What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

লোরকার বাড়ি (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
কাব্যানুরাগীদের কাছে এ তীর্থই বটে। হুয়ের্তা দ্য সান ভিসেন্তা কাসা। লোরকার বাড়ি। অমর সব সৃষ্টি আর নির্মাণের মুহূর্ত ধরা আছে যার অলিন্দ আর নিলয়ে। লোরকা পার্কঘেঁষা সেই সামার হাউসে দুদণ্ড কাটানোর অভিজ্ঞতা সে তো মহার্ঘ। আর তা পাওয়ার মধ্যে পড়ে পাওয়া চৌদ্দ সিকের মতো চারুমুখী মেয়েটির নির্মল হাসি, সাদাচুলো বুড়োর অনুপেক্ষণীয় সান্নিধ্য আর প্রাণময় মানুষের জীবনের উদ্‌যাপন, সেও–বা কম কিসে!

pQj9pVX.jpg


স্প্যানিশ কবি লোরকার বাড়ি

'আমার ঘর থেকে ঝরনার শব্দ শোনা যায়।
একটি আঙুরলতা আর সূর্যরশ্মি।
আর কিছু নয়।'
(গ্রানাদা ও ১৮৫০: ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা)

লোরকার বাড়ির দোতলার ঘরটির খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। সবুজ আঙুরলতা বেয়ে উঠেছে জানালার ধার দিয়ে দোতলার বারান্দায়। নির্জন পার্কের ধারে ছোট্ট সাদা বাড়ি। সবুজ জানালা দিয়ে প্রবেশ করা তির্যক সূর্যরশ্মিতে ধুলোর খেলা। ঘরের ভেতর আধো অন্ধকার। অলিভগাছের ছায়া পড়েছে সাদা দেয়ালে। লোরকার মতোই বিষণ্ন আর নীরব এ ঘর।

oZav0aF.jpg


কবিভবন হুয়ের্তা দ্য সান ভিসেন্তা কাসা

ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা, প্রিয় কবি। এখানে, এই জানালার পাশে রাখা টেবিলটাতেই কি আপনি লিখেছেন সেই আশ্চর্য প্রেমের সনেটগুলো? অন্ধকার প্রেমের কবিতা? যা পড়ে আপনার প্রিয় বন্ধু ভিনসেন্ট আলেক্সান্ডার বলেছিলেন, 'ফেদেরিকো, কী দারুণ ভালোবেসেছ, কী অসম্ভব কষ্ট পেয়েছ তুমি!' ফেদেরিকো, এত বেদনা আর বিষণ্নতা আপনার কবিতাগুলোয়।

তিন দিন আগে দুনিয়ার তিন জায়গা থেকে এসে মাদ্রিদে মিলিত হয়েছি তিন বন্ধু। আমি ছিলাম বার্সেলোনায়, এক কনফারেন্সে। কনফারেন্স শেষে অন্যরা দেশে ফিরে গেল আর আমি একা চেপে বসলাম বাসে, বার্সেলোনা থেকে মাদ্রিদের পথে। ছয় থেকে সাত ঘণ্টার দীর্ঘ পথ। একা একা এই এতটা সময় কীভাবে কাটবে বুঝতে পারছিলাম না। তাই সঙ্গে নিয়েছিলাম লোরকার কবিতার অনুবাদ। বাস ছুটে চলল কখনো পাহাড়, কখনো সবুজ জমিনের ওপর দিয়ে। কখনো দুপাশে কমলার বাগান, কখনো বিস্তীর্ণ আঙুরখেত। কখনো গাঢ় সবুজ পাহাড়ের ওপাশ থেকে উঁকি দিচ্ছে সোনালি সূর্য, কখনো মেঘ খেলা করছে ধু ধু বিরান ভূমির দিগন্তে। মুগ্ধ হয়ে বাইরের অপরূপ দৃশ্য দেখছিলাম।

