জান্নাতদর্শন!
জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পুরো বঙ্গদেশে হয়তো লাখখানেক মেয়ে আছে, দশ লাখ তো হবেই। সেই জান্নাতুল ফেরদৌস নামের একজনের উপরেই যে ক্রাশ খাব, ভেবেছিলাম কোনদিন? অবশ্য ওকে প্রথম দেখেছিলাম যখন, তখন নামধাম জানতাম না। জানলে হয়ত, ওকে নিয়ে ২য় বার ভাবতামই না।
সেদিন টিএসসিতে কীসের একটা কনসার্ট ছিল। ক্যাম্পাসেরই একটা ব্যান্ড গলা ছেড়ে চিৎকার করছিল, তাদের ড্রাম আর লিডের শব্দে লিরিক কিছু বোঝা যাচ্ছিল না; শুধু বারবার 'নষ্ট' শব্দটা কানে আসছিল; নষ্ট না হয়ে শব্দটা 'কষ্ট'ও হতে পারে! ছেলেপেলেরা সেই গানেই লাফাচ্ছিল। যাদের চুল বড়, তারা ঝাকাচ্ছিল মাথা। যে গান বোঝাই যায় না, সেই গানে লাফানোর কী আছে?
হালকা ভিড়, অনেক ওড়নার উড়াউড়ি আর লিড গিটারের অসহ্য সোলোর মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌসকে দেখেছিলাম প্রথম। একটা ছেলের বাইকে বসে (পরে জেনেছিলাম, সে ওর বফ) আইসক্রিম খাচ্ছিল। পরনে কালো জিন্সের প্যান্ট আর টপ্স। ল্যাম্পোস্টের ডিমের কুসুমের মত নিয়ন আলোয় ওকে দেখে, আমার কামড়াতে ইচ্ছে করছিল, ঠিক যেভাবে সে কামড়াচ্ছিল আইসক্রিমটা।
আমার পাশে বসে সিগারেট টানছিল সুদীপ্ত। বাইকের সিটে বসে থাকা মেয়েটিকে দেখিয়ে বললাম, "মালটাকে দেখছোস?"
সুদীপ্ত শান্ত ছেলে, ভদ্রও। প্রমিতভাষী। জীবনে কোনদিন ওর মুখে স্ল্যাং শুনিনি; ক্লাসমেট হলেও যে আমাকে এখনো 'আপনি' বলে সম্বোধন করে। সেই সুদীপ্তও সেদিন সিগারেটে একটা জোর টান দিয়ে বলেছিল, "এ তো পুরা চিকেল গ্রিল!"
আমি মেয়েটার দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বলেছিলাম, "এরিয়েল উইন্টারের বাঙ্গালী ভার্সন! এই মেয়েকে একবার চাখতে না পারলে জীবন বৃথা!"
সুদীপ্ত তার দীপ্ত মুখ থেকে সিগারেটটা ফেলে বলেছিল, "আপনি ঠিক বলেছেন! তবে আমাদের ভাগ্যে এমন অপ্সরা জুটবে না!"
বলেছিলাম, "যার বাইকে বসে আছে, তাকে দেখে কি তোর ব্রাড পিট মনে হচ্ছে? শালার শরীরে কিছু আছে নাকি? নির্ঘাত গাঁজাখোর। মানে, আমিও গাঁজা খাই। কিন্তু আমাদের দেখে গাঁজাখোর বলবে না কেউ! ওর ভাগ্যে এমন টসটসে তরমুজ জুটলে আমরা পারব না কেন?"
সেই মোটিভেশনাল স্পিচটা হয়তো নিজেকেই শুনিয়েছিলাম! সে পারলে আমরা পারব না কেন?
