What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঘরে থাকা মানে বন্দী থাকা নয় (1 Viewer)

Qznxqc5.jpg


করোনাকালে ঘরবন্দী থেকেও নিজেদের সক্রিয় রেখেছেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী কামনা চৌধুরী

ছেলেমেয়ে আর জামাইরা এসেছিল গত বছর। তাদের নিয়ে দিনগুলো বেশ কাটছিল। কিন্তু দিনগুলো আর সোনার খাঁচায় রইল না। মার্চের প্রথম দিকেই যার যার কর্মস্থলে প্রবাসে ফেরে তারা।

এরপর দেশে এল করোনাভাইরাস।

সমাজে অবাঞ্ছিত আগন্তুক এই অতিমারি, এই জীবাণু খুব অল্প সময়ে আমাদের বিহ্বল করে দিল। সংক্রমণ শুরু হলে অজানা ভাইরাস ধীরে ধীরে ছড়াতে লাগল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ জানাল। এরপর তো প্যানডেমিক ঘোষণা করা হলো এ বিপর্যয়কে।

মনে পড়ে, ডিন কুনজের বই, দ্য আইজ অব ডার্কনেস—১৯৮১ সালে উহান ৪০০ নামে এই কল্পকাহিনি কি ছিল পূর্বাভাস? ডি কুনজ তা অস্বীকার করলেন।

আরও মনে পড়ে এক দশক আগের কন্টাজিওন সিনেমার কথা। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ভয়াবহ আর রহস্যময় ভাইরাস—এ রকম গল্প নিয়ে ২০১১ সালে বানানো সিনেমাটি সে সময়ে তেমন চলেনি। তবে ২০২০ সালে এসে তা হলো সুপারহিট।

করোনা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনের মোড় ঘুরছিল নানা দিকে।

রোজকার দিনযাপন

O90aipN.jpg


দিনের একটা সময় চা নিয়ে একান্তে গল্প করতে বসেন দুজনে

আজ আমি বারান্দায় একা বসে। 'ছিন্ন পাতায় সাজাই তরণী এক একা'। গিন্নি রান্নাঘরে। প্রতিদিন খুব বেশি পদ রান্না এখন হয় না, তবে যেগুলো হয়, সেগুলো বেশ স্বাদু।

মন খারাপ হলো এই ভেবে যে আজ প্রায় দেড় বছর বাজারে যাওয়া হয়নি। আমাদের বয়স হয়েছে। শরীর জানান দিচ্ছে কলকবজা আর আগের মতো সচল আর সক্ষম নয়। তাই সাবধানে চলার সংকেত এসেছে। আর এই সময়ে মাস্ক পরে গেলেও ভিড়ের মধ্যে বাজার করার ভাবনাও সাহসের কাজ। গিন্নির মানা তো আছেই, আর দূর থেকে দুই মেয়ের নজরদারি আমাকে বেচাল কিছু করতে দেয় না।

বাজার সওদা করে গৃহকর্মী মরিয়ম।

কাঁকরোলের পুর, লাউশাক, শুক্তো আর মাছের ঝোল রান্না শেষে গিন্নি অন্নপূর্ণা (কামনা চৌধুরী) এলেন। হাতে দুকাপ ধূমায়িত চা। বারান্দাটা তাঁর বড় প্রিয়।

একচিলতে হলেও তাঁর নিজ হাতে টবে লাগানো গাছে নানা রকম ফুল। সেসব দেখতে দেখতে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া আমাদের নিত্যদিনের কাজ। আজকাল ইনডোর প্ল্যান্টও এসেছে অন্দরে।

আমি অত্যন্ত ব্যস্ত জীবন থেকে অফুরন্ত অবসরে। তবে বারান্দায় পা দুলিয়ে চা পান করতে করতে মুখোমুখি দুজন। অনেক দিন পরে এমন সময় আমার জন্য বিশেষ প্রাপ্তিই মনে করছি। পরিণত বয়সে ছেলেমেয়ে, জামাই আর নাতিপুতিদের নিয়েই আলাপ হয় বেশি। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে প্রতিদিনের হালচাল আর সম্প্রতি শাটডাউনের কথা শুনে আমাদের দরকারি জিনিস সংগ্রহ করে রাখাবিষয়ক আলাপ থাকে চা–টেবিলে।

