What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other আমার প্রিয় সাত গান (1 Viewer)

'আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে', 'বৃষ্টি পড়ে অঝোর ধারায়, বৃষ্টি পড়ে লজ্জা হারায়'—এমন অসংখ্য শ্রাতাপ্রিয় গানের গীতিকবি শেখ রানা। এ লেখায় তিনি লিখেছেন তাঁর জনপ্রিয় কয়েকটি গান লেখার নেপথ্য কাহিনি।

ihgZ6xX.jpg


আমার গীতিকবিতা লেখা শুরু ১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে। সেই হিসেবে অনেক দিন তো হয়ে গেল। সময়ের সূত্র ধরে অনেক যে লিরিক লিখেছি, এমন নয়, তবু জমা হতে হতে অনেক লিরিক জমা হয়েছে আস্তিনে। গান হয়েছে তা–ও প্রায় ১৫০। সেখান থেকে সাতটা লিরিকের জন্মকথা বলছি এই লেখায়। একই সঙ্গে ছোট করে লিখছি, এসব লিরিক কীভাবে গান হয়ে উঠল, সেই গল্পও। উল্লেখ্য, লিরিক আর লিরিকের পেছনের গল্প নিয়ে দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে আমার—'আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে' ও 'কবির তখন সওদাগরি মন' শিরোনামে।

পরি

'আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে', এই লিরিক আর গানের স্মৃতি কী করে ভুলি!
তখন আমি রাজশাহীতে। তড়িৎ প্রকৌশলে অধ্যয়ন করতে গিয়ে টের পেলাম, আমি তো গীতিকার হব, আর কিছু নয়। সেই যে এক ঝিমঝিম দুপুরে ঘোরগ্রস্ত ভাবনা নিয়ে বের হয়েছিলাম আমি! আজও সেই ভাবনায় ফিরে ফিরে আসি।

রাজশাহীতে এই তুমুল বোহেমিয়ান দিনে সে সময় আমি যাপন করি নিজের জীবন। একদিন ট্রেনে চেপে চলে যাই নাটোরের লালপুরে। সেখানেই 'পরি' গানের লিরিক লেখার শুরু। এত দিন ধরে গানটি ভালোবাসার গান, প্রেমের গান হয়ে বেঁচে আছে; কিন্তু লেখাটা আমি শুরু করেছিলাম শাওন নামের এক ছোট্ট মেয়ের কথা ভেবে।

সঞ্জীবদা (সঞ্জীব চৌধুরী) আমাকে জয় গোস্বামীর বই পড়তে বলেছিলেন। সেই কবিতার বইয়ের সাদা পাতায় লিখে রেখেছিলাম গানটির মুখ আর প্রথম অন্তরা। 'আমি তোমার জন্য এনে দেব রোদেলা সে ক্ষণ/ পাখিকে করে দেব তোমার আপনজন'—এতটুকু।

যে পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছিল 'আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে'

Qtk1HT9.jpg


পরে ঢাকায় ফিরে বাপ্পা (বাপ্পা মজুমদার) ভাইয়ের সুরের ওপর দ্বিতীয় অন্তরা লেখা হয়।

'পরি' গান হয়ে আসে বাপ্পা ভাইয়ের 'ধুলো পড়া চিঠি' অ্যালবামে। কখনো ভাবিনি এত লম্বা সময় ধরে মানুষ 'পরি' গানকে ভালোবাসবে, আপন করে নেবে। মাঝেমধ্যে নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য লাগে, একই সঙ্গে গীতিকার হওয়ার স্বপ্ন সার্থক মনে হয় মুহূর্তের জন্য।

ফিরে পেতে চাই

দলছুটের গান। সঞ্জীব-বাপ্পা, সেই বিখ্যাত যুগলবন্দী সময়। কত কী মনে পড়ে! আমার জীবনে তখন এক তুমুল বৈপরীত্য চলছে। মননে, ঘুমে আর পথচলায়। আমার গীতিকার জীবনের সবচেয়ে টালমাটাল সময় সেটা। রাজশাহী থেকে ঢাকায় ফিরে কাজ করতে গিয়ে ধীরে ধীরে টের পাই, কী এক দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। একই সময়ে রাত-বিরাতে গ্রাস করতে শুরু করে স্মৃতিকাতরতা। সেই স্মৃতিকাতরতাই বোধ করি আমাকে তখন বাঁচিয়েও রাখে।

আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে হাইকোর্ট কলোনিতে। সে সময়ের যূথবদ্ধ আনন্দনগর মনে পড়ে। নির্ভার হাওয়ায় উড়ে যাওয়া সময় ফিরে এসে জড়িয়ে ধরে, টেনে তোলে। এরপর এক গভীর রাতে লেখা হয় 'ফিরে পেতে চাই'। আমাদের মিরপুরের বাসায় বসে লেখা।

এই গান শ্রোতাদের কানে পৌঁছায় আনন্দের গান হয়ে। ২০০৩-০৪ সালের দিকে কিছু কনসার্টে দলছুটের সঙ্গে গিয়ে টের পাই, কী দারুণ আনন্দ নিয়ে দর্শকেরা গলা মেলাচ্ছেন 'ফিরে পেতে চাই' গানের সঙ্গে। এটি আমার এমন এক গান, যা শেষ পর্যন্ত উজ্জীবনের আলোয় বেঁধেছে মানুষকে। কিন্তু কেউ জানে না গীতিকার একদা দুঃখক্লান্ত হয়ে এই লিরিক লিখেছিলেন। এই আনন্দ-বেদনার শব্দচয়ন শেষ পর্যন্ত আনন্দের সমাপ্তিরেখায় দাঁড় করিয়েছে আমাকে। সেই দাঁড়িয়ে থাকা হাসিমুখে।

বৃষ্টি পড়ে

বৃষ্টি নিয়ে অনেক লিরিক লিখেছি আমি। তবে সবচেয়ে বেশি শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে 'বৃষ্টি পড়ে'। দলছুটের 'হৃদয়পুর' অ্যালবামের গান।

ছোটবেলা থেকেই বৃষ্টিপ্রীতি ছিল আমার। একটু বড় হতেই তা মন্ত্রমুগ্ধতায় পরিণত হলো। বৃষ্টি পড়লে আমি ঘরে থাকতেই পারতাম না। দিনে বা রাতে ভিজতে চাইতাম এবং ভিজতামও। এক অপার্থিব অনুভূতি হতো। কলোনিতে আমাদের বাসায় ছিল টিনের চাল। তাই বৃষ্টি পড়লে রুমঝুম শব্দ হতো। তখন তো বৃষ্টি পড়ত বর্ষাকালজুড়েই। সবুজ ঘাস আরও ভিজে সবুজ হয়ে যেত। আর বৃষ্টি শেষে সব কেমন মেদুর হয়ে ধরা দিত চারপাশে।

তবে মজার তথ্য হলো, 'বৃষ্টি পড়ে' গানের লিরিকটা লিখেছিলাম খটখটে রোদ্দুরে বসে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে এক দুপুরবেলায়। খুব একটানে, খুব হেলাফেলায়। বাপ্পা ভাইয়ের জাদুকরি সুর-সংগীত আর কণ্ঠমাধুর্যে আসলে 'বৃষ্টি পড়ে' অনন্য হয়েছে। 'বৃষ্টি পড়ে' আক্ষরিক অর্থেই বাপ্পা ভাইয়ের গান। সুরকার হিসেবে বাপ্পা মজুমদার যে অসামান্য, এই গান শুনলে আমি তা আরও বেশি অনুভব করি।

গাছ

BmpWGyR.jpg


'গাছ' গানের পৃষ্ঠা

'ভালোবাসা দাও সবুজ বৃক্ষ, দুঃখে মাতাও ক্লান্ত বৃক্ষ…'। আহ! 'গাছ' শিরোনামের গানের গল্প লিখতে বসলেই এমন একটা অদ্ভুত হাহাকার বুকে এসে ঝাপটা দেয়। এই হাহাকার না বিরাগ, না দুঃখ, না আনন্দের। এই হাহাকারের কোনো নাম নেই।

'গাছ' গানটা আমি শৈশবের এক কড়ই গাছকে নিয়ে লিখেছিলাম। বহু ঝিমদুপুর আমি একচিলতে বারান্দায় বসে কাটিয়েছি এই গাছের দিকে অপলক তাকিয়ে। আমাদের বাসার বারান্দায় বাম দিকে কয়েক পা হাঁটলেই চোখে পড়ত অতিকায় সেই কড়ই গাছ। বৃষ্টিতে ভিজে কিংবা রোদে অবগাহন করে এই গাছের পাতারা যেন শান্ত থাকত বারো মাস। কী এক ঘোরে সেই গাছের সঙ্গে মনে মনে কথা বলতাম আমি! কেন যে ওই গাছকে আমার বন্ধু মনে করতাম, আমি জানি না। বলা দরকার, সব না জানার সঙ্গীকেই আমি সহচর বানিয়েছি এই এক জীবনে।