তারপর অনেকদিন তাকে দেখিনি। ভুলেও গিয়েছিলাম। প্রতিদিন এত মেয়ে দেখি-সিঙ্গেল ছেলেরা আর করবেই বা কী?- তাকে দেখতে পাই না।
কিছুদিন পর তাকে দেখেছিলাম চারুকলা 'ভূত উৎসবে'। চারুকলা অনুষদকে এদিন ভূতুড়ে করে সাজানো হয়। দেখা গেল, চারুকলার বিখ্যাত বকুল গাছে সেদিন দশবারো পিস কাটা কাল্লা ঝুলছে। এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে মেছো ভূত, জালি ভূত, এলিয়েন ভূত, রাজনৈতিক ভূত ইত্যাদি। স্টেজে সেদিন ভূতরাজ আসেন। এসে কথা বলেন ভক্তদের সাথে, থাকে প্রশ্নোত্তর পর্ব। কিন্তু উতসবটা শতভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। দেশের অনেক গণ্যমান্য লোক, যাদের এমন অশ্লীল কিন্তু সৃজনশীল অনুষ্ঠানে আসার কথা না, তারাও আসেন।
সেবার চারুকলায় ঢুকতেই চোখে পড়ল মেয়েটাকে। সে আজও বফের হাত ধরে আছে, পড়ছে গাছে ঝুলিয়ে রাখা একটা প্লাকার্ড। আমিও প্লাকার্ডটা পড়ার ছলে পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে লেখা-
"আন্ধার রাইতে/ চিপায় চাপায়
যুবক যুবতী/ হুদাই হাফায়
ভূত কয় ওরে বলদ
তোর তো গোড়ায় গলদ!"
সেদিন আর ভূত দেখা হলো না আমার। প্রতিটা সেকেন্ড আমি তাকে দেখেছি। তার হাঁটা, কথা বলা, বসা, অশ্লীল কৌতুক শুনে বফের কোলে ঢলে পড়া, দুধের দুলনি আর বাউন্স, টাইট সোয়েট প্যান্ট ছিড়ে বেরিয়ে আসতে চাওয়া নরম পাছা!
খুব ভাল কেটেছিল রাতটা সেদিন!
সেদিনের সেই ভূত উতসবের পর থেকেই যেন আমার কপাল খুলে গেল। ও সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রী, তাই কলা ভবনে ক্লাস করতে যাওয়ার সময় মাঝেমাঝেই দেখা হত। আমার ক্লাস না থাকলেও, শুধু ওকে দেখার জন্যই আমি মাঝেমাঝে যেতাম। কোনদিন দেখা হত, কোনদিন হত না! যেদিন দেখা হত না, সেদিন একটা সিগারেট বেশি খেতাম। আমার বাসার মালিক আহমেদ রাজীবকে গালি দিতাম অকারণে।
আমার এই অবস্থার কথা বললাম একদিন আমার সমাজবিজ্ঞানের বন্ধু সিফাতকে। বলটা যে ভুল হয়েছিল, সেটা পরে বুঝেছি।
"কার কথা বলছিস, জান্নাতুল ফেরদৌস?"
"আমি নাম জানি না। মালটা হেব্বি। থার্ড ইয়ারে পড়ে। বুক আর পাছার দুলনিতে ভূমিকম্প হয়!"
"আমি সিওর, তুই জান্নাতুল ফেরদৌসের কথা বলছিস! মালটার কথা ভেবে যে কতদিন হাত মারছি রে ভাই! চিজ একটা! কী খেয়ে ওর মাকে ওর বাপ চুদেছিল কে জানে!"
"দোস্ত, মালটার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবি? তোর ডেপ্টে পড়ে। তোকে তো চেনার কথা!", অনুনয় করে বললাম।
সিফাত কথাটা গায়েই মাখলো না। বলল, "পরিচয় করিয়ে দিয়ে লাভ কী? ওর বফ আছে। এমন মেয়ে ফাঁকা থাকে?"
কথা সত্য। এত রূপসী মেয়ের প্রেমিক থাকবে না কেন? আমি তো নিজেই ওকে কয়েকবার প্রেমিকের সাথে দেখেছি। তাও পরিচিত হতে চাচ্ছি কী স্বার্থে?
তবু বললাম ওকে, "তুই দে না ভাই পরিচয় করিয়ে। বাকিটা আমি দেখব। ওর সাথে প্রেম করব, এমনটা বলছি নাকি? ওমন একটা চান্দের মত মেয়ের সাথে পরিচয় থাকলেও আয়ু বাড়ে!"
সিফাত তাতেও রাজী হলো না। কে জানে, সে নিজেও জান্নাতুল ফেরদৌসকে মনে মনে চায় কি না!
সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় কোন কারণে বন্ধ ছিল। আমি জুন মাসের প্রখর রোদে বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটছি ফ্যাফ্যা করে। পাগলামি হয়ত বলে একেই। আর এমন পাগলামিই হয়ত ভাল কিছুর সূচনা করে। কলা ভরনের সামনে, বটতলায় এসে দেখি "জান্নাতুল ফেরদৌস বসে আছে একা!
দেখেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। মালটাকে দেখতে পেলে আমি প্রতিদিন এমন দুপুররোদে পুরান ঢাকা থেকে হেঁটে আসতে পারি।
বটগাছটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। জান্নাত যেদিকে বসে আছে, তার বিপরীত দিকে বসলাম আমি। এটাই সুযোগ! ওকে কোনদিন আমি একা পাইনি। সবসময় বফ নয়ত বন্ধুবান্ধব লেগেই থাকে। সুন্দরী মেয়েদের হয়ত বন্ধুর অভাবও হয় না!
কিন্তু যাবো- গিয়ে কথা বলব, এমনটা ভাবলেই তো হয় না। বুকে সাহস থাকা চাই, যেটা বরাবরই আমার কম। ক্লাস সিক্স থেকে অদ্রি নামের এক ক্লাসমেটকে ভাল লাগত, প্রতিদিন ক্লাসে ওকে দেখতাম চোরা চোখে। কিন্তু কোনদিন ওকে ভাল লাগার কথা বলিনি। অদ্রির বিয়ে হয়ে গেছে এক প্রবাসীর সাথে। জার্মানিতে থাকে সে। তার জার্মান প্রবাসী স্বামী হয়ত এখন অদ্রিকে প্রতিদিন ডগি স্টাইলে চোদে, আর আমি শ্লা এখনো প্রতিদিন আঙ্গুল চুষি। অদ্রিকে কোনদিন আমার ভালোবাসার কথা বললেও হয়তো আজ সে জার্মানিতে থাকতো। কিন্তু অব্যক্ত তো থাকতো না অনুভূতিটা!
ভাবলাম, এই কুফা কাটাতেই হবে। প্রেম না করে গোবরগণেশ হয়ে যাচ্ছি ভাল ছেলেটা। জান্নাত হয়ত রাজী হবে না, না হওয়ার সম্ভাবনাই শতভাগ, কিন্তু সাহস করে বলতে পারার একটা রেকর্ড অন্তত থাকবে। জান্নাতকে দেখলে আমার বাড়া দাঁড়িয়ে যায়, ঐ পর্যন্তই, ভালো তো আর বাসিনা, খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে দুই একবার গালি দিয়ে চড় মারলেও ক্ষতি নেই। বটতলা প্রায় ফাঁকা, দেখবে না কেউ!
একবার জান্নাতকে মনের কথা বলতে পারলে, অন্য কোন মেয়েকে ভাল লাগলে তাকে বলার সাহসটা পাবো। এভারেস্টের চূড়ায় ওঠে কেউ চারদিকটা দেখবে, সে কথা এডমন্ড হিলারি এভারেস্ট জয় করার আগে কেউ ভাবেনি হয়ত। হিলারি এভারেস্ট জয় করার পর থেকে হাজার মানুষ এভারেস্টে উঠেছে। কয়েকজন মেঠো ভেতো বাঙালিও তো জয় করল এরমধ্যেই এভারেস্ট!
সুতরাং বলতেই হবে, জান্নাতের সাথে কথা! আমি নিজেও দেখতে এতোটা খারাপ নই, দুইতিনটা প্রেম করার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু আমার চেহারা বড্ড সাধারণ, লম্বা মুখ, ছোট চুল, উচ্চতাও মাঝারি। শত লোকের ভীরে তাই আমার দিকে কেউ তাকায় না বিশেষ চোখে। গানটানও আসে না যে সুরেলা গলায় কাউকে তাক লাগিয়ে দেবো। ভাবছিলাম তাই, কথা বললেও কি আমার চেহারাটা মনে থাকবে জান্নাতের? ও তো কত ছেলের সাথে ঘোরে, এমন ভাতের মত চেহারার কাউকে কী ওর স্মরণ থাকার কথা?
খুব বেশিই ভাবছিলাম! এতসব ভেবে যে কোন কাজ হবে না, সেটা এতদিনে বুঝে গিয়েছি। যা করতে হবে, করব হুটহাট। ফলাফল পরে দেখা যাবে। প্রপোজ করলে জান্নাত অন্তত আমাকে জুতা মারবে না!