এক ভাইরাসের মাত্রা ছাড়া খেয়ালখুশিতে বেনিয়মের খেলায় মেতেছে বিশ্ব। একটানা এক বছরের বেশি সময় ধরে ঘরে আছি। অবশ্য কোভিড টিকা নেওয়ার জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। বাসায় থেকে মনে পড়ে একসময় ধানমন্ডি লেকের ধারে, রমনা পার্কে দুজনে মিলে একসঙ্গে হাঁটতাম। মাঝেমধ্যে ক্যাফেতে বসে পরোটা আর চা খেতাম। তবে বাস্তবতা মেনে নিয়ে সেই সুদিনের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া তো কোনো গতি নেই।

করোনার শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞান হলো মুখবন্ধনী (মাস্ক)। সাবান জল দিয়ে বারবার হাত ধুতে ধুতে ১ থেকে ২০ পর্যন্ত গোনা আর শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা—অভ্যাসে পরিণত হয়েছে গত বছর থেকেই।

করোনার পর থেকে আমরা (আমি ও স্ত্রী) জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাইনি। যে কবার বাইরে গেছি, কাজে যেমন টিকা নিতে বা অন্য জরুরি কাজে, সব সময় পরেছি ডাবল মাস্ক। হাতে রেখেছি স্যানিটাইজার আর থেকেছি মানুষ থেকে দূরে দূরে। ভিড়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

বাসায় বসে এই সময়ে খুব মিস করি স্বজন আর বন্ধুদের। সাবেক সহকর্মীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আড্ডা দিতে দিতে আলুভাজা, চিড়া ভাজা, বাদাম আর চা খেতাম। সেসব এখন কই? বাইরের ঘরেই বসা হয়নি কত দিন, সোফাও কাপড়ে ঢাকা পড়ে আছে। অতিথি আপ্যায়ন নেই। গৃহবাসী অন্তরীণ, অন্যের প্রবেশ নিষেধ। নেই উষ্ণ করমর্দন, নেই আলিঙ্গন।

বাড়িতে থাকা আমার মতো বয়স্কদের নিশ্চয়ই এমন স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে বেলা যায়। অনেক সময় অধৈর্য এসে পড়ে। তবে নিজেকে বোঝাই, ঝুঁকি নিয়ে বাইরে গিয়ে মৃত্যুঝুঁকি ডেকে আনার চেয়ে ঘরে বসে থাকাই তো ভালো।

আমার নেশা তিনটি—বই পড়া, গান শোনা আর বেড়ানো। প্রথম দুটো হচ্ছে আর তৃতীয়টির জন্য ভ্রমণপিপাসু মন কেঁদে কেঁদে মরছে। সম্প্রতি আমার স্নেহধন্য ওমর ফারুক পাঠাল দুটো মূল্যবান বই। এদিকে আমার ছাত্রী অন্তস্রাবী রোগ বিশেষজ্ঞ তানজিনা হোসেন তার লেখা বই পাঠাল। দারুণ তার লেখা। আর লেখে আমেরিকায় আমার ছাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সিনহা, কী চমৎকার যে লেখে। এদের লেখা পড়ে মন ভরে গেল। দারুণ কেটে গেল সময়। যেন সময়ের শ্রেষ্ঠ উপহার বইগুলো।

প্রতিদিনের আনন্দ

প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পেলে মনে যে আনন্দ হয় এখনো তো সেটা পাচ্ছি। তবে এ আনন্দ নিতে হচ্ছে ভার্চ্যুয়ালি। আমার সুদূরিকা (প্রবাসী) নাতনি ঐন্দ্রিকে প্রতিদিন ভিডিও কলে দেখি। তার মায়াময় মুখ, নির্মল হাসি আমার প্রতিদিনের আনন্দ আর মন ভালো করার শক্তি। 'চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে, উছলে পড়ে আলো' ঐন্দ্রি তোমাকে বলছি, দাদু।

ভিডিও কলে প্রতিদিন প্রবাসী মেয়ে আর ছেলের সঙ্গে কথা বলা। দেখাদেখি হয়, স্বস্তি আসে মনে।

