What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পরিবেশ ভালো তো আমরাও ভালো (1 Viewer)

Je31B4x.jpg


লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ঢোকার মুখে বিশাল সব গাছের সারি

বেশ কিছুদিন আগে আমরা কজন মিলে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গিয়েছিলাম। বিশাল আকৃতির দুই সারি গাছের ভেতর দিয়ে আমরা ধীরে ধীরে বনের গভীরে ঢুকছিলাম। চারপাশে ঘন গাছপালা। বনতলে সূর্যের আলো খুব একটা পৌঁছায় না। মিনিট বিশেক হাঁটার পর আমরা ছোট্ট একটি খোলা জায়গায় গিয়ে দাঁড়াই।

আমাদের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো ঝোপালো গাছ। এর মধ্যে বেশির ভাগই বুনো টগর। সাদা রঙের অজস্র ফুলের ভিড়ে টগরের রঙিন ফলগুলো অপূর্ব সুন্দর। গাছগুলো খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল, সেখানে পড়ে আছে বেশ কটি চিপসের প্যাকেট, পলিথিন আর চকলেট, আইসক্রিমের খোসা। জানোই তো, এ ধরনের বর্জ্য আমাদের পরিবেশের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর! কারণ, পলিথিন সাধারণত পচে না, ফলে মাটির সঙ্গে মিশেও যায় না। এই পলিথিন শহরের নালাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।

এ কারণে দেখবে, একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো শহরে জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয়। এমন আরও অনেক ক্ষতিকর দিক আছে। কিন্তু বনের জন্য এসব বর্জ্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অবশ্য এর তাৎক্ষণিক সমাধান আমাদের জানা ছিল। সঙ্গে রাখা থলে বের করে চটজলদি ময়লাগুলো ঢুকিয়ে ফেললাম আমরা।

U67qraw.jpg


দলছুট বানরশাবক

দুপুর গড়িয়ে গেলে বন থেকে বেরোনোর পথে আরেকটি দৃশ্য দেখে আমাদের মন ভালো হয়ে গেল। এক লোক একটি বানরশাবককে কলা খাওয়াচ্ছেন। শাবকটি দলছুট হয়ে খাবারের খোঁজে বন থেকে বেরিয়ে এসেছিল। কিছুটা অসুস্থও মনে হলো। আমাদের দেখে মোটেও ভয় পেল না। আমরা ওকে কলা খেতে দিলাম। খাওয়া শেষে ও আবার বনের ভেতর ঢুকে পড়ল।

চারপাশের এই প্রাণীগুলো আমাদের প্রকৃতিরই অংশ। আমাদের মতো ওদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এসব প্রাণী, কীটপতঙ্গ ও পাখি আমাদের নানাভাবে অসীম উপকার করছে। ওরা লোকচক্ষুর আড়ালে এমন কিছু কাজ করছে, যা না করলে আমাদের খাবারই জুটবে না। মাছি, মৌমাছি, পাখি ও অন্যান্য পতঙ্গ ফুলের পরাগায়ন করে বলেই ফুল থেকে ফল হয়। সেই ফল হতে পারে কোনো ডালবীজ, শস্য, এমনকি ধান, গমসহ আরও অনেক কিছু।

তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়াল? প্রকৃতিকে দূষণমুক্ত রাখলে সব প্রাণী ভালো থাকবে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে এমন পরিবেশের বিকল্প নেই। পৃথিবীজুড়ে সচেতন মানুষ সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য নানাভাবে কাজ করছে। উন্নত দেশগুলো নিজেদের ভোগবিলাস আর সামরিক শক্তি বাড়াতে পরিবেশের সবচেয়ে বেশি দূষণ করছে। এ কারণে অভিযুক্ত দেশগুলোকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছেন পরিবেশবাদীরা।

YztXfIM.jpg


পরিবেশের শত্রু চিপস, চানাচুর আর চকলেটের প্যাকেট

অবশ্য উন্নত দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও পরিবেশদূষণ বেড়েই চলেছে। ধ্বংস করা হচ্ছে বন–পাহাড়, দূষিত করা হচ্ছে নদী; আর কলকারখানার বর্জ্য তো আছেই। আমরা একটু সচেতন হলে এই দূষণগুলো অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারি। তার সঙ্গে যদি অনেক অনেক গাছ লাগাতে পারি, তাহলে প্রকৃতি থাকবে প্রাণবন্ত।

বর্ষাকাল গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় বাগান তৈরি করাও সহজ। তোমার ঘরের পাশে, বারান্দায় কিংবা ছাদে বাগান করার কোনো সুযোগ না থাকলে স্কুলেও করতে পারো। প্রথমে দু–একটি গাছ দিয়েই শুরু হতে পারে। ধীরে ধীরে বাড়তে পারে গাছের সংখ্যা।

চারা লাগানোর পর গাছটির সেবাযত্ন করে বাঁচিয়ে তোলা দারুণ এক কাজ। এরপর অবশ্য তোমার জন্য অনেকগুলো মজার ব্যাপার অপেক্ষা করবে। গাছটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে, নতুন নতুন কুঁড়ি হবে, কাঁচা সবুজ রঙের পাতাগুলো হাওয়ায় দোল খেতে থাকবে। ইচ্ছে করলে তুমি কদিন পরপর স্কেল দিয়ে গাছটি মেপে দেখতে পারো। তাহলে বুঝতে পারবে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গাছটি কত বড় হলো। এটা একটা মজার খেলা!

প্রকৃতিতে এমন অনেক মজার খেলা ছড়িয়ে আছে। আর এসব মজা পেতে চাইলে একটাই কথা—প্রকৃতি ও পরিবেশ ভালো রাখা চাই।

* লেখক: মোকারম হোসেন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top