অনেকটা সাহস নিয়েই তাই গেলাম জান্নাতের কাছে। জান্নাত সামনের কাঠগোলাপ গাছটার দিকে তাকিয়ে। গাছটার নিচে কয়েকটা ছোট বাচ্চা খেলছে। বাচ্চাগুলো হয়তো এখনও কথা বলাই শেখেনি, হয়ত বলে আধোআধো। আর তাদের বাবা মা কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে!
জান্নাত কি বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে, তাদের দূর্বল পায়ের হাঁটাচলা আর আধোআধো কথা বলার চেষ্টা দেখে নিজের অনাগত সন্তানদের কথা ভাবছে! জানি না।
আমি বললাম, "শুনছেন, আপু? এক্সকিউজ মি!"
হাঁদারামের মত শোনাল কি গলাটা? এভাবে কি কেউ কাউকে ডাকে?
জান্নাত আমার দিকে যেন ঘোর ভেঙ্গে তাকাল। বলল, আশপাশে তাকিয়ে, "আমাকে বলছেন?"
বললাম, "হ্যাঁ। আপনাকেই। কিছু কথা ছিল। আপনার কি সময় হবে?"
জান্নাতের মুখে বিরক্তি ছায়া ঘনিয়ে এলো যেন। বলল, "কথা বলাটা কি খুব জরুরী?"
আচ্ছা দেমাগি মেয়ে তো! এভাবে বলবে ভাবিনি। বললাম, "হ্যাঁ। আমার জন্য জরুরী। আপনার কাছে কথাটা গুরুত্বপূর্ণ নাও মনে হতে পারে!"
জান্নাত হয়ত বুঝে গেছে, আমি কী বলতে এসেছি। অন্তত তার ভাবভঙ্গিতে তাই মনে হচ্ছে। আগ্রহ না দেখিয়ে বলল, "আচ্ছা বলুন আপনার জরুরী কথা!"
কী বলি এবারে! কথা বলব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু কী বলব ভাবিনি। এসব কাজ হোমওয়ার্ক ছাড়া হয়!
বললাম, "আমার নাম রিদম। আপনাকে আমি কিছুদিন ধরে দেখছি। আপনাকে ভাল লেগে গেছে। আপনাকে হয়ত অনেকেই এভাবে বলেছে। কিন্তু তারপরও কথাটা না বলে থাকতে পারলাম না। আপনাকে ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও পাঠিয়েছি। আপনি ঝুলিয়ে রেখেছেন!"
জান্নাত কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, "আপনাকে কী জবাব দেব? আপনি কি মেয়েদের একা পেলেই এভাবে প্রপোজ করে বসেন!"
বললাম, "এপর্যন্ত কাউকে এভাবে বলিনি। কাউকে দেখে মনেও হয়নি, তাকে আমার ভাল লাগার কথাটা না জানালে মরে যাবো!"
জান্নাতের মুখে একটা মুচকি হাসি খেলে গেল। বলল, "তাই নাকি? আমাকে এই কথাগুলা না বলতে পারলে মরে যেতেন?"
আমি জবাব না দিয়ে মাথা নাড়ে স্মমতি জানালাম।
জান্নাত ইতস্তত করে বলল, "দেখুন। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি আপনার প্রপোজ একসেপ্ট করতে পারছি না!"
মনে মনে বললাম, "তোমার ব্রেকাপ হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করতে রাজী আছি, সুন্দরী!"
কিন্তু মুখে বললাম, "আমি জানি। আপনি আমার প্রপোজ একসেপ্ট করবেন ভেবে, আপনাকে এগুলো বলিনি। ঐ যে বললাম, বলতে না পারলে মরে যাবো! আসলে বলতে না পারাটা বুকের উপর পাথরের মত চেপে আছে। আপনাকে কথাগুলা বলে এখন নিজেকে অনেক হালকা লাগছে!"
জান্নাত কিছু বলল না কিছুক্ষণ। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "একটু পর আমার বফ আসবে। তার সাথে দেখা করতে হবে। আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগল!"
আমি যেন বেয়ারা হয়ে উঠেছি। বললাম, "কিছু মনে না করলে, একটা অনুরোধ করব?"
জান্নাত উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি বললাম, "ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটা একসেপ্ট করবেন?"
জান্নাত ইতস্তত করে বলল, "আমার ফোনে এখন ডেটা নেই। আমি অনলাইনে গেলেই আপনার রিকু একসেপ্ট করব!"
