What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

১২০০ কারিগর ১২ বছরে নির্মাণ করেন যে স্থাপনা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Mgoxqom.jpg


কোনার্কের সূর্যমন্দির, ছবি: লাইভ হিস্ট্রি ইন্ডিয়া

কোনার্কের সূর্যমন্দির ঘুরতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, এটা শুধু একটি স্থাপনা নয়, এ যেন এক পৌরাণিক কাহিনির পাঠ!

সান টেম্পল বা সূর্যমন্দির—সূর্যদেবতার উদ্দেশেই যে মন্দিরটি বানানো, মন্দিরের নামেই তার পরিচয় পাওয়া যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ভারত, চীন, কম্বোডিয়া, জাপান ও মিসরে প্রাচীন ও মধ্যযুগে নির্মিত সূর্যদেবতার উপাসনালয় রয়েছে। ভ্রমণের কারণে উল্লিখিত এই দেশগুলোর বিভিন্ন সূর্যমন্দির দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। তাই বোধ করি, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো সূর্যমন্দির ভারতের এই কোনার্ক সূর্যমন্দির।

কোনার্কের সূর্যমন্দিরটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত। ভারতের ওডিশা রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরের পুরী জেলার কোনার্ক শহরে অবস্থান। এই মন্দির নির্মাণ সম্পর্কে প্রচলিত একটি গল্প হলো, ১ হাজার ২০০ কারিগর ১২ বছর ধরে এই অনন্য স্থাপনাটি নির্মাণ করেছেন। মন্দিরটি এত উজ্জ্বল এবং বিশাল ছিল যে সমুদ্রে ভ্রমণকারী জাহাজগুলো এটিকে দিকনির্ণায়ক হিসেবে ব্যবহার করত।

Hl5MQu4.jpg


মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারে দেখে মেলে সিংহের ভাস্কর্য

নিজে ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী হিসেবে গ্রিক উপকথায় বর্ণিত সূর্যের দেবতা হিলিয়াসের নানা কাহিনি পড়েছি। গ্রিক কাহিনির মতো ভারতীয় সনাতন ধর্মেও রয়েছে সূর্যদেবতা নিয়ে নানা কথা-উপকথা। সূর্যদেবতা একটি রথে চড়ে ঘুরে বেড়ান আকাশে, তাই সেই রথের আদলেই বানানো হয়েছে সূর্যমন্দির। সেই রথকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ৭টি ঘোড়া, আর রথের রয়েছে ১২ জোড়া চাকা। এটিই মূল মন্দির। মন্দিরের গায়ে রয়েছে দারুণ কারুকাজ। পাথর খোদাই করে কী দারুণভাবে গল্প লেখা যায়, সূর্যমন্দির না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।

vpcdQlD.jpg


মূল সূর্যমন্দির

মন্দির ভ্রমণে গিয়ে দেখলাম, গাড়ি একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে বেশ খানিকটা পথ পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে হয় মূল মন্দিরে। তবে দূর থেকেই দেখা যায়, মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারের অতিকায় দুটি সিংহের ভাস্কর্য।

সিংহপ্রহরীদের অতিক্রম করে ওপরে উঠে গিয়ে দেখা মিলল নাটমণ্ডপের। তারপর ধীরে ধীরে দেখলাম সূর্যমন্দিরের দেয়ালজুড়ে বিভিন্ন কারুকাজ, ফুল, নকশা, দেবতাদের প্রণয়ের নানা চিত্র।

তখনই মনে প্রশ্ন উঁকি দেয়, এই মন্দির কে নির্মাণ করেছিলেন?

JPkZ3RW.jpg


সূর্যমন্দির ভ্রমণে লেখক

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদেরা বলছেন, পূর্ব তীরের গঙ্গা রাজবংশের রাজা প্রথম নরসিংহ দেবই এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন, আনুমানিক ১২৫০ খ্রিষ্টাব্দে। পুরো মধ্যযুগীয় ভারতের চিত্রই অঙ্কিত হয়েছে এর প্রতিটি দেয়ালজুড়ে। দেবতা, অপ্সরা, কিন্নর, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ, মানুষ, বালিকাবধূ, বিয়ের শোভাযাত্রা, রাজার যুদ্ধপ্রস্তুতি, পৌরাণিক বিভিন্ন ঘটনার প্রতিরূপ, নৃত্যরত নর-নারী, ফাঁদ দিয়ে হাতি ধরা, ঝগড়া–ফ্যাসাদ, বিরহ, বিচ্ছেদ, কলহ, নর্তকীদের রাজসভায় নাচ, যুদ্ধের ময়দানের হাতি, বর্ম পরিহিত সৈন্য ইত্যাদি এমনভাবে খোদাই করা যেন প্রতিটি চিত্রই কথা বলছে নিঃশব্দে।

uBOYInG.jpg


সূর্যমন্দিরের দেয়ালজুড়ে দেখা মেলে বিভিন্ন কারুকাজ, ফুল, নকশা, দেবতাদের প্রণয়ের চিত্র

