What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ওত পেতে আছে ডেঙ্গু (1 Viewer)

INhZFIF.jpg


এক বছরের বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে করোনা মহামারি। জ্বর মানেই আতঙ্ক, কোভিডের নমুনা পরীক্ষা করা জরুরি। করোনাকালের আগে বর্ষা মৌসুমে জ্বর মানে ছিল ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার আতঙ্ক। পরিস্থিতি আর আতঙ্কের নাম বদল হয়েছে। করোনা আর ডেঙ্গু—দুটিই ভাইরাসজনিত জ্বর (ভাইরাল ফিবার)। তবে করোনায় দুর্ভোগ ও মৃত্যুহার বেশি। করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, ডেঙ্গু মশা থেকে মানুষে। করোনা সারা বছরই হচ্ছে, থেমে থেমে আসছে ঢেউ, গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীত—নির্দিষ্ট কিছু পছন্দ নয় তার। তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ মূলত বাড়ে বর্ষা মৌসুমে।

করোনা অতিমারির সময় জ্বর বা মাথাব্যথার মতো উপসর্গ হলে এ সময় ডেঙ্গুর কথা ভুলে গেলে চলবে না। কারণ, বর্ষা এসে গেছে আর ঢাকাসহ বড় শহরগুলোয় জলাবদ্ধতাও শুরু হয়েছে। এখানে-ওখানে জমছে পানি আর সেই পানিতে বংশবৃদ্ধি করছে এডিস মশা। তাই কোভিড মোকাবিলার সঙ্গে ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্যও প্রস্তুত হতে হবে।

উপসর্গে মিল-অমিল

কোভিড ও ডেঙ্গু—দুই ধরনের সংক্রমণেই জ্বর থাকবে, মাত্রার তারতম্য হতে পারে। আনুষঙ্গিক উপসর্গ দিয়ে কিছুটা ধারণা করা যায়, তবে চার দিনের আগে প্রতীয়মান হয় না। জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, গা মেজমেজ, ক্ষুধামান্দ্যের মতো প্রাথমিক উপসর্গ থাকে দুটিতেই। করোনা বারবার ধরন পাল্টাচ্ছে, তাই উপসর্গও বদলে যাচ্ছে। কখনো তীব্র অরুচি আর স্বাদহীনতা প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল, কখনো উপসর্গ ছিল কেবল ডায়রিয়া আর জ্বর, কখনো মাথাব্যথা। তবে জ্বরের সঙ্গে শরীরে ফুসকুড়ি আর দাঁত-নাক বা অন্য জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ করোনায় হয় না। আবার করোনায় যেমন দ্রুত অক্সিজেন লেভেল কমে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, তা ডেঙ্গুতে বিরল।

হতে পারে মৃদু বা তীব্র

ডেঙ্গু ও কোভিডে আক্রান্তের ৮০ শতাংশই নিরীহ বা মৃদু গোছের জ্বর। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সর্দি–ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই। ডেঙ্গুর মৃদু অবস্থাকে বলে ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু। করোনার ক্ষেত্রে মৃদু রোগ ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস (আইএলআই) বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থতা হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান, পুষ্টিকর খাবার ও বিশ্রাম নিলে নিজে নিজেই সেরে ওঠে অধিকাংশ মানুষ। সঙ্গে প্যারাসিটামল আর অন্যান্য আনুষঙ্গিক চিকিৎসা।

ডেঙ্গু হিমরেজিক ফিবার হলো এর চাইতে বিপজ্জনক অবস্থা। জ্বরের সঙ্গে পেটব্যথা, বমি, পানিশূন্যতা থাকলে, রক্তচাপ কমে গেলে ও প্রস্রাব কম হলে সেটাকে ডেঙ্গু হিমরেজিক ফিবার বলা যায়। গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৪ হতে পারে এই বিপজ্জনক অবস্থা। তবে গ্রেড-৩ ও গ্রেড-৪ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। জ্বর চলে যাওয়ার পর, মানে জ্বরের ষষ্ঠ বা সপ্তম দিন থেকে এমন জটিলতা হতে পারে। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে চিকিৎসা যথাযথ না হলে।

