হকের পথে যত বাধা
আমি নো'মান, ফরিদপুরের মুসলিম পাড়ায় আমার বাড়ী। আমি শুরু থেকেই ইলিয়াসী তাবলীগে সময় ব্যয় করতাম। প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সাথে চিল্লা দিয়ে আর গাশত করে জীবনের অনেকটা সময় পার করেছি। এটাকেই দ্বীনের খেদমত, মুসলিম উম্মাহর সেবা এবং ইসলামের কল্যাণ জ্ঞান করতাম। হঠাৎ একদিন একটি ওয়ায মাহফিল থেকে একটি মাসনূন দো'আ ও ছালাত শিক্ষা বই ক্রয় করলাম এবং পড়তে শুরু করলাম। এ বই পড়ে আমার সব কিছু যেন উলট-পালট হয়ে গেল। এতদিন যা করছি তাকি সবই তাহ'লে ভুল? আমার মনে তখন অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ পর মারকায মসজিদে গেলাম এবং দ্বীন বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করলাম মুফতী কামারুয্যামান ছাহেবকে। মুফতী ছাহেব উত্তর দিলেন মাযহাবের অনুকূলে। উত্তর পেয়ে খুশি হ'তে পারলাম না। এভাবেই চলল বেশ কিছু দিন। হঠাৎ একদিন এক ভাই সংবাদ দিলেন এক মাদানী ছাহেব আসবেন। বেশ তৈরী হয়ে থাকলাম। গেলাম আলোচনা শুনতে। আলোচনা শুনলাম, কিছু প্রশ্নও করলাম, কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে উত্তর পেলাম। শুরু করলাম ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছালাত আদায় করতে। শুরু হ'ল আমার মহল্লার তাবলীগী ভাইদের মধ্যে আমাকে নিয়ে আলোচনা। একদিন এক সাথী ভাই আমাকে বলল, তুমি এভাবে ছালাত আদায় করছ কেন? আমাদের মাযহাব হানাফী, তুমি কি হানাফী মাযহাব মানো না? তখন আমি বললাম, আমি কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ছাড়া কোন কিছুই মানি না। তখন আমাকে তারা বলল, কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে, যার বলে তুমি এই নতুন আমল করছ? আমি বললাম, আমার কাছে 'ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)' বইটি আছে। তারা বলল, এই বই পড়া তোমার জন্য ঠিক নয়। এই বই পড়লে তুমি গোমরাহ হয়ে যাবে। এভাবেই তাদের সাথে আমার কথাবার্তা শেষ হ'ল। এ ঘটনা ঘটার ১১ দিন পর রামাযান মাস আসল। এবার তারাবীর ছালাত পড়াতে আসা হাফেয ছাহেবের সাথে বিবাদ শুরু হ'ল আমীন বলা নিয়ে। এক পর্যায়ে মসজিদের সেক্রেটারী আমাকে মারার জন্য কিছু যুবককে ঠিক করল। একদিন তারা আমাকে মারতে আসল। কিন্তু তারা আমাকে মারল না। তবে বলে দিল, এই মসজিদে তোমার আসা নিষেধ। কিন্তু আমি মসজিদ ছাড়তে রাযী হ'লাম না। একটা সময় আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেল মনে হ'ল। কিন্তু না, আবার কিছু দিন পর মুওয়াযিযন না থাকায় ইকামত দিতে হ'ল আমাকে। মাঝপথে তারা আমার ইকামত দেওয়া বন্ধ করে দিতে চাইল। আমি বাধা না শুনে ইকামত দিতেই লাগলাম। ইমাম ছাহেব বললেন, এই ইকামত আমাদের দেশে চলবে না। আমি বললাম, তাহ'লে কোন দেশে চলবে? উত্তর দিলেন সঊদী আরবে চলে, বাংলাদেশে চলে না। আমি বললাম, সঊদী আরবের ইসলাম ও বাংলাদেশের ইসলাম কি আলাদা? ইমাম ছাহেব বললেন, এই মসজিদে ইকামতের শব্দ একবার বলা চলবে না। আমাদের মাযহাবের আমলই ঠিক। অবশেষে আমার ইকামত দেওয়া বন্ধ করে দিল মসজিদ কমিটি।
উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা, ইকামতের শব্দ, ৮ রাক'আত তারাবীর ছালাত ইত্যাদি নিয়ে আমাকে মারার জন্য কয়েক দফা লোক ঠিক করা হয়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা আমাকে মারতে পারেনি। অবশেষে গত ১৬/০৫/১৪ইং রাতে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী আমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন করলেন। আমি তাকে বার বার কুরআন ও ছহীহ হাদীছ পড়তে আগ্রহী করতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তার একই কথা, সারা দুনিয়ার হুজুররা কি ভুল করে? আমি বললাম, শরী'আতের হুকুম চলবে আল্লাহ ও নবী করীম (ছাঃ)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কোন মানুষের কথায় নয়। তখন আমার উপর তিনি রেগে গেলেন। কথা শেষ করে চলে আসলাম।