কথাটা বলেই আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না জান্নাত। আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো ডাকসু ভবনের দিকে।
কথা বলতে না পারলে, মরে যাব- এটা বলাটা একটু বেশি হয়ে যায়নি? যাহোক, কথা তো বলেছি!
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট যে একসেপ্ট করবে না, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম শতভাগ। ব্লকও করতে পারে। কিন্তু রাতে ঘুমানোর আগে এফবিতে একবার লগ ইন করতেই দেখলাম, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার নটি এসেছে।
জান্নাত তার বন্ধু তালিকায় যুক্ত করেছে আমাকে!
রুদ্রা
ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। এখন, এই বিকেল আর সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণটা আমার বিশেষ প্রিয়। আকাশে অজানা এক আলোর ঝলক দেখা যায়। প্রতিদিন আকাশের রংটা একই থাকে, তবু নতুন লাগে প্রতিদিন। আমি থাকি পুরান ঢাকার একটা গলিতে। এই অঞ্চলে একটা বাড়ির থেকে আরেকটা বাড়ির দূরত্ব এত কম যে, ছাদগুলা প্রায় একটার সাথে আরেকটা লাগানো। প্রত্যেকটা বাড়ি থেকেই মেয়েরা এই সময় ছাদে এসে হাওয়া খায় কিংবা অন্য ফ্লাটের মহিলাদের সাথে সুখ দুঃখের আলাপ জুড়ে দেয়।
আমি ঠিক বিকেলের পর এই সময়ে আসি অনেকটা আকাশ আর মেয়ে কিংবা আন্টি দেখার লোভে। পাশের ফ্লাটের কয়েকটা মেয়ে আসে ফোনে প্রেমিকদের সাথে কথা বলতে। তাদের দেহে থাকে বাড়িতে পরার পোশাক। তাদের বুকের ঝলক দেখে আমার বাড়া মহাশয় বিশেষ আনন্দ পান!
সিগারেটটা শেষ করে ফেলে দিচ্ছিলাম। দেখলাম, পাশের ফ্লাটের উকিল সাহেবের বউ তার চার বছরের বাচ্চাকে নিয়ে ছাদে এসেছেন। দাঁড়িয়েছে আমার পাশেই। বাচ্চাটা আমার সাথে বেশ পরিচিত। ছাদে প্রায়ই দেখা হয়ে যায়। আমি কয়েকদিন ওকে রূপকথার গল্প শুনিয়েছি।
মায়ের কোল থেকেই বাচ্চাটা বলল, "রিদম ভাইয়া, কী কর!"
ছেলেটার নাম যেন কী? সৈকত না?
ভললাম, "এই তো দাঁড়িয়ে আছি, ভাইয়া। তুমি কেমন আছো?"
"আমি ভাল। আজ আমাকে গল্প শোনাবে?", আবদার করল সৈকত।
বললাম, "তোমার আম্মু তো আছে। আম্মুকে বল। গল্প শুনিয়ে দেবে!"
সৈকত বলল, "আম্মু তোমার মত গল্প বলতে পারে না! শোনাও না ভাইয়া একটা গল্প!"
আমি উকিল সাহেবের স্ত্রীর দিকে তাকালাম। মহিলা হাসি হাসি মুখে নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুযোগের সুরে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, "আমি গল্প শোনাতে পারি না, না? গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে ভাত খাওয়ায় কে?
মায়ের জবাব পেয়ে কাঁধে মুখ লুকালো সৈকত।
আমি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, "আপনার ছেলে মারাত্মক চটপটে। এই বয়সে ডায়নোসর বোঝে!"
সন্তানের প্রশংসা করলে, সব মায়ই খুশী হয় বোধহয়। সৈকতের মাও হলেন। বললেন, "ডায়নোসর চিনবে না? সারাদিন কার্টুন দেখে তো ওসবের!"
আমি বললাম, "যাই বলুন। দারুণ মিষ্টি ছেলে ও!"
ওর মা বললেন, "আমাকে তো জ্বালিয়ে মারে। তোমার কাছে এলে হয়ত শান্ত থাকে!"
আরও কিছুক্ষণ কথা হলো সৈকতকে নিয়েই। তারপর হয়ত ভদ্রমহিলার মনে হলো, তিনি আমার নামই জানেন না কিন্তু ছেলের ব্যাপারে বেশ কথা চালিয়ে যাচ্ছেন! হঠাত আমাকে বললেন, "তোমার নামটাই জানা হলো না! আমার না রুদ্রা!"
আমি হাতটা পিছনে নিয়ে গিয়ে ঝুঁকে বললাম, "আমি রিদম। ঢাবিতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়ছি!"
রুদ্রা বললেন, "হ্যাঁ। অনেকদিন থেকে লক্ষ্য করছি তোমাকে। তুমি অপজিটের ফ্লাটে থাকো। কিন্তু কথা হয়নি কোনদিন!"'
আমি বললাম, "আপনাকে কী বলে ডাকব বলুন! আপনার ছেলে তো আমাকে ভাইয়া বলে!"
রুদ্রা হেসে বলল, "হা হা। তুমি আমাকে ভাবি বলেই ডেকো। আমি বলে দেব, সৈকত আজ থেকে তোমাকে চাচ্চু বলে ডাকবে!"
কথাটা বলেই রুদ্রা সন্তানের দিকে তাকালেন। বললেন ওকে, "একে আজ থেকে ভাইয়া বলে ডাকবে না, আচ্ছা? চাচ্চু বলবে!"
সৈকতকে মায়ের বাধ্য সন্তান বলেই মনে হলো। সে মাথা নেড়ে সায় দিল কথাটায়।
আমি বললাম, রুদ্রার সাথে কথা বলা চালিয়ে যেতে, "আপনারা তো বোধহয় এই বাসায় অনেকদিন ধরেই আছেন, তাই না? আমি আসার পর থেকেই আপনাদের দেখছি!"
রুদ্রা ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। সৈকত দৌড়ে ছাদের অন্য প্রান্তে চলে গেল। ছাদটার রেলিং অনেক উঁচু করে দেয়া, তাই পড়ার ভয় নেই। তাছাড়া এখানকার ছেলেরা ছোট থেকেই এই পরিবেশে মানুষ, তাদের নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। অনেক মা বাচ্চাকে ছাদে খেলতে দিয়ে ঘরে রান্না করেন। স্বামীকে চুদতেও দেয় অনেকে হয়ত!
ছেলে চলে যেতেই, রুদ্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "হ্যাঁ। আমরা এই বাসায় প্রায় আট বছর ধরে আছি। আসলে আমি বিয়ের পরেই এই বাসায় এসেছি। তোমার ভাই আর বাসাই পরিবর্তন করল না!"
আমি বললাম, "এই বাসাটা ভালই। আমি তো ঠিক করেছি গ্রাজুয়েশন শেষ না হওয়া তক, এই বাসাতেই থাকব। আমার অবশ্য একটাই রুম। এমন জায়গা আর কোথাও পাব বলেও মনে হয় না!"
ভদ্রমহিলা হঠাত কিছু মনে পড়ার মত করে বললেন, "আরে তাইতো। তোমার দিকটায় তো একটাই রুম। কত করে ভাড়া এখন?"
আমি রুদ্রাদের বিপরীত ফ্লাটে থাকি। প্রত্যেকটা ফ্লাটেই তিনচারটা করে রুম। শুধু আমার ফ্লাটেই একটা। বাঁকি দুইটা রুমের জায়গায় পানির ট্যাংক বসানো। আমার রুমের উপরেই ছাদ। তাই ছাদে উঠতে আমার কষ্ট করতে হয় না।
ভাড়া বললাম। রুদ্রার সাথে রাত নামার আগ পর্যন্ত অনেক গল্প হলো। বেশিরপভাগই উল্লেখ করার মত না। বুঝলাম, ভদ্রমহিলা কথা বলার লোক খুঁজে পান না। তাই আজ এই আধচেনা আমাকেও অনেক কথা বলে ফেললেন। স্বামী তার মক্কেল নিয়েই ব্যস্ত। সারাদিন বাড়িতে একা। আর পরিবারের লোক বলতে স্বামী, সন্তান আর তিনি। একা লাগবে নাই বা কেন!
রুদ্রা আর সৈকত চলে গেলে আরেকটা সিগারেট জ্বালালাম। সন্ধ্যাটা বেশ কাটল। নীলা নোটের জন্য ফোন দিচ্ছে বারবার। তাকে নোট দেয়ার জন্য ক্যাম্পাসে যেতে হবে।
সিগারেটটা শেষ করে ফিরে এলাম নিজের রুমে।
Last edited: