What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কাবাব দিবসের বিশেষ আয়োজন - কাবাবনামা ২ (1 Viewer)

qhTRQDQ.jpg


কাবাবের স্বাদ-গন্ধের সম্মোহনী শক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে দুনিয়াজুড়ে বহু দেশের রাজরাজড়া থেকে শুরু করে আমজনতা অবধি। খুব সাধারণভাবে পশ্চিমা দেশগুলোতে কাবাব বলতে সেই কাঠিতে গাঁথা শিককাবাব বোঝালেও বিভিন্ন দেশের আরও কিছু ঐতিহ্যবাহী কাবাব একেবারে ভুবনজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশ–বিদেশের সেই কাবাবগুলোর দিকে এবার নজর ফেরানো যাক।

ডোনার কাবাব

QkgQblH.jpg


ডোনার কাবাব

তুর্কিস্তানকে যদি কাবাবের অন্যতম সূতিকাগার বলে ধরা যায়, তবে ডোনার কাবাবের কথা চলে আসে সবার আগে। এই ডোনার কাবাবই আবার আরব দেশগুলোতে শাওয়ারমা এবং গ্রিসে গিরো (gyro) বলে পরিচিত। অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবেই এসব দেশে ডোনার পৌঁছে গেছে বলে ইতিহাসবিদেরা মনে করেন। এই কাবাবের মূল ব্যাপারটি হলো, এতে বেশ চর্বিযুক্ত পাতলা মাংসের স্লাইস শুলে চড়ানোর মতো করে উল্লম্ব দণ্ডাকৃতি বড় শিকে স্তূপ করে গেঁথে আগুনের একেবারে কাছে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে তাপ দেওয়া হয়। লম্বা সময় দেওয়াতে ফ্যাট গলে গিয়ে স্তূপাকৃতি মাংস একদম নরম আর রসাল হয়ে ওঠে ঢাউস কোলবালিশের মতো দেখা যায়। এবার খুব ধারালো পাতলা ছুরি দিয়ে কাবাবের বাইরের অংশ চেঁছে চেঁছে নেওয়া হয় ডোনার কাবাব। আর ভেতরের অংশ আগুনের সংস্পর্শে এসে আবার কাবাব তৈরি হতে থাকে পর্যায়ক্রমে। তুর্কিরা ডোনার কাবাব বানাতে শুকনা সুমাক বেরির গুঁড়া, লং পেপার বা দার ফেলফেল নামের গোলমরিচের মতো একধরনের মসলার গুঁড়া, স্মোকড পাপরিকাসহ বহু মসলা ব্যবহার করেন।

5lEEDPX.jpg


গাইরো ও শাওয়ারমা, ছবি: উইকিপিডিয়া

এই ডোনার কাবাবকেই আরব মুলুকে বলা হয় শাওয়ারমা। আর সেটাকেই আমরা বলি শর্মা। সেখানে আবার মাংস পাতলা স্লাইস করে লম্বা সময় ধরে সিরকা, শুকনা লেবু, আরব সেভেন স্পাইস মসলা মিশ্রণ (বাহারাত মসলা) ইত্যাদি দিয়ে মাখিয়ে রাখা হয়। এদিকে গ্রিক গিরোতে আবার থাইম, অরেগানো, রোজমেরি, মারজোরাম ইত্যাদি শুকনা হার্বের গুঁড়ার ব্যবহার লক্ষণীয়। মজার কথা হলো, আরব শাওয়ারমা আর গ্রিক গিরো দুই কথার অর্থই হলো ঘূর্ণন। এই ডোনার বা শাওয়ারমা কাবাব কিন্তু ঘুরতে ঘুরতে বিশ্বের সব দেশে ছড়িয়েও পড়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।

আদানা কাবাব

rGe0SLT.png


আদানা কাবাব, ছবি: ইউটিউব

বর্তমান সময়ে যে তুর্কি কাবাবটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোটামুটি ক্রেজ পর্যায়ের ট্রেন্ড তৈরি করেছে, তার নাম আদানা কাবাব। হাতে বানানো মিহি কিমার সঙ্গে হরেক মসলাপাতির সমারোহে মিহি কুচি করা লাল ক্যাপসিকাম ও রসুন, তাজা লাল মরিচ পুড়িয়ে বানানো বাইবার পেস্ট, সুমাক চূর্ণ এবং পার্সলি পাতার কুচি মিশিয়ে আদানা কাবাব বানানো হয়। এই কিমা করার আছে বিশেষ পদ্ধতি। ভেড়ার মাংস ও লেজের দিকের চর্বি ভালোভাবে মিশিয়ে মিহি করে হাতে বানানো হয় আদানা কাবাবের কিমা। এরপর চ্যাপ্টা তরবারির মতো স্কিউয়ারে গেঁথে কাঠকয়লার আঁচে এই কাবাব বানানো হয়।

