What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঘুরে ফেরা ভিয়েনায় - শেষ পর্ব (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Mdkzx9m.jpg


ভিয়েনা স্টেট অপেরা।

পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর অধিবাসীরা অনেকাংশে রক্ষণশীল। তিন বছর আগে হাঙ্গেরি সফরকালে আমাকে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। আমি আমার ডিএসএলআর ব্যবহার করে রাস্তার আশপাশের ছবি তুলছিলাম। তখন ছিল ইস্টারের মৌসুম। বড় বড় শপিং মল থেকে শুরু করে রাস্তার দুই পাশে থাকা স্থাপনাগুলোকে ইস্টারের জন্য সাজানো হয়েছিল। আচমকা আমাকে ছবি তুলতে দেখে এক বাচ্চার মা চিৎকার দিয়ে ওঠেন। আমি সেভাবে হাঙ্গেরিয়ান বলতে পারি না। তিনিও ইংরেজিতে খুব একটা পারদর্শী ছিলেন না। তবে ইশারা–ইঙ্গিতে বুঝলাম, তিনি আমার থেকে ডিএসএলআরটা চাইছেন।

Ppb92hd.jpg


অস্ট্রিয়ার প্রধান ক্যাথেড্রাল সেইন্ট স্টিফেন'স ক্যাথেড্রালের সামনে লেখক।

এ সময় সেখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ অফিসারের চোখ আমাদের ওপর পড়ল। তাই তিনি তৎক্ষণাৎ আমাদের দিকে ছুটে আসলেন। পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ভদ্রমহিলার কথোপকথন শেষ না হতে তিনি আমাকে নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেলেন। পুলিশ স্টেশনে পা রাখার পর প্রথমে তিনি আমার পাসপোর্ট ও রেসিডেন্ট পারমিটের কপি চেক করলেন, এরপর ডিএসএলআর ও মুঠোফোনে থাকা ছবিগুলো দেখতে চাইলেন। আমিও তাঁকে ছবিগুলো দেখালাম। ছবিগুলো দেখার পর তিনি আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন। তিনি আমাকে জানালেন, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর নাগরিকেরা অধিক মাত্রায় রক্ষণশীল। এ কারণে ওই ভদ্রমহিলা মনে করেছিলেন যে আমি তাঁর বাচ্চার ছবি তুলছিলাম। তাই তিনি রাগান্বিত হয়েছিলেন।

পুলিশ অফিসার আরও বললেন, পূর্ব ইউরোপ তো বটেই, এমনকি ইউরোপের অন্যান্য দেশের অনেক অভিভাবক যদি দেখেন, তাদের ছোট বাচ্চাকে বাইরের দেশের কোনো অধিবাসী, বিশেষ করে আমার মতো গাঢ় গাত্রবর্ণের কোনো মানুষ আদর করছেন, তখন বিষয়টিকে তাঁরা স্বাভাবিকভাবে নেন না। অনেক অভিভাবক হয়তো সামনাসামনি কিছু বলেন না, কিন্ত তাঁদের মধ্যে এ বিষয় নিয়ে একধরনের চাপা ক্ষোভ কাজ করে।

কথায় বলে, 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়।' এ ঘটনার পর অন্তত ইউরোপের মাটিতে আমি সব সময় ছোট বাচ্চাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। তাই সেদিন ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও 'গুটেন আবেন্ড'–এর উত্তরে বাচ্চাটিকে কোনো অভিবাদন জানাইনি। তবে দূর থেকে তার মা বিষয়টি লক্ষ করেছিলেন, তাই কিছুটা পথ না হাঁটতে তিনি পেছন থেকে আমাকে থামালেন। এরপর জিজ্ঞেস করলেন, আমি ডয়েচ, অর্থাৎ জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারি কি না। আমি বললাম, আমি বিদেশি ভাষার মধ্যে কেবলমাত্র ইংরেজিতে কথা বলতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এরপর তিনি আমাকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন, একটা ছোট বাচ্চা আমাকে নিজ থেকে 'গুটেন আবেন্ড' বলে অভিবাদন জানিয়েছে, কিন্তু আমি কেন অন্তত তাকে ধন্যবাদ জানালাম না?

MO2Mdr8.jpg


মধ্য ইউরোপে বারোক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে বেলভেডেরে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

আমি তখন হাঙ্গেরি সফরের সেই ঘটনার কথা তাঁকে জানিয়ে বলি, ওই ঘটনার পর ছোট বাচ্চাদের আদর করতে কিংবা তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমার মধ্যে ভীষণভাবে জড়তা কাজ করে। আমার কথা শুনে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ পৃথিবীতে সুন্দরতম জিনিস হচ্ছে ছোট বাচ্চার হাসি। তাই তিনি সব সময় আমাকে ছোট বাচ্চাদের প্রতি স্নেহপরায়ণ হওয়ার পরামর্শ দেন। এই ঘটনা থেকে এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে অস্ট্রিয়ানরা জাতি হিসেবে অন্তত জার্মানি কিংবা হাঙ্গেরির অধিবাসীদের তুলনায় অনেক বেশি মিশুক ও সামাজিক।

