What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

করোনা বদলে দিয়েছে পড়ার রুচি (1 Viewer)

করোনাকালে কোন ধরনের বইয়ের দিকে বেশি ঝুঁকছেন পাঠক, এ নিয়ে বিভিন্ন দেশে কয়েকটি গবেষণা হয়েছে সম্প্রতি। দেখা গেছে, অন্য অনেক কিছুর মতো বিশ্বজুড়ে পাঠাভ্যাসেও এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। অন্তর্জাল ঘেঁটে এবং সমীক্ষাসূত্রে জানা যাক সেই বদলগুলো।

Uyu6ciq.jpg


এক বছর আগের জীবন আর এখনকার জীবন পাশাপাশি রাখলে আঁতকে উঠতে হয়। এত পার্থক্য! হ্যাঁ, আমাদের জীবনযাপনের পদ্ধতিতে অকল্পনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে মহামারির আতঙ্ক আর দীর্ঘ সময়ের লকডাউন। খাদ্যাভ্যাসে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি পরিবর্তন এসেছে অবসরযাপনেও। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন বোধ করি এসেছে পাঠাভ্যাসে।

যে ব্যক্তি এই কিছুদিন আগেও হয়তো প্রতিদিন বই পড়তেন দুই ঘণ্টা, তিনি এখন লকডাউনের কবলে পড়ে পড়ছেন পাঁচ ঘণ্টা। কিছুদিন আগেও যিনি শুধুই রোমান্টিক উপন্যাসের পাঠক ছিলেন, এখন তিনি পড়ছেন মহামারির ইতিহাস ঘরানার তথ্যমূলক বই। লকডাউন ও করোনা এভাবেই বদলে দিয়েছে সারা পৃথিবীর মানুষের পড়ার ধরন। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণা অন্তত এ কথাই বলছে। আর এ সময়ে সবচেয়ে বড় যে পটপরিবর্তন, তা হলো অনলাইনে বই বিক্রি বেড়েছে ব্যাপক হারে।

ফরাসি বিপ্লবের সময় হঠাৎই সাহিত্যের রক্ষণশীলতা ভেঙে গিয়েছিল, যৌনতাকে আত্তীকরণ করে নতুন হয়ে উঠেছিল সাহিত্য। আবার শিল্পবিপ্লবের সময় বেড়েছিল কল্পবিজ্ঞানের পাঠক। এরপর পৃথিবীজুড়ে পাঠাভ্যাসের বড় পরিবর্তন দেখা গেছে গত শতকের তিরিশের দশকে। তখন বিপুলসংখ্যক পাঠক ঝুঁকে পড়েছিলেন গোয়েন্দা গল্প-উপন্যাসের দিকে।

এখন এই করোনাকালে এসে আবার পাঠাভ্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে সিলভিয়া প্লাথের দ্য বেল জার, গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড ও লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরার বিকিকিনি।

বোঝা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস বদলে দিচ্ছে পাঠাভ্যাস। তবে কতখানি এবং কীভাবে বদলে দিচ্ছে, সেটাও তো জানা দরকার। সেই প্রয়োজন অনুভব করেই বিশ্বের কয়েকটি দেশে পাঠকদের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে জরিপ, হয়েছে গবেষণা।

যুক্তরাজ্যের জরিপ যা জানাল

যুক্তরাজ্যের পাঠকদের করোনাকালীন পাঠাভ্যাস নিয়ে জরিপ চালিয়েছে 'কনভারসেশন' নামের একটি প্রতিষ্ঠান। মাত্র তিনটি প্রশ্নের ওপর ভিত্তি ধরে ৮৬০ জন পাঠকের কাছে গিয়েছিল তারা। প্রশ্ন তিনটি হচ্ছে—১. কী পরিমাণ মানুষ বই পড়ছেন? ২. যাঁরা বই পড়ছেন, তাঁরা কী ধরনের বই পড়ছেন? ৩. মানুষ কি আবার বইয়ের দিকে ফিরে আসছে?

