What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ (1 Viewer)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে এ আয়োজনের লেখায় থাকছে এই বিদ্যায়তনের সোনালি সময়ের ছবি ...

x6cSRnF.jpg


লীলা নাগ (২ অক্টোবর ১৯০০—১১ জুন ১৯৭০) প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে এ বছর। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই বিদ্যায়তন থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন নারী-পুরুষনির্বিশেষে অসংখ্য শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর এখানে নারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভ একটু কষ্টকরই ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনাপর্বেই নানা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্রছাত্রী কারা ছিলেন, সেই প্রশ্ন গবেষকদের বিভিন্ন লেখায় প্রাধান্য পেয়েছে। সেই সব প্রশ্ন নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে এ প্রশ্নও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে যে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী কে ছিলেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ১৯২১-১৯৫২ শিরোনামের বইয়ে (২০০৪) ড. রতনলাল চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন লেখক-গবেষকের তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডরুমে রক্ষিত D-Register, Bundle-IIM, Serial No.227 (আলোচ্য বই, পৃ. ১-৭৮) থেকে লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ছিলেন দুজন—লীলাবতী নাগ ও সুষমা সেনগুপ্ত।

এখানে এটাও বলতে হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন
১৯২০-এ নীতিগতভাবে সহশিক্ষার বিষয়টি স্বীকৃত ছিল। এই আইনের ৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, 'দ্য ইউনিভার্সিটি শ্যাল বি ওপেন টু অল পারসন অব আইদার সেক্স অ্যান্ড অব হোয়াটএভার রেস, ক্রিড অর ক্লাস...'। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নীতিগতভাবে নারীর উচ্চশিক্ষা বা পড়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকলেও সে সময় 'ছাত্রী-আবাস' ছিল না বলে ছাত্রীদের ভর্তি বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্বিধা ছিল। বাধাপ্রাপ্ত ছিল সামাজিক সহ-অবস্থানও।

বাস্তবতা যখন এমন, তখন প্রতিষ্ঠানটির সূচনালগ্নে ১৯২১ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জে পি হার্টগ বরাবর ভর্তির জন্য আবেদন করেন লীলাবতী নাগ ও সুষমা সেনগুপ্ত।

লীলাবতী নাগের মা কুঞ্জলতা দেবী চৌধুরী ও বাবা গিরিশচন্দ্র নাগ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেথুন কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে তিনি সম্মানসহ বিএ পাস করেন (মেয়েদের মধ্যে প্রথম, বৃত্তিসহ পদ্মাবতী স্বর্ণপদক অর্জন)। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পড়ার জন্য ভর্তির আবেদন করেন। লীলাবতী নাগ মূল নাম হলেও তিনি খ্যাত হয়েছেন লীলা নাগ নামে। এই মহীয়সী ছিলেন নারীশিক্ষাব্রতী ও নারী আন্দোলনের নেত্রী।

অন্যদিকে সুষমা সেনগুপ্ত অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স নিয়ে বিএ পড়ার জন্য আবেদন করেন। এই দুই ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীর আবাস হোস্টেলের প্রয়োজন ছিল না। দুজনেরই বাসস্থান ছিল ঢাকায়। উপাচার্য জে পি হার্টগ তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন অনুমোদন করেছিলেন। তবে সে সময় ছাত্রীদের কমনরুম না থাকায় সহৃদয় উপাচার্য তাঁর স্ত্রী মিসেস হার্টগকে লীলা নাগের সঙ্গে তাঁর ক্লাসে থাকার জন্য ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় একজন নারীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন লীলা নাগের সহযোগিতার জন্য।

সুষমা সেনগুপ্ত তাঁর স্মৃতিচারণায় ('লীলা রায়: কলেজজীবনের স্মৃতি' জয়শ্রী, সুবর্ণজয়ন্তী গ্রন্থ, কলিকাতা, ১৯৮৩, পৃ. ৪০৬) লিখেছেন, 'ঢাকা ইউনিভার্সিটি হলো। বিএ পড়তে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। সেই বৎসর লীলাও এমএ ক্লাসে ভর্তি হলো।...লীলা ইংরেজিতে এমএ আর আমি ইকোনমিক্স-এ অনার্স নিয়ে বিএ পড়তে শুরু করলাম।...লীলা এমএ পাস করে কর্মজীবনে প্রবেশ করল।' আবার সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত লীলা রায় ও বাংলার নারী জাগরণ গ্রন্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেবুলেশন শিটের সূত্রে দীপংকর মোহান্ত জানিয়েছেন, লীলা নাগ ১৯২৩ সালে এমএ পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁর রোল ছিল ১৬, ইংলিশ গ্রুপ-এ।

এই তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে এ-ও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় লীলা নাগকে পোহাতে হয়েছিল নানা বিড়ম্বনা। তবে শেষ অব্দি তিনি ভর্তি হতে পেরেছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে খুবই কম তথ্য পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডের তথ্য ছাড়া লীলা নাগের কোনো লেখায় বিড়ম্বনা বিষয়ে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই। নেই রতনলাল চক্রবর্তীর বইটিতেও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক প্রফুল্লকুমার গুহ লীলা নাগের ৬৯তম জন্মবার্ষিকীতে 'জন্মতিথিতে আশীর্বাচন' শিরোনামের লেখা লেখেন। সেখানে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ সম্পর্কে লিখেছেন, 'শ্রীমতী লীলার আচার–ব্যবহারে এমন একটি শালীনতা ছিল যে, প্রথম হতেই তিনি সকলের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেন।' (আমাদের সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭৪)

