অলিম্পিকে সোনা পেল ইসরায়েল। আর ট্রল হলেন বলিউডের সংগীত পরিচালক অনু মালিক। বিষয় কী!
সব নষ্টের গোড়া আসলে আরতেম দলগোপিয়াত। ইসরায়েলের এই জিমন্যাস্ট যদি টোকিও অলিম্পিকে সোনা না জিততেন, তাহলে তো ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত বাজত না; আর জাতীয় সংগীত যদি না বাজত, নতুন করে এই শোরগোলও তাহলে হতো না। বিজয়ী দলগোপিয়াত পদক গলায় নেওয়ার পর বেজে ওঠে ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত। সেটা শুনেই অবাক ভারতীয় দর্শক। আরে, সুরটা যেন পরিচিত লাগছে! কোথায় শুনেছি!
অনু মালিক, ইনস্টাগ্রাম
এরপর থেকেই আরতেম দলগোপিয়াত নন, অনু মালিককে নিয়ে সরগরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। শুধু তা-ই নয়, রীতিমতো টুইটার ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছেন এই সংগীত পরিচালক। তাঁকে নিয়ে ট্রলের বন্যা! কারণ কী? নেটিজেনদের কাছ থেকেই শুনুন।
আশীষ সিং লিখেছেন, '"মেরা মুলক" নকল! বলিউড ইসরায়েলের জাতীয় সংগীতের সুর নকল করল। এটা অন্য মাত্রার...অনু মালিক!'
অঙ্কিত সিং লিখেছেন, 'বলিউডের "সেরা নকল সংগীত" পুরস্কার চালু করা উচিত। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গানই প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকবে। অনু মালিক পাবেন "নকলের জন্য আজীবন সম্মাননা"।'
আরেকজন টুইটারে লিখেছেন, 'বিশ্বে ১৯৩টি দেশ আছে, অনু মালিকের কাছে এখনো ১৯২টি গান বানানোর সুযোগ আছে।'
আসলে ঘটনা কী? ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় দিলজলে। অজয় দেবগন ও সোনালি বেন্দ্রে অভিনীত ছবিটির সংগীত করেছিলেন অনু মালিক। এই ছবির গান 'মেরা মুলক মেরা দেশ' বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। অভিযোগ, এই গানেরই সুর ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত থেকে নকল করা হয়েছে। তবে এ বিতর্ক কিন্তু অনেক পুরোনো। অলিম্পিকের কারণে আরেকবার বিষয়টা আলোচনায় এল আরকি। আর এটাই একমাত্র নয়, অনু মালিকের আরও অনেক জনপ্রিয় গানের সুর ও কম্পোজিশন নিয়ে নকলের অভিযোগ আছে। ইউটিউবে অনুর কয়েকটা গান মূল গানের সঙ্গে মিলিয়ে শুনলে আপনিও ধরতে পারবেন।
এই যেমন ধরুন ইশক সিনেমার গান 'নিন্দ চুরাই মেরি'। অভিযোগ, এটি নাকি মার্কিন পপ গ্রুপ লিনিয়ারের গান 'সেন্ডিং অল মাই লাভ'-এর নকল। এ নিয়ে ভাতিজা আমাল মালিকের সঙ্গে এক দফা ঝগড়াও হয়ে গেছে অনু মালিকের।
আকেলে হাম আকেলে তুম ছবির দৃশ্য, সংগৃহীত
২০১৭ সালের রোহিত শেঠি পরিচালিত গোলমাল অ্যাগেইন ছবিতে চাচার গানের নতুন সংগীতায়োজন করেন আমাল। কিন্তু চাচার কোনো ক্রেডিট দেননি তিনি। এতেই ভাতিজার ওপর গোস্বা করেন অনু। ভাতিজাও ছেড়ে কথা বলার মানুষ নন।
