What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঘুরে ফেরা ভিয়েনায় - প্রথম পর্ব (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
owXcLOB.jpg


দানিয়ুব নদীর তীরে অবস্থিত অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা।

মধ্য ইউরোপের ৩২ হাজার ৩৮৬ বর্গমাইল আয়তনের দেশ অস্ট্রিয়া। এর উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত ভিয়েনা দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। অবশ্য জার্মান ভাষায় ভিয়েনার পরিবর্তে 'ভিয়েন' (Wien) উচ্চারণ করা হয়।

XLcdZZo.jpg


ভিয়েনাতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস।

স্লোভেনিয়া এবং একই সঙ্গে স্লোভেনিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। এ কারণে যেকোনো প্রয়োজনে এ দুই দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিয়েনার বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। এ কারণে আমারও বেশ কয়েকবার ভিয়েনা ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে।

ভিয়েনা সম্পর্কে প্রথম জানার সুযোগ আসে ২০১৪ সালে। তখন আমি ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে জেনেছিলাম এই শহর সম্পর্কে।

সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য নগরী তালিকার ১ নম্বরে ছিল ভিয়েনা। তখন কিছু ভিডিও ক্লিপও দেখানো হয়েছিল। এরপর থেকে একটু একটু করে ভিয়েনার প্রতি আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তাই বছর তিনেক আগে প্রথমবার ভিয়েনায় পা রেখে অন্য রকম অনুভূতি হয়েছিল। এরপর বেশ কয়েকবার ভিয়েনায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তবে শহরটির আবেদন আমার কাছে রয়ে গেছে অবিকল।

WOmtXvw.jpg


ভিয়েনার সিটি সেন্টারে লেখক

সাইকো অ্যানালিসিসের উদ্ভাবক সিগমন্ড ফ্রয়েডের জন্ম হয়েছিল ভিয়েনায়। এ জন্য অনেকে ভিয়েনাকে 'সিটি অব ড্রিমস' নামেও অভিহিত করে থাকেন। বাস্তবেও ভিয়েনা স্বপ্নের মতো সুন্দর। বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত সব সিনেমার শুটিংও হয়েছে ভিয়েনাতে।
অন্নদাশঙ্কর রায় 'পথে প্রবাসে' উপন্যাসে প্যারিসের বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছিলেন: অর্ধেক নগরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা। ভিয়েনার ক্ষেত্রেও এই উপমা যাকে বলে যথোপযুক্ত।

দানিয়ুব নদীর তীরে গড়ে ওঠা ভিয়েনা ইউরোপে আমার দেখা সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহরগুলোর মধ্যে একটি। বিশেষ করে শহরের অভ্যন্তীরণ পরিবহনব্যবস্থা ইউরোপের অন্যান্য শহরের থেকে অনেকাংশে সুপরিকল্পিত। ভিয়েনার মেট্রো পরিষেবা আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। গুগল ম্যাপের ওপর নির্ভর না করে কেবল পাতাল রেলের মাধ্যমে সহজে ভিয়েনার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করা যায়। ৯ ইউরো দিয়ে ২৪ ঘণ্টার পাস পাওয়া যায়; এটা দিয়ে ভিয়েনার ভেতরে যেকোনো গণপরিবহন ব্যবহার করা যায়।

ACnhAk4.jpg


ভিয়েনার মেট্রো পরিষেবা

পাশাপাশি ভিয়েনায় আরও একটি জিনিস আমি লক্ষ করেছি। এ শহরের বেশির ভাগ বাসিন্দা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাঁরা শৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। কর্মব্যস্ত ঢাকা শহরকে উচ্চ ডেসিবেলের শব্দ ছাড়া পৃথকভাবে ভাবার অবকাশ নেই। অন্যদিকে ভিয়েনা সম্পূর্ণভাবে নির্ঝঞ্চাট এবং কোলাহলমুক্ত। 'পিনপতন নীরবতা' বাগধারাটির বাস্তবিক প্রয়োগ দেখা যাবে ভিয়েনায়।

ভিয়েনা হচ্ছে সেই শহর, যে শহরে ১৯৬১ সালে 'ভিয়েনা কনভেশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনশিপ' নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল; এর আওতায় বর্তমান বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্তরে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জাতিসংঘের শিল্পোন্নয়ন সংস্থা ইউএনআইডিও এবং জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন ওপেকের সদর দপ্তর ভিয়েনায় অবস্থিত। সুতরাং, বিশ্বরাজনীতিতেও শহরটির অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।

