What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected “জসীম সাহেবের ভ্যাক্সিনেশন!” (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
95
Messages
10,873
Credits
102,558
Camera photo
T-Shirt
Thermometer
Glasses sunglasses
Strawberry
Red Apple
"জসীম সাহেবের ভ্যাক্সিনেশন!"

মূল লেখকঃ আসিফ রহমান জয়





চারদিকে উৎসবের আমেজ! টীকা নেবার উৎসব!

সবাই রেজিস্ট্রেশন করছে, ফোনে ম্যাসেজ চলে আসছে, নির্দিষ্ট দিনে হাসি মুখে টীকা নিচ্ছে, টীকা নেওয়ার ছবি ফেসবুকে সবেগে আপ্লোড করছে। লোকেরা টীকা নিয়ে খুশী, ডাক্তার-নার্সরা টীকা দিয়ে খুশী।

জসীম সাহেব নিজেও এই উৎসবে শামিল হয়েছেন। যদিও তার মনটা একটু খুঁত-খুঁত করছে, তিনি পুরোপুরি খুশী হতে চেয়েও হতে পারছেন না, কোথায় যেনো একটা গ্যাপ পরে আছে, একটু শুন্যস্থান। তিনি এই খুঁত-খুঁতে ভাব আমলে নিলেন না। প্রথমেই চলে গেলেন শিয়া মসজিদের কাছে "টপ-টেন" টেইলার্সের দোকানে।

টপ-টেন দোকানের টেইলার মাস্টার রহমত আলীর কাছে জসীম সাহেব বরাবরই শার্ট বানান। এবারের শার্টের ডিজাইনের কথা শুনে রহমত আলী প্রথমে তার চশমা ঠেলে মাথার ওপরে তুললেন তারপর চোখ তুললেন কপালে-

-বলেন কি স্যার? হাতের ওপরে পকেট থাকবে? আরে না স্যার, এই ডিজাইন তো টিনএজারদের জন্য। আপনাকে মানাবে না।

-আরে পকেট না। পকেটের কথা তো বলছি না। আগে ভালো করে বুঝে নেন। তারপর কথা বলেন।

রহমত আলী চশমাটা নাকের ডগায় যথাস্থানে বসালেন। চোখটা কুঁচকে মাথাটা একটু কাছে আনলেন।

-জি, বলেন দেখি, হাতের ওপর কি ডিজাইন হবে?

-হাতের ওপর কিছু হবে না। শার্টের বাম হাতাটা কাঁধের কাছে আই মিন শোল্ডার জয়েন্টে জীপার দিয়ে অথবা বোতাম দিয়ে বডির সাথে আটকানো থাকবেন, যাতে কেউ বললেই শোল্ডার জয়েন্টের হাতার অংশটা খুলে হাত বের করা যায়। শুধু বাম হাতটাই এমন হবে, ডান হাতাটা এজ-ইউজুয়াল করলেই হবে।

রহমত আলীর ভ্রু কুঁচকে গেলো, অবাক হয়ে বললো-

-শার্টের হাতা খুলতে কে বলবে?

জসীম সাহেব চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে আশে-পাশে চট করে একটু তাকালেন। কেউ আবার শুনে ফেলে নাকি কে জানে।

-আরে ভাই। ভ্যাক্সিন দিতে যাচ্ছি। ২২ তারিখ ডেট পড়েছে।

-তাতে কি?

-তাতে কি মানে... সবাই ভ্যাক্সিন দিয়ে ছবি ওঠাচ্ছে। একেবারে যা-তা ছবি। শীতে তো সবাই ফুল হাতা শার্ট বা গেঞ্জি পরে আছে, তাই না? হাত আর কতোই গুটাবে বলেন। শার্ট খুলে একেবারে খালি গায়ে... একেবারে যা-তা অবস্থা। তাই তো নতুন ডিজাইন। শার্টের হাতাও গুটাতে হবে না, বুকের বোতামও খুলতে হবে না। এ ডিজাইন ফর ভ্যাক্সিনেশন। হে হে।

-ও আচ্ছা...

-তবে আর বলছি কি! কি রকম আইডিয়া বলেন দেখি!

-হুম। আইডিয়া তো ভালোই। কিন্তু স্যার... কথা হলো কি। ভ্যাক্সিন তো দেবেন একবারই...

-একবার না দুই বার। দুই ডোজ ভ্যাক্সিন শেষ।

-ঐ হলো। দুইবার দিলেন। দুইবার এই শার্ট পরলেন। তারপর এই শার্ট কি করবেন? মানে কথা হলো কি... হাতার কাছে এই বোতাম বা জীপার নিয়ে এই শার্ট কীভাবে পরবেন? নাকি ফেলে দেবেন?

-কি বলেন আপনি? এই শার্ট আর পরবো না মানে? ধরেন, গুরুত্বপুর্ন কোনো অনুষ্ঠানে যাবেন, মাস্ক পরবেন না, তখন এই শার্ট পরে যাবেন। শার্টের ঐ সিম্বলিক জীপার বা বাটন দেখলেই সবাই বুঝে যাবে যে, আপনার ভ্যাক্সিন দেয়া আছে। কেউ ভুরূ কুঁচকে তাকালে, আপনি ইশারায় জীপার দেখিয়ে দেবেন। চাইলে একটু খুলে দেখিয়েও দিতে পারেন। তারপর ধরেন, বিদেশ যাচ্ছেন। ইমিগ্রেশন অফিসারকে ভ্যাক্সিন কার্ড দেখালেন। ওই ব্যাটা যদি বিশ্বাস না করে দেখাতে বএ, তাহলে কি আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে পুরা শার্ট খুলবেন?

রহমত আলীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

-ঠিক বলেছেন, স্যার। ভাগ্যিস এইবার ভ্যাক্সিনগুলো হাতেই দিচ্ছে। যদি কোমরে বা পিছনে দিতে হতো তাহলে...

জসীম সাহেব আর রহমত আলী "তাহলে পরিস্থিতি কি হতে পারতো" ভেবে একসাথে চমকে উঠলেন!

রহমত আলী খুক খুক করে কেশে উঠে দ্রুত প্রসংগ পাল্টালেন-

- স্যার, আপনার এই ডিজাইন থেকে একটা ব্যাবসায়িক চিন্তা মাথায় চলে আসছে। আপনি অনুমতি দিলে, এই ডিজাইনের কিছু বাহারী কালারের শার্ট আমাদের পক্ষ থেকে এডভারাটাইজ করে সাইনবোর্ডে দিয়ে দেই? যদি ভালো চলে, তাহলে আপনাকেও ডিজাইনের স্বত্বাধিকারী হিসাবে একটা অনারারিয়াম দেবো। আইডিয়া কেমন স্যার?

জসিম সাহেব তুড়ি বাজালেন-

-বাহ! ভালো চিন্তা করেছেন। এমন হতে পারে, এই শার্ট দেখে লোকজন হুড়মুড় করে চলে আসছে। তাছাড়া...এই শার্ট হলো ঐতিহাসিক শার্ট! এ পার্ট অব হিস্ট্রি! শতাব্দীতে এরকম করোনা ভাইরাস আবার কবে আসবে কে জানে? এই শার্ট যুগ যুগ ধরে আমাদের এই সময়ের কথা বলবে। আমার ছেলে, তার ছেলে, তার ছেলে... এরা এই শার্ট দেখে জানতে পারবে যে, আমরা কি সময় পার করেছি!

জসীম সাহেব খুশী মনে চশমার দোকানে গেলেন। তার চোখে দূরের-কাছের দুই ধরনেরই পাওয়ার আছে। তিনি সাধারনতঃ সানগ্লাস পরেন না। ভ্যাক্সিনের দিন সানগ্লাস পরে একটা ছবি তুলতে ইচ্ছা করছে। তিনি পাওয়ার সানগ্লাসের অর্ডার দিলেন-

-বুঝলেন তো ভাই। ২২ তারিখের আগেই কিন্তু ডেলিভারি দেবেন। ২১ তারিখ বিকালে আসলে যেনো ফিরিয়ে দিয়েন না।

-কি যে বলেন স্যার। ২০ তারিখের মধ্যেই ডেলিভারী দিয়ে দেবো। ইনশাআল্লাহ।

-আপনি ভ্যাক্সিন দিয়েছেন?

-না স্যার। আপনার মতো এক স্যারকে দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করছিলাম। যেদিন রেজিস্ট্রেশন করছি, তার পরদিনই ম্যাসেজ চলে আসছে, বলে কি তারপরের দিনই নাকি ভ্যাক্সিনের ডেট! আমি চিন্তা করলাম যে, আমার মতো সাধারন মানুষ যদি এতো সহজে ভ্যাক্সিন পেয়ে যায়, তাহলে তো এই ভ্যাক্সিনে পানি ছাড়া আর কিছু নাই। তাই আমি আর যাই নাই। কি দরকার পানি নিয়া?

কথা শুনে জসীম সাহেব হকচকিয়ে গেলেন!

-বলেন কি? আপনি তো ভাই আজব জিনিস। ভ্যাক্সিনে পানি থাকবে কেন? আপনি যখন রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন তখন হয়তো ভিড় কম ছিলো। এখন করলে দেখবেন ডেটই পাবেন না। আপনাদের তো দেখি ভালো জিনিস সহ্য হয় না। রেজিস্ট্রেশন করেছেন, ডেট চলে এসেছে, কোথায় নাচতে নাচতে চলে যাবেন, তা না। এর মধ্যেও ভেজাল বের করেছেন। আমাদের আসলেই ভালো জিনিস সহ্য হয় না।

-কি যে বলেন স্যার। আমাদের এসব লাগবে না। আল্লাহ ভরসা। তাছাড়া, শুনেছি সাউথ আফ্রিকা নাকি ভ্যাক্সিন ফিরিয়ে দিয়েছে। এই ভ্যাক্সিন নাকি আসলেই কাজের না।

-আরে নাহ। ওদের হয়তো অন্য স্ট্রেইনের ভাইরাস। আমাদের তো ওভারঅল এন্টিবডির অবস্থা ওদের থেকে ভালো। আর আমাদের ভ্যাক্সিনের ফর্মুলা এসেছে অক্সফোর্ড থেকে। পোলিও, হাম এসব ভ্যাক্সিনের ফর্মুলা ওরাই দিয়েছিলো।

-তাহলে যে স্যার সবাই বলতেছে যে, এটা নাকি ইন্ডিয়ার ভ্যাক্সিন।

-না, ইন্ডিয়ার ভ্যাক্সিন না। ইন্ডিয়া বানিয়েছে কিন্তু ফর্মুলা অক্সফোর্ডের, মানে ইংল্যান্ডের। আর যতো যাই বলেন, ইন্ডিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিন্তু যুগ যুগ ধরেই ভালো। ওপেন হার্ট সার্জারী করতে তো ঠিকই ইন্ডিয়া চলে যান আর ওদের ভ্যাক্সিন নিতে অসুবিধা কিসের?

-হুম।

-হুম বললে হবে না। আপনি অবশ্যই ভ্যাক্সিন নেবেন। আর শোনেন, এতো দেশের ভুল ধরবেন না। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-কোনো দেশই পুরোপুরি পার্ফেক্ট হয় না। একে পার্ফেক্ট বানাতে হয়। আপনি, আমি আমরা সবাই মিলেই পার্ফেক্ট করতে পারবো। দেশ তো আর একা একা এই কাজ করতে পারবে না।

-স্যার, এইটা কি রবীন্দ্রনাথ বলছিলেন? এইটা তো মনে হয় একটা ইন্ডিয়ান সিনেমার ডায়লগ ছিলো।

জসীম সাহেব থতমত খেয়ে গেলেন-

-ওই একই কথা। রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে এটাই বলতেন। ইন্ডিয়ান সিনেমার ডায়লগ তো ঠিকই মুখস্থ, ওদের পার্ফিউম, শাড়ি সকাল বিকাল মাখছেন, পড়ছেন। ভ্যাক্সিন নিতে অসুবিধা কি?

জসীম সাহেব মেজাজ খারাপ করে বাসায় ফিরলেন। আমরা পুরোপুরি না জেনে না শুনে হাওয়ার ওপর দিয়ে অনেক বড় বড় চিন্তা ভাবনা করতে পছন্দ করি।

এতোদিন পর্যন্ত বাতাসে অনেক গুজবই ভেসে বেড়িয়েছে! করোনায় রাস্তায় রাস্তায় লোক মরে পড়ে থাকবে। খাদ্য সঙ্কট হবে। লুটপাট হবে। মানুষ বাজার করে বাসা পর্যন্ত যেতে পারবে না। লোকজন ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।