এদিকে মৃদু করোনা যখন ফুসফুসে আঘাত হেনে নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে, তখন এটা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। করোনার ক্ষেত্রে ৬ থেকে ১০ দিনের মাথায় মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। তখন কাশি বাড়তে থাকে, কাশির জন্য কথা বলতে পারা যায় না। শ্বাসকষ্ট হয়, সামান্য কাজকর্মে রোগী অস্থির হয়ে পড়েন। রোগীর উপলব্ধি না থাকলেও অক্সিজেন কমে যেতে পারে। একে বলে হ্যাপি হাইপক্সিয়া।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম একটি মারাত্মক জটিল অবস্থা বা সিভিয়ার কন্ডিশন। আর করোনায় রেসপিরেটরি ফেইলর, সেপটিসিমিয়া। অর্থাৎ, সংক্রমণ রক্তে বা পুরা শরীরে ছড়িয়ে পড়া হলো তীব্র জটিলতা। এর ফলে ফুসফুসের সঙ্গে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড—সব অঙ্গ একে একে অকেজো হতে থাকে। যাঁদের ভেন্টিলেটর লাগে, তাঁদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি করোনায় অনেক বেশি (৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ)।

সবারই কি জটিলতা হবে?

৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, গর্ভবতী এবং যাঁদের ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, কিডনি, লিভার বা শ্বাসের অসুখ আছে, তাঁরা ঝুঁকিতে আছেন। ডেঙ্গু বা করোনা হলে চিকিৎসা ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষ সেবা লাগবে।

ভিন্ন রকম সমস্যা

করোনা কিংবা ডেঙ্গু জ্বর—দুটি ক্ষেত্রেই কিছু ভিন্ন ধরনের উপসর্গ জটিলতা হতে পারে কারও কারও। যেমন করোনা রোগী মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) বা হৃদ্‌রোগে (হার্ট অ্যাটাক) মারা যেতে পারেন, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারেন। করোনায় রক্তনালির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধে, যাকে বলে মাইক্রোথ্রম্বাস। মাইক্রোথ্রম্বাস ফুসফুসের রক্তনালির মধ্যে জমে পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিনে হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আবার ডেঙ্গুতে হতে পারে খিঁচুনি-মস্তিষ্কে এনকেফেলাইটিস হওয়ার কারণে। হৃদ্‌যন্ত্রে প্রদাহ বা কারডিটিস হয়। এগুলো ভিন্নতর সমস্যা। তাই এগুলো ডেঙ্গুর বর্ধিত উপসর্গ হিসেবে পরিচিত।

যা করবেন

এ সময় জ্বর বা শরীর খারাপ হলে ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পরামর্শমতো ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন ও কোভিডের পিসিআর পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। ডেঙ্গু হলে প্যারাসিটামলের পাশাপাশি যথেষ্ট পানি, স্যালাইন, তরল সময়মতো ও পরিমিত দিতে পারলে শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা কম। আর ওদিকে প্রয়োজনে শুধু অক্সিজেন দিয়ে যদি এসপিও২ ৯৫ শতাংশ রাখা যায়, তাহলে কোভিড বিজয়ী হওয়া সম্ভব।

ডেঙ্গুর জটিলতা বুঝতে প্লাটিলেট পরীক্ষা, যকৃতের এসজিপিটি ইত্যাদি দরকার পড়বে। ওদিকে কোভিডের বেলায় ডি-ডাইমার, বুকের এক্স–রে বা সিটি স্ক্যান চিকিৎসকের পরামর্শে দরকার হতে পারে।

বাড়িতে প্রাথমিক পর্যায়ে এ মৃদু অবস্থায় জ্বর সারানোর জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছু নয়। অযৌক্তিক, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ পরিহার করাই ভালো। কারণ, তা আরও ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

মেনে চলুন

  • বাড়ির আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখুন। ফুলের টব, মাটি বা প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার ও ফুলদানিতে দু–তিন দিনের বাসি পানি যেন না জমে। রোজ পানি পরিষ্কার করুন।
  • অ্যাপার্টমেন্ট বা পাড়ায় পাড়ায় কমিটি করে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও মশার ওষুধ স্প্রে করা, লার্ভিসাইড ছিটানোর মতো কার্যক্রম শুরু করুন।
  • শিশুদের ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরাবেন। সাদা কাপড় পরা ভালো। দিনের বেলায় ঘুমালে মশারি টানানো উচিত। শরীরে উন্মুক্ত স্থানে মশা প্রতিরোধক ক্রিম লাগাতে পারেন।
  • মাস্ক পরুন। ভিড় এড়িয়ে চলুন।

* অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিমুদ্দিন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top