What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শ্রীমতি সাহার হাতে দেশি কয়েক পদ (1 Viewer)

t5mhfIe.jpg


কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক শ্রীমতি সাহা ভালোবাসেন রান্না করতে। তাঁর রান্নার সুখ্যাতি জনে জনে। নিজ হাতে যে খাবারগুলো রান্না করেছিলেন, নামগুলোও বেশ মজার। জানালেন সেগুলোর পেছনের গল্পও

ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি ছিল বিশেষ আগ্রহ। বাড়ির গুরুজনদের কাছে শিখেছিলেন নানা ধরনের পদ। তবে হাত পাকান শ্বশুরবাড়ি এসে। এখানে বড় ননদ, শাশুড়ির কাছে শিখে নেন রান্নার নানা নতুন কৌশল। কথা হচ্ছিল শ্রীমতি সাহার সঙ্গে। দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহার পুত্রবধূ তিনি। কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচালক।

শ্রীমতি সাহার রান্নার সুখ্যাতি সর্বজনবিস্তৃত। নিজ হাতে রান্না করে খাইয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিশেষ পছন্দ করেন তাঁর হাতের রান্না খেতে।

কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন শ্রীমতি সাহা। এর মধ্যেই বর্ণিল খাবারদাবারের জন্য আলাদা করে বের করলেন সময়। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে যে বাড়িতে তাঁরা থাকেন, সেখানেই আয়োজন করলেন রান্নাবান্নার। এদিকে চলল আমাদের ছবি তোলার পর্ব আর আলাপচারিতা।

bcCiP8z.jpg


রান্নার উপকরণের বিষযে শ্রীমতি সাহা বেশ খুঁতখুঁতে।

শ্রীমতি সাহা শুধু রান্নাই নয়, রান্নার উপকরণের ব্যাপারেও বেশ খুঁতখুঁতে। সবজি কাটাতেও রয়েছে তাঁর নিজস্বতা। আর এই সবকিছু মিলেই তাঁর হাতের রান্না হয়ে ওঠে অনন্য। তিনি বলেন, 'আসলে সিলেটের মেয়ে আমি, যখন বউ হয়ে এখানে আসি, খাবারদাবারে একটা বিশাল পার্থক্য টের পাই। মাঝেমধ্যে তাই চেষ্টা করি দুই এলাকার খাবারের মিশেল ঘটাতে।'

স্বাদের ভিন্নতা তো আছেই, তবে তাঁর হাতের রান্না করা খাবারের নামগুলোও বেশ চমকপ্রদ। এই যেমন শ্বশুরমশাইয়ের লুচি–চচ্চড়ি, দাদার ইলিশ টক ঝোল, বৈরাগী ডাল ইত্যাদি। শ্রীমতি সাহা শোনালেন এই মজার মজার খাবারের নামগুলোর পেছনের গল্প। অতিথি আপ্যায়নে নানা ধরনের সুস্বাদু খাবার নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ানোর সুনাম রয়েছে এই বাড়ির মানুষের। রণদাপ্রসাদ সাহা নিজে খুব খেতে ভালোবাসতেন। যখন কোনো অতিথি আসতেন, তখন তিনি বাড়িতে ফরমাশ দিতেন লুচি বানানোর। আর লুচির সঙ্গে তখন তৈরি করতে বলতেন চচ্চড়ি। তখন আলু, বেগুন, ঝিঙা আর চিংড়ি বা ছোট যেকোনো মাছ দিয়ে তৈরি করা হতো এই বিশেষ চচ্চড়ি। তখন থেকে এই চচ্চড়ির নাম হয় শ্বশুরমশাইয়ের লুচি–চচ্চড়ি।