একটা শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হাসপাতাল, ক্লিনিক, সিনেমা, থিয়েটার, পার্কসহ জীবনধারার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে শহরের অধিবাসীদের মধ্যে সুষমভাবে বণ্টন করা অত্যাবশ্যক। ভিয়েনা এদিক থেকে অনেকটা সফল। এ কারণে দ্য ইকোনমিস্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম ভিয়েনাকে বেশ কয়েকবার পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য নগরী আখ্যায়িত করেছে।

অস্ট্রিয়া একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্র। তাই সেনজেনভুক্ত যেকোনো দেশের ভিসা থাকলে অস্ট্রিয়া ভ্রমণ করা যায়। ইউরোপের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে বাস, ট্রেন—এমনকি অ্যারোপ্লেন–সহযোগে ভিয়েনায় যাতায়াত করা যায়। স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানা থেকে ভিয়েনার দূরত্ব ২৪০ মাইলের কাছাকাছি। পাবলিক বাসে লুবলিয়ানা থেকে ভিয়েনা যেতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাগে।

xvwbwYB.jpg


হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত স্থাপনার একটি শনব্রুন প্যালেস।

পর্যটকদের জন্য ভিয়েনার প্রধান দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে শনব্রুন প্যালেস, হফবুর্গ, সেইন্ট স্টিফেন'স ক্যাথেড্রাল, বেলভেডেরে, ভিয়েনা স্টেট অপেরা ইত্যাদি।
হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত স্থাপনার মধ্যে শনব্রুন প্রাসাদ অন্যতম। হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের শাসকেরা গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের জন্য শনব্রুন প্রাসাদে আসতেন। বর্তমানে এই প্রাসাদকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রাজকীয় কক্ষ, দুর্দান্ত গ্যালারির সঙ্গে প্রাসাদের সিলিংজুড়ে আঁকা অসাধারণ সব চিত্রকর্ম পর্যটকদের মন ভোলাতে যথেষ্ট। তবে শনব্রুন প্যালেসের মূল আকর্ষণ হচ্ছে সম্রাজ্ঞী মারিয়া থেরেসার সুসজ্জিত প্রদর্শনী কক্ষ। হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে তিনি ছিলেন একমাত্র নারী শাসক। যুদ্ধ পরিচালনা থেকে শুরু করে অস্ট্রিয়ার শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, এমনকি দেশটির আধুনিকায়নেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

XsfoRQ6.jpg


হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একমাত্র নারী শাসক মারিয়া থেরেসার ভাস্কর্য।

ভিয়েনার অন্যতম প্রসিদ্ধ পাবলিক স্কয়ার হচ্ছে মারিয়া থেরেসিয়েন প্লাৎজ। মারিয়া থেরেসিয়েন প্লাৎজে মারিয়া থেরেসার স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্যটি পর্যটকদের কাছে ভীষণভাবে সমাদৃত। দর্শনার্থীরা ভিয়েনাতে বেড়াতে এলে এ ভাস্কর্যের সামনে ছবি তোলেন, তাই সার্বক্ষণিক সেখানে ভিড় লেগে থাকে। শনব্রুন প্রাসাদের পাশে রয়েছে টায়ারগার্টেন শনব্রুন; ১৭৫২ সালে স্থাপিত এ চিড়িয়াখানাকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

শনব্রুন প্যালেসের মতো হফবুর্গও হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে আরও একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত এ রাজকীয় প্রাসাদ হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের শাসকেরা শীতকালীন আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করতেন। বর্তমানে হফবুর্গ অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রপতির বাসভবন ও প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সেইন্ট স্টিফেন'স ক্যাথেড্রালকে অস্ট্রিয়ার প্রধান ক্যাথেড্রাল হিসেবে উল্লেখ করা যায়। ভিয়েনার সিটি সেন্টারে অবস্থিত অন্যতম বিখ্যাত স্ট্রিট গ্রাবেন থেকে কয়েক গজ হাঁটলে সেইন্ট স্টিফেন'স ক্যাথেড্রালের দেখা মেলে। গ্রাবেনকে ভিয়েনার সবচেয়ে চাকচিক্যময় অংশ বললেও ভুল হবে না। বিভিন্ন স্ট্রিট মিউজিকের সুর সব সময় গ্রাবেনকে মুখর করে রাখে। গ্রাবেনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত প্লেগ কলাম নামের স্থাপনটি ভিয়েনা শহরের আরও একটি প্রতীক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।