বাপ্পা ভাইয়ের বাসায় তখন নিয়মিত যাই। সে রকম একদিন বিকেলে বাপ্পা ভাই কানে হেডফোন গুঁজে দেন। শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল ভেসে যাচ্ছি শান্ত এক দিঘিতে। 'গাছ' গানের সুর বাপ্পা ভাইয়ের আর কণ্ঠ সঞ্জীব চৌধুরীর; আমাদের সঞ্জীবদা।

সঞ্জীবদার লেখার মতো কণ্ঠেও কিছু একটা না ধরতে পারা বিষাদ ছিল। একসময় ভাবতাম, আমার এপিটাফে গাছের কথাগুলো লেখা থাকবে।

মার ঘুরিয়ে

'মার ঘুরিয়ে'র কথা বলতে গেলেই আমার গ্যালারিভর্তি দর্শকের কথা মনে পড়ে। তখন আমি একটি বিজ্ঞাপনি সংস্থায় কাজ করি। এক দুপুরে মারুফ ভাই তড়িঘড়ি করে বললেন, একটা লিরিক ঠিকঠাক করে দিতে হবে। সেটাই ২০১১ আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের থিম সং। আমি কাগজটা হাতে নিয়ে দেখি খুব খগাবগা অবস্থা! ইংরেজি–বাংলা মিলিয়ে শোচনীয় অবস্থা যাকে বলে। সে সময় আমার মনে হলো, আমাদের দেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেট হচ্ছে, তার লিরিক কেন বাইরের দেশের কেউ লিখবে। আমরাই লিখব। এই আত্মবিশ্বাসে অনড় থেকে আমি নতুন করে লিরিকটা লিখি, সুরের ওপর। সপ্তাহ দুই পর কলকাতার এক স্টুডিও থেকে গায়ক রাঘব চট্টোপাধ্যায় ফোন করে গান গাওয়ার কথা জানান। এভাবেই গানটা শেষ হয়। তিন ভাষায়ই এই গানের সুর-সংগীত করেছিলেন মুম্বাইয়ের বিখ্যাত কম্পোজার শঙ্কর-এহসান-লয়।
গানটা যখন টিভিতে দেখানো শুরু হলো খেলার ফাঁকে ফাঁকে, অবাক বিস্ময়ে দেখি এটি মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। আমার জন্য এটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। কত দিন এমন হয়েছে, রিকশায় কোথাও যাচ্ছি, পাশের রিকশা থেকে বা গাড়ির ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছি 'মার ঘুরিয়ে'। সারা বাংলাদেশ তখন 'মার ঘুরিয়ে' শুনছে। একজন গীতিকারের জন্য এটা অবশ্যই দারুণ এক প্রাপ্তি। অবশ্য বাংলাদেশে গীতিকারদের প্রাপ্তি বলতে তো এতটুকুই।

মুখোশ

WqP6m7x.jpg


বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে শেখ রানা, ছবি: সংগৃহীত

আমি তখন লন্ডনে থাকি। বোহেমিয়ান জীবনের শেষভাগ। ২০০৮ সালের দিকে বিলেতে একটি শো করতে এসে পার্থ বড়ুয়া মানে পার্থদার সঙ্গে পরিচয় হলো। কথায়–আড্ডায় তুমুল হট্টমালা। সপ্তাহখানেক পর পার্থদা ফিরে গেলেন। কিন্তু যাওয়ার আগে একসঙ্গে একটা অ্যালবাম করার ভাবনা আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেন।

২০০৯ সালে আমি লন্ডন ছেড়ে ঢাকায় ফিরে আসি। ভাবলাম, যাযাবর জীবন অনেক কাটিয়েছি। এবার একটু থিতু হই। মন দিয়ে গান লিখি আবার। বাপ্পা ভাইয়ের স্টুডিওতে যাই আগের নিয়মে। বেশ কিছুদিন পর পার্থদার স্টুডিওতে যেতেই সেই বিষয়ভিত্তিক গানের কথা উঠে আসে। ব্যস! লেখা শুরু হয়ে যায়। তত দিনে পার্থদার সুরে মুহিন, পলবাশা আর সোলসের জন্য কয়েকটি লিরিক গান হয়ে উঠেছে।