পুরী জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চন্দ্রভাগা নদী, চন্দ্রভাগা নদীর তীরে নির্মিত হয়েছিল সূর্যমন্দির। সময়ের আবর্তনে নদীর গতিপথ বদলে গেছে। এটি নির্মাণ করা হয় কলিঙ্গ স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করে। মূল মন্দির পূর্ব দিকে মুখ করে রাখা হয়েছে এবং বেদির ওপর রাখা হয়েছে দেবতার ভাস্কর্য। ফলে প্রতিদিন ভোরে সূর্যের প্রথম আভা সরাসরি দেবতাকে ছুঁয়ে যায়। মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮৫৭ ফুট। তবে মন্দিরের অনেক অংশ এখন বালিতে দেবে গেছে। মন্দিরটি ধূসর বেলে পাথরে বিশাল একটি রথের আকারে গড়া হয়েছে। সূর্যদেবের বিশাল রথ, তার সামনে রয়েছে সাতটি ঘোড়া। সাতটি ঘোড়া মানে সপ্তাহের সাত দিন। ১২ জোড়া বিশাল চাকার ওপর পুরো মন্দিরটি নির্মিত। ২৪ চাকা নির্দেশ করে দিনের ২৪ ঘণ্টা। চাকার কারুকার্য দর্শকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। প্রতিটি চাকাই একেকটি সূর্যঘড়ি। চাকার ভেতরের দাঁড়গুলো সূর্যঘড়ির সময়ের কাঁটা। আটটি দাঁড়ি মানে অষ্টপ্রহর। এখনো নিখুঁতভাবে সময় জানা যায় এই সূর্যঘড়ির সাহায্যে।

মূল মন্দিরের অনেক অংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ক্ষয়ে গেছে কিছু কারুকাজ। তারপরও যেটুকু রক্ষিত আছে, তাতেই চোখ ছানাবড়া হওয়ার জোগাড়। সূর্যমন্দিরকে ঘিরে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। মন্দির ধ্বংস হওয়া নিয়ে আমার গাইডের কাছে শুনেছি দুটি গল্প।

একটি কিংবদন্তি হলো, সূর্যমন্দিরের ঠিক মাথায় ছিল একটি অত্যধিক শক্তিশালী বড় চুম্বক এবং দেয়ালে ছিল তুলনামূলকভাবে কম শক্তির চুম্বক। ফলে কেন্দ্রের চুম্বকটির আকর্ষণে পুরো মন্দিরের কাঠামো ভারসাম্যপূর্ণ থাকত। এ চুম্বক এত শক্তিশালী ছিল যে এর কারণে নদীতে যাতায়াত করা বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর কম্পাস দিক নির্ণয়ে ভুল করত, কোনো কোনো জাহাজ নাকি ডুবেও যেত! বলা হয়, বণিকেরা একবার ছিনিয়ে নেন মন্দিরের মাথার বড় চুম্বকটি, ফলে ভারসাম্য হারিয়ে ধসে পড়ে মন্দিরটি। কিংবদন্তিটি আমার কাছে বেশ দুর্বল মনে হয়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা কেউ কেউ আবার পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণের কথাও বলেন।

আরও একটি গল্প এমন, সেটি কালাপাহাড়কে নিয়ে। কালাপাহাড়ের আক্রমণে কোনার্ক সূর্যমন্দির একবার ধসে পড়েছিল বলেও দাবি করেন অনেকে। বাংলার সুলতান সুলেমান খান কারানির সেনাপতি কালাপাহাড়ের আক্রমণে কোনার্ক মন্দির প্রথম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ওডিশার ইতিহাস অনুযায়ী, কালাপাহাড় ১৫০৮ সালে কোনার্ক আক্রমণ করে।

একসময় বালুর নিচে চাপা পড়ে থাকা সূর্যমন্দির খুঁজে পাওয়া যায় ১৯০৪ সালে। ১৯৩০ সালের দিকে কোনার্ক সূর্যমন্দিরের পুনর্নির্মাণ কাজ হয়। ১৯৮৪ সালে ইউনেসকো কোনার্ককে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকে বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়তে থাকে এখানে। আমি ঘুরে এসেছি ২০১৪ সালে।

* লেখক: এলিজা বিনতে এলাহী, পর্যটক
 

Users who are viewing this thread

Back
Top