What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ছবি তুলে মাতৃত্ব উদ্‌যাপন (1 Viewer)

ssaTwtn.jpg


মা হতে যাচ্ছেন অভিনে ত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। স্বামী জোবায়দুল হককে নিয় তাঁর আনন্দের মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরা পড়ল এভাবেই।

হবু মা–বাবা সন্তান হওয়ার সময়টাকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে চান। তাই হবু মায়ের ছবি তোলার বিষয়টি এখন জনপ্রিয় ধারা। তারকা থেকে সাধারণ্যে। বিদেশ থেকে দেশে। আনন্দময় এই অনুভব ধরা থাকে সুন্দর সব ছবিতে।

হবু মা-বাবা তাঁদের আনন্দ, ভালোবাসা, অপেক্ষা অনেক সময়ই বোঝাতে পারেন না কথা–শব্দের মাধ্যমে। কিন্তু দুজনের ভুবন ভোলানো হাসিতে প্রকাশ পায় মনের অব্যক্ত কথাগুলো। নয় মাসে মা-বাবা আর অনাগত সন্তান তিনজনেই যেন বেড়ে ওঠে পাশাপাশি। এই যাত্রা অনেকেই ধরে রাখতে চান স্মৃতির পাতায়। যেমন ধরে রাখছেন অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা ও তাঁর স্বামী জোবায়দুল হক।

হবু মা-বাবা, বিশেষ করে মায়ের ছবি তোলার বিষয়টি অনুভূতির কারণেই যেন গুরুত্ব পেয়েছে। পাশ্চাত্যে অবশ্য অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয় এই ধারা। আমাদের দেশে পাঁচ-ছয় বছর ধরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তবে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সাত মাস পূর্ণ হলে পাশ্চাত্যের বেবি শাওয়ারের বাঙালি সংস্করণ 'সাধ'–এর আয়োজন দেখা গেছে অনেক আগে থেকেই। এখন এটাও বেশ জনপ্রিয়।

হবু মায়ের ছবি তোলা

মাতৃত্ব উদ্‌যাপনে হবু মায়ের তোলা ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ দেখা যায়। এর কিছু আবার পেশাদার আলোকচিত্রীর হাতেই। আগে বছরে হয়তো হাতে গোনা কয়েকজন ছবি তুলতেন, এখন এ সংখ্যা বেড়েছে। এমনটাই জানালেন বেশ কয়েকজন আলোকচিত্রী। বিষয়টি বেশ ইতিবাচক। তারকারা হয়তো প্রথাগত ধারাটি ভাঙতে কিছুটা ভূমিকা রেখেছেন। সংগীতশিল্পী বেয়ন্সে, অভিনেত্রী কারিনা কাপুর, রাজপরিবারের ছোট বধূ মেগান মার্কেল—এ তালিকায় আছেন অনেকেই, যাঁরা বিষয়টিকে নিজেদের মতো করে তুলে ধরেছেন সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে। তারকা নন, এখন এমন অনেকেই বেশ মজা করেই ঘোষণা দিচ্ছেন 'টু বি মম অ্যান্ড ড্যাড লিখে'। পুরো বিষয়টিই এ সময়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আর একান্তই নিজেদের ভালো লাগা থেকে করা।

তারকা থেকে সাধারণ্যে

১৯৯১ সালের কথা। হলিউডের অভিনেত্রী ডেমি মুরের নগ্ন ছবি প্রকাশিত হয় মার্কিন সাময়িকী ভ্যানিটি ফেয়ার–এ। ছবিটি প্রকাশিত হওয়ামাত্রই সবাই নড়েচড়ে বসলেন। ডেমি মুর তখন দ্বিতীয়বারের মতো মা হতে চলেছেন। সে যুগে অকপটে এভাবে নিজেকে পুরো দুনিয়ার সামনে তুলে ধরা চাট্টিখানি বিষয় নয়। হবু মা নিজেকে প্রকাশ করবে নমনীয়, কমনীয়ভাবে, থাকবেন একটু আড়ালে। এ সময়ে নিজেকে এভাবে প্রকাশ করার কিছু নেই—এ চিন্তাধারা অনেকটাই ধাক্কা খায় এই ছবির কারণে। এর আগেও হয়তো অনেকে গর্ভাবস্থায় ছবি তুলেছেন, তবে এভাবে প্রকাশ করেননি। 'ম্যাটারনিটি ফটোশুট' এরপর নতুন রূপ ও অর্থ পায়। এক অর্থে বলতে গেলে পরবর্তী সময়ে তারকা বা তারকা নন, এমন অনেক হবু মায়ের ছবি তোলা এবং তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রচলন বেড়ে যায়।