এদিকে রণদাপ্রসাদ সাহার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা ভালোবাসতেন ইলিশ মাছ। আম, আলুসহযোগে ইলিশ মাছের এই টক ঝোল তরকারি ছিল তাঁর বিশেষ প্রিয়। এ জন্য এ খাবারের নাম দেওয়া হয় দাদার ইলিশ টক ঝোল। সেই সময় ভিক্ষুকেরা বিভিন্ন বাড়ি থেকে ডাল, শাকসবজি চেয়ে আনতেন। আর এই সবকিছুর সহযোগে রাঁধতেন বিশেষ ধরনের ডাল—সেটাই 'বৈরাগী ডাল'। শ্রীমতি সাহা জানালেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী এই ডাল। মজার ব্যাপার হলো, কুমুদিনী কমপ্লেক্সে কোনো বিদেশি অতিথি এলে এই ডাল পরিবেশন করা হয়। আর তাঁরাও এটি খেতে বেশ পছন্দ করেন।

রণদাপ্রসাদ সাহার বাড়ির খাবারের এই ঐতিহ্য বংশপরম্পরায় ধরে রেখেছেন শ্রীমতি সাহা। জানালেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কুমুদিনী কমপ্লেক্সে আসতেন, তখন তাঁর বিশেষ আবদার থাকত বউদির (শ্রীমতি সাহা) হাতে নানা ধরনের নিরামিষ খাওয়ার। এখনো তিনি প্রায়ই ফোন দিয়ে বলেন, 'বউদি, ছানার তরকারিটা কত দিন খাই না।'

d557WdV.jpg


রান্নায় থাকে ওনার নিজস্বতা

শ্বশুরমশাইয়ের লুচি–চচ্চড়ি

ViCFNNq.jpg


শ্বশুরমশাইয়ের লুচি–চচ্চড়ি

উপকরণ: আলু, বেগুন, কচু, চিচিঙ্গা, কাঁঠালের বিচি (শীতকাল হলে মুলা ও শিম) আধা কেজি, চিংড়ি মাছ ১০টি (চাইলে কাজলি, মলা, টাটকিনির মতো ছোট মাছ দিয়ে রান্না করা যায়), তেল, লবণ ও হলুদ পরিমাণমতো।

প্রণালি: প্রতিটি সবজি ঝুরি করে কেটে ধুয়ে জল ঝরিয়ে আলাদা করে রাখতে হবে। চিংড়িতে হলুদ ও লবণ দিয়ে মেখে হালকা ভেজে তুলতে হবে। এবার এর মধ্যে আরও একটু তেল দিয়ে কাঁচা মরিচ, কালিজিরা ফোড়ন দিতে হবে। এবার আলুকুচি দিয়ে একটু ভেজে নিয়ে তুলে রাখতে হবে। এরপর একে একে অন্য সবজিগুলো ছাড়তে হবে। এবার হলুদ, মরিচের গুঁড়া ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে নাড়াচাড়া করে প্রায় শেষের দিকে চিংড়ি ও আলুভাজি দিতে হবে। নামানোর আগে দুই থেকে চারটি কাঁচা মরিচ দিতে হবে। এই চচ্চড়ি ফুলকো লুচির সঙ্গে গরম–গরম খাওয়া যায়।

ভাঙাচোরা শুক্ত

pz3gOHu.jpg


ভাঙাচোরা শুক্ত

উপকরণ: আইড় মাছের মুড়ি ১টি, আলু ২টি, পেঁপে ৩টি, ঝিঙে ৪টি, আদাবাটা আধা চা–চামচ, রাঁধুনিবাটা আধা চা–চামচ, শর্ষের তেল পরিমাণমতো ও তেজপাতা ৩টি।

প্রণালি: শুক্তর সবজিগুলো পাতলা ও চ্যাপ্টা করে কাটুন। ঝিঙের শির ফেলে সবুজ সবুজ করে কাটুন। প্রথমে কড়াইতে তেল একটু গরম করে নিন। এবার রাঁধুনি ও তেজপাতা ফোড়ন দিন। এরপর প্রথমে কড়াইয়ে আলু দিন, পরে পেঁপে এবং সবশেষে ঝিঙে দিন। এবার স্বাদমতো লবণ দিয়ে নাড়াচাড়া করুন।