বলা দরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে তেমন কোনো তথ্য লীলা নাগের স্মৃতিচারণা বা লেখায় পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে দীপংকর মোহান্তের বই ছাড়াও লীলা নাগ: শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক বইয়ের দ্বারস্থ হতে হয়। সেখান থেকে জানা যায়, ১৯২১-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় ঢাকা হলের সংযুক্ত ছাত্রী হিসেবে তাঁর নাম আছে 'লীলাবতী নাগ'। পরে ঢাকার বিপ্লবী সংগঠন শ্রী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র অনিল রায়ের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি লীলা রায় নামে পরিচিত হন।

লীলা নাগের সমগ্র জীবনের সাধনা ছিল নারীশিক্ষার প্রসার, প্রচার, প্রাতিষ্ঠানিক নারী শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা; সাহিত্যচর্চা ও সাধনা এবং সাহিত্য আন্দোলনে বিপ্লবী চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটানো। বিপ্লবী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কারাবরণও করেছেন তিনি।

নারী শিক্ষাব্রতী ও নারী আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে ঢাকার (বর্তমানে পুরান ঢাকা বলে পরিচিত) প্রতিটি এলাকায়, বাড়িতে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত ১২টি স্কুলে ভর্তি করার জন্য খুঁজেছেন শিশু-কিশোরী, তরুণী ছাত্রী। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি প্রচুরসংখ্যক ছাত্রী ভর্তি করেছিলেন।

জয়শ্রী নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন লীলা নাগ। তাঁর অনুরোধে ৩০ ফাল্গুন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে পাঠানো চিঠিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পত্রিকাটির নাম দিয়েছিলেন 'জয়শ্রী'। শুধু তা-ই নয়, সঙ্গে একটি কবিতাও পাঠিয়েছিলেন তিনি:

বিজয়িনী নাই তব ভয়,

দুঃখে ও ব্যথায় তব জয়।

অন্যায়ের অপমান

সম্মান করিবে দান,

জয়শ্রীর এই পরিচয়।

১৯৩১ সালের মে মাসে জয়শ্রী নারীদের সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

রবীন্দ্রনাথের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ছিল লীলা নাগের জীবনে। 'আমাদের রবীন্দ্রতর্পণ' (জয়শ্রী, বৈশাখ ১৩৬৮) প্রবন্ধে লিখেছেন, 'মনে পড়ে প্রতি সকালে সন্ধ্যায় পারিবারিক সম্মিলিত প্রার্থনায় অথবা ছাত্রাবস্থায় দৈনন্দিন সম্মিলিত সংগীতে প্রধানত রবীন্দ্রনাথের গানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে উন্মেষিত হয়েছি। জীবন সম্বন্ধে নিষ্ঠা, গাম্ভীর্য, বিপদে নিঃশঙ্কতা ও আত্মপ্রত্যয় অর্থাৎ অলক্ষ্যে পত্তন হয়েছে জীবনের প্রাথমিক বুনিয়াদ—রবীন্দ্র-প্রসাদ সিঞ্চনে। লক্ষ উপদেশাবলী যা করতে পারত কি না সন্দেহ, রবীন্দ্রসংগীতের ভাব ভাষা ও সুর অতি সহজে স্বাভাবিকভাবে তা করেছে।'

১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করার জন্য ঢাকায় এলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ সময় নীলা নাগের নেতৃত্বে দীপালি সংঘ কবিকে সম্মাননা জানায়। তাঁকে বরণ করে সংঘের ১০-১৫ হাজারের বেশি মেয়ে গাইলেন: 'ওহে সুন্দর মরি মরি'।

কবিও তাঁদের সঙ্গে সুরে সুর মেলালেন। বললেন, 'সমস্ত এশিয়াতে মেয়েদের এত বড় সভা দেখিনি কোথাও।'

বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি সম্ভব হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের ছাত্রী লীলা নাগের নেতৃত্বগুণে। সেই সভায় কবির উদ্দেশে অভিনন্দনপত্র পড়েছিলেন লীলা নাগ।

দেশভাগের সময় কবি সুফিয়া কামাল সপরিবার ঢাকায় চলে এলে লীলা নাগ তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নারী আন্দোলনের দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পণ করেন এবং তাঁকে হাটখোলায় একটি বাসা ভাড়া করে দেন।

কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পরিবেশ লীলা নাগের জন্য ছিল বিরুদ্ধ। ঢাকায় তথা পূর্ববঙ্গে লীলা নাগের নারী আন্দোলন ও রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতি ঘটানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠেছিল সেই সময়ের সরকার। ফলে একসময় পূর্ববঙ্গ ত্যাগ করতে হয় তাঁকে। আদতে লীলা নাগের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড সহ্য করতে পারেনি কেউই—না পাকিস্তানি শাসক, না ব্রিটিশ। ব্রিটিশ রাজত্বে বিপ্লবী কাজে যুক্ত থাকার খেসারত হিসেবে ১৯৩১ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন তিনি। আর পাকিস্তান পর্বে তাঁর জন্য ছিল সীমাহীন নিপীড়ন।

লীলা নাগের পরবর্তী জীবনযাত্রা কলকাতায় কেটেছিল নানান উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে, সঙ্গে ছিল শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা। ১৯৫৫ সালে প্রথম হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে কখনো সুস্থ, কখনো অসুস্থ অবস্থায় 'পূর্ববাংলা বাঁচাও কমিটি'র মাধ্যমে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পরে ১৯৬৩-তে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ১৯৬৬ সালে হাড় ভেঙে এবং ১৯৬৭-তে সেরিব্রাল আক্রমণে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।

এরপর সংজ্ঞাহীন ও বাকহীন অবস্থায়ই ছিলেন ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সালের ১১ জুন—মৃত্যু পর্যন্ত।

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রথম ছাত্রী লীলা নাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

* মালেকা বেগম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top