What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

গো-ঘণ্টা (1 Viewer)

BTokuu5.jpg


সামনে কোরবানির ঈদ। গরুর বাজারটা জমে উঠবে উঠবে করেছে। এ সময় গরুকে আকর্ষণীয় করতে প্রায়ই দেখা যায় গরুর গলায় বাহারি রঙের মালা, ঘণ্টা ও বেল্ট। আমাদের দেশে গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার রেওয়াজটা বহুল প্রচলিত নয়। তবে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে গরুকে এই আকর্ষণীয় অলংকার অর্থাৎ গো-ঘণ্টা পরানো হয়। কেন, কোথা থেকে এবং কীভাবে এল এই প্রথা? গরুর ঘণ্টাটা মূলত গরুর গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পশুপালকেরা পাহাড়ি প্রাকৃতিক পরিবেশে বা বিস্তৃত সমভূমিতে তাঁদের গবাদিপশুদের নিজেদের নজরে রাখতে গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধেন। গরু যখন বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ঘুরে বেড়ায় এবং বৈরী আবহাওয়ার সময় গরুগুলোকে খামারের আশ্রয়ে ফিরিয়ে আনার দরকার হয়, তখন এটি গুরুত্বপূর্ণ।

c5fbwdR.jpg


সুইজারল্যান্ডের 'ওপেন এয়ার মিউজিয়াম'-এ লেখক (ডানে) ও তাঁর বন্ধু

ইউরোপের দেশগুলোতে বিশেষ করে সুইজারল্যান্ডে গরুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার রেওয়াজ এখনো প্রচলিত। মালিকেরা বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি ও পাহাড়ি এলাকায় তাঁদের গবাদিপশু সন্ধানের জন্য কেবল ঘণ্টার আওয়াজগুলো অনুসরণ করেন। পশুপালকেরা বেলটির আওয়াজের মাধ্যমে প্রাণীটির অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেন। যদিও এগুলোকে ব্যাপক হারে 'গরুর ঘণ্টা' বলা হয়, কিন্তু গরু ছাড়া আরও কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। ঘণ্টা সাধারণত লোহা, ব্রোঞ্জ, পিতল, তামা বা কাঠ থেকে তৈরি করা হয়। ঘণ্টা বা বেলটি ঝুলিয়ে দেওয়া হয় একটি কলারের সঙ্গে। কলারটি তৈরি করা হয় চামড়া ও কাঠের তন্তু দিয়ে। গরুর ঘণ্টার কারুকাজ ভৌগোলিক অবস্থান এবং সংস্কৃতি অনুসারে পরিবর্তিত হয়। গরুর ঘণ্টা এবং কলারের ওপর সংযোজিত অলংকারগুলো সাধারণত নান্দনিক হয়।

সুরক্ষা ছাড়াও কৃষকেরা তাঁদের গরুকে ঘণ্টা পরান, কারণ এটি তাঁদের স্থানীয় ঐতিহ্যের একটি অংশ। কিছু ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিশ্বাসও গো-ঘণ্টা প্রচলনের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে। গো-ঘণ্টা নিয়ে বেশ কিছু রূপকথা প্রচলিত আছে, যা লোকমুখে কালে কালে তৈরি। কিছু সংস্কৃতির মানুষ বিশ্বাস করে, নির্দিষ্ট অলংকারগুলো অসুস্থতা প্রতিরোধ বা নিরাময়ের শক্তি হিসেবে জাদুকরী সুরক্ষা দেয়। অনেক সম্প্রদায়ে কিংবদন্তি আছে, এ ঘণ্টা মন্দকে বাধা দিতে পারে। কিছু মানুষ তাদের প্রাণিসম্পদের গলায় ঘণ্টা চাপায়। কারণ, তারা বিশ্বাস করে ঘণ্টার শব্দ শিকারিদের ভয় দেখায়।
তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘণ্টার আওয়াজটির বিপরীত প্রভাব আছে।

OCfbqAd.jpg


শিকারিদের পশুপালের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং পশু কত দূরে অবস্থান করছে, তারও ধারণা দেয় এ শব্দ। পশুবিজ্ঞানীরা মনে করেন, পশুর মধ্যে একধরনের মনস্তত্ত্ব কাজ করে। সেটি হলো, পশু বুঝতে পারে সে কারও অন্তর্গত এবং গরু প্রধানত সুরক্ষার কারণেই বেল বাজায়। তারা তাদের মালিকদের জমির বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে তাদের অবস্থান জানতে দেয়। বিভিন্ন ধরনের ঘণ্টা বিভিন্ন ধরনের শব্দ তৈরি করে। বয়স, লিঙ্গ ও প্রজাতিভেদে ঘণ্টায় ভিন্নতা আনা হয়, ঘণ্টার শব্দও ভিন্ন হয়। প্রাণীর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করতে ঘণ্টা বা শব্দের ভিন্নতা সহায়ক। যেমন পুরুষ পশুর গলায় ব্যবহৃত ঘণ্টা গাভির গলায় ব্যবহৃত ঘণ্টার থেকে আলাদা, তাদের নামও আলাদা। আবার গর্ভবতী প্রাণী বা অপরিণত প্রাণীর গলায় ব্যবহৃত ঘণ্টার শব্দ, নাম ও আকারেও ভিন্নতা রয়েছে।