জরিপের ফলাফল বলছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে বইপড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে। পড়ার সময়সীমাও বেড়েছে। বদলে গেছে বিলেতি পাঠকদের পছন্দের ধরনও। মহামারিতে করোনাবিষয়ক বই, সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন ধরনের পুস্তক এবং থ্রিলার উপন্যাস বেশি পড়ছেন পাঠক। কেউ কেউ অবশ্য পুরোনো বইয়ের কাছে ফিরে গেছেন। পড়ছেন চিরায়ত সাহিত্যের বইগুলো।

ভারতের পাঠকদের কী অবস্থা?

কোভিড-১৯ ভারতের পাঠকদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে 'নিয়েলসেন' নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নিয়েলসেনের প্রতিবেদন বলছে, ভারতের বইপড়ুয়ারা আগে সপ্তাহে ৯ ঘণ্টা বই পড়তেন। এখন পড়ছেন ১৬ ঘণ্টা। এই সময়ে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধের বই—যেমন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আত্মোন্নয়ন, উদ্যোক্তাবৃত্তি, ধর্মীয় ও ইতিহাসের বই পড়ছেন বেশি। কারণ হিসেবে নিয়েলসেনের গবেষণায় যা উঠে এসেছে তা হলো—ভয়, মনঃপীড়ন, ধারণাতীত রাজনৈতিক অস্থিরতা, মহামারির আতঙ্ক, হঠাৎ মৃত্যু প্রভৃতির উদ্বেগ থেকে বাঁচতে মানুষ বেশি বেশি তথ্যমূলক বইয়ের দ্বারস্থ হচ্ছে।

গত পাঁচ বছরে 'আমাজন ইন্ডিয়া' যা আয় করেছে তার ২২ দশমিক ৮ শতাংশ এসেছিল প্রবন্ধের বইয়ের মাধ্যমে। কিন্তু গত এক বছরে সেই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশে। ভারতের পাঠকদের মধ্যে আত্মোন্নয়নমূলক বই, ক্যারিয়ারবিষয়ক ও ভাষা শিক্ষার কিতাব এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণমূলক বই পড়ার প্রবণতা বাড়ার ফলে এমনটি ঘটেছে বলে নিয়েলসেনের গবেষণায় জানা যায়।

বইয়ের বিক্রিবাট্টার প্রচলিত প্রথাতেও প্রভাব ফেলেছে করোনা অতিমারি। ভারতের মুক্ত লেখক সংঘ জানিয়েছে, এ সময় ৩০ থেকে ৩৪ শতাংশ বই বিক্রি হয়েছে অনলাইন বুকশপ ও ই-কমার্স সাইটগুলোর মাধ্যমে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হার্পার কলিন্স ইন্ডিয়ার সম্পাদক বুশরা আহমেদ বলেছেন, ভারতে নন ফিকশন বইয়ের পাঠক ক্রমেই বাড়ছে। তাঁদের পছন্দের বিষয়ের মধ্যে স্থান করে নিচ্ছে পরিবেশ, ইতিহাস, রাজনীতি, পুঁজিবাদ, মনোজাগতিক সমস্যা, বিশ্বায়ন প্রভৃতি।

রূপা পাবলিকেশনসের মহাব্যবস্থাপক কপিশ মেহরার ভাষ্য, নন ফিকশন বইয়ের উত্থান প্রমাণ করে, ভারতের পাঠকেরা পরিণত হচ্ছেন। তবে আলেফ বুক কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেভিড দেবিদার একটু ভিন্নমত দিয়েছেন। তিনি বলেন, নতুন কোনো চেতন ভগত বা অমিশ জন্ম নিচ্ছেন না বলে নন ফিকশন বইয়ের পাঠক বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বই পড়া কমেছে

অ্যাসোসিয়েশনস অব আমেরিকান পাবলিশার্স (এএপি) জানিয়েছে, গত বছরের প্রথম ছয় মাস—জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট বই বিক্রি হয়েছে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন, যা ছিল আগের বছরের (২০১৯) তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ কম। অর্থাৎ করোনাকালে মার্কিনদের মধ্যে বই পড়ার হার কমেছে। তবে বেচাবিক্রি যেটুকুই হয়েছে, তার প্রায় সিংহভাগই হয়েছে ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে, বলেছেন বার্নস অ্যান্ড নোবলের ই-কমার্স ব্যবস্থাপক জেসিকা ফ্লারেউ।