আলোকচিত্রী প্রীত রেজা ছয় বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালি দম্পতির মাতৃত্বকালীন ছবি তুলেছিলেন। তখনো বাংলাদেশে এই বিষয়ের ওপর খুব একটা কাজ হচ্ছিল না। তবে পরবর্তী সময়ে এখানে কাজ করার সময় সেই ছবিগুলো উদাহরণ হিসেবে দেখানোতে বাংলাদেশি অনেক দম্পতি স্বস্তি নিয়ে বিষয়টি বুঝতে পারছিলেন। এখন সামাজিক মাধ্যমে হবু মা-বাবার ছবিগুলো প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে।

মাতৃত্বকালীন ছবিতে দুই-তিন ধরনের অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে। অনেকে শারীরিক পরিবর্তন ছবিতে ধরে রাখতে চান, কেউ আবার এ সময়ের যাত্রাটিকে তুলে ধরতে চান। অভিনেত্রী ও মডেল জান্নাতুল পিয়া, নিজের শারীরিক পরিবর্তন এবং মাতৃত্বকালীন সময়ের অনুভূতি—দুটো বিষয়কেই ফ্রেমবন্দী করেছিলেন ছবি তুলে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ফটোশুট করান তিনি। এ জন্য বিশেষ পোশাকও বানিয়েছিলেন। ইনস্টাগ্রামে ছবিটি প্রকাশ করে লিখেছিলেন, 'পেশাগত কারণে আমি অনেক ফটোশুট করেছি। এই শুটে আমি চেষ্টা করেছি একটা মেয়ে যে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ও তার মতো সুন্দর, সে সুন্দর একে অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে—কিছুটা হলেও তার প্রতিফলন ঘটাতে। কিন্তু সঙ্গে ভয়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকে অস্বীকার করার উপায় নাই। সেটাও জয় করা সম্ভব, সঠিক খাবার, এক্সারসাইজ, ধ্যানের মাধ্যমে। মাতৃত্ব কোনো অসুস্থতা নয়, বরং একজন মেয়ে কত শক্তিশালী তার প্রমাণ। তাই এই অবস্থায় সমাজ থেকে নিজেকে দূরে না থেকে, কে কী বলবে না ভেবে, আরও সামনে এগিয়ে আসা উচিত নিজের শক্তি নিয়ে। আমার কাছে মাতৃত্ব মানে গর্ব, মেয়েদের একান্ত সৌন্দর্য আর শক্তি।'

আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের সহকারী কর্মকর্তা তানভীন নাহার ফটোশুট করেছিলেন নয় মাসের মিষ্টি স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। চলতি ধারার কারণে নয়। 'এখন ছবি তোলা খুব সুন্দর একটা মাধ্যম। এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো তুলে ধরতে পারছি। ১০-১৫ বছর পর এই ছবি ও ভিডিওগুলোই আমাকে সুন্দর স্মৃতি রোমন্থনে সহায়তা করবে', জানালেন তিনি। গত ডিসেম্বর মাসে তিনি মাতৃত্বকালীন ফটোশুট করেন। কোভিডের কারণে খুব সতর্কভাবে বেছে নিয়েছিলেন খোলা জায়গা। ঢাকার রমনা থানা ও ধানমন্ডি লেকের আশপাশে কয়েকটি জায়গায় ছবি তোলেন। বাচ্চাদের জামা, জুতা ব্যবহার করেছেন ফটোশুটে। তিনি জানান, 'শুধু ছবি তোলার জন্য হলে হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। কিন্তু উৎসাহ পেয়েছিলাম এটা ভেবেই এই মুহূর্তটা আর পাব না। এ কারণে যতটুকু আমার সাধ্যের মধ্যে আছে, আজকের মধ্যেই করতে পারব, করে ফেলেছি।'

