে। কিন্তু আমি? আমি কী করি? বাহিরে গেলে আমার গল্পের খেই হারিয়ে ফেলব। তাই খিদা নিয়েই বসে আছি। মেজাজ খিটখিটে হয়ে আসছে। এভাবে আর কতদিন? অনেক দিন ধরেই নিয়মিত ঝগড়া করে যাচ্ছি। ঘরের ভিতর কাঁচ এবং সিরামিকের আর কোন জিনিস অবশিষ্ট নেই। যা ছিল সব ভেঙ্গে শেষ। আমি কিনি আর সীমা ভাঙ্গে। সেদিন সে আমার ল্যাপটপটাও ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিল। সেটা নাকি তার বড় সতীন। কোন ভাবে অনয়-বিনয় করে ল্যাপটপটা বাঁচাতে পেরেছি। কিন্তু জীবন সঙ্গীর সাথে সারাক্ষণ ঝগড়াঝাঁটি হলে জীবনের সঙ্গী হওয়া যায়? সে তো বরঞ্চ জীবন মরার সঙ্গী। মরার সঙ্গীকে সাথে রাখার কোন অর্থ আছে? আজ একটা দফারফা চাই।
বাসায় ফিরতে সীমারের দেরি হলো। সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। ঘরে ঢুকা মাত্রই তার গতি রোধ করলাম,
- আজ শেষ ফয়সালা হয়ে যাক।
- কী ফয়সালা চাও? বিচ্ছেদ?
- এই দেখ সীমারের মাথায় কত বুদ্ধি। পার্কে বসে সব ভেবে এসেছে।
- সীমার বলবি না। তোকে সীমা ডাকার পারমিশন দিয়ে ভুল করেছিলাম। এতদিন পরে এসে আমাকে সীমার ডাকিস? তোর চোদ্দ-গুষ্ঠি সীমার।
আমার মাথায় রক্ত উঠার হার আরও বেড়ে গেল। স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতে আব্বা নিষেধ করেছিলেন। অথচ আমার সেই পিতামাতাকে নিয়েই সে বকা দিচ্ছে? তবুও মরা বাপের কথা মেনে নিয়ে নিজের হাতের নিয়ন্ত্রণ নেই আমি। তাই বলে ঠোঁটে কুলুপ দেইনি। এভাবে মেনে নেয়া যায় না। ফয়সালা হওয়া সত্যিই জরুরী।
- তোর অনেক পাখনা গজিয়েছে। আয় তাহলে ফয়সালা করেই ফেলি। তুই থাক তোর মতো। আমি থাকি আমার মতো। তুই আমার জীবন থেকে বিদায় নে। তোর জন্য আর কোন মায়া নেই। মনের ভিতর হতে তোকে কেটে দিলাম।
বলে দুই তর্জনীর জোড়া লাগিয়ে, আবার টেনে জোড়া খুলে বাচ্চাদের মতো করে দেখিয়ে দিলাম, কাটাকাটি। তাতে সীমা আরও ক্ষ্যাপে গেল। সে নির্লিপ্তভাবে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে চেয়ে রইল। তারপর গলা নিচু করে বলল,
- আমি চলে গেলে তুই খুশি হবি?