পৃথিবীর কোন কোন মহাদেশে বা অঞ্চলে এই সংস্কৃতির প্রচলন? ঘণ্টা মূলত ইউরোপ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং লাতিন আমেরিকাতে পশুর গলায় ব্যবহৃত হয়। তবে আফ্রিকা ও এশিয়ার যাযাবর যাজক উপজাতিসহ ট্রান্সহুমেন্স (যারা একধরনের রাখল এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গবাদিপশুদের সঙ্গে চারণভূমি পরিবর্তন করে) অনুশীলনকারীরা বিশ্বব্যাপী গলায় বিভিন্ন ধরনের ঘণ্টা ব্যবহার করে। ঠিক কবে কখন কোথা থেকে এল গো-ঘণ্টা? প্রথম ঘণ্টার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ মিলেছে নিওলিথিক চীনে। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে ৫০০০ বছরের বেশি আগে। সে যুগে, প্রাথমিকভাবে মৃৎশিল্পের কাউবেলগুলোর প্রমাণ পাওয়া যায়, যা সম্ভবত ছাগল, ভেড়া এবং গবাদিপশু ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহৃত হতো। মৃৎশিল্পের ঘণ্টাটি পরে ধাতব ঘণ্টা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। পশ্চিম এশিয়ায় ঘণ্টাটির প্রথম উপস্থিতির প্রমাণ মেলে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ সালে।

KEIxBEr.jpg


কোরবানির জন্য হাটে নিয়ে আসা গরু

এরপর ধীরে ধীরে মেষ পালনের জন্য পশুর গলায় ঘণ্টা বাঁধার রেওয়াজটি মধপ্রাচ্য, কার্থাগিনিয়ান, গ্রিক এবং রোমান সংস্কৃতিতে প্রবেশ করে। ব্রিটেনে প্রাণিসম্পদের জন্য ব্যবহৃত গো-ঘণ্টার ছবির হদিস মেলে স্কটল্যান্ডে। স্কটল্যান্ডের পিচটিসি গুহার পাথরে খোদাই করা আছে গো-ঘণ্টার চিত্রকর্ম। সেগুলো থেকে ধারণা করা হয় সপ্তম থেকে নবম শতাব্দীর মধ্যে চিত্রকর্মগুলো তৈরি হয়েছে। ইয়র্কশায়ার ডেলসের ক্রমম্যাক ডেল এবং গাউবার হাই প্যাসচারে উঁচু জমির বসতিগুলো থেকে খনন করে অষ্টম বা নবম শতাব্দীর গাভি বা ভেড়ার ছোট ছোট লোহার ঘণ্টা পাওয়া গেছে।

সুইস লোককাহিনিতে গো-ঘণ্টার গুরুত্ব বিশেষ স্থান পেয়েছে যুগে যুগে। সুইজারল্যান্ডে বৃহৎ আকারের গো-ঘণ্টা একটি বিরল সময়কে প্রতিফলিত করে, যা সুইজদের ঐতিহ্যগত ও কাঙ্ক্ষিত সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। সুইজারল্যান্ডের সিমেন্টাল (Simmental) অঞ্চলে গরুর ঘণ্টা নিয়ে একটি কিংবদন্তি আছে। এটাকে সিমেন্টাল লোকগাথা বলা যেতে পারে। কিংবদন্তিটি হলো, একজন তরুণ রাখাল এক পাহাড়ে আটকা পড়ে। সে সময় এক সুন্দরী নারী তরুণের কাছে তিনটি জিনিস প্রস্তাব করে। সোনার মুদ্রার ভান্ডার, সোনার ট্রাইচেল (ঘণ্টা) এবং নিজেকে। তরুণটি ট্রাইচেল গ্রহণ করেছিল।

