What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাঙালির রসনাসংস্কৃতিতে সুশি (1 Viewer)

nUgZe6a.jpg


ভোজনরসিক বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতিতে যেমন রয়েছে দেশীয় খাবার, তেমনি পরম মমতায় সে আত্মীয়তা করে ভিনদেশিয় সুস্বাদু খাবারের সঙ্গেও। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ধান আমদানি করা হলে ভারতবর্ষেই প্রথম ডোবানো জমিতে ধান চাষ শুরু হয়। তখন অন্যান্য দেশে শুকনো মাটিতে ধান চাষ হতো। আর ধান থেকে সৃষ্ট ভাতই প্রধান খাদ্য হয়ে ওঠে বাঙালির।

H1SNBTK.jpg


ভাতই বাঙালির প্রধান খাদ্য

আবার পর্তুগিজদের আগমনে বাঙালি দেখা পায় আলুর। অন্যদিকে, মোগলদের নিয়ে কোরমার স্বাদ বাঙালির রসনায় যোগ করে নতুন মাত্রা। প্রাচীন-মধ্য-আধুনিক যুগে রসনাবিলাসী বাঙালি যে কত কত জাতির খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মিশেছে, তার হিসাব নেই। বিভিন্ন সময় তুর্কি, আরব, আফগান, পর্তুগিজ, ফরাসি, ইংরেজসহ নানা জাতি এসেছে এ দেশে। নানা সংস্কৃতির খাবার বাঙালি নিত্যসঙ্গী করে নিয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য সম্পদ চর্যাপদ, প্রাকৃত পৈঙ্গল, মঙ্গলকাব্য বিশেষত মানিক দত্তের চন্ডীমঙ্গল, বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল, ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল, নারায়ণ দেবের পদ্মপুরাণ, শ্রীহর্ষের নৈশধ চরিত, আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরীসহ বিভিন্ন গ্রন্থে বাঙালির বিভিন্ন জাতির খাদ্য গ্রহণের সুনিপুণ চিত্র পাওয়া যায়। বর্তমানে আগের মতো কোনো জাতি সরাসরি কোনো ভূখণ্ড দখল না করলেও ভুবনগ্রাম হওয়ার কারণে সারা পৃথিবীর মানুষ এক আত্মিক বাঁধনে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে।

সুশি চাল না পেলে আতপ চাল বসা ভাত রান্না অবস্থায় থাকলে সেটিও সুশি চাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে দেড় কাপ চাল দুই কাপ পানি ও চিমটি পরিমাণ লবণ দিয়ে ১০ মিনিট সেদ্ধ করে শসা, রেড ক্যাপসিকাম, গাজর এবং স্যামন বা টুনা লম্বা লম্বা ও পাতলা স্লাইস করার পর মাছগুলোকে লবণ, আদা-রসুনের পেস্ট আর লাল মরিচের গুঁড়ো দিয়ে মেখে সেদ্ধ সুশি রাইসে সুশি ভিনেগার দিতে হবে। প্যানে গরম তেলে মাছগুলোকে ভেজে নরিতে সুশি রাইস লম্বা করে বিছিয়ে তার ওপর সস ঢেলে মাঝখানে দিতে হবে মাছ সঙ্গে শসা আর রেড ক্যাপসিকাম। এবার রোল করে সুশি ম্যাট দিয়ে প্রেস করলেই শুরু হয়ে গেল সুশির স্বাদ উপভোগের পালা!

wjrD5X7.jpg


সুশি চাল, ছবি: উইকিহাউ

তবে সুশি চাল ও সুশি ভিনেগার না পেলেও চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আতপ চাল বসা ভাত রান্না অবস্থায় থাকলে সেটিই সুশি চাল। আর রাইস ভিনেগারে পরিমাণমতো লবণ ও চিনি দিয়ে জ্বাল দিলেই হয়ে গেল সুশি ভিনেগার। সহজে হাতের কাছেই প্রস্তুত করা সম্ভব সুশির উপকরণাদির এবং বন্ধুত্ব করুন পুষ্টিকর সুশির সঙ্গে।

বাঙালি শুধু ঘরকেই নয়, পরকেও আপন করে নেয়। আর যে দেশটি বাংলাদেশের জন্মলাভের ৫৫ দিনের মাথায় ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, সে রাষ্ট্র কখনোই পর হতে পারে না। দুদেশের লাল বৃত্তের পতাকাটিও উদীয়মান সূর্যকেই নির্দেশ করে। সবচেয়ে বেশি গড় আয়ুর দেশ জাপান, খাদ্য গ্রহণ ও রান্নাপদ্ধতিতে সর্বোচ্চ পুষ্টিমূল্য বজায় রাখতে সর্বদাই সজাগ। কম তেল, ধীরগতি, সিদ্ধকরণ, ভাপ, গাঁজানো, হালকা ভাজি—এসব বিজ্ঞানসম্মত রন্ধনবৈশিষ্ট্য জাপানিরা মেনে চলে। নিয়মিত খাবারে পুষ্টিকর সি উইডের উপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জাপানি সংস্কৃতির। বাংলা সংস্কৃতির অন্যান্য ভিনদেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারের মতো দীর্ঘকালের বন্ধুরাষ্ট্র জাপানের সুশিও হয়ে উঠুক সে দীর্ঘ সংস্কৃতির মিছিলের একটি স্বাক্ষরবাহী ঐতিহ্য।