rgtgFY2.jpg


বাড়ির নামফলক

বেশিক্ষণ এ অপার সৌন্দর্য নীরবে উপভোগ করা গেল না। কারণ, পাশে বসা সাদাচুলো বুড়ো দুর্বোধ্য স্প্যানিশ ভাষায় কী যেন বলতে শুরু করল। এখানকার লোকেদের এই মজা। কেউ বুঝুক আর না বুঝুক, কথা তাদের বলতেই হবে। হাত নেড়ে, মুখ বেঁকিয়ে, চেঁচিয়ে মনের আনন্দে কথা বলে স্প্যানিশরা। কথা ছাড়া যেন এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। বেশ স্পষ্ট করেই বুড়োকে বলতে চেষ্টা করলাম, অনলি ইংলিশ। নো স্প্যানিশ! কে শোনে কার কথা! বুড়ো আপনমনে মাথা নেড়ে কথা বলেই চলেছে। ভারি গীতিময় সে ভাষা। এর মধ্যেই এক জায়গায় বাস থামলে বুড়ো হাত নেড়ে বোঝাতে চেষ্টা করল যে এটা খাবার জায়গা, নেমে খেতে হবে। তো বুড়োর সঙ্গে নেমে এক টেবিলে বসে পায়েলা খেলাম। খাবার সময়ও বুড়ো বকবক করেই চলল। হাসিমুখে শুনে গেলাম আমি।

কাল রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছে ছোটন, এ মুহূর্তে হয়তো আকাশে। আর ওদিকে লন্ডন থেকে বিমানে উঠেছে লুবনা, লন্ডনে চাকরি করে এক হাসপাতালে, পেশায় ডাক্তার। স্পেনে কনফারেন্সের আমন্ত্রণ পেয়েই ফোন করেছিলাম ওকে, আসবি নাকি চট করে কয়েক দিনের জন্য? কত দিন দেখা হয় না!

অমনি ছুটির দরখাস্ত অফিসে ফেলে দিয়ে টিকিট করতে ছুটেছিল সে। ইউরোপের কোনো দেশে যেতে ভিসা লাগে না তার, এই এক সুবিধা। কথা আছে, তিন দিক থেকে তিনজন এসে মাদ্রিদে পৌঁছাব একই দিনে। হোটেল বুকিং দেওয়া আছে তিনজনের নামে। তারপর শুরু হবে আমাদের অবিন্যস্ত ভ্রমণ।

urOWXJl.jpg


কবিতীর্থে লেখক

আমি মাদ্রিদ পৌঁছালাম সবার আগে। বাসস্টেশন থেকে ট্যাক্সি নিলাম। যথারীতি ট্যাক্সি ড্রাইভার এক বর্ণও ইংরেজি জানে না। হাতের কাগজে হোটেলের নাম–ঠিকানা দেখে প্লাজা দেল কারমেনে পৌঁছে দিল। ওখান থেকে খানিক হাঁটলেই দে লা মনতেরা রাস্তায় হোটেলটা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। দে লা মনতেরা রাস্তায় মানুষের ঢল। নানা বয়সের নারী-পুরুষ কলকল করে পথ চলেছে। রাস্তার দুধারে ক্যাফে। এখানে মানুষ পথের ধারের এসব ক্যাফেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতে থাকে। হা হা হাসি শোনা যায় ক্ষণে ক্ষণে। কখনো উদাত্ত গলায় গেয়ে ওঠে কেউ। ভারি প্রাণবন্ত, আমুদে আর আড্ডাবাজ স্পেনের মানুষ।

ঢাকা থেকে আসার সময় শিল্পী শহিদ কবির, যিনি তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময় স্পেনে কাটিয়েছেন, বলেছেন স্প্যানিশদের এই আশ্চর্য স্বভাবের কথা। আড্ডা আর কথা এদের প্রাণ। এরা নাকি সারা রাতই আড্ডার আসরে কাটিয়ে দিতে জানে! রুমের চাবি নিয়ে স্যুটকেস টেনে তিনতলায় গিয়ে দেখি ঘরটা ছোট হলেও লাগোয়া ছোট্ট একটা গোল বারান্দা আছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে গোটা প্লাজা চোখে পড়ে। রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে বিচিত্র সব মানুষ আর তাদের কাণ্ডকারখানা দেখছিলাম। হঠাৎ মনে হলো এই ভিড়ে পিঠে ব্যাগ আর মাথায় কাপড়ের ক্যাপ পরা লম্বা লোকটিকে আমি চিনি। লোকটা এদিক-ওদিক চেয়ে কী যেন খুঁজছিল। আমি ওপর থেকে চেঁচিয়ে ডাকলাম, ছোটন, এইখানে! তার একটু পর লুবনাও এসে পৌঁছাল। তিন বন্ধু একত্র হলাম অবশেষে।

