What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

১০ লাখ টাকার ভর্তা বিক্রি রাখীর (1 Viewer)

ZF8BLKd.jpg


বাবা–মায়ের একমাত্র কন্যা রুবাইদা রাখী। মেয়েকে চুলার ধারে ঘেঁষতে দিতেন না মা। কোনো দিন রান্নাও শেখাননি। বাবা ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী। বাবার বদলির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেকেছেন আর সেসব অঞ্চলের রসনাকে আপন করে নিয়েছেন। খেতে খুব ভালোবাসতেন রাখী। মা ভালো রাঁধতেন, ভালো রাঁধতেন নানি, দাদি, খালা, ফুপুরাও। বিয়ের পর তাই নিজের ভালো খাওয়ার দায়িত্ব নিতে হলো নিজের কাঁধে (পড়ুন নিজের হাতে)। কোমর বেঁধে রান্না শুরু করলেন রাখী।

c1uEAlB.jpg


রাখীর রান্না খেয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন—সবাই রাখীর রান্না খেয়ে তারিফ করতেন। আত্মীয়স্বজন যিনিই আসতেন, রান্নার দায়িত্ব পড়ত রাখীর কাঁধে। সবাই খেয়ে খুশি হতেন, প্রশংসা করতেন। বান্ধবীরাও খেয়ে অবাক হয়ে জানতে চান, 'কোথায় শিখলি এসব? তুই তো ব্যবসা করতে পারিস!' আইডিয়াটা মনে ধরল রাখীর। চার বছর আগে শুরু করলেন রান্না করা খাবারের ব্যবসা। অনেকেই বলেছিলেন, 'দেশী খাবার, ভর্তা, তরকারি, এসব টাকা দিয়ে কে কিনবে? বিদেশি কিছু ট্রাই করো।'

কিন্তু রাখী যা পারেন, তা–ই দিয়েই শুরু করলেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল, সবাই ভর্তা পারলেও তাঁর মতো কেউ পারেন না। ১০০ পদের ভর্তা দিয়ে যাত্রা শুরু করলেন রাখী। সঙ্গে ছিল ১৬ পদের ডাল। আস্তে আস্তে যোগ করেন ৫০ পদের তরকারি, মাংসের নানা পদ, পোলাও, রোস্ট, কোরমা, চাইনিজ, তেহারি, কাচ্চি, মিষ্টির নানা পদ, ফুচকা, চটপটি, হালিমসহ অনেক ধরনের নাশতার আইটেম।

PqBCeOj.jpg


শুরুতে রাখী অফলাইনে অফিসে পরিচিতদের কাছে খাবার বিক্রি করতেন। তারপর বন্ধুবান্ধব আর পরিচিতদের পরামর্শে অনলাইনে এসে ভালোই সাড়া পান। তবে অতিমারিকালের লকডাউনে তাঁর ব্যবসা দাঁড়িয়ে যায়।

ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে রাখীর কাছে উত্তরবঙ্গ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবারগুলোর চাহিদা বেশি থাকে। সম্প্রতি ক্যালরি ও যাঁর যাঁর ওজন বুঝে ডায়েটেশিয়ানদের সঙ্গে কাউন্সিলিংয়ের পর ডায়েট বক্স নিয়েও কাজ করছে রাখীর 'ভর্তা বাহার'। লকডাউনে রাখীর প্রায় ১০ লাখ টাকার ভর্তাসহ অন্যান্য দেশি খাবার বিক্রি হয়েছে। সম্প্রতি ঈদুল ফিতরের তিন দিনে রাখী ৩৫ হাজার টাকার খাবার বিক্রি করেছেন। রোজার মাসে কেবল ইফতারিই বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার।

317cWXH.jpg


এই সফলতার রহস্য সম্পর্কে রাখীর বক্তব্য, 'আমার রান্নায় আমি ভেজালমুক্ত খাঁটি উপকরণ ব্যবহার করি। আমাদের গ্রামের মসলা, নিজেদের উৎপাদিত মরিচ, সবজি, শিদল, কেমিক্যাল মুক্ত চাল, ঘি, খাঁটি শর্ষের তেল এগুলো দিয়ে রান্না করি। বাজারের কেনা কিছু ব্যবহার করি না। তেলটা একদম খাঁটি হতে হবে। এটা জরুরি। আর রান্না হওয়ামাত্র গ্রাহকদের কাছে গরম খাবার পৌঁছাতে চেষ্টা করি।' ঢাকা শহরের যেকোনো জায়গা থেকে অনলাইনে অর্ডার করে খাওয়া যাবে রাখীর রান্না। তবে বেশি খাবার অর্ডার করলে জানাতে হবে আগের দিন।

স্বামী আর এক ছেলে নিয়ে রাখী থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। আপাতত সংসারের সেই রান্নাঘরেই চলছে ব্যবসার রান্না। তবে মহামারিকাল ফুরালে নিজের একটা রেস্টুরেন্ট খোলার ইচ্ছা আছে রাখীর। সেখান থেকে প্রতিদিন কয়েকজন পথশিশুকেও খাওয়াবেন বলে ঠিক করেছেন। যাদের সামর্থ্য নেই, তারাও যেন রাখীর হাতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হয়, তাই এই ব্যবস্থা। রাখীর রান্না সবাই পছন্দ করে, কিন্তু তাঁর ছয় বছর বয়সী ছেলে খুবই বিরক্ত হয়। তার ভর্তা, তরকারি পছন্দ নয়। তার পছন্দ বার্গার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। ছেলের কথা ভেবেই রাখী কিছু স্ন্যাকস আইটেমের কথাও ভাবছেন।

mL6LtKn.jpg


রাখী

রাখী বলেন, 'আমি রাজধানীর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির প্রস্তাব পাই। কিন্তু চাকরি আমাকে কখনোই বিশেষ টানেনি। আমি সব সময় নিজে কিছু করতে চেয়েছিলাম। এখন সেই স্বপ্নকে প্রতিদিন সত্যি হতে দেখি। প্রায় প্রতিদিনই আমার এক–দুই হাজার টাকা লাভ থাকে। আমি বলব, যেই কাজটা আপনি পারেন, ভালোবাসেন, দেরি না করে একটু শিখে–পড়ে সেটাকেই দাঁড় করিয়ে ফেলুন। প্রথম প্রথম লোকে অনেক কথা বলবে। আপনার সফলতাই হবে তাদের জন্য সেরা জবাব।'

ছবি: রাখীর ফেসবুক পেজ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top