What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঢাকা শহর: দামে বেশি, মানে কম (1 Viewer)

pUqhlsV.jpg


শিরোনাম দেখে আপনাদের মনে পড়ে যেতে পারে সেই 'বিখ্যাত' বিজ্ঞাপনের কথা। সেখানে দাম ও মানের এক পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করা হয়েছিল। এবার সেই সম্পর্ক আসছে সুবিশাল ও ক্ষেত্রবিশেষে ভাসমান ঢাকা শহর ও এর অধিবাসীদের মধ্যে। শুরুতেই একটি অনুসিদ্ধান্ত টানা হয়েছে। লেখাজুড়ে এর ন্যায্যতা নিয়েই গল্পগুজব হবে।

ঢাকা শহরের দাম বেশি, এ নিয়ে দ্বিমত কেউ জানাতে আসবেন বলে মনে হয় না। বেশি দাম যে অর্থ দিয়ে চুকাতে হয়, তা তো পকেট থেকেই আসে। আর সেই পকেট যেহেতু নিজেকেই ভরাতে হয়, ফলে ভিন্নমত পোষণের সুযোগ কম। যখন নিজের পকেট বা ওয়ালেট থেকে অজস্র অর্থ বন্যার পানির মতো বেরিয়ে চলে যায় অকাতরে, তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাতর হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। থাকবেই–বা কী করে? যারা পকেট থেকে চলে যায়, তাদের তো ফিরিয়ে আনা কঠিন। হয়তো মাসের শুরুতে তার স্বজনেরা আসে (টাকা ও এর গোষ্ঠী)। কিন্তু যে নোট পাখা মেলে উড়াল দেয় অন্যের পকেটে, সে কি আর শুকনা কথায় ভুলে ফিরে আসে?

jZ2MQHO.jpg


প্রাচ্যের ভেনিস ঢাকা

প্রশ্ন উঠতে পারে, সেগুলো কার কার পকেটে যায়? এই ধরুন বাড়িওয়ালা, সবজি বিক্রেতা, বিভিন্ন যানবাহনের ভাড়াটে চালক, মুদিদোকানি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁদের কাছ থেকে নিশ্চয়ই অন্য কারও পকেটে যায়। এভাবে টাকাগুলো ঘুরতে থাকে। এমনটা সব শহরেই হয়। তবে ঢাকায় কিছু বাড়তি টাকা যোগ হয় এই ঘূর্ণমান অর্থের চক্রে। এই বাড়তি টাকা কেন দিতে হয়, এর প্রধান উত্তর হলো—শহরটির নাম ঢাকা। রাজধানী শহর, স্ট্যাটাসই আলাদা। সেই স্ট্যাটাসের দাম দিতে গিয়েই আমাদের 'স্ট্যাটাস' আরও নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কারণ, রাজাদের পাশাপাশি প্রচুর প্রজাও এখানে থাকে। আর তাদেরই বাড়তি খরচের শ্রাদ্ধ হয় এ শহরে।

যদিও বাংলা চলচ্চিত্রের কারণে একসময় জানা হয়েছিল যে ঢাকায় টাকা ওড়ে। নায়কেরা গ্রাম ছাড়ার সময়, পাড়া-প্রতিবেশীদের বয়ানে তা শোনা যেত। তবে প্রায় এক যুগ আগে দুটো পড়াশোনা করার জন্য ঢাকায় আসার পর থেকে অনুধাবন করতে পেরেছি যে এখানে আসলেই টাকা ওড়ে। তবে তা সব সময় লাফ দিয়ে ধরার মতো নয়। বরং টাকা সময়ে-অসময়ে নিজের পকেট থেকেও উড়ে হারিয়ে যেতে পারে ঢাকার আকাশে। আর তাতে সংশ্লিষ্ট মানুষের উড়নচণ্ডী দশা হলে, তা ঠেকানোর কেউ নেই।

