সানজিদা তন্বী (ছদ্মনাম) বিয়ে করেছেন এক মাস হলো। শ্বশুরবাড়ি মানেই নতুন পরিবেশ। আর এই নতুন পরিবেশে নতুন আত্মীয়তার বন্ধন। সপ্তাহ পেরোতেই তন্বী টের পেলেন শ্বশুরবাড়ির মানুষদের অভ্যাস, আদবকায়দা, খাওয়াদাওয়ার পছন্দ, চিন্তাভাবনার সঙ্গে নিজের ভাবনার বিস্তর ফারাক। তা না হয় মানিয়েই নেওয়া যায়, কিন্তু যখন বুঝলেন স্বামীর সঙ্গে তার কোনো বিষয়েই মিল নেই, তখন মনে মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগল, 'মানিয়ে নিতে পারব তো?' এমন উদাহরণ অনেকের ক্ষেত্রেই নিশ্চয়ই মিলে যাচ্ছে।
আসলে বিয়ের পর যেহেতু দুটো মানুষ একই ছাদের নিচে কাটান, স্বামী বা স্ত্রীর অভ্যাস নিজের থেকে একেবারে বিপরীত দেখলে ছোটখাটো অভ্যাসগুলোই তখন অনেক বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন, আপনি সয়াবিনের তেলে রান্না করা খাবার খেতে পছন্দ করুন। কিন্তু আপনার পার্টনার শৈশব থেকে শর্ষের তেলে খেতে অভ্যস্ত। আবার ধরুন, আপনি একদম এসিতে ঘুমাতে পারেন না, এদিকে আপনার সঙ্গী আবার এসি ছাড়া ভাবতেই পারেন না।
আপনি পছন্দ করেন হালকা খাবার। আপনার সঙ্গী পছন্দ করেন বিরিয়ানি, মোরগ–পোলাও টাইপ শাহি খাবার। এমনও হয়তো শুনে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না যদি শোনেন ঘুমানোর সময় অন্ধকার না হালকা আলো থাকবে, তা নিয়েই দুজনের মাঝে ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে।
বিষয়গুলো শুনতে খুব সামান্য হলেও একসঙ্গে থাকতে গেলে প্রশ্ন আসেই কে মানিয়ে নেবে? আর এর থেকেই শুরু হতে পারে ঝগড়া, অশান্তি, একে অপরের প্রতি বিরক্তি। কী করবেন এই পরিস্থিতিতে?
দুজনের মধ্যে আলোচনা করুন
দুজনের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে সমস্যা হলে নিজেরাই আলোচনা করে ঠিক করুন কোনটা সমাধান হবে। ছোট কোনো বিষয় নিয়ে নিত্যদিনের অশান্তি মোটেই কাম্য নয়। হয়তো আপনি অন্ধকারে একেবারেই ঘুমাতে পারেন না। স্বামীর আবার অন্ধকারই পছন্দ। মধ্যস্থতায় আসতে আপনি একটা বেডসুইচের ব্যবস্থা করতে পারেন। অথবা স্বামীকে বলতে পারেন একটা আই মাস্ক ব্যবহার করতে। অভ্যাস যে সব সময় খারাপ হলে তবেই বদলাতে হবে, তা নয়। আপনার অভ্যাসের সামান্য বদলে যদি আপনার সঙ্গীর অনেকটা সুবিধা হয়, তাহলে অভ্যাস বদলাতে অসুবিধে কোথায়।
যখন-তখন নালিশ নয়
স্বামী বা স্ত্রীর কোনো স্বভাব অপছন্দ হলে নিজের বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে এই নিয়ে কোনো আলোচনা করবেন না। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আত্মীয়মহলে আলোচনা করা মোটেই যুক্তিসংগত নয়। এতে সঙ্গীর সঙ্গে বিরোধ হওয়ার আশঙ্কাও বাড়বে বা সঙ্গী আপনার ব্যবহারে মনে কষ্ট বা অপমানিত বোধ করতে পারেন।
রাগ সংবরণ করুন
রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন—প্রবাদটি বর্তমানে অতি প্রচলিত। তবে শুধু হেরে যাওয়ার মানসিকতায়ই নয়, যে রাগ সম্পর্কে অশান্তি আনবে, সেই রাগ পরিহার করা উচিত। যেকোনো বিষয় শান্তভাবে ভাবার চেষ্টা করুন। যদি মনে করেন একান্তই মানিয়ে নিতে পারবেন না, তখন সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলুন। কোথায় আপনার অসুবিধা হচ্ছে, তা জানান। বুঝতে পারলে আপনার সঙ্গী হয়তো নিজে থেকেই অভ্যাস পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন।
সঙ্গীর প্রশংসা করুন
সবার লাইফস্টাইল বা হবি যে একরকম হবে না, সেটাই স্বাভাবিক। ধরুন, আপনি মুভি দেখতে ভালোবাসেন, সঙ্গী খেলা দেখতে পছন্দ করেন। দুজন দুজনের কাজকে অ্যাপ্রিশিয়েট করুন। আপনিও সময় পেলে সঙ্গীর সঙ্গে বসে খেলা দেখুন। আবার নতুন কোনো মুভি দেখতে হলে সঙ্গীকে বলুন একসঙ্গে দেখার জন্য। এতে দুজনের মধ্যে আন্তরিকতা বাড়বে। সম্পর্কের ভিতটা দৃঢ হবে।
একসঙ্গে সুন্দর সময়
একসঙ্গে সুন্দর সময় কাটান। সকালে একসঙ্গে মর্নিং ওয়াক বা এক্সারসাইজ করতে পারেন। ছুটির দিনে লং ড্রাইভে যেতে পারেন। সব সময় ঘুরতে যাওয়া সম্ভব না হলে ঘরেও সুন্দর সময় কাটানো যায়। খোলা মনে আড্ডা দিন। ছোটবেলার মজার স্মৃতি, ছোট ছোট দুঃখ ভালো লাগা শেয়ার করুন।
জীবন হোক প্রাণবন্ত
একা অলস সময় পার করার চেয়ে সঙ্গীর সঙ্গে প্রোডাকটিভ সময় কাটানো অনেক ভালো। আলোচনা করে বাড়িতে কিছু নিয়ম নির্দিষ্ট করে দিন। আপনারা দুজনেই নিয়মগুলো মেনে চলুন। সঙ্গীর কোনো অভ্যাস অপছন্দ হলে ক্রমাগত সমালোচনা করবেন না। যেকোনো অভ্যাস পরিবর্তন করতে সময় লাগে। সঙ্গীকে সেই সময়টা দিন। বিষয়গুলোকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখুন। কিছু বিষয় মানিয়ে নিতে পারলে দেখবেন জীবন হবে আরও প্রাণবন্ত। সম্পর্কের বন্ধনটা থাকবে সুদৃঢ়।
* সাহিদা আক্তার