What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাগানের বাগানে: শেষ পর্ব (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
সব দেশের সাধারণ মানুষের স্বরূপ অবিকল। শহুরে কৃত্রিমতার লেশমাত্র নেই। পিসো, তার পরিবার কিংবা গ্রাম, এটাই আসল মিয়ানমার। শান্ত আর লক্ষ্মী ইরাবতী কী অবলীলায় বুক পেতে দেয় সবার জন্য।

dUscfpx.jpg


বাইরে সোনাঝরানো বিকেল। এই জাদুর জগতে সবই স্বর্ণে পরিপূর্ণ। মন্দিরের বাইরে সারি সারি সোনালি গাছ। গাছে ফুল ফুটেছে, সে–ও সোনার। বাতাস সোনালি গুঁড়া হয়ে ঢেউ খেলে যাচ্ছে রাজকীয় বসন মন্দিরের ভাঁজে ভাঁজে। এই রং গায়ে মেখে চলে যাওয়া যায় বহুদূর। পৃথিবীকে কয়েকবার প্রদক্ষিণ করে আবার এখানেই ফিরে আসা যায়। এখানকার অসহনীয় রূপ বর্ণনা করতে পারবেন তিনি, যিনি বছরের পর বছর এই রঙের তপস্যা করেছেন। আমার মতো ক্ষুদ্র আত্মার সাধ্যাতীত এ কাজ। গৌতম বুদ্ধও বোধ করি খানিকটা হেসে ফেললেন এই ধাঁধা দেখে। জগতে কি শুধুই জাগতিক বস্তুর সমাহার, একটুও কি ইন্দ্রজাল থাকতে নেই!

XcpJjYh.jpg


সোনালি রঙের আলাদা গন্ধও এখন আমাকে পেয়ে বসেছে, সে চাঁপা ফুলের গন্ধ। এমন এক অসামান্য সুন্দর বিকেল ফুরিয়ে যায় না কখনো। সোনার অক্ষরে লিখে রাখা যায় কয়েক শতক ধরে।

আমি যখন সোনালি রং আর আলোয় মোহিত হয়ে আছি, তখন পেছন থেকে মিষ্টি একটা আওয়াজ এল, 'হারিয়ে গেলে নাকি! ডাকছি অনেকক্ষণ ধরে।'
রিভিয়ান দাঁড়িয়ে। গতকাল পরিচয়। ওকে এখানে পেয়ে আমার আহ্লাদের শেষ নেই।
নিরীহ একটা ভাব নিয়ে বললাম, 'রিভিয়ান, সখী আমার, বন্ধু আমার, কয়েকটা ছবি তুলে দাও না।'

ছবি তুলতে তুলতে অনেক বিষয়ে কথা হলো। রিভিয়ানের পরিবার খ্রিষ্টান, কিন্তু সে নিজে সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করে। ধর্ম পালন নিয়ে মাথাব্যথা নেই। পরিবার থেকেও চাপ নেই। বছরের ৯ মাস কাজ করে আর ৩ মাস ঘুরে বেড়ায়। অবশ্য এবার সে লম্বা ছুটিতে আছে, দুই বছর।

রিভিয়ান হয়তোবা এর চেয়েও সুন্দর জায়গা দেখেছে। একই আদলে, রঙে আমিও ইয়াঙ্গুনে শোয়েডাগন প্যাগোডা দেখেছি, কিন্তু এই প্যাগোডার আলাদা মায়া আছে, আকর্ষণ আছে, আতিথ্য আছে, অতিশয়তা আছে; আর আছে আকুলতা। একদম কাছে টেনে নেয়, বুকে আগলে রাখে।

nqF6bn8.jpg


শোয়েযিগন প্যাগোডার সামনে ভিক্ষু

রিভিয়ান চলে গেল। আমি রয়ে গেলাম সোনালি ভুবনে আবিষ্ট হয়ে আরও কিছুক্ষণ।
প্যাগোডায় বাচ্চা ভিক্ষু অনেক দেখি। একদল এসেছে উপাসনা করতে। কাছাকাছি যাওয়ার আগেই লাইন ধরে ঢুকে গেল মন্দিরের ভেতর। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে প্রদক্ষিণ করল মন্দির। আমি ছবি তুলতে চাইলাম, প্রত্যেকেই হাতের পাখা মুখের ওপর মেলে ধরল। বেশ লাগছিল, লজ্জাবতীর মতো।

ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে এল। প্যাগোডা তখন হয়ে গেল স্বর্গ থেকে নেমে আসা এক সোনার রাজপ্রাসাদ; চারদিকে যে আভা ছড়াতেই জানে।

এতক্ষণে খেয়াল হলো আমার মূল শহরে যাওয়ার কথা। পাপেট শো দেখতে হবে যে। শোয়েডাগন প্যাগোডাকে আরেকবার দেখে ছুটলাম দোকান থেকে নেওয়া ঠিকানায়। কিছুই চিনি না। তার ওপর আবার সন্ধ্যার পরই একদম নিঝুম হয়ে যায় বাগান হেরিটেজ টাউন। এর ভেতর দিয়েই যেতে হবে। পথে কোথাও কোথাও বাতিও নেই।

sKAojXh.jpg


বাগান প্রাসাদের সামনে লেখক

আমার তাড়া নেই, পথ সোজা একটা। শহরে রাস্তার বাতি চোখে পড়তেই একজনের সামনে ঠিকানা মেলে ধরলাম। একটু ঘুরেফিরে পেয়ে গেলাম। একজনের বাসায় তিনটে পুতুল, পুতুলনাচের শিল্পী আর স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র। শিল্পী বেশ আয়োজন করে শুরু করেছেন পরিবেশনা। যাঁদের হাতে পুতুলের সুতা বাঁধা, তাঁরাই গাইছেন, ডায়ালগ দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে বাদ্যযন্ত্র বাজছে তালে তালে। সাধারণত নাচ–গানই পুতুলনাচের মূল বিষয়। তবে নিজেদের জন্য যদি তাঁরা আয়োজন করেন, তবে তাতে থাকে মানুষের হাসি-কান্নার গল্প।

এই স্থানীয় জনগণের মধ্যে একজনকেই খুঁজে পেলাম যে ইংরেজি জানে। ছেলেটির নাম ইয়ান, সরকারি অফিসে চাকরি করে আর থাকে শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে। মিয়ানমারের সমাজ বর্তমানে মাতৃতান্ত্রিক নাহলেও এ ধরনের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। আগের কালের রেওয়াজ এখনো চালু আছে। নারীরা আশপাশের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা উপভোগ করেন। আর ঘরের কাজও পুরুষেরা ভাগ করে নেন। ইয়ানের স্ত্রী এখনো পড়ালেখা করছে। স্ত্রীর বেশির ভাগ কাপড়চোপড় ইয়ান কেচে দেয়, অন্যান্য কাজ করতেও দ্বিধা নেই।
বাজারে মেয়ে দোকানদারই বেশি দেখলাম।

রাতের খাবার আমি এখানেই খাব। এদের নুডলস বেশ সুস্বাদু আর পরিচিত খাবার আমার জন্য। সে রকমই চাইলাম রেস্তোরাঁয় এসে। সঙ্গে পেয়ে গেলাম বিখ্যাত কেক 'সানউইন মাকিন'। সেমাই আর নারকেলের দুধ দিয়ে তৈরি এই কেককে দশে দশ দেওয়া যায়।