43cuvt7.jpg


গরুর গলায় ঘন্টা

কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে আজকাল গরুর ঘণ্টার আধুনিক উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। অনেকেই একে মনে করে গ্রামের হস্তশিল্প। বেভিন ব্রাদার্স ম্যানুফ্যাকচারিং সংস্থা ১৮৩২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গরুর ঘণ্টা তৈরি করে চলেছে ইস্ট হ্যাম্পটন সিটিতে। ২০১২ সালের মে মাসে আগুন লাগার পর কারখানাটি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে এখনো উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে একমাত্র ঘণ্টা বানানোর সংস্থা।

উৎসবের সঙ্গে গো-ঘণ্টার এক নিবিড় সম্পর্কের সন্ধান মেলে ইতিহাসে। ইউরোপজুড়ে অনেক উৎসবে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে এই গো-ঘণ্টা। পশ্চিম ইউরোপে যখন বসন্তে তুষার গলে, গ্রামের গরুগুলোকে তখন পাঠানো হয় চরানোর জন্য উঁচু আল্পাইনখেতে। এটি একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হয়। একে বলা হয় আল্পাফজুগ (Alpaufzug)। অনুষ্ঠানটি দেখতে গরুর মিছিলের মতো অর্থাৎ সব গরু সমবেতভাবে দল বেঁধে উঁচু চারণভূমিগুলোতে দিকে এগোতে থাকে। প্রতিটি গ্রাম এ উৎসব পালন করে। গরুর শিংগুলোতে বসানো হয় ফুলের পুষ্পস্তবক।

DvYatzW.png


সুইজারল্যান্ডের আল্পাফজুগ উৎসবে গরুর মিছিল, ছবি: ইউটিউব

গ্রামের সেরা দুধ উৎপাদনকারী গরু মিছিলের নেতৃত্ব দেয় এবং সবচেয়ে বড় ঘণ্টাটি পরে। ঘণ্টাটি বিভিন্ন আকারে তৈরি করা হয় এবং সে বছর গরুকে তাদের দুধের উৎপাদন অনুযায়ী পুরস্কৃত করা হয়। শরত্কালে এই প্রাণীগুলোকে আবার উঁচু ভূমি থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। তখন উৎসবটির পুনরাবৃত্তি হয়। প্রাণীগুলোর উঁচু তৃণভূমি থেকে ফিরে আসায় বলা হয় 'আলপাবজুগ'। জার্মানির ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে দক্ষিণ জার্মানিতে ভিহসিড বলা হয় এবং আল্পাইন অঞ্চলগুলোতে এর অন্যান্য নামও রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে কিছু দুগ্ধ গাভি মালিকেরা এই ঘণ্টা ব্যবহার করেন। তবে এটি তাঁদের সংস্কৃতির অংশ নয়, তাঁরা এটি চর্চাটি ধার করেছেন ভিনদেশি সংষ্কৃতি থেকে।

অনেক প্রাণীর অধিকার সমর্থকদের যুক্তি রয়েছে, ঘণ্টাটি প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। প্রাণীদের ঘণ্টা ব্যবহার নিয়ে সবাই রোমাঞ্চিত হয় না! অনেক প্রাণিবিষয়ক আইনজীবী যুক্তি দেন, গরুগুলোর জন্য ঘণ্টা খুব ভারী এবং তারা গরুর চারণ ক্ষমতাকে বাধা দেয়। কিছু আইনজীবী, প্রাণী সমর্থক ও অ্যাক্টিভিস্ট মনে করেন যে ঘণ্টা গাভির পক্ষে ক্ষতিকারক। যেমন শ্রবণশক্তি হ্রাস, ওজন হ্রাস এবং অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে গবাদিপশুর মালিকেরা এগুলো সমর্থন করেন না। সম্প্রতি কাউবেল বিরোধিতাকারীরা গবাদিপশুতে জিপিএস ডিভাইস ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

p2DWmxQ.png


সুইজারল্যান্ডের আল্পাফজুগ উৎসবে গরুর মিছিল, ছবি: ইউটিউব

বিষয়টা এতটাই ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে যে পশুপ্রেমীরা রীতিমতো রোষানলে পড়েছে। এমনকি শহরের অধিবাসীরাও এটি তাদের জাতিগত ঐতিহ্যের অংশ মনে করে। যদিও ঘণ্টা অনেক বড়, তবে গরুর মালিক বিশ্বাস করেন, ঘণ্টা তাঁদের গরুগুলোর জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। কৃষকেরা মনে করেন, গরু ভারী গো–ঘণ্টায় অভ্যস্ত হয়ে যায়। তারা প্রতিদিন ঘণ্টা পরেও চারণ আর দুধ উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করছে। সারা বিশ্বের প্রাণিসম্পদমালিকেরা দাবি করেন ঘণ্টা তাঁদের পশুর জীবন বাঁচাতে সহায়ক।

* লেখক: মহুয়া রউফ, গবেষক ও পরিব্রাজক | তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top