OzITc0b.jpg


মানবিক শহরে গাড়িগুলো জিরিয়ে নিচ্ছে

টাকা ওড়ার কারণেই কি না, জানি না; এ শহরের বাতাস বেশ দূষিত। করোনার কারণে হাল আমলে মাস্ক পরার চল শুরু হলেও এর প্রয়োজন ছিল অনেক দিন ধরেই। তবে জাতি হিসেবে আমরা যেহেতু ঘাড়ে হাত না দিলে কাজ করি না, তাই করোনার কারণে আখেরে আমাদের লাভই হয়েছে। ভাইরাসের পাশাপাশি ধুলাবালুকেও ঠেকানো যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, গত বছরের ডিসেম্বরেও দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। আর চলতি বছরের মার্চে একসময় শীর্ষেও উঠে এসেছিল ঢাকা।

এ শহরে শব্দের দূষণের কথা আর কী বলব! নানা সময়ে বাজখাঁই শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। কারণে-অকারণে হর্ন বাজে গাড়ির। মাঝেমধ্যে খালি রাস্তাতেও তারস্বরে চেঁচাতে চেঁচাতে চলে মোটরসাইকেল। প্রশাসনের ঘোষিত 'নীরব' এলাকাও থাকে প্রচণ্ড মাত্রায় সরব! উদাহরণ হিসেবে সচিবালয় এলাকার কথা উল্লেখ করা যায়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সচিবালয়-সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট মোড়ে বসানো একটি সাউন্ড প্রেশার লেভেল (এসপিএল) মিটারে ওই স্থানের শব্দের মাত্রা পাওয়া যায় ১২৮ দশমিক ৬ ডেসিবেল। অথচ শব্দদূষণ বিধি অনুযায়ী, নীরব এলাকা হিসেবে সচিবালয়ের ওই স্থানের শব্দের মাত্রা থাকার কথা ৫০ ডেসিবল। বুঝুন তবে!

xHOOW5P.jpg


ঢাকায় টাকা ওড়ে, তবে তা আমজনতার পকেট থেকে উড়ে যায় বলেই হয়তো

ঢাকা শহরের যে মান কম, সেটি এখন আন্তর্জাতিকভাবেই প্রমাণিত। অতি সম্প্রতি বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের নতুন র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। এ তালিকার শেষ দিক থেকে চার নম্বর স্থানে রয়েছে ঢাকা। প্রথমে 'চার নম্বর' স্থান শুনলে ভালোই লাগে। তবে ভালো লাগাটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় 'শেষ দিক থেকে' জানার পর। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নানা দেশের বিভিন্ন শহরের ওপর জরিপ চালিয়ে ১৪০টি শহরের র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় ১৩৭ নম্বরে রয়েছে ঢাকা।

তবে হ্যাঁ, ঢাকার হর্তাকর্তারা ভুরু কুঁচকে বলতেই পারেন, 'উন্নতি তো হচ্ছে।' কারণ, ২০১৯ সালের সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। মনে রাখবেন, তা–ও কিন্তু 'শেষের দিক থেকে'। ওই বছর ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৮তম। সেই হিসাব অনুসারে অবশ্য এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে ঢাকার। যদিও সেই অগ্রগতি এই বৃষ্টির দিনগুলোতে রাস্তায় নামার পর মনে করিয়ে দিলে রাগের চোটে 'এসপার-ওসপার' হয়ে যেতে পারে! ভেনিসের মতো নৌকা থাকলে, তা-ও একটা কথা ছিল। কিন্তু কালো ও অস্বচ্ছ কাদা মাখতে মাখতে এবং সেই ঘরানার পানিতে ভাসতে ভাসতে ওসব এক ধাপ অগ্রগতির কথা শুনলে কি আর মাথার ঠিক থাকে?

এত কথার পর, আশা করি আর ডান পক্ষ-বাম পক্ষ সমানে সমান করে তার পাশে বন্ধনীতে আবদ্ধ 'প্রমাণিত' লিখে দিতে হবে না। বলতে চাইলে বলা যাবে আরও। কিন্তু কে আর নিজের মনের বেদনা কোদাল দিয়ে খুঁড়ে জাগাতে চায়? বুঝতে চাইলে বুঝে নিন। কথায় তো আছেই, 'বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা'!

* অর্ণব সান্যাল
 

Users who are viewing this thread

Back
Top