QDeFdr4.jpg


তাই তো চাল, ভিনেগার আর সামুদ্রিক মাছ বা মাংস দিয়ে তৈরি ছোট ছোট বিস্কুটের মতো জনপ্রিয় ফাস্ট ফুড 'সুশি'ও বাঙালির পাতে ব্রাত্য নয়। পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র জাপানের এ খাবার বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জাপানি ভাষায় (সু) অর্থ ভিনেগার আর (মেশি) অর্থ ধান; দুইয়ে মিলে 'সুশি'। সুশি হলো ভিনগ্রেড ভাত, যেটি অন্য উপাদানের সঙ্গে মিশ্রিত হয়। উপাদান হিসেবে সাধারণত কাঁচা মাছ ব্যবহৃত হয়, যার কারণে অনেকের ধারণা 'সুশি' মানে 'কাঁচা মাছ'। আসলে কাঁচা মাছ সুশির একটি উপাদান মাত্র। বিভিন্ন ধরনের সুশি রয়েছে, যেমন চিরাশিসুশি, ইনারিসুশি, মাকিসুশি।
সুশি শব্দটির উৎস একটি প্রাচীন জাপানি শব্দ থেকে, যার অর্থ 'টক'।

জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তৈরিকৃত 'নারে-জুশি' নামক একধরনের খাবার একসময় জাপানিদের কাছে প্রোটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। নারে-জুশি খাবারটিতে লবণের মধ্যে জারিত মাছ কয়েক মাস পর্যন্ত ফারমেন্টেড ভাতের মধ্যে সংরক্ষিত করা হতো। এ ধরনের মাছ কিছুটা টক স্বাদযুক্ত বলে সম্ভবত রান্নাটির নাম 'সুশি'। রান্নাটি জাপানে চালু থাকলেও কালের হাওয়া লাগানো সুশির সঙ্গে এর মিল সামান্যই। ১৩৩৬ থেকে ১৩৫৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জাপানে ছিল মুরোমুচি নামক যুগ। সে সময় থেকে নারে-জুশির সঙ্গে ভিনেগার যোগ করা শুরু হয়। ফলে, খাবারের স্বাদ বাড়ে ও সংরক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। ধীরে ধীরে সুশি বানানোয় কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ হয়, তা আধুনিক যুগের সুশির মতোই দাঁড়ায়।

UFrtXD8.jpg


এখনকার সুশি বানানোর পদ্ধতিটি প্রকৃতপক্ষে সপ্তদশ শতাব্দীর এডো যুগের আগে শুরু হয়নি। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৮২৪ সালে প্রথম এ সুশির প্রচলন করেন প্রখ্যাত শেফ হানায়া ইয়োহেই। রিওগোকু অঞ্চলে অবস্থিত তাঁর রেস্তোরাঁয় এ সুশির যাত্রা শুরু।

RV7hwlf.jpg


বর্তমানে জাপানে কোনো পর্যটক গেলে সুশির স্বাদ নেবেন না—এ যেন ভাবাই যায় না! ব্যাপক জনপ্রিয় এ খাবার পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার গুলশানের সুশি তেঁই বাংলাদেশ, টোকিও কিচেন, সামদাদো জাপানিজ কুইজিন, বনানীর সুশি সামুরাই, টোকিও জাপানিজ কর্নার, জাপানিজ রেস্টুরেন্ট আইপিএইচজে, টোকিও এক্সপ্রেস, লালমাটিয়ার টিবিসি, সাতমসজিদ রোডের ইযাকায়া, উত্তরার মেইনল্যান্ড চায়নাসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে। চাইলে ঘরেরও সুশি তৈরি করতে পারেন। এ খুব কঠিন কোনো কাজ নয়! এ জন্য দরকার সুশি রাইস, সুশি ভিনেগার, সুশি ম্যাট, স্যামন কিংবা টুনা মাছ, সি উইড বা নরি, রেড ক্যাপসিকাম, শসা, গাজর, আদা-রসুনের মিশ্রণ, লাল মরিচ ও সস।

* মোহতাসিম প্রীতিম | ছবি: উইকিপিডিয়া ও ইনস্টাগ্রাম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top