-খুশি হবো মানে? খুশিতে খালি বাসায় উলঙ্গ নিত্য করব।
আমার এ কথা শুনার পর সে ঘুরে শোবার রুমে চলে গেল। সম্ভবত চোখ মুচতে মুচতেই গেল। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাগ গুছিয়ে সে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। এই প্রথম সে রাগ করে বাসা থেকে চলে গেল। গত দশ বছরে আজই সীমা ছাড়া হলাম। যতই ঝগড়া করি না কেন, আমি কখনই সীমাকে ছাড়া থাকিনি। এক দিনের জন্যও না। সম্ভবত বেশি গায়ে গায়ে লেগে থেকেই আমাদের সম্পর্কটা রুক্ষ হয়ে উঠেছে। এজন্যেই কি অনেক মহিলারা চায় যেন তার স্বামী দিনের বেশিরভাগ সময় বাহিরে কাটাক? সে যাই হোক, এই ফিলসফি আমার চর্চা করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে জানি না। কিন্তু এটা সত্যি যে আজ সীমা ছাড়া হলাম। তাতে মনে একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বুকটা হালকা হয়ে এসেছে। আবার সেই আগের শান্তির জীবনে ফিরতে যাচ্ছি। কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! তবে একটু টেনশন হচ্ছে, কারণ রাস্তায় কি-না কি করে বসে। সাথে যেতে পারলে ভাল হতো। শ্বশুরের কাছে গিয়ে বলা যেত, "আব্বা বেঁচে নেই, তাই নিজের হাতেই আপনার পাজি জিনিসটা আপনার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম।" কিন্তু রাতে যদি রাস্তায় কিছু করে বসে তাহলে আবার সীমাহীন কষ্টে পরতে হবে। যাই হোক, এতো চিন্তা করে লাভ নেই। মাথা থেকে ভুত নেমেছে, এই যথেষ্ট। বাঁচা গেল। যা, যেখানে পারিস পরে মর। কুকুরে খেয়ে নিবে।
উলঙ্গ নিত্য করা হয়নি। কারণ অনেক কাজ মাথায় এসে পড়েছে। রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, টেংকিতে পানি তোলা, মশারি টানানো, গেইটে তালা লাগানো। আরও কত কি? কিন্তু এসব করতে খারাপ লাগেনি। অন্তত ভাড়াটিয়ারা আমাদের চিল্লাচিল্লি শুনছে না, কথায় কথায় বউকে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে না সেই আনন্দের। অবশ্য রাতে ঘুমাতে একটু সমস্যা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে একা থাকার অভ্যাস নেই, তাই। তাও কোন রকমে খোল বালিশে করে পুষিয়ে নিয়েছি। আজ ঘুম ভাঙ্গল সকাল নয়টায়। সীমা থাকলে চিল্লায়ে মাথা খেয়ে ফেলতো। সকাল সাতটার আগেই ঘুম ভাঙ্গাত। হঠাত করে এত ঘুমিয়ে বেশ ফ্রেশ লাগছে। কিন্তু অফিস ধরার জন্য তা কমপক্ষে এক ঘণ্টা দেরি হয়ে গেছে। দেরিতে যেয়ে বসের ঝারি খেয়ে লাভ নেই। আজ বরঞ্চ বিশ্রাম নেওয়াই ভাল। এই প্রথম একটা শুভদিন পাওয়া গেল। তাই ছুটি নিয়ে নিলাম। মাথাটা এখন বেশ ঠাণ্ডা। বাগানের ফুলগুলো যেন আমাকে দেখে পানি চাচ্ছে। আমি তাতে এক ফুটাও জল দেব না। এগুলো সীমার জিনিস। পারলে দেয়াল থেকে তার ছবিটাও নামিয়ে রাখতাম। কিন্তু এখনো অফিসিয়াল ফয়সালা হয়নি। তাই তা করে ভেজাল বাড়াতে যাইনি। তাই বলে তার রেখে যাওয়া সব কিছুতে তেল-পানি দিয়ে যাব তা ভাবার নয়। তালাকের উকিল নোটিশ পাওয়া মাত্রই একটা একটা করে কাটতে বা ফেলতে শুরু করব। সেই মধু-ক্ষণের অপেক্ষায় আছি।