এর আগে মাছের মুড়ি ডুমো ডুমো করে কেটে নিন। মুড়ির সঙ্গে মাছের বুকের অংশ কাঁটাসহ অল্প পরিমাণে হলুদ, লবণ ও তেল ভেজে নিন। যে বাসনে মাছের মুড়িতে মসলা মাখানো হয়েছে, সেই বাসন ধুয়ে জলটুকু দিয়ে দিন। এদিকে সবজি সেদ্ধ হলে মাছের মুড়ি সবজির মধ্যে দিয়ে ভালোমতো মিশিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে অল্প শুকনা ময়দা দিয়ে নাড়াচাড়া করে নিন। এবার রাঁধুনিবাটা ও শর্ষের তেল দিন। ভালো সুগন্ধ বের হলে একটু নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিতে হবে।

দাদার ইলিশ টক ঝোল

aNsLByP.jpg


দাদার ইলিশ টক ঝোল

উপকরণ: ইলিশ মাছ ১০ টুকরা, শর্ষেবাটা পরিমাণমতো, শুকনা মরিচ কয়েকটি, কাঁচা আম ১০–১২ টুকরা এবং ফোড়নের জন্য জিরাবাটা ১ চা–চামচ ও শর্ষের তেল পরিমাণমতো।

প্রণালি: ইলিশ মাছে লবণ ও হলুদ মেখে ভেজে তুলতে হবে। এবার হলুদ, শুকনা মরিচ, জিরাবাটা, স্বাদমতো লবণ ও চিনি জলে গুলিয়ে তেলের মধ্যে ফোড়ন দিতে হবে। মসলা কষানোর পর মাছ দিতে হবে। এরপর লম্বা লম্বা করে কাঁচা আমের টুকরা ছেড়ে দিতে হবে।ঝোল সামান্য মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিতে হবে।

কাটা মসলায় খাসির মাংস

Dyzu9C5.jpg


কাটা মসলায় খাসির মাংস

উপকরণ: খাসির মাংস ২ কেজি, সয়াবিন তেল ৫০০ মিলিলিটার, পেঁয়াজ ২৫০ গ্রাম, রসুন ২৫০ গ্রাম, আদা ২০০ গ্রাম (কুচি করে রাখতে হবে), শুকনা মরিচ ১০০ গ্রাম (ডুমো ডুমো করে রাখতে হবে), মিষ্টি ও টক দই ১০০ গ্রাম, এ ছাড়া লাগবে পরিমাণমতো লবণ, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ও লবঙ্গ।

প্রণালি: প্রথমে মাংস ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এবার সব উপকরণসহ দই, তেল মাংসে মাখিয়ে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা রেখে দিন। একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে মাখানো মাংস দিয়ে মাঝারি আঁচে আস্তে আস্তে কষিয়ে নিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে অল্প পরিমাণ ঘি দিয়ে নামিয়ে নিন।

বৈরাগী ডাল

vtQGGFu.jpg


বৈরাগী ডাল

উপকরণ: মটর ডাল ৫০০ গ্রাম, কাঁঠালের বিচি ২০টি, কচু ১৬ টুকরা, আলু ১০ টুকরা, ঝিঙে ১০ টুকরা, মিষ্টিকুমড়ার ডগা ১০টি, মরিচ ৪টি, তেজপাতা ৩টি, মেথি ১ চা–চামচ, কালিজিরা ১ চা–চামচ।

প্রণালি: সবজিগুলো একটু বড় করে একরকম আকৃতিতে কাটতে হবে। পরিমাণমতো জল দিয়ে মটর ডাল আধা সেদ্ধ হওয়ার পর তুলনামূলক শক্ত সবজিগুলো আগে দেবেন। এরপর একে একে অন্য সবজিগুলো দিয়ে লবণ দিন। আরেকটি কড়াইয়ে শুকনা মরিচ, তেজপাতা, মেথি ও কালিজিরা ফোড়ন দিতে হবে। এবার এই কড়াইয়ে ডাল ও সবজি ঢেলে দিতে হবে। এর মধ্যেই মটর ডাল পুরো সেদ্ধ হয়ে যাবে। এবার দুই থেকে চারটি কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন। নামানোর আগে পরিমাণমতো ঘি দিতে হবে।

* বিপাশা রায়, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top