যাত্রাটা যেন ফুটে ওঠে

ছবি তোলার আগে পুরো বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা জরুরি বলে মনে করেন প্রীত রেজা। হবু মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। খোলা জায়গায় ছবি তুললে অনেক ভারী পোশাক না পরাই ভালো। ছবি তোলার আগে মা-বাবাকে উৎসাহ দিতে হবে। তাঁরা যেন হাসিখুশি থাকেন। অনুষঙ্গ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় চক বোর্ড, জুতা, বেলুন, ফুলের মুকুট ইত্যাদি। যদি দ্বিতীয় সন্তান আসার আগে এই শুট করা হয়, তাহলে প্রথম সন্তানকেও সে ছবিতে রাখা যায়।

স্টুডিও পিকচাররিফিকের স্বত্বাধিকারী ও আলোকচিত্রী মাইশা সামিহা বললেন, 'মাতৃত্বকালীন সময়টি জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়। স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার জন্যই মূলত ছবি তোলা। ফটোশুটের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময় ও জায়গা নির্বাচন তার মধ্যে দুটি বিষয়। সাত মাসের শেষ থেকে সাড়ে আট মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ছবি তুলে ফেলুন। এরপরে না তোলাই ভালো।'

চার বছর ধরে হবু মা ও নবজাতক শিশুর ছবি তুলছেন মাইশা। ৬০টির বেশি মাতৃত্বকালীন ফটোশুট করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে এখন মানুষ আর অস্বস্তিবোধ করছে না। বেশ ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই ছবি তুলছেন সবাই। চেষ্টা করছেন ভিন্নতা আনতে। খোলা জায়গায় কাজ করতে আগ্রহী সবাই। নিজেদের বাগান বা গোছানো ছাদ থাকলে সেখানেও ছবি তোলা যেতে পারে। স্টুডিওতে ছবি তুলতে চাইলে নিশ্চিত করুন সেটি পরিষ্কার করা হয়েছে কি না যথাযথভাবে।

uTRxoLg.jpg


আয়োজন করে হবু মা–বাবার ছবি তোলার বিষয়টি জনপ্রিয় হচ্ছে

আলাদা আলাদা গল্প

দম্পতিরা সবাই–ই আলাদা। তাঁদের গল্পও ভিন্ন। এ কারণে ছবি তোলার আগে তাঁরা কী চাচ্ছেন, সেই বিষয় বোঝা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক কবির হোসেন। জায়গা, সময়, আবহাওয়া সম্পর্কে আগে থেকেই পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। সম্ভব হলে জায়গাটি আগের দিন গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আসতে হবে। ছবি তোলার মাঝে মাঝে হবু মায়ের বিশ্রাম যেন হয়। পোশাক–আশাক হাতের নাগালে থাকলে ভালো। সময়টা যেহেতু করোনাকাল, মাস্ক, স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন। মানুষ কম আছে, এমন জায়গা বেছে নেওয়া ভালো। সম্ভব হলে কিছুটা বাড়তি সময় হাতে রাখুন।

নাবিলার ইচ্ছা ছিল আগে থেকেই

C2wJSLv.jpg


তিনজনের গল্প করা হলো ফ্রেমবন্দী

মাতৃত্বকালীন সময়ে ছবি তুলবেন, অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলার পরিকল্পনাতে অনেক আগে থেকেই ছিল। নাবিলার পরিকল্পনার সঙ্গে নকশার পরিকল্পনা মিলে গেছে অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই। নকশার পক্ষ থেকে তাঁকে অনুরোধ করার জন্য ফোন দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল যেদিন, তার আগের দিন কবির হোসেন জানালেন তিনি নাবিলা ও তাঁর স্বামী জোবায়দুল হকের ছবি তুলেছেন।