আমার মনের আনন্দ আজ কাউকে বুঝতে দিব না। আমি একাই উপভোগ করতে চাই। এ বয়সে একাকী উপভোগ করার ভাল জায়গা হচ্ছে পার্ক। আমার বয়সীরা পার্কে যায় না। ফলে সেখানে পরিচিত কেউ আমায় পাবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটানিক্যাল গার্ডেনে যাব। সেখানেই আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। যে জায়গাটায় বসে আমি তাকে প্রেম নিবেদন করেছিলাম, আজ সেখানে একটা ফুলকে মাটিতে ফেলে জুতা দিয়ে ঘষে ঘষে সেখানকার ঘাস ও টেবিলকে জানিয়ে আসব, "তোমরা জেনে রাখ, সীমা আর আমার নেই। ও আমার মনের কালি, বড় দুশমন।"
তাই যাবার পথে একটি আধা মরা ফুল কুঁড়িয়ে নিলাম। গার্ডেনের সর্ব দক্ষিণের বেঞ্চটার সামনে গিয়ে ফুলটা মাটিতে ফেলে ইচ্ছে মতো পায়ে মাড়ালাম। রাস্তার পাকা অংশটা ফুলের রসে হালকা গোলাপি আকার ধারণ করেছে। কিন্তু ঘাস ও বেঞ্চটার কাছে সত্য বলার আগেই চোখে পড়ল সীমাকে। মনে হচ্ছে সে এদিকেই আসছে। কিন্তু সে এখানে কেন? তবে কি সে আমার আসার বিষয় জেনে গেছে? নাকি সেও সময় কাটাতে এসেছে? বিচ্ছেদের পর প্রথম কয়দিন বেশ খারাপ লাগে। খারাপ সময়টা যত্রতত্র কাটাতে পারলেই মুক্তি। সীমা মনে হয় মুক্তির উপায় ধরেছে। আমি দ্রুত উত্তরের দিকে সরে আবার পশ্চিমে এসে বেরিয়ে গেলাম। যেতে যেতে যা দেখলাম, তাতে অবাক হলাম। সে মৃদু স্বরে চিৎকার করে উঠল। তারপর অনেকটা আমার মতো করেই শোধ নিলো। সে তার ব্যাগ হতে একটা ফুলের তোড়া বের করল। তারপর বেঞ্চটাতে জোড়ে জোড়ে আঘাত করল। তাতে সবগুলো ফুল তোড়া বিচ্ছিন্ন হয়ে এদিক-ওদিক ছিটকে পড়ল। পরের ঘটনা দেখার জন্য অপেক্ষা করিনি। তাতে বরঞ্চ আমার রাগ বেড়ে গেলে কিছু একটা করে ফেলতে পারি। আমি সেখান হতে চলে গেলাম সার্কিট হাউজের নদীর পাড়ে। বসে বসে বাদাম বিচিগুলো পায়ে পিষে ধুলা করছি। কতবার যে এখানে বসে সেই শয়তানীকে নিজ হাতে খোসা ছিলে বাদাম খাইয়ে দিয়েছি, তার হিসেব নেই। আজ একাকী বাদাম খেতে ইচ্ছে করছে না। তবে আগের কথা মনে পড়ায় রাগ হচ্ছে। কেন রাক্ষসীকে প্রেম দিয়েছিলাম? তাই শোধ নিতে বাদাম পিষে ধুলায় মেশাচ্ছি। খেলাটা ভালই লেগেছে। কিন্তু বাদাম শেষ। এবার উঠে রিক্সা নিয়ে ছুটছি ব্যাংকের দিকে। সীমা যদি কোন আইনি সমস্যা করে ফেলে তাহলে টাকা লাগবে, হাতে টাকা রাখা দরকার। যাবার পথে কোর্ট-কাচারির মোড়ে এক রিক্সায় সীমাকে যেতে দেখলাম। সে-কি উকিলের কাছে যাচ্ছে, না-কি নদীর পাড়ে যাচ্ছে? গার্ডেনে যে রাগ দেখেছি তাতে উকিলের কাছে যাবার সম্ভাবনাই বেশি। সীমার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে আমিও চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। প্রাথমিক ধাক্কা সামলানোর জন্য ব্যাংক হতে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুললাম। তারপর মার্কেটে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করলাম। মনে হলো, বউ গেল তাতে কী হয়েছে, একটি বালিশকে বউ বানিয়ে সাজিয়ে রাখব। সেটা অন্তত কথার উত্তর দিবে না। তাই একটা ফুলের তোড়া কিনলাম। ভাল দেখে বউ সাজানো যায় এমন একটা শাড়িও কিনলাম।
এবার মহানন্দে গুনগুন করতে করতে বাসায় ফিরছি। বাসার সামনে নেমে রিকশাওয়ালাকে খুশিতে বিশ টাকা বকশিস দিলাম। রিক্সায় রাখা মালামাল নিয়ে বাসায় ফেরার পথে গেইটে ভাড়াটিয়ার মেয়ের সাথে দেখা। সে আনন্দমোহন কলেজে অর্থনীতিতে স্নাতক পড়ে। কি সুন্দর তার হাসি। হাসি দেখে মনে হচ্ছে সে যেন ভাব করতে চাচ্ছে। সে কি জেনে গেল নাকি যে আমি আবার সিঙ্গেল? এভাবে যদি রূপসীরা অনুধাবন করে ফেলে তাহলে তো বিপদ। আমি বেশ ভারিক্কি ভাব নিয়ে বললাম, রূপা ভাল আছ? উত্তরটাও মুচকি হাসিতেই ফেরত পেলাম। রমণীর মুচকি হাসির উত্তর খুব ভয়ঙ্কর বিষয়। উত্তরের চেয়ে মনে আন্দোলন জাগায় বেশি। আমার যে বয়স তাতে এ ধরনের হাসি উপেক্ষা করে এড়িয়ে যাওয়ার এন্টিবডি আমার শরীরে তৈরি হয়ে গেছে। আমি পাশ কেটে উপরে উঠতে লাগলাম। সিঁড়ি ভেঙ্গে দোতলায় উঠে লক খুলে ঘরে প্রবেশ করলাম। কি নীরব ঘর! কোন শব্দ নেই। এমনই তো চেয়েছিলাম। শুকরিয়া, আজ সেই আনন্দ বিরাজ করছে আমার ঘরে। তবে ঘরের ভিতর এখনো আমার স্ত্রীর গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি। এটা মূলত তার পারফিউমের ঘ্রাণ। ঘরের ভিতর সর্বদাই এ ঘ্রাণটা বিরাজ করে। শয়তানী চলে গেলেও তার ঘ্রাণ এখনো যায়নি। শূন্য ঘরেও তার ঘ্রাণ ঘুরছে। সেটা দূর হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। যাক এক সময়ে যাবে তো! আজ বাধা দেবার কেউ নেই। জুতা খুলারও প্রয়োজন হচ্ছে না। তাই আমি জুতা নিয়েই প্রবেশ করছি। কি আনন্দ হচ্ছে! আজ জুতা পায়ে রেখেই বিছানায় শুয়ে ঘুমবো। কিন্তু পর্দা সাটা রুমে ঢুকে আঁতকে উঠলাম। সীমা কেন? পেত্নী না-কি? নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছিনা। হে সীমাই তো? রাগ দেখাব না হাসিতে বরণ করে নেব বুঝতে পারছি না। কাছে যেতেই সীমা উঠে দাঁড়াল। সাথে সাথেই আমার গায়ের উপর বমি করে ভাসিয়ে দিল। নিশ্চিত আজেবাজে কিছু খেয়ে এসেছে। কত বড় মিছকা শয়তান, বাজে জিনিস খেয়ে বাসায় ফিরেছে। এই ছিল মোর কপালে!
কিন্তু বমি করেই সে আমার কোলের উপর জ্ঞান হারাল। কি বিপদে পড়লাম। খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে এম্বুল্যান্স ডাকলাম। এম্বুল্যান্স আসতে আসতে নিজে একটু পরিষ্কার হয়ে নিলাম। কিন্তু গিদরনী যেভাবে বমি করেছে তাতে তাকে আর পরিষ্কার করার সুযোগ পেলাম না। দ্রুত তাকে তার বড় বোনের কাছে নিয়ে গেলাম। তার বোনের নাম রাবেয়া। রাবেয়া আপা ডাক্তার। ময়মনসিংহ শহরে পরিচিতি লাভ করতে থাকা একজন গাইনি ডাক্তার। তার সুবাদেই সীমাকে দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হলো। আমিও পরম শান্তি পেলাম। যাক এবার মরলে বোনের হাতে মরবে। আমার কি? বাঁচা গেল!
রাবেয়া আপা আধা ঘণ্টা পর বেরিয়ে এলেন। মুচকি হাসি দিলেন। এই মুচকি হাসিটা আমি নিতে পারি না। এটাতে কেবল রহস্য আর রহস্য। তিনি রহস্য করেই কিছু না বলেই ওয়াশরুমে গেলেন। বেরিয়ে এসে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। আর জানালেন যে আমি বাবা হতে যাচ্ছি।
এই হচ্ছে আমার জীবনের গল্প দাদুভাই। এর পরেই তোমার আব্বুর জন্ম। কিন্তু তাই বলে সীমার জ্বালানো বন্ধ হয়ে যায়নি। এভাবেই সীমা আমাকে সারা জীবন তার ভালবাসার আগুনে পুড়েছে। সে এক শুভ্র ভালবাসা। কাল তোমার বিয়ে উপলক্ষ্যে আমার জীবনের না-বলা কথা তোমাকে জানালাম। দাদুভাই, তোমার দিদা আসছে। সীমা আসার আগেই আমি পালাই।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top