প্রত্যেক শহরে কোনো না কোনো রেস্টুরেন্ট কিংবা কফি শপ থাকে, যেটা কালক্রমে ওই শহরের ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। ভিয়েনার হেরেনগাসেতে অবস্থিত ক্যাফে সেন্ট্রালকে ভিয়েনার অন্যতম ল্যান্ডমার্ক ক্যাফে হিসেবে আখ্যা দিলেও ভুল হবে না। তবে সেন্ট্রাল ক্যাফের ভেতরে ঢুকতে হলে সবাইকে ভীষণভাবে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। কেননা ক্যাফের প্রবেশমুখে সব সময় সাধারণ মানুষের লম্বা লাইন লেগে থাকে। পিটার অল্টার্নবার্গ থেকে শুরু করে জায়ানিস্ট মতাদর্শের প্রবক্তা থিওডোর হার্জেল এমনকি অ্যাডলফ হিটলার ও মার্শাল টিটোর মতো আলোচিত ব্যক্তিদের পা পড়েছিল ভিয়েনার ক্যাফে সেন্ট্রালে।

nXXHbh8.jpg


ভিয়েনার হেরেনগাসের ক্যাফে সেন্ট্রালের কফি ও কেকের স্বাদ না দিলে ভিয়েনা ভ্রমণের আনন্দ অপূর্ণ থেকে যায়।

আমার এক অস্ট্রিয়ান বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ক্যাফে সেন্ট্রাল কেন এত জনপ্রিয়? তিনি জানান, অস্ট্রিয়া তো অবশ্যই, পুরো হাঙ্গেরি, চেক রিপাবলিক, স্লোভেনিয়া, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভাকিয়া মিলিয়েও ক্যাফে সেন্ট্রালের বিকল্প ক্যাফে আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই ১৮৭৬ সাল থেকে ক্যাফে সেন্ট্রাল সুস্বাদু কফি ও কেকের জন্য পুরো অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যে আলাদা স্থান দখল করে আছে এবং এত বছর পরও তাদের সেবা ও খাবারের মানে তেমন একটা পরিবর্তন আসেনি।
ক্যাফে সেন্ট্রালের কফি ও কেকের স্বাদ নিতে হলে আগের থেকে অনলাইনে তাদের ওয়েবসাইট থেকে আলাদাভাবে রিজারভেশন সম্পন্ন করতে হয়।

অস্ট্রিয়াতে আসবেন অথচ মোজার্টের স্বাদ নেবেন না, তা কি হয়? বেলজিয়ান চকলেট কিংবা সুইস চকলেটের মতো অস্ট্রিয়ার মোজার্টও বিশ্বের বিখ্যাত চকলেটগুলোর মধ্যে একটি।

BKYBv1q.jpg


বেলজিয়ান চকলেট কিংবা সুইস চকলেটের মতো অস্ট্রিয়ার চকলেটের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী।

বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে অস্ট্রিয়াতে তুর্কিরা সংখ্যাগত দিক থেকে সবার ওপরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কনস্ট্রাকশন সাইটসহ কলকারখানগুলোতে কাজের জন্য অস্ট্রিয়া ও জার্মানিতে শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যায়। তখন অস্ট্রিয়ার সরকার বাইরের দেশগুলো থেকে জনশক্তি রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়। এ সুযোগে তুরস্ক থেকে অসংখ্য অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিক হিসেবে অস্ট্রিয়া ও জার্মানিতে পাড়ি জমান, যাঁদের অনেকে পরিবারসহ পরবর্তী সময়ে অস্ট্রিয়া কিংবা জার্মানিতে স্থায়ী হন। আজকে অস্ট্রিয়াতে স্থানীয় অস্ট্রিয়ানদের পর তুর্কিরা সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠী। পুরো অস্ট্রিয়াতে তুর্কিদের রয়েছে কমপক্ষে তিন প্রজন্মের ইতিহাস।

s9ARSMS.jpg


ক্যাফে সেন্ট্রালের বিখ্যাত কেক।

এক জায়গায় এসে আমার ভীষণ আশ্চর্য লেগেছে, কমপক্ষে তিন প্রজন্ম ধরে অস্ট্রিয়াতে বসবাস করার পরও তুর্কিরা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি, জাতীয়তাবোধ কিংবা ধর্মীয় পরিচয়কে মুছে ফেলেননি। বরং তাঁরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাঁদের ভাষা, সংস্কৃতি, জাতীয়তাবোধ ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। ভিয়েনাসহ অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন শহরে তুর্কি খাবার খুবই জনপ্রিয়। এ জন্য ভিয়েনাতে বেড়াতে এলে হরহামেশা ডোনার কিংবা অন্যান্য কাবাবের দোকানের দেখা পাবেন। খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে হালাল ও হারামের বিষয়টি যাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের জন্য এসব তুর্কি রেস্টুরেন্ট আদর্শ জায়গা।

অস্ট্রিয়াতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা সাত হাজারের কাছাকাছি, যাঁদের মধ্যে পাঁচ হাজারের মতো বাংলাদেশি থাকেন ভিয়েনা শহরে। ভিয়েনা শহরে বাংলাদেশি কমিউনিটি পরিচালিত পাঁচটি মসজিদ রয়েছে। ধীরে ধীরে মধ্য ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়াতে বাংলাদেশিদের আগমনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সঙ্গে স্থায়ী অভিবাসনের জন্য অনেক বাংলাদেশির নিকট ভিয়েনা নয়নের মণি হয়ে উঠছে।
পৃথিবীতে হাতে গোনা অল্প কয়েকটি শহর আছে, যেগুলো একই সঙ্গে অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার স্বাক্ষর বহন করে।

ভিয়েনা হাতে গোনা সেসব শহরের মধ্যে একটি। অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত ভিয়েনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগপর্যন্ত ইউরোপে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত ছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল ভিয়েনাকে অনেকাংশে পঙ্গু করে তোলে। সব প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ভিয়েনা আজ গৌরবের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে।

* লেখক: রাকিব হাসান | শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top