অন্য রকম কাবাব

yBZdWhm.png


হাণ্ডি কাবাব, ছবি: ইউটিউব

কাবাব যে শুধু ঝলসে বা ভেজে তৈরি হয়, তা–ই নয়। হাণ্ডি বা হাঁড়িয়া কাবাব কিন্তু হাঁড়িতেই কুর্দিশ বা পার্সি কাবাব বানাতে বড় ডেকচিতে আলু, টমেটো, পেঁয়াজ আর দারুচিনি গুঁড়া, জিরাগুঁড়া, তারা মসলা (স্টার অ্যানিস) গুঁড়া ইত্যাদি মসলা মাখানো মাংসের স্তর পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে ঢেকে আস্তে আঁচে অনেকক্ষণ ধরে তাপে রাখতে হয়।

htMhtkC.png


পাত্থর কে কাবাব, ছবি: ইউটিউব

ভারতের হায়দরাবাদে নিজামী ঐতিহ্যের চিহ্ন 'পাত্থর কে কাবাব' তৈরি করা হয় গনগনে গরম করে নেওয়া পাথরের ওপরে রেখে। আগে থেকে দই ও হরেক সুগন্ধি মসলা দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখা মাংসের পাতলা বড় স্লাইস ব্যবহার করা হয় এখানে। এদিকে শুধু মাংস নয়, কলিজা, হৃৎপিণ্ড, গুর্দা বা বৃক্ক, চর্বি এমনকি মগজ দিয়েও কাবাব বানানো হয়। নিরামিষভোজীদের জন্য রয়েছে পনির ও নানা রকম সবজির কাবাব।

OEMDvx6.jpg


নিরামিষ কাবাব, ছবি: উইকিপিডিয়া

আমাদের দেশে কাবাব

আমাদের দেশে ঢাকার নবাব পরিবার ও অভিবাসী উর্দুভাষী মানুষদের সঙ্গেই কাবাবের প্রচলনের বিষয়টি বেশি সম্পর্কিত। নবাবি হেঁশেলে মোগলাই, পার্সি ও আফগানি কায়দায় বিভিন্ন কাবাব তৈরি হতো যুগ যুগ ধরে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, এ দেশে এসে সহজলভ্যতার কারণে ভেড়া, দুম্বা ও ছাগলের বদলে গরুর মাংসের ব্যবহার শুরু হয়েছে কাবাবে। আর মুরগির মাংসের সঙ্গে সঙ্গে মাছের তৈরি মাহি কাবাব খুব সমাদৃত ছিল নবাবদের দস্তরখানে।

eibH4Hd.png


পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর, ছবি: ইউটিউব

বিসমিল্লাহ কাবাব ঘরসহ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কাবাব ঘরগুলোতে শিককাবাব, বোটি কাবাব, তন্দুরি কাবাব, খিরি কাবাব, গুর্দা কাবাব, ভেজা ফ্রাই ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়। এ ছাড়া রমজান মাসে তন্দুরি, টানা পরোটার সঙ্গে সুতলি বা ধাগা কাবাব মেলে চকবাজার, আনন্দ বেকারি ইত্যাদিতে।

KFjC9Sn.png


মোস্তাকিমের কামাব, ছবি: ডাইন আউট উইথ আদনানের ইউটিউব চ্যানেল থেকে

মিরপুর, মোহাম্মদপুরকেন্দ্রিক বিহারিপল্লির কাবাবশিল্পীদের অনবদ্য সৃষ্টি বিহারি শিককাবাব আর চাপকাবাব। মোস্তাকিমের চাপ, শওকতের কাবাব এই নামগুলো সবারই জিবে জল এনে দেয়। বাড়িতে বা বিয়ের অনুষ্ঠানে বিরিয়ানি, পোলাওয়ের সঙ্গে জোড় মিলিয়ে তৈরি করা হয় শামি কাবাব বা জালি কাবাব। এখন তো পাড়ার দোকান থেকে শুরু করে একেবারে অভিজাত বিশেষায়িত রেস্তোরাঁতে বিভিন্ন রকমের কাবাব পাওয়া যায়। শাওয়ারমা নাম থেকে আসা চিকেন বা বিফ শর্মা তো বহু আগেই জনপ্রিয় হয়েছে। তন্দুরি চিকেন, হারিয়ালি বা রেশমি কাবাব তো বটেই, এখন আদানা, শিস তাওউক ইত্যাদি নামও মুখে মুখে ফেরে আমাদের দেশে।

কাবাবের সঙ্গে

pJdHZ1g.png


নানা ধরনের রায়তা

কাবাবের স্বাদকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় এর সঙ্গে পরিবেশিত সঠিক পার্শ্বপদ আর অনুষঙ্গ। এমনিতে তো পরোটা, নান, রুমালি রুটির সঙ্গেই জুটি মানায় কাবাবের। আজকাল এ দেশে চাপের সঙ্গে লুচিও চলছে খুব। তার সঙ্গে টক দইয়ের ঝাল ঝাল রায়তা, পেঁয়াজ, পুদিনা-শসার সালাদ ইত্যাদি না থাকলে যেন সেই স্বাদ আসেই না। মাংস হজমে সহায়ক বলে উত্তর ভারতে কাবাবপ্রেমীরা রায়তা ছাড়া খেতেই বসেন না। ডোনার কিংবা শাওয়ারমার সঙ্গে তওম বা গার্লিক সস, তাহিনি বা সাদা তিলের সস জমে ভালো। গিরো কাবাবের সঙ্গে আবার গ্রিকরা খান দই মেশানো কুরানো শসার তাজিকি সস।

কাবাবের কাহিনি আসলে শেষ হওয়ার নয়। আরব্য রজনীর গল্পের মতো দুনিয়ার কোণে কোণে নিত্যদিন কেউ না কেউ নতুনভাবে নতুন কোনো কাবাব তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। ওপরে ঝলসানো, ভেতরে রসাল, মসলার কারুকাজে নেশা ধরানো এই কাবাবনামা চলতেই থাকবে অনন্তকাল ধরে। হৃদয় হরণ করবে, স্বাদগ্রন্থিতে আলোড়ন তুলবে দুনিয়াজোড়া খাদ্যরসিকদের।

* তানিয়া ফেরদৌস
 

Users who are viewing this thread

Back
Top