এসব কিছুই হয়নি।

সবার একটা ধারনা ছিলো যে, সেকেন্ড ওয়েভ আসবে। শীতকালে লোকজন হু হু করে মারা যাবে।

অবাক করা ব্যাপার হলো, বাংলাদেশে এসব তেমন কিছু হয়নি! শীত প্রায় চলে যাচ্ছে। ফার্স্ট ওয়েভই শেষ হয়নি, কিসের আবার সেকেন্ড ওয়েভ। ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে শোনা যাচ্ছিলো, সবাই ভ্যাক্সিন পাবেন না। মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত ভাক্সিনের গন্ধই পাবে না। যেখানে ভ্যাক্সিন পাওয়ারই কথা না, সেখানে সবাই ভ্যাকিসন পাচ্ছে।

জসীম সাহেবের বাসার নীচে মুরগীওয়ালা এসে বসে আছে।

-সালাম স্যার, আজকে কি মুরগী লাগবো? দেশী আর কক দুইটাই আছে।

-মুরগী তো আপাতত লাগবে না। এখন তো বাজার থেকেই কেনা কাটা করি। তাছাড়া, আমি আগোরা থেকেও কিছু মুরগী এনেছি। তুমি অনেকদিন আসোনি, এতোদিন কোথায় ছিলে?

-গ্রামে ছিলাম স্যার। ঢাকায় থাইকা লকডাউনে তেমন ব্যবসা করতে পারি নাই। অহন আবার আইছি। আমার থেকে কিছু নেন স্যার। আমার টাকার খুব দরকার।

জসীম সাহেব না করতে পারলেন না। লক ডাউনে যখন দিনের পর দিন ঘরে বসে থেকেছেন, তখন এই মুরগীওয়ালার ফোন নাম্বার থাকায় খুব উপকার হয়েছিলো। ওকে বললেই মুর্গী দিয়ে যেতো, দাম বেশী রাখতো না।

এই ব্যাপারটা জসীম সাহেবকে খুব অবাক করে। লক ডাউনের সময় কাঁচা বাজার স্থিতিশীল ছিলো। তখন কেউ দাম বাড়িয়ে দিলে কারো কিছু করার ছিলো না কিন্তু কেন যেন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে নি, সাপ্লাই ছিলো, খাদ্য সংকটে পড়তে হয়নি। বরং উল্টো এখন বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।

জসীম সাহেব মুর্গীওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলেন-

-এই, তুমি টীকা নিয়েছো?

-না স্যার, টিকা নিতে শুনছি টাকা লাগে?

-কে বলেছে তোমাকে?

-কি জানি, আমগো মতো গরীব কাউরে তো টিকা নিতে দেখলাম না। সবই আপনাদের মতো বড়লোকেরা দেহি লাইন ধরতেছে।

-আরে নাহ। কোন টাকা লাগে না। শুধু রেজিস্ট্রেশন করা লাগে।

-কি লাগে? রেজিস্ট্রি করা লাগে? কোথায় রেজিস্ট্রি করা হয়?

জসীম সাহেব থমকে গেলেন। তাই তো? সবাই ধুমিয়ে রেজিস্ট্রএশন করছে। ম্যাসেজ আসছে, টিকা দিচ্ছে কিন্তু এর মধ্যে অশিক্ষিত, খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জায়গা কোথায়? যে রিক্সায় তিনি এলেন সে কি টিকা নিয়েছে? অথচ এরাই তো আমাদের প্রতিদিন খ্যাদ্য দিয়ে, সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠী কি কোনভাবে এই উৎসব থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে?

-ওই মিয়া, তোমার এনআইডি কার্ড আছে?

-স্যার, ভোটার কার্ড একটা আছে।

-তোমার মুর্গী নিচ্ছি। তুমি আগে ভোটার আইডি নিয়ে আসো। কাজ আছে।

জসীম সাহেবের মুখে হাসি ফুটলো। এতোক্ষনে তার মনে হলো, তিনি পুরোপুরি খুশী মনে উৎসবের আমেজ উপভোগ করতে পারছেন। তিনি বাসায় ঢুকে নিলুফা বেগমকে বললেন-

-আচ্ছা, নীলু। তোমার বাসার ছুটা কাজের মহিলার বয়স কতো? তুমি কি তার হয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছো?
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top