সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক। কিন্তু অনেকেই সেই হিসাব মেনে খাদ্য গ্রহণ করে না বা বেশি করে। আবার আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে। তারা যেকোনো ধরনের বিদেশি খাবারকেই বেশি পুষ্টিকর মনে করে। কিন্তু দেশীয় শাক–সবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ। আর এসব রয়েছে একেবারে আমাদের হাতের নাগালেই এবং সারা বছর পাওয়া যায়। এমনই কিছু দেশীয় সবজি হতে পারে আমাদের প্রতিদিনের পুষ্টির এক অনন্য উৎস। পুষ্টিবিদেরাও পরামর্শ দেন, আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এগুলো যেন নিয়মিত স্থান পায়।
কাঁচকলা
প্রায় সারা বছর বাজারে পাওয়া যায়, এমন পরিচিত সবজির মধ্যে অন্যতম কাঁচকলা। আনাজি কলা নামে পরিচিত এই সবজি রোগীর পথ্য হিসেবে বেশ কার্যকর। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচকলায় রয়েছে ৮৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৭.৩ গ্রাম শর্করা, ২.৬ গ্রাম আমিষ, খনিজ লবণ ১ গ্রাম, ০.১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি রয়েছে ৪ মিলিগ্রাম। আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রমতে, অন্যান্য কলার মতো এর শিকড়, কন্দ, পাতা, ফুল, ফল, থোড় ও বীজ নানা ঔষধি গুণে ভরপুর। আমাশয়ের সমস্যায় কাঁচকলা আর থানকুনির পাতা বেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়। কলার থোড় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া কাঁচকলা ডায়রিয়া রোগীর তৃষ্ণা নিবারণ এবং রক্তবমি বন্ধে সহায়তা করে। পেটে কৃমি হলে কলাগাছের শিকড়ের রস বয়স ভেদে তিন থেকে চার চা-চামচ সকালে খালি পেটে কয়েক দিন খেলে কৃমির উপদ্রব কমে যায়।
মিষ্টি আলু
'গরিবের খাবার' হিসেবে পরিচিত মিষ্টি আলুও পুষ্টির আধার। পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যমতে, মূলজাতীয় শস্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদন করে মিষ্টি আলু। সাদা ও লাল—এই দুই বর্ণের আলু কাঁচা অবস্থায়, সিদ্ধ করে, ভর্তা বানিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে কিংবা রান্না করেও খাওয়া যায়। মিষ্টি আলুতে রয়েছে শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং প্রচুর খাদ্যশক্তি। গ্লুকোজ, চিনি, সিরাপ, স্টার্চ, পেপটিন এবং অ্যালকোহলের গুরুত্বপূর্ণ উৎস মিষ্টি আলু। মিষ্টি আলু দিয়ে বানানো যায় হরেক পদের খাবার যেমন হালুয়া, চিপস, পায়েস ও আটা এবং এর গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা যায় বিস্কুট, রুটি, পাউরুটি, পেস্ট্রি, কেকসহ হরেক রকম পিঠা। মিষ্টি আলু প্রক্রিয়াজাত করে বিশেষ উপায়ে শিশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এর কচি পাতা ও ডগা শাক হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এটা পুষ্টিকরও বটে।
করলা
তিতা স্বাদের সবজি করলা, যা সবার কাছে বেশ সমাদৃত। পুষ্টিগুণেও করলার জুড়ি নেই। করলায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি। এ ছাড়া রয়েছে আমিষ, শর্করা, চর্বি, আয়রন, ভিটামিন বি৬, ক্যারোটিনসহ প্রচুর খাদ্যশক্তি। করলায় 'কিউকার বিটাসিন' নামক একপ্রকার পদার্থ থাকায় এর স্বাদ তিতা হয়ে থাকে। তিতা হলেও করলার রয়েছে অনেক ঔষধি গুণও। শিশুদের বুকের দুধ পান করান যেসব মা, তাঁদের দুধের স্বল্পতায় করলা বেশ কার্যকর। কৃমির সমস্যায় করলাপাতার রস ছেঁচে এর সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে বয়স ভেদে আধা চা–চামচ থেকে দুই চা–চামচ পরিমাণে খেলে কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া করলা মুখে রুচি বাড়ায় এবং বাত, অ্যালার্জি, পেটের পীড়াসহ অন্যান্য রোগের জন্য উপকারী।
বেগুন
প্রায় সারা বছর পাওয়া যায়, এমন পরিচিত ও পছন্দের সবজির তালিকায় বেগুন থাকবে তালিকার প্রথমদিকেই। নানান আকৃতি ও বর্ণের বেগুনের গুণের যেন শেষ নেই। এর প্রতি ১০০ গ্রামে ভিটামিন এ রয়েছে ৮৫০ মাইক্রোগ্রাম। এ ছাড়া অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আমিষ রয়েছে ১.৮ গ্রাম, শর্করা ২.২ গ্রাম, চর্বি ২.৯ গ্রাম, ২৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, আয়রন ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ০.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম এবং ৪২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি রয়েছে। যকৃতের জন্য বেশ উপকারী এবং ডায়াবেটিক রোগীর ভালো পথ্য হিসেবে বেগুনের কার্যকরিতা লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া কফ নিরাময়ে এবং শরীরে জমে যাওয়া চর্বি কমাতেও সহায়তা করে।
* মো. আবদুল্যা আল মামুন