কলাম্বিয়া প্রদেশের ৫০টি স্থানের ২৬ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে জরিপ চালিয়েছে 'রেনেসাঁ' নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রতিবেদনমতে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ডিজিটাল মাধ্যমে বই পড়ার হার বেড়েছে ১০৭ শতাংশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, পাঠাভ্যাসের এই পরিবর্তনের পেছনে করোনা মহামারি ও লকডাউনের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি পড়েছেন কিশোর উপন্যাস হ্যারিসন পি স্পেডার, পার্সোনাল স্পেস ইনভেডর ও ঐতিহাসিক উপন্যাস অ্যান ফাইটস ফর ফ্রিডম।

করোনাকালে গত এক বছরে আমাজন ডটকম থেকে যেসব বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্বের এই সুবৃহৎ বই বিক্রির অনলাইন প্রতিষ্ঠান। তালিকায় দেখা যাচ্ছে, সবার ওপরে এখনো রয়েছে 'হ্যারি পটার' সিরিজ। এরপর ক্রমান্বয়ে রয়েছে হাউ দ্য ক্রোড্যাডস সিং, আমেরিকান ডার্ট, দ্য গিভার অব স্টার্স, দ্য আইজ অব ডার্কনেস, হোয়েন উই বিলিভড ইন মারমেইডস ও লিটল ফায়ার্স এভরিহয়ার।

নন ফিকশন বইয়ের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে মিশেল ওবামার লেখা বিকামিং। তারপর আছে দ্য স্প্লেনডিড অ্যান্ড দ্য ভিলে, টকিং টু স্ট্রেনজার্স ও কান্ট হার্ট মি।

বাংলাদেশের পাঠকদের হালহকিকত

করোনা মহামারির সময়ে বাংলাদেশের পাঠকদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট জরিপ বা সমীক্ষা হয়নি। তবে বর্তমান নিবন্ধের লেখক ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইয়ের গ্রুপগুলোতে একটি জরিপ চালিয়েছিলেন। এ ছাড়া গুগল ডকের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি করেও মেইল করেছিলেন পাঠকদের কাছে। এতে অংশ নিয়েছেন ৬৪৭ জন পাঠক।

সেই জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৫৪ শতাংশ পাঠক বলেছেন, করোনকালে তাঁদের বই পড়ার অভ্যাস বেড়েছে। অপর দিকে মাত্র ৮ শতাংশ পাঠক বলেছেন, তাঁদের পড়ার অভ্যাস কমেছে। ২৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা ছাপা বইয়ের চেয়ে অনলাইনে বেশি পড়ছেন। ৫ শতাংশ পাঠকের মত, তাঁরা করোনার আগে দৈনিক ১ থেকে ৫ ঘণ্টা পড়তেন, এখন ৫ ঘণ্টার বেশি পড়েন। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রহস্য ও থ্রিলার উপন্যাস। ৭ শতাংশ পাঠকের কথা, তাঁরা গত এক বছরে থ্রিলার পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। এর পরের অবস্থানে আছে ধর্মীয় পুস্তক।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে আত্মোন্নয়নমূলক বই। ৪ শতাংশ পাঠক জানিয়েছেন, তাঁরা এ ধারার বই বেশি পড়ছেন। মাত্র ২ শতাংশ সামাজিক উপন্যাসের কথা বলেছেন।

অনলাইনে গেল বছরে কী ধরনের বই বিক্রি হলো? অনলাইন বই বিক্রির প্ল্যাটফর্ম প্রথমা ডটকম সূত্রে জানা গেল তার কিছু তথ্যও।

প্রথমা ডটকমের বই বিক্রির পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে এখানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্মীয় প্রভৃতি বই। লক্ষণীয় যে সৃজনশীল বইয়ের তুলনায় বেড়েছে মননশীল বইয়ের পাঠক। এর বাইরে থ্রিলার ও অনুবাদ বইয়েরও একটা বড় পাঠক শ্রেণি তৈরি হচ্ছে, যা করোনার এই সময়ে আরও বেড়েছে।

সূত্র: দ্য কনভারসেশন, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস অনলাইন, ওয়ান রিড ব্লগ, দ্য সেভেন্টি ফোর, এএপি, ইয়াহু ফাইন্যান্স ও ব্যক্তিগত সমীক্ষা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top