9n4jHaY.jpg


খানিক বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে প্লাজা দেল কারমেনে গেলাম আমরা। গিজ গিজ করছে মানুষ। কোথাও ভবঘুরে গিটার বাজিয়ে গান করছে, কেউ বল লোফালুফি খেলা দেখাচ্ছে। কেউ কিম্ভূত মূর্তি সেজে বসে আছে, কেউ বিক্রি করছে ফুল। আর দশজন স্প্যানিশের মতো আমরাও একটা পথের ধারের ক্যাফেতে বসে আড্ডায় মশগুল হয়ে গেলাম। রাত কত গভীর হয়ে গেছে, তা টেরই পেলাম না। লুবনা গুগল ম্যাপ, ট্রিপ অ্যাডভাইজার ইত্যাদি খুলে পরবর্তী পরিকল্পনা গোছাতে চেষ্টা করল একটু। আমি ওকে থামিয়ে বললাম, পূর্বপরিকল্পনা না থাকাই বেশি এক্সাইটিং! এসব এখন থাক।

পরবর্তী কয়েকটা দিন সত্যি তেমন কোনো বড় পরিকল্পনা ছাড়াই বহমান নদীর মতো কেটে যাচ্ছিল সময়। মাদ্রিদ থেকে দূরপাল্লার বাসে চড়ে একের পর এক শহর ছাড়িয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। কোথাও শ্রান্ত হয়ে রাত্রি যাপন করছি, কোথাও এমনি আলগোছে ফেলে যাচ্ছি পায়ের ছাপ। যেখানে ইচ্ছা হচ্ছে দুদিন থেকে যাচ্ছি, আবার যখন মনে হচ্ছে তখনই রওনা হচ্ছি। সে কী দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা! তো এভাবে উদ্দেশ্যহীন ঘুরতে ঘুরতে গ্রানাদায় এসে পৌঁছেছি কাল গভীর রাতে। খানিক বৃষ্টি হয়েছে তখন। ঝপ করে ঠান্ডা পড়ে গেছে প্রাচীন এ শহরে। ক্লান্ত আর শ্রান্ত হয়ে হোটেলে চেকইন করার সময় কাউন্টারের মেয়েটির কাছে জেনে নিচ্ছিলাম বিখ্যাত আল হামরা প্রাসাদে যাওয়ার কায়দাকানুন। জানতে চাইছিলাম পরদিন কোথায় কোথায় ঢুঁ মারা যায়। স্প্যানিশ ফ্ল্যামেনকো নাচ দেখার কোনো উপায় কি আছে? কীভাবে যেতে পারি ম্যুসি দ্য রেইনে দ্য সোফিয়ায়, যেখানে রাখা আছে পিকাসোর 'গোয়ের্নিকা'?

dhMlASv.jpg


ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা পার্ক

মেয়েটা তড়বড় করে সব উপায় বাতলে দিচ্ছিল আর এও বলছিল যে চাইলে আমরা এসব বন্দোবস্ত হোটেল থেকেই করে নিতে পারি। হোটেলের বাসিন্দাদের সঙ্গে জুড়ে দিতে পারে সে আমাদের অনায়াসেই। তাতে খরচ যেমন বাঁচবে, তেমনি সময়ও। 'গ্রাসিয়াস, গ্রাসিয়াস' বলে ওকে ধন্যবাদ দিয়ে সব শেষে জানতে চাইলাম, 'আর লোরকার বাড়ি?'

চারুমুখী মেয়েটা তার বড় বড় কালো দুটি চোখ তুলে চাইল। মুহূর্তে কোমল হয়ে উঠল তার দৃষ্টি আর কণ্ঠস্বর। সে নিচু কণ্ঠে আবৃত্তি করতে শুরু করল স্প্যানিশ ভাষায়। বুঝলাম লোরকা আজও স্প্যানিশদের হৃদয়ে আসীন হয়ে আছেন চোখের মণি হয়ে। 'চারুমুখী মেয়েটি অলিভ কুড়োয়।