নাবিলা বললেন, 'অনেক কিছু চিন্তা করে, প্রস্তুতি নিয়ে ছবি তুলিনি। তবে সচেতন ছিলাম পুরোপুরি কোভিডের কারণে। চেয়েছিলাম কিছু সুন্দর মুহূর্ত তোলা হোক ক্যামেরায়। আমরা যে অনেক খুশি, এই অনুভব তুলে ধরার জন্যই ছবি তোলা।'

মা-বাবা হতে পারার পুরো বিষয়টিই অনুভূতির। পাশাপাশি ভাবতে শেখায়। আপনি তাঁর সঙ্গে কী গল্প করবেন। আপনি যা জানেন, সেটা তাকে কীভাবে জানাবেন ইত্যাদি। পুরো বিষয়টিকে নবযাত্রার মতো মনে করেন নাবিলার স্বামী জোবায়দুল হক। একটা একটা করে সপ্তাহ–মাস পার হয় আর পরিবর্তনগুলো দেখা যায়। এরপর স্ত্রীর পরীক্ষা করা, ডাক্তার দেখানো—অন্য রকম অভিজ্ঞতা, অনুভব অথবা অনুভূতির বিষয় ছিল জোবায়দুল হকের কাছে। এমন অনুভূতিগুলো অপূর্বভাবে ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন এই দম্পতি।

পোশাক হতে হবে আরামদায়ক

etHvIVx.jpg


এই সময়ে পরতে হবে আরামদায়ক।

পোশাকের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় যে ধরনের পোশাক পরতেন, সেটাই ছবি তোলার সময় পরেছিলেন তানভীন নাহার। সঙ্গে রেখেছিলেন গাউন ধাঁচের পোশাক। জান্নাতুল পিয়া শারীরিক অবয়ব বোঝা যাবে, এমন পোশাক বিশেষভাবে ফরমাশ দিয়ে বানিয়েছিলেন। নাবিলা শুটের জন্য আলাদাভাবেই কিনে রেখেছিলেন হালকা হলুদ জামাটি। সবুজ রঙের পোশাক অতিরিক্ত হিসেবে সঙ্গে নিয়েছিলেন। দুটো পোশাকেই হালকা ঘের এবং আরামদায়ক কাপড়। রং ও নকশাতেও আছে স্নিগ্ধতা। মাইশা সামিহা জানালেন, মাতৃত্বকালীন সময়ে যখন ছবি তুলবেন, পোশাকের বিষয়টি চলে আসে। পেটের অবয়ব বোঝানোর জন্য পেটের কাছটায় হালকা আঁটসাঁট হয়ে নিচের দিকে ছড়ানো বা ফ্লোয়ি থাকলে ভালো হয়। আমাদের এখানে যেহেতু শুটের জন্য আলাদাভাবে পোশাক বিক্রি করা হয় না, নিজের পছন্দমতো নকশায় বানিয়ে নেওয়া ভালো।

উদ্‌যাপনের সেরা স্মৃতি

ছবি তোলার দুই থেকে তিন ঘণ্টার সময়টি সারা জীবনের জন্য একটি উপহার হয়ে থাকে। চলতি ধারার কারণেই হোক বা না হোক, এ সময়ের ছবি তুলে রাখা যায় নিজের পছন্দেই। পরবর্তী সময়ে সন্তানের কাছেও বিষয়টি পাবে বিশেষ অর্থ। এ সময়ে একজন মায়ের আনন্দ, কষ্ট, ভালোবাসা সবকিছুর ছোঁয়া বছরের পর বছর খুঁজে পাওয়া যাবে এই ছবিগুলোতে।

* রয়া মুনতাসীর | ঢাকা
 
যতসব নাটক আরকি। মাতৃত্ব উদযাপন করে ছবিতোলা লাগে ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top