What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

অনেক আত্মহত্যাই প্রতিরোধ করা সম্ভব (1 Viewer)

MnZ6g7U.jpg


একটি আত্মহত্যার ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়া নয়, তার চারপাশের প্রিয়জনের জন্যও অসহনীয় বেদনার। অনেক স্বপ্নের মৃত্যু, একজনের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকের জীবনের গতির আকস্মিক পরিবর্তন। বিশ্বজুড়ে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটাতে পারেন যেকোনো বয়সের নারী বা পুরুষ।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সুইসাইড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে বছরে সাত লাখের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রতি ১ হাজার মৃত্যুর মধ্যে ১৩ জনই আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। আবার প্রতি ১০০টি আত্মহত্যা ঘটানো মানুষের মধ্যে ৫৮ জনের বয়সই ৫০ বছরের নিচে। যাঁদের বিষণ্ণতা রোগ রয়েছে, অন্যদের চেয়ে তাঁরা ২০ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন!

১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য 'কাজের মাঝে জাগাই আশা' (ক্রিয়েটিং হোপ থ্রু অ্যাকশন)। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবমতে, বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে বছরে প্রায় ৬ জন আত্মহত্যা করে থাকেন। করোনাকালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের জাতীয় জরিপ অনুযায়ী ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের প্রায় ৫ শতাংশ একবারের জন্য হলেও আত্মহত্যা করার চিন্তা করেছেন, আর ১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ একবারের জন্য হলেও পরিকল্পনা বা চেষ্টা করেছেন!

সেই গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা পুরুষের তুলনায় প্রায় তিন গুণ, আবার গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে আত্মহত্যার চিন্তা করার হার দ্বিগুণ। বেশির ভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। বিষণ্ণতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। আত্মহত্যা সাধারণত দুই ধরনের—একটি হচ্ছে পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা (ডিসিসিভ), আরেকটি হঠাৎ করে ফেলা আত্মহত্যা (ইমপালসিভ)।

আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য

যাঁরা আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই আগে থেকে বেশ কিছু ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন। আশপাশের কাছের মানুষেরা এই ইঙ্গিতগুলো খেয়াল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে অনেক আত্মহত্যাই প্রতিরোধ করা যায়। ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য 'কাজের মাঝে জাগাই আশা' (ক্রিয়েটিং হোপ থ্রু অ্যাকশন)। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। আর কাজটি হচ্ছে, আশপাশের কারও মধ্যে আত্মহত্যা করার ইঙ্গিত পেলে তাঁকে দ্রুত সাহায্য করা, তাঁর পাশে থাকা।

যাঁদের মধে৵ আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে, তাঁরা যেসব ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন—

• সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যু আর আত্মহত্যা নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন, কথায় কথায় আড্ডায় মরে যাওয়ার কথা বলেন।

• সম্প্রতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বা নিকটজনের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে, যা তিনি মেনে নিতে পারছেন না।

• ঘুমের পরিবর্তন হচ্ছে—সারা রাত জেগে থাকছেন।

• নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন, হঠাৎ রেগে যাচ্ছেন।

• আত্মহত্যা বা মৃত্যুবিষয়ক কবিতা ও গান লিখতে, শুনতে বা পড়তে থাকেন।

• নিজের ক্ষতি করেন। প্রায়ই তাঁরা নিজের হাত-পা কাটেন, বেশি বেশি ঘুমের ওষুধ খান।

• মনমরা হয়ে থাকা, সব কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে দোষী ভাবা—এগুলো বিষণ্নতার লক্ষণ; যা থেকে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।

• মাদকাসক্তি বা ইন্টারনেটে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি।

• নিজেকে গুটিয়ে রাখা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া।

• পড়ালেখা, খেলাধুলা, শখের বিষয় থেকে নিজে দূরে থাকা।

এ ধরনের ইঙ্গিত কারও মধ্যে থাকলে তাঁকে মনঃসামাজিক সহায়তা দিতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ যদি মৃত্যুর কথা বলেন, তখন সবাই তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। একটি বড় ভুল ধারণা আছে—যাঁরা মৃত্যুর কথা বলেন, তাঁরা আত্মহত্যা করেন না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, তাঁদের মধ্যেই আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই প্রতিটি মৃত্যুর ইচ্ছাকে আত্মহত্যার ইঙ্গিত হিসেবে ধরে নিতে হবে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে হাত গুটিয়ে বসে না থেকে যাঁর যাঁর জায়গা থেকে কাজ করে যেতে হবে। যে সাধারণ বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে, সেগুলো হচ্ছে—

• শিশু–কিশোরদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেওয়া।

• মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যা কেবল কিশোর বা তরুণদের বিষয় নয়, যেকোনো বয়সের নারী–পুরুষ আত্মহত্যা করতে পারেন। তাই কেউ পরিণত বয়স্ক বা বয়োবৃদ্ধ, তাই তিনি আত্মহত্যা করবেন না—এমনটা ভাবা চলবে না।

• আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা কমানো, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা।

• যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিকটজনকে নিয়ে যাওয়া।

• বিষণ্নতা, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্বের বিকার, সিজোফ্রেনিয়াসহ সব মানসিক রোগের দ্রুত শনাক্ত করা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

• যেসব মানসিক রোগে আত্মহত্যার ঝুঁকি রয়েছে, সেগুলোতে অবশ্যই ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, বিশ্বজুড়েই এ ধরনের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া আছে। মানসিক রোগের ওষুধ সম্পর্কে ভ্রান্ত ও নেতিবাচক ধারণা আর ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে মানসিক রোগকে জটিল করে ফেলা যাবে না। প্রয়োজনে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।

• আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনের সময় গণমাধ্যম যাতে অনুমোদিত নির্দেশিকা মেনে চলে, সেটা নিশ্চিত করা।

• সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্কতার সঙ্গে আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে মন্তব্য ও ছবি পোস্ট করা, এখানেও কোনো আত্মহত্যার ঘটনাকে খুব মহৎ করে দেখানোর চেষ্টা করা যাবে না, আবার কারও মৃত্যুর ইচ্ছাকে বিদ্রূপ করা যাবে না।

লেখক: ডা. আহমেদ হেলাল | মনোচিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top