PrQciJM.jpg


সানউইন মাকিন, ছবি: উইকিপিডিয়া

যেহেতু মনে হলো যথেষ্ট প্যাগোডা, সূর্য, চাঁদ দেখা হয়েছে, সেহেতু বাগানে তৃতীয় দিনে আর সুয্যিমামা জাগার আগে আমি জেগে উঠিনি। একটু বেলা করে, মানে এই সাতটার দিকে উঠে বাইরে হাঁটতে বের হলাম। এখনও রাতের ঠান্ডা হাওয়া চোখেমুখে বেশ একটা সুবোধ ভাব দিয়ে যাচ্ছে। কতক্ষণ হেঁটেছি জানি না। কারণ, হেরিটেজ টাউনে কোনো বাড়িঘর নেই, যা আছে সব বাইরে। একটা বাড়ির সামনে ২০–২৫ জন ভিক্ষুর লম্বা লাইন দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। এরা সবাই বয়সে নবীন। ৬–৭ বছর থেকে ১৫–১৬ বছর হবে৷ বাড়ির কর্ত্রী হাতে একটা বিশাল গামলাভর্তি ভাত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর ভিক্ষুরা একে একে তাঁর হাত থেকে ভিক্ষা গ্রহণ করছেন। এদের শৃঙ্খলা দেখে মুগ্ধ হলাম। খুব সকালে ভিক্ষুরা বের হয় ভিক্ষার আশায়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে যা ভিক্ষা পায়, তা দিয়ে দিন চলে। পরদিন সকালে আবার বেরিয়ে পড়ে সেদিনকার ভিক্ষার আশায়। এই তো ভিক্ষুজীবন।

eiMZUKy.jpg


বাসস্ট্যান্ড দেখতে একদম অজপাড়াগাঁয়ের মতো

আমি হোটেলে ফিরে গিয়ে স্কুটি নিয়ে বের হলাম। কাল মান্দালে যাব। টিকিট করা দরকার, বাসস্ট্যান্ডের দিকে চললাম। যেকোনো দেশের বাসস্ট্যান্ড বা এয়ারপোর্ট আমার খুব পছন্দের। কত ধরনের মানুষের যে দেখা মেলে!

বাসস্ট্যান্ড দেখতে একদম অজপাড়াগাঁয়ের মতো, তবে খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। পাশে সারি সারি রেস্তোরাঁ। সেখানে এখন খুব একটা ভিড় নেই। একটা ফাঁকা রেস্তোরাঁর মধ্যে চেয়ারে বসে টেবিলে আয়না রেখে এক সুন্দরী মনোযোগ দিয়ে থানাকা মাখছে। আমাকে দেখে লজ্জা পেল। সে ইংরেজি জানে না৷ যত বলি, 'তুমি সুন্দর,' তা–ও লজ্জা ভাঙে না। বেশি ছবিও তোলা যায়নি। সেখানেই ব্রেকফাস্ট সারলাম, কিন্তু থানাকা সুন্দরী আর সামনে এল না।

বাইরে ততক্ষণে ফেরিওয়ালারা পসার জমিয়ে তুলেছে। সবাই নারী। কেউ সাইকেলে করে ভুট্টা এনেছে তো কেউ ঝুড়িতে করে বাদাম, চিপস বিক্রি করছে। প্রত্যেকের মুখে সুখ আর প্রশান্তির ছাপ, সবারই হাসিমুখ।

এখনো তেমন বেলা হয়নি। তাই স্কুটি নিয়ে চললাম এখানকার রাজপ্রাসাদ দেখতে। প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল প্রায় হাজার বছর আগে। তবে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আসল প্রাসাদ আর টিকে নেই। মূল প্রাসাদের মতোই কাঠের কারুশিল্প ও নকশা অনুসরণ করে হুবহু একই রকম প্রাসাদ, একই জায়গায় তৈরি করা হয়েছে। বাগানে প্যাগোডা, স্তূপ বা মঠে যতখানি চর্চা আছে, তেমন একটা আলোচনায় আসে না প্রাসাদটি।

d5vAqbP.jpg


ফেরিওয়ালারা সবাই নারী

যত দূর চোখ যায়, শুধু প্রাসাদপ্রাঙ্গণ। এর মাঝখানে সোনার খনি জ্বলজ্বল করছে, মানে বিশাল বিশাল কয়েকটা সোনা রঙের কাঠের প্রাসাদ গায়ে হিরে–জহরত জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এই শুকনা খটখটে প্রান্তরে যেন সোনার তরঙ্গ তরুণ বাতাসের পাখায় ভর করে ছুটে চলছে, জরির নকশা হয়ে ঘিরে রেখেছে, আঁকড়ে আছে মাটিকে। কাঠের প্রাসাদ হলেও জৌলুশে পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ যেকোনো প্রাসাদের মোহময়তার সমান।