ফেসবুক খুলেছি। পরিচিতজন, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। গিন্নিও এখন ফেসবুক খুলেছেন, তবে ফেসবুকের নেশার চেয়ে তাঁর ইউটিউবে হারানো দিনের গান শোনাতেই বেশি আগ্রহ। আর সারা দিন ঘরদোর সাফসুতরা করা, মাঝেমধ্যে গাছের পরিচর্যা, বই পড়া, ঈশ্বর প্রার্থনা, ইন্টারকমে প্রতিবেশী ভাবিদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটিয়ে দেন।

এই বয়সে এসে আমাদের সর্বভুক হওয়ার উপায় নেই। কোনো কোনো খাবার মানা আছে শরীর সুস্থ রাখতে, আর গিন্নি সেভাবেই রাঁধেন। করোনার পর থেকে আমারা বাইরের খাবারও খাই না।

পাশের ঘর থেকে শুনি ছ্যাত করে কী যেন পড়ল তপ্ত কড়াইয়ে, চেনা গন্ধ ডালের সম্বরার। ভাবি, যাক স্বাদগন্ধ পাচ্ছি মানে তো সবকিছু ঠিক আছে।

'শুনছ নাকি?' ওঘর থেকে অন্নপূর্ণা (গিন্নি) ডাকলেও শুনি না। বার তিনেক জোরে ডাকলে তবেই শুনতে পাই। আমাদের দুজনেরই এক সমস্যা এখন—শ্রুতি আর তত তীক্ষ্ণ নয়।

ঘরে এনে রেখেছি পালস অক্সিমিটার, ডিজিটাল থার্মোমিটার, ব্লাডপ্রেশার মাপার মেশিন, গ্লুকোমিটার। আর এনে রেখেছি আমাদের দরকারি ওষুধ ১৫ দিনের। সাবধানের মার নেই। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর আর হেল্প লাইনের নম্বর টুকে রাখা আছে।

আর লেখালেখি! ইচ্ছার জায়গা দুর্বল হলে কি চলে? এই করোনাকালে আমার নতুন তিনটি বই বেরোল। এ ছাড়া অনলাইন ওয়েবিনারে, ঘরে বসে সেমিনারে অংশ নিই মাঝেমধ্যে।

আমার এই বেলা শেষে শুধু দেখে যাওয়া, কিছু করার সামর্থ্য নেই।

সুস্থ থাকতে

TCiySHU.jpg


প্রতিদিন গাছের যত্ন নিয়ে অনেকটা সময় চলে যায় এই দম্পতির

মাঝেমধ্যে একা থাকি। নিজের কাছাকাছি আসার এই তো সুযোগ। ক্ষণকালের আত্মমগ্নতা, মন্দ নয়। ব্রিদিং এক্সারসাইজের (শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম) পরামর্শ অন্যদের দিলেও নিজে বেশি করি না, হারমোনি ট্রাস্টের শাহেদা বাসায় এসে তবু শিখিয়ে দিল। তবে হাঁটি নিয়মিত। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই। ফ্ল্যাটের নিচে লম্বা হাঁটা পথ, ওপরে খোলা আকাশ। হাঁটি মিনিট ত্রিশেক।

দুপুরের আহার দুজনে করি আরাম–আয়েশ করে। তেল কম, মসলা কম—রান্না আবার স্বাদু। খেলেও মন ভালো হয়। এরপর মুখ শুদ্ধি। লং, মৌরি আর এলাচি চিবানো। মাঝেমধ্যে সিরিয়াল দেখি দুজনে। অবশ্য টিভিতে করোনার খবর শুনতে শুনতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে কম্পিউটারে সময় কাটে বেশি।

আমার একটা কথা সবার জন্য, ভালো থাকার অনেক সম্ভার দিয়েছেন জীবনদাতা। একে চয়ন করার দায়িত্ব নিজের। ভালো থাকা খুব নিজস্ব। যত দিন বাঁচব, প্রবলভাবে বাঁচতে চাই। ভয় নয়, বিরক্ত নয়। জয় হবেই মানুষের। 'মুক্ত কর ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধর, নিজেরে কর জয়।'

* ডা. শুভাগত চৌধুরী (ঢাকা)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top