একেবারে থলের বিড়ালই বের করে ফেললেন তিনি। চাচাও যে এটি লিনিয়ারের 'সেন্ডিং অল মাই লাভ' থেকে টুকলিফাই করেছেন, দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে তা জানিয়ে দেন আমাল। শুধু তা-ই নয়, আগ্রহীদের জন্য মূল গানের একটি লিংকও দিয়ে দেন তিনি।
মার্ডার ছবির দৃশ্য, সংগৃহীত
বৈচিত্র্যময় সুর আর কম্পোজিশনের জন্য বলিউডে পরিচিত অনু মালিক। তিন শতাধিক গান করেছেন তিনি। এর মধ্যে অনেক গানই বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু অনেক সময়ই তিনি সুর চুরি কিংবা নকল করার জন্য আলোচনায় আসেন। তবে অনু প্রায়ই এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন এই বিতর্ক। এসব প্রশ্ন তাঁর কাছে 'স্টুপিড' মনে হয়। তাঁর সুর নকল নিয়ে মার্কিন পত্রিকা হাফিংটন পোস্ট একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ২০০৪ সালের মার্ডার সিনেমার 'কাহো না কাহো' গানের সুর মিসরীয় শিল্পী আমর দিয়াবের 'তামাল্লি মাক'-এর হুবহু নকল। এ ছাড়া আমির খান ও মনীষা কৈরালা অভিনীত আকেলে হাম আকেলে তুম ছবির 'রাজা কো রানি সে প্যায়ার হো গায়া' গানটির সুর বিখ্যাত হলিউডি ছবি দ্য গডফাদার-এর 'লাভ থিম' থেকে নেওয়া হয়েছে।
অনু মালিকের এ রকম জনপ্রিয় আরও কিছু গান আছে, যেগুলোর বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ আছে। বাজিগর ছবির জনপ্রিয়তার কথা কে না জানেন।
বাজিগর ছবিতে শাহরুখ খান ও কাজল, সংগৃহীত
শাহরুখ খান ও কাজল অভিনীত ছবিটির 'ইয়ে কালি কালি আঁখি' আফ্রিকান শিল্পী মোরি কান্তের গাওয়া 'ইয়েকে ইয়েকে' গানের সুর থেকে নকল করা। 'মেরা পিয়া ঘর আয়া' গানের সঙ্গে মাধুরীর নাচ চোখে লাগার মতো। গানটির বিরুদ্ধেও নকলের অভিযোগ আছে। গানটি মূলত পাঞ্জাবি। এটি লিখেছেন পাঞ্জাবি সুফি ও কবি বাবা বুল্লে শাহ। শিল্পী নুসরাত ফতেহ আলী খানের কণ্ঠে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়।
সোলজার ছবির 'সোলজার সোলজার' গানের বিরুদ্ধে 'চেরি চেরি লেডি' গানের সুর ধার করার কথা শোনা যায়। গানটি জার্মান পপ মিউজিক ডুয়ো মডার্ন টকিংয়ের। এই ডুয়ো হলেন ডিটা বোলান ও থমাস আন্ডার্স।
আরও গানের নাম করা যায়। আর শুধু অনু মালিকই-বা কেন। বিশ্বের অনেক নামকরা শিল্পী, গীতিকার, সুরকারের বিরুদ্ধেই এ অভিযোগ আনা যায়! ইন্টারনেটের কল্যাণে দর্শক-শ্রোতা এখন সহজেই পৃথিবীর নানা জায়গার গান শুনতে পাচ্ছেন, ফলে বিষয়গুলো ধরাও পড়ছে বেশি। তবে পুরোনো গান থেকে সুর তুলে এনে নতুন গান সৃষ্টি করলেই যে তা চুরি হয়ে যাবে, তা কিন্তু বলা যাবে না। কারণ, এমন কাজ রবীন্দ্র-নজরুল থেকে শুরু করে অনেক মহারথীই করেছেন। আসলে কতটুকু নিলে চুরি আর কতটুকু অনুসৃজন, এটা একটা জটিল প্রশ্ন, যার মীমাংসা এখনো হয়নি। তবে একটা বিষয়ে সবাই একমত, অন্য কারও কাজ নিজের কাজে আত্মীকরণ করলে স্বীকৃতিটা অন্তত দিতে হবে। এ বিষয়ে কোনো মাফ নেই। সেই অপরাধে অনু মালিক অবশ্যই দোষী।
লেখক: শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা