What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected শুরুতে ঘৃণা পরে ভালোবাসা! (1 Viewer)

UurilnC.jpg


ইউরোপগামী এক ট্রেনের কামরায় প্রথম দেখা দুজনার। মেয়েটির চোখে ভারী কাচের চশমা, হাতে ঢাউস স্যুটকেস আর বই। ছেলেটি আবার একদম উল্টো। একমাথা এলোমেলো চুল নিয়ে একটু পরপর হাসছে, কথা বলছে। মেয়েটি যত বিরক্ত হতে থাকে, ততই যেন বাড়তে থাকে ছেলেটির কথার পরিমাণ। সেই কথাতেও অনর্থক 'প্রেম-প্রেম' ভাব! কী বিরক্তিকর ভাবুন! এখানেই শেষ নয়। মেয়েটি অবাক হয়ে দেখল তার বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র সেই 'প্রেম-প্রেম' কথাগুলোই আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছে ছেলেটি। ব্যস! কাউকে 'প্রথম দেখায় অপছন্দ' করতে আর কী লাগে বলুন?

কিন্তু এ দৃশ্যপট থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল বলিউডের খুব জনপ্রিয় এক রোমান্টিক সিনেমা দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে। তবে 'প্রথম দেখাতে বিরক্তি, তারপর প্রেম', এই পটভূমি রুপালি পর্দায়, বইয়ের পাতায় বহুল ব্যবহৃত ফর্মুলা।

১৮৩১ সালে জেন অস্টিন লিখেছিলেন প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস। প্রথম দেখাতেই ডার্থির রুক্ষ ব্যবহারের কারণে তাকে অপছন্দ করতে শুরু করেছিল এলিজাবেথ। অথচ উপন্যাসের শেষাংশে এসে দেখি, ডার্থি বদলে গিয়েছে অনেকটা আর এলিজাবেথও উপলব্ধি করছে ডার্থিই তার স্বপ্নের রাজপুত্র। প্রশ্ন হলো, এমন প্রেম কি আসলে বাস্তবে হয়? যাকে একদম পছন্দ করছি না, একসময় কি আসলে তার প্রেমে পড়ে যাই? যাকে শুরুতে ভীষণ বিরক্ত লাগল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কি তার প্রতি ভালো লাগা, ভালোবাসা তৈরি হতে পারে?

এ প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও মনোরোগ চিকিৎসক মেখলা সরকার বলেন, 'বাইরের আচরণ দেখে, অন্যের কথা শুনে, চারিত্রিক বৈপরীত্যের কারণে অনেক সময় আমরা মানুষকে অপছন্দ করি। কিন্তু যখন কাছে আসার সুযোগ হয়, মেলামেশা করা হয়, একজন আরেকজনকে জানতে শুরু করে, তখন ধারণার বদল ঘটা যৌক্তিক ও স্বাভাবিক।'

তানভীর আর মহুয়ার গল্পও সে কথা বলে। মহুয়া ভীষণ গোছানো মেয়ে। সব আগে থেকে পরিকল্পনা করে গুগল ক্যালেন্ডারে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখেন। মহুয়ার মনে হয় পাঁচটার মিটিং কখনো পাঁচটা এক মিনিটে শুরু হতে পারে না। আর তানভীর কিছুটা এলোমেলো। স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান। রাত জেগে আইডিয়া ভাববেন, আইডিয়া মাথায় এলে নিজের মতো লিখবেন, সে জন্য প্রয়োজনে দু-চারটা মিটিং মিস করতেও রাজি! তাই তানভীর আর মহুয়াকে যখন একই দলে কাজ করতে দেওয়া হলো, প্রথম দিনেই বেধে গেল ধুন্ধুমার ঝগড়া! তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় কফি খেতে গেলেন তানভীর-মহুয়া। কফিকাপের সন্ধ্যা থেকেই শুরু তাঁদের প্রেম।

s4meT3b.jpg


ঘৃণা থেকেও তৈরি হতে পারে প্রবল ভালোবাসা।

গত বছর ঢাকার নিকেতনে এক ছোট্ট নীড়ে সংসার পেতেছেন মহুয়া–তানভীর। তানভীরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম প্রবল অপছন্দ বা ঘৃণাকে কীভাবে প্রগাঢ় প্রেমে রূপান্তরিত করেছিলেন? উত্তরে তিনি বললেন, 'নিতান্তই কাকতালীয়ভাবে একদিন চোখে পড়েছিল মেয়েটি ভীষণ হেল্পফুল। নতুন ইন্টার্নকে (শিক্ষানবিশ) হাতে ধরে কাজ শেখাতে তার কোনো ক্লান্তি নেই। এই যে সারাক্ষণ শিডিউল নিয়ে, রুটিন নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে আছে, তার মাঝেও সে জানতে চাইছে আমাদের অফিস সহকারীর ছেলেটি সুস্থ হয়েছে কি না।'