Zu1ECcP.jpg


ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত হফবুর্গ প্যালেস।

বেলভেডেরে সমগ্র মধ্য ইউরোপের বারোক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বর্তমানে বেলভেডেরেকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের অন্যতম রাজকীয় প্রাসাদ হিসেবে শনব্রুন ও হফবুর্গ প্যালেসের মতো বেলভেডেরেও সমানভাবে জনপ্রিয়। অন্যদিকে অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ভিয়েনা স্টেট অপেরা।

ছোট–বড় সব মিলিয়ে ভিয়েনায় আশিটির বেশি মিউজিয়াম রয়েছে। এত মিউজিয়ামের ভিড়ে শনব্রুন, হফবুর্গ এবং বেলভেডের—এ তিনটি মিউজিয়াম সবচেয়ে বেশি দর্শকনন্দিত। অন্যান্য মিউজিয়ামের মধ্যে কুন্সহিস্টোরিসচে মিউজিয়াম, লিওপোল্ড মিউজিয়াম, মিউজিয়াম অব ইন্টারন্যাশনাল কনটেম্পোরারি আর্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এতগুলো মিউজিয়ামের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে, অস্ট্রিয়ানরা চিত্রকলা ও ইতিহাসচর্চায় বিশেষ অনুরাগী। বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছে অস্ট্রিয়ায়। এমনকি আমার প্রিয় বিজ্ঞানী ড. আরভিন স্রোডিঙ্গারের জন্মও হয়েছিল অস্ট্রিয়ায়। আমার দৃষ্টিতে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে ড. আরভিন স্রোডিঙ্গার হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী যদিও গত শতাব্দীর সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে সবার প্রথমে ড. আলবার্ট আইনস্টাইনের নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়।

LOqNUHf.jpg


টায়ারগার্টেন শনব্রুন, ১৭৫২ সালে স্থাপিত এ চিড়িয়াখানাটিকে এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

জার্মানির মতো অস্ট্রিয়ারও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা জার্মান। তবে জার্মানির অধিবাসীদের তুলনায় অস্ট্রিয়ানদের আমার কাছে একদম আলাদা মনে হয়েছে। এখন পর্যন্ত চারবার জার্মানি ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে। জার্মানির স্থানীয় অধিবাসীরা অনেকাংশে অনুভূতিহীন যান্ত্রিক সত্ত্বার মতো। কাজ, বাসা এবং জার্মান বিয়ার—এ তিনের মধ্যে তাদের জীবন সীমাবদ্ধ। ইতালিয়ান কিংবা স্প্যানিশদের মতো তারা হাসিখুশি নয়, রসবোধ জিনিসটি তাদের মধ্যে অনেকাংশে অনুপস্থিত। এসব দিক বিবেচনায় অস্ট্রিয়ানরা অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির। জার্মানিতে বসবাসরত অধিবাসীদের তুলনায় আমার কাছে অস্ট্রিয়ানদের অনেক বেশি বন্ধুবৎসল মনে হয়েছে।

অস্ট্রিয়ায় আমার এক পরিচিত বড় ভাই আছেন, ভিয়েনায় গেলে মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে দেখা করি। একবার তার বাসা থেকে ফেরার সময় আচমকা এক ছোট বাচ্চার দেখা পাই। বাচ্চাটির বয়স খুব বেশি হলে চার হবে। আমাকে দেখামাত্র সে জার্মান ভাষায় অভিবাদন জানাল, গুটেন আবেন্ড—অর্থাৎ শুভ সন্ধ্যা। কিন্তু আমি বাচ্চাটিকে দেখেও না দেখার ভান করলাম। এর কারণ আমার পূর্বাভিজ্ঞতা। এই প্রসঙ্গ না হয় জানানো যাবে পরের পর্বে।

* লেখক: রাকিব হাসান
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top