স্টুডিওতে বসে মগ্ন হয়ে লিখি। ফেরার পথে সিএনজিচালিত অটোয় বসে লিখি। এভাবেই লিরিকগুলো জমা হচ্ছিল, সুরও হচ্ছিল একের পর এক। পার্থদার সঙ্গে সময়টা খুব আনন্দময় কেটেছে আমার। গান নিয়ে কাটাছেঁড়া তর্ক-আড্ডায়। সাতটা বিষয়ভিত্তিক গান লেখার কথা। একদিন লিখলাম মুখোশ। চারপাশের বদলে যাওয়া আর স্ববিরোধী মানুষদের সামনে রেখে। কিছুদিনের মধ্যেই সুর হয়ে গেল। একটা রক ধুন! শুনেই আমি উত্তেজিত। কিন্তু তারপর নানা ব্যস্ততায় গানগুলোর কাজ আর রিলিজের তারিখ পিছিয়ে গেল। আমিও ফের প্রবাসী হলাম।
অবশেষে লম্বা সময় পার করে গত বছর গানগুলো প্রকাশ পায় একে একে। এখনো ইউটিউবে না আসায় হয়তো অনেক মানুষ শোনেনি। কিন্তু আমার ধারণা, 'মুখোশ' অ্যালবাম পরিপূর্ণ আকারে রিলিজ করলে গানটা যখন শ্রোতারা শুনবেন, পছন্দ করবেন।

'মুখোশ' অ্যালবামের টাইটেল ট্র্যাক 'মুখোশ' আমার প্রিয় গানের তালিকায় থাকবে সব সময়।

পোড়া শহর

এটা আমার লেখা এবং সুর করা গান। আমারই হাতে গড়া 'নস্টালজিক' ব্যান্ডের জন্য গানটা করেছিলাম। নিমতলীর আগুনের সেই ভয়াবহতা নিয়ে লিরিকটা লিখেছিলাম। সময়কাল বোধ হয় ২০০৯/১০। আমি সে সময় বিষয়ভিত্তিক অনেক গান লিখেছি। তার বেশ কটি গান হয়েছে, বেশ কিছু রয়ে গেছে লিরিকের ফাইলে। থাকুক এ রকম। আমার মৃত্যুর পর, যাঁরা আমার লিরিক পছন্দ করতেন, তাঁরা অন্তত জানবেন যে আমি লিখে গেছি মগ্ন হয়ে। ভালোবাসার গান, বৃষ্টির গান আর নাগরিক গান।

'পোড়া শহর' লেখা শেষ করে গিটার নিয়ে টুংটাং করতে করতে একটা সুর পেয়ে যাই বি মাইনর ধরে। তারপর সামিরের স্টুডিওতে রেকর্ডিং করি। সে সময় দুজনই নবিশ ছিলাম সাউন্ডের কারিকুরি নিয়ে (এখনো যে বুঝি, তা–ও নয়)। তাই সঠিক ভয়েসটা হয়তো ধরা হয়নি। কিন্তু তাতে সেই সময়ের ব্যাকুলতা আর রাত জেগে রেকর্ডিং এবং পুরান ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার আনন্দটা মোটেই কমেনি।

এই গানের মিউজিক করে দিয়েছিলেন বনি আহমদ। মেধাবী এক ছেলে। একে একে ১০/ ১২টি গান করেছিলাম নস্টালজিকের জন্য। কিন্তু 'পোড়া শহর' যে দ্যোতনা দিয়েছিল মনে, তা বোধ করি অন্য কোনো গান আমাকে দেয়নি আর।
বিষয়ভিত্তিক এ রকম লেখা শেষ করার চ্যালেঞ্জ আছে। লেখা ভালো হলে, নিজের কাছে স্বস্তি লাগে, একই সঙ্গে লেখার সময় যে রক্তক্ষরণ হয়, সেটাও অগ্রাহ্য করা কঠিন হয়ে যায়।

আগে ভাবতাম, মানুষই বোধ হয় একমাত্র প্রাণী, যে একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনা ধরতে পারে। এখন মনে হয়, কে জানে! হয়তো একটা দোয়েল পাখিও কোনো এক মুহূর্তে এমন উদাস হয়ে ভাবে। আনন্দ-বেদনা একই সঙ্গে চোখে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে!

* শেখ রানা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top