Jtx4Lsx.jpg


হুয়ের্তা দ্য সান ভিসেন্তা কাসার সামনে সঙ্গীদের সঙ্গে লেখক

দুর্গাচূড়ায় প্রেমিক বাতাস তার ক্ষীণ কোমর জড়িয়ে থাকে। দীর্ঘ আঙরাখা আর নীল ও সবুজ পোশাকে আন্দালুশীয় ঘোড়ার পিঠে চার আরোহী চলে যেতে যেতে বলে, ও মেয়ে, কর্ডোবায় যাই, চলো। মেয়েটি তাকিয়েও দেখে না।' তারপর যে কদিন গ্রানাদায় ছিলাম, জেনেছি মেয়েটির নাম সুমাইয়া, আরব রক্ত ওর দেহে মিশে আছে বলে এমন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ চোখ আর কালো কোঁকড়া চুল তার, ভুবনমোহিনী এক হাসির মালকিন মেয়েটি, তাকে দেখলেই হেসে বলতাম, 'ও চারুমুখী মেয়ে।' সেও না বুঝে মিষ্টি হেসে রোজ বলত, হোলা! কমো এস্তা ত্যু দিয়া? (হ্যালো, দিনটা কেমন গেল তোমাদের?)

সুমাইয়ার কাছেই জেনেছি, আমাদের হোটেল থেকে ২০ মিনিটের হাঁটার পথ ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা পার্ক। আর তার পাশেই লোরকার সেই সাদা দোতলা বাড়ি বা সামার হাউস, যার নাম হুয়ের্তা দ্য সান ভিসেন্তা কাসা, যা বর্তমানে একটা জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে বসে তিনি লিখেছেন তাঁর কালজয়ী কাব্যনাট্য 'বোদাস দ্য স্যাংরে' (ব্লাড ওয়েডিং) বা 'ইয়ারমা'র মতো রচনা। স্পেনের পুরোনো জিপসি মিথ আর লোকগাথাগুলোয় যেখানে বসে জাদুর কলম ছুঁয়ে দিচ্ছিলেন তিনি, আর ফ্যাসিস্ট ফ্রাংকোর হাতে নিহত হওয়ার কিছুদিন আগপর্যন্তও যে বাড়িতে বিপন্ন কবি আধো অন্ধকারে বসে লিখে চলেছিলেন প্রেমের সনেট।

tCdgeMp.jpg


এই দোতলার জানালার পাশে বসেই হয়ত লিখেছেন তিনি অমর কাব্য

তাঁর দোতলার ঘরে ছোট লেখার টেবিলের সামনের দেয়ালে সাঁটা লা বারাকা থিয়েটারের পোস্টারটির (এই নাট্যদল নিয়ে সমস্ত স্পেন ঘুরে বেড়িয়েছেন লোরকা) সামনে দাঁড়িয়ে বিষাদে মন ভরে যায় কেন যেন। তিনি লিখেছিলেন, 'আমি বুঝতে পারছি, খুন করা হয়েছে আমাকে। তারা কাফে, কবরখানা আর গির্জাগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজছে। তারা সমস্ত পিপে আর কাবার্ড তছনছ করেছে। তিনটি কঙ্কালকে লুট করে খুলে নিয়ে গেছে সোনার দাঁত। আমাকে তারা খুঁজে পায়নি। কখনোই কি পায়নি তারা? না, কখনোই নয়।'

গ্রানাদায় এক অবিস্মরণীয় ভ্রমণের শেষ দিনে, যখন সেভিলার মনোরম নদী আর ষাঁড়ের লড়াই (সে গল্প নাহয় আরেক দিন হবে) হাতছানি দিচ্ছে আমাদের, বিদায়ের আগে মুস্যো দ্য রেইনে দ্য সোফিয়ার ২০৬ নম্বর কক্ষে পিকাসোর অকল্পনীয় সৃষ্টি 'গোয়ের্নিকা'র সামনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম যখন, তখনো লোরকার কথাই ভাবছিলাম। এই যুদ্ধ, এই বীভৎসতা, এই হত্যার উৎসব, এই বিপন্ন মানবতা কি সত্যি খুন করতে পেরেছে কবিতাকে, শিল্পকে? যাকে তারা হত্যা করতে চেয়েছিল তাকে কি তারা খুঁজে পেয়েছে আসলে? কাফে, কবরখানা আর গির্জাগুলোকে তছনছ করে? না, কখনোই নয়।

* লেখক: তানজিনা হোসেন, চিকিৎসক | ভ্রমণকাল: ২০১৩
 

Users who are viewing this thread

Back
Top