মহুয়া-তানভীরের অনুভূতি ও অনুভবের এই রূপান্তর নিয়ে কথা বলার সময় মেখলা সরকার বলেন, 'আমাদের প্রত্যেকের ভেতর একটা ভ্যালু সিস্টেম বা মূল্যবোধগত কাঠামো আছে। আমরা সবাই ভাবি আমার জীবনসঙ্গীর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু গুণাবলি থাকতেই হবে। অপছন্দের মানুষের মধ্যে সেই গুণাবলি থাকলে, তীব্র আকর্ষণ বোধ করা খুবই স্বাভাবিক।' মেখলা সরকারের মতে, 'মানুষের চরিত্রের অনেক স্তর থাকে। সম্পর্ক যত গভীর হয়, চরিত্রের সেই স্তরগুলো উন্মোচিত হয় আমাদের সামনে। তাই বাহ্যিক রূপ দেখে তীব্র অপছন্দের যে অনুভূতি শুরুতে সৃষ্টি হয়, সেটি ভালো লাগায় রূপান্তরিত হতেই পারে!'

সেতু আর রবিনের গল্প একটু আলাদা। প্রতি সেমিস্টারেই ভীষণ খেটে পড়াশোনা করতেন সেতু, খুব করে চাইতেন যেন সবচেয়ে ভালো ফলাফল তাঁরই হয়। কিন্তু প্রতিবার এক-দুই পয়েন্টের জন্য পিছিয়ে পড়তেন। দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করেছিলেন বটে, তবে প্রথম স্থানটা বরাবরই দখল করে রাখছিলেন সহপাঠী রবিন আহসান। ফলে চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে রবিনকে একদমই পছন্দ করেননি সেতু। অপছন্দের ধরন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সেতু বলেন, 'ব্যাপারটা এমন হয়ে যায় যে রবিনের গোলে আমাদের সেকশন ফুটবল টুর্নামেন্ট জিতলেও আমার বিরক্ত লাগত। ক্লাসে ও সঠিক উত্তর দিলেও মানসিক চাপ অনুভব করতাম। মনে হতো, আমি কিচ্ছু পারছি না!' কিন্তু এই তীব্র অপছন্দের শেষ পরিণতি কী হয়েছিল? সে গল্পটা শুনছিলাম রবিনের মুখ থেকে, 'গ্র্যাজুয়েশনের পর যখন আমরা দুজন একই বহুজাতিক কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করতে ঢুকলাম, বদলে গেল সবকিছু। দুজনেই বুঝতে পারছিলাম আমাদের আগ্রহের জায়গাগুলো একই ধরনের।' এই উপলব্ধি থেকেই ধীরে ধীরে গাঢ় হয় সেতু-রবিনের সম্পর্ক। আর এখন তো চার বছর ধরে দুজনে একই ছাদের তলায়!' হ্যাঁ, সেতু-রবিন এখন কপোত-কপোতী হয়ে বেশ চুটিয়ে সংসার করছেন।

সেতু-রবিনের সম্পর্কটি নিয়ে মেখলা সরকারের মতামত হলো, 'তাকেই আমরা ঈর্ষা করি, যাকে আমরা গুরুত্ব দিই। ঈর্ষা কিন্তু ঘৃণা না। ঈর্ষা এমন এক অনুভূতি, যেখানে ভালো লাগা মিশে থাকে। আমরা সেই ভালো লাগা, ভালো ব্যাপারটি সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে অস্বীকার করতে চাই বলেই সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্ব। আর ভালো লাগার ব্যাপারটি স্বীকার করে নিলে সেখান থেকে সৃষ্টি হতে পারে সুন্দরতম সম্পর্ক।'

লেখার শুরুতে দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গের উদাহরণ দিয়েছিলাম। তাই একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়াকে দায়িত্ব বলে মনে করছি। 'অপছন্দের মানুষের সঙ্গেও প্রেম হতে পারে' এই আপ্তবাক্য মেনে যদি কেউ মনে করতে শুরু করেন, যে আমাকে অপছন্দ করছে তার সঙ্গে গায়ে পড়ে খাতির করতে হবে, তাহলে কিন্তু ভীষণ ভুল করবেন! জীবন তো আসলে সিনেমার সেট না। ফলে সিনেমার কোনো চরিত্রের মতো একদল মেয়ের পেছনে ঘুরে বেড়ালে, তাদের বিরক্ত করলে, সেটি একেবারেই শোভন হবে না।

প্রেম পৃথিবীর শুদ্ধতম অনুভূতিগুলোর একটি। সেই শুদ্ধতা অন্তরে ধারণ করুন, দেখবেন কিউপিড আপনাকে ঠিকঠাক খুঁজে নেবে!

লেখক: তাবাসসুম ইসলাম, স্কটল্যান্ড
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top