মূল প্রাসাদটি দোতলা আর ছাদ আমাদের দেশের আটচালা টিনের চালের মতো, তাতে আবার তিনটে প্রধান চাল। উঁচু উঁচু থামের আড়ালে সূর্য বেশ হেসে গড়িয়ে পড়ছে, আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে প্রাসাদের দেয়াল, ছাদের সূক্ষ্মতম কারুকাজ। আসবাবও একেবারে সোনায় সোহাগা: হীরা, চুনি, পান্নায় মাখামাখি। যদিও আসল নয়, তবু চোখের আর মনের আশ মেটে।

dZskjZx.jpg


বাগান রাজপ্রাসাদ

দরজায় প্রহরী হয়ে যিনি আছেন, তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং স্বর্ণদেবতা। নাহলে এত সোনালি আভা আসে কোত্থেকে! সমস্ত প্রাসাদের কোনায় কোনায় শিল্প আর কাঠের ওপর খোদাই করা সূক্ষ্ম কারুকাজে খোদাই করে রচনা করা হয়েছে একসময়কার সোনালি অধ্যায়।

MQtyrvd.jpg


বাগান রাজপ্রাসাদ

প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে দেখি পিসো দাঁড়িয়ে। একটু ভাব করার চেষ্টা করলাম। বললাম, 'তুমি কি আজকের দিনের জন্য আমার গাইড হবে?'

হুট করে সে রাজিও হয়ে গেল। অপরিচিত, একেবারে নির্জন কয়েকটা স্তূপ আর প্যাগোডাও দেখাল। আমি পিসোকে পেছনে বসিয়ে আমার পঙ্খিরাজ ছোটাই আর পিসো কলকল করে বলে যায় বাগানের গল্প। একসময় আবদার করলাম ওর বাড়িতে যাওয়ার জন্য। ওরও বোধ হয় মেজাজ ভালো আছে, তাই রাজি হয়ে গেল। যে পথটা বাজারের দিকে যায়, সেদিকেই পিসোর ঘর। ঘরে মা, বাবা, বোন আছে।

এ পাড়ার বাড়িগুলো সবই কাঠের অথবা বাঁশের বেড়ার তৈরি আর ছনের বা টিনের চাল। আমাদের দেশেও একসময় এমনই ছিল। পিসোর ঘরটা কাঠের দেয়ালে টিনের চাল। ওর বাবা বাজারে সবজি বিক্রি করে। পিসোদের এখানে একটা স্কুল আছে, তবে পিসো এখন আর স্কুলে যায় না। দরিদ্র হলেও ওদের ঘরটা বেশ পরিষ্কার।
এখন এই দুপুরে ওর মাকে দেখলাম চার বছর বয়সী বোনকে খাওয়াচ্ছে।
এই পল্লি দেখে মনে হলো, এটাই আসল মিয়ানমার, ইয়াঙ্গুন বা অন্য শহরে যা দেখেছি, তা আসল নয়।

BLNE8Fa.jpg


বাগানে ইরাবতী নদী, ছবি: উইকিপিডিয়া

এরপর পিসোকে একটা প্যাগোডার সামনে নামিয়ে দিয়ে এসে বসলাম ইরাবতী নদীর তীরে। ইরাবতীকে দেখে একটা শান্ত আর লক্ষ্মী নদী ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। কী অবলীলায় বুকে করে নিচ্ছে নৌকা আর ইঞ্জিন বোটগুলোকে! এদিকটায় বেশ হাওয়াও দিচ্ছে। এই নদী, এই সরল আর সৎ মানুষ। এই দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত কারুশিল্প আর অগুনতি প্যাগোডা, মঠ সবকিছুরই একটা আলাদা ভালোলাগা আছে, ভালোবাসা আছে। বাগানের দরজা সব সময় খোলা না থাকলেও আমার মনের দরজা চিরকাল খোলা আছে বাগানের জন্য। দরজাটা খুলে যেকোনো সময় আমি চলে আসতে পারি এখানে, এই ইরাবতী নদীর তীরে।

* লেখক: ফাতিমা জাহান
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top