নারীদের খৎনা করা সুন্নাত। এটি যদি মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে করা হয়, তাহলে এতে খারাপ বা ক্ষতিকর কিছুই থাকে না। কিন্তু যদি খৎনা করতে গিয়ে গভীরভাবে কেটে ফেলা হয়, এতে নানাবিধ ক্ষতি হয়।
আমরা এমন কোনো হাদিস জানি না যেখানে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রী এবং কন্যাদেরকে খৎনা করার জন্য আদেশ করেছেন। তবে এই মর্মে বর্ণিত আছে যে, মদিনার এক নারী নারীদের খৎনা করাতো। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছিলেন যাতে সে সঠিকভাবে খৎনা করায়। আবু দাঊদ (৫২৭১), আল তাবারানির আল আওসাত এবং আল বায়হাক্বির আল শুয়া'ব গ্রন্থে আছে, উম্মে আতিয়্যাহ আল আনসারিয়্যাহ বর্ণনা করেন যে, মদিনায় একজন মহিলা খৎনা করাতো। নবী আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, "বেশি গভীর করে কাটতে যেও না, এটা মহিলাদের জন্য ভালো এবং তাদের স্বামীদের কাছে অধিক পছন্দনীয়।" শায়খ আলবানি হাদিসটিকে তাঁর সহীহ আবু দাঊদ গ্রন্থে সহীহ বলেছেন।
অন্য বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, "কিছু অংশ কাটো এবং অতিরিক্তি করো না।"
আরো কিছু দলীল-প্রমাণ থেকে নারীদের খৎনার সাধারণ অনুমোদনের ব্যাপারে জানা যায়। যেমন, বুখারি (৫৮৯১) এবং মুসলিমে (৫২৭) আবু হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "ফিতরাত হলো পাঁচটি কাজ অথবা পাঁচটি কাজ হলো ফিতরাতের অংশ। খৎনা করা, গোপনাঙ্গের চুল কামানো, গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা এবং বগলের চুল উঠানো।"
সহীহ মুসলিমে (৩৪৯) আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "যখন একজন পুরুষ চার অংশের মধ্যে বসে (তার স্ত্রীর দুই বাহু আর দুই পায়ের মাঝখানে) এবং দুইটি খৎনা-কৃত অংশ মিলিত হয় (অর্থাৎ, সহবাস), তখন গোসল ফরয হয়ে যায়।"
তিরমিযি (১০৯) ও অন্যান্য বর্ণনানুসারে, "যখন দুইটি খৎনা-কৃত অংশ মিলিত হয়............।"
ইমাম বুখারি একটি অধ্যায়ের শিরোনামে উক্ত শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছেন।
আল হাফিয ইবন হাযার (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) বলেন, "উপর্যুক্ত উপমা দিয়ে যা বুঝানো হয়েছে তা হলো, যখন পুরুষ এবং মহিলার খৎনা-কৃত অংশ মিলিত হয়।"
মহিলাদের খৎনা করা হয় মূত্রনালীর প্রবেশদ্বারের বাইরে থাকা চামড়ার একটি ছোট অংশ কাটার মাধ্যমে যা দেখতে অনেকটা মোরগের ঝুঁটির মতো। সুন্নাত হলো এর সম্পূর্ণ অংশ না কেটে কিছু অংশ কাটা। আল মায়সুয়া'হ আল ফিকহিয়্যাহ (১৯/২৮)
ইবন কুদামাহ (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) আল মুঘনিতে বলেন, "খৎনা করা পুরুষদের জন্য ফরয, আর মেয়েদের জন্য একটি সম্মান কিন্তু তাদের জন্য ফরয নয়।" এটাই অনেক আলেমের মত। ইমাম আহমাদ বলেন, "এটা পুরুষদের জন্য অধিক জরুরি তবে মহিলাদের জন্য এত জরুরি নয়।" (আল মুঘনি-১/৭০)।
মহিলাদের খৎনা করা হয় মূত্রনালির প্রবেশদ্বারের বাইরে থাকা ভগাঙ্কুরের একটি অংশ কাটার মাধ্যমে। সুন্নাত হলো এর সম্পূর্ণ অংশ না কেটে কিছু অংশ কাটা। (আল মায়সুয়া'হ আল ফিকিয়্যাহ-১৯/২৮)।
এ ব্যাপারে মহিলাদের মতামত নেওয়াই ভালো। যদি ভগাঙ্কুর বড় হয়, তাহলে এর কিছু অংশ কাটা যেতে পারে, অন্যথায় এটা না করলেও চলে। একেকজনের ভগাঙ্কুরের আকারে পার্থক্য থাকে এবং উষ্ণ জলবায়ু ও শীতল জলবায়ুর কারণেও পার্থক্য দেখা দিতে পারে।
কীভাবে খৎনা করতে হবে এই নিয়ে উম্মে আতিয়্যাহর যে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, তা আবু দাঊদের মতে যঈফ (দুর্বল)। তবে ইসলামে নারীদের খৎনার অনুমোদনের বিধান মূলত এই হাদীস থেকে গৃহীত হয়নি। বরং উপরোল্লেখিত বুখারি ও মুসলিম-এর সহীহ হাদিসগুলো থেকে এ রায় দেওয়া হয়েছে। তবে এর বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। তিন রকমের মত আছে-
(১) পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই এটা ফরয। এটাই শাফেঈ এবং হাম্বলি মাযহাবের মত। মালেকিদের মধ্যে আল ক্বাদি আবু বকর ইবন আল আরাবি (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) এই মতকে সমর্থন করেছেন।
ইমাম নববি (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) আল মাজমু (১/৩৬৭) গ্রন্থে বলেন, আমাদের মতে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই খৎনা করা ফরয। আল খাত্তাবির মতে এটাই অনেক সালাফের মত। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন আহমাদ, তিনিও এটাকে ফরয বলেছেন। এটাই সুপরিচিত সঠিক মত এবং ইমাম শাফেঈ হতে বর্ণিত, এবং অধিকাংশই বলেছেন, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য এটা ফরয। (দেখুন- ফাতহ আল-বারি ১০/৩৪০; কিশশাফ আল-ক্বিনা ১/৮০)
(২) পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই খৎনা করা সুন্নাত। এটা হানাফি ও মালেকিদের মত, এবং ইমাম আহমাদের এ বিষয়ে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবন আবেদীন আল হানাফি (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) তাঁর হাশিয়াহ (৬/৭৫১) গ্রন্থে বলেন, আল সিরাজ আল ওয়াহহাজ-এর কিতাবুৎ তাহারাহ-তে আছে, জেনে রাখো যে খৎনা করা আমাদের (হানাফিদের) মতে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই সুন্নাত। (দেখুন- মাওয়াহিব আল জালিল ৩/২৫৯)।
(৩) খৎনা করা পুরুষদের জন্য ফরয এবং মহিলাদের জন্য উত্তম ও মুস্তাহাব। এটা ইমাম আহমাদের তৃতীয় একটি মত এবং কিছু মালেকিও এই মতকে সমর্থন করেন, যেমন সাহনুন। আল মুয়াফাক্ব ইবন ক্বুদামাহও তাঁর আল মুঘনি গ্রন্থে এই মতকে সমর্থন করেছেন। (দেখুন- আল তাহমিদ ২১/৬০; আল মুঘনি ১/৬৩; ফতোয়া আল লাজনাহ আল দা'ইমাহ ৫/২২৩)।
খৎনা করা সুন্নাত, পাঁচটি ফিতরাতের মধ্যে একটি এবং তা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই। ব্যতিক্রম হচ্ছে, এটা পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক কিন্তু মহিলাদের জন্য সুন্নাত এবং উত্তম।
তাই এটা স্পষ্ট যে, খৎনা করার বিধান পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য এই বিষয়ে ইসলামের সকল ফকিহগণ একমত। কেউ একে মাকরুহ অথবা হারাম বলেননি।
আমাদের জন্য এতটুকু জানা যথেষ্ট যে খৎনা করার বিধান ইসলামে সাব্যস্ত। তবে অন্তরের প্রশান্তির জন্য নিচে কিছু গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করা হলো। আমরা (পেজ) এসকল গবেষণার অকাট্যতার দায়ভার নিচ্ছি না। কিন্তু মুসলিমদের পক্ষ থেকে আসা সাক্ষ্য হিসেবে এগুলোর নির্ভরযোগ্যতায় বিশ্বাস রাখছি।
মহিলাদের খৎনা করার বিধান এমনিই প্রযোজ্য হয়নি, এর পেছনেও প্রজ্ঞা রয়েছে এবং এটা অনেক সুফল বয়ে আনে। এরকম কিছু সুফলের কথা উল্লেখ করে ড হামিদ আল গাওয়াবি বলেন,
"খৎনাবিহীন মহিলাদের ক্ষেত্রে ল্যাবিয়া মাইনরার নিঃসরণ জমা হয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে, এবং তা এই অস্বস্তিকর গন্ধ বাড়াতে থাকে যা যোনি অথবা মূত্রনালীতে ইনফেকশান সৃষ্টি করতে পারে। খৎনা না করার কারণে আমি এরকম অনেক অসুস্থতা দেখেছি।
খৎনা ভগাঙ্কুরের অত্যধিক সংবেদনশীলতা হ্রাস করে। এই অধিক সংবেদনশীলতার ফলে উত্তেজিত অবস্থায় এটি তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে যেতে পারে, যা স্বামীর জন্য বিশেষ করে যৌনমিলনের সময় খুবই অস্বস্তিকর।
খৎনা করার আরেকটি সুবিধা হলো এটি ভগাঙ্কুরের উদ্দীপনায় বাধা দেয়। এই উদ্দীপনা এটাকে এত লম্বা করে দেয় যে, ব্যথার সৃষ্টি করে।
ভগাঙ্কুরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী খিঁচুনি হওয়া খৎনার দ্বারা প্রতিহত হয়।
খৎনা অত্যধিক যৌনাকাঙ্ক্ষা কমায়।
অনেকে দাবি করে যে মহিলাদের খৎনা কামহীনতা সৃষ্টি করে। ড গাওয়াবি তাদের মতামত খণ্ডন করে বলেন যে, খৎনা করা মহিলা ও খৎনাবিহীন মহিলার মধ্যে তুলনামূলক এমন কোনো ভালো পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এই দাবিটি করা হয় না।
কাম-অনাসক্তিতার অনেক কারণ রয়েছে। ফেরাউনের আমলের খৎনা পদ্ধতিতে তারা সম্পূর্ণ ভগাঙ্কুরই কেটে ফেলতো। এটিই কামহীনতা সৃষ্টি করে। কিন্তু এটা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশিত খৎনা পদ্ধতির সাথে সাংঘর্ষিক। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যথার্থই বলেছেন, "একেবারে কেটে ফেলো না।।" অথচ ওই সময়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান এই স্পর্শকাতর অঙ্গ ও এর স্নায়ু সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না।
(লিওয়া আল-ইসলাম ম্যাগাজিন, সংখ্যা ৮ ও ১০-এ প্রকাশিত "খিতানুল বানাত" আর্টিকেল থেকে সংগৃহীত)
সিত্তুল বানাত খালিদ নাম্নী একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ "খিতানুল-বানাত রু'য়াহ সিহহিয়্যাহ" (স্বাস্থ্য বিবেচনায় মহিলাদের খতনা) নামক আর্টিকেলে বলেন, আমাদের নিকট মহিলাদের খৎনা করা হলো সর্বোপরি ইসলামের প্রতি আনুগত্য, যা একে উৎসাহিত করে, ফিতরাতের অংশ ও সুন্নাত বলে আখ্যা দেয়। ইসলামের পরিধি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, এবং এতে যা আছে সবকিছুতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এমনকি স্বাস্থ্যের দিক দিয়েও। যদি এর কল্যাণ এখন না দেখা যায়, তাহলে তা ভবিষ্যতে আবিষ্কার হবে। এমনটিই ঘটেছে পুরুষদের খৎনার ব্যপারে- বিশ্ব এখন এর সুফল জানে এবং কয়েকটি বিরোধী গোষ্ঠী ছাড়া এটি সব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
তারপর তিনি মহিলাদের খৎনা করার কয়েকটি স্বাস্থ্য সুবিধা উল্লেখ করে বলেন,
এটা মহিলাদের মাত্রাতিরিক্ত যৌন-বাসনা হ্রাস করে।
অস্বস্তিকর গন্ধ দূর করে যা যৌনাঙ্গের অগ্র-ত্বকের ভেতরে দুর্গন্ধময় নিঃসরণের ফলে সৃষ্টি হয়।
মূত্র-ঘটিত রোগ সংক্রমণ হ্রাস করে।
প্রজনন প্রক্রিয়ায় রোগ সংক্রমণের ঘটনা হ্রাস করে।
আমরা এমন কোনো হাদিস জানি না যেখানে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রী এবং কন্যাদেরকে খৎনা করার জন্য আদেশ করেছেন। তবে এই মর্মে বর্ণিত আছে যে, মদিনার এক নারী নারীদের খৎনা করাতো। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছিলেন যাতে সে সঠিকভাবে খৎনা করায়। আবু দাঊদ (৫২৭১), আল তাবারানির আল আওসাত এবং আল বায়হাক্বির আল শুয়া'ব গ্রন্থে আছে, উম্মে আতিয়্যাহ আল আনসারিয়্যাহ বর্ণনা করেন যে, মদিনায় একজন মহিলা খৎনা করাতো। নবী আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, "বেশি গভীর করে কাটতে যেও না, এটা মহিলাদের জন্য ভালো এবং তাদের স্বামীদের কাছে অধিক পছন্দনীয়।" শায়খ আলবানি হাদিসটিকে তাঁর সহীহ আবু দাঊদ গ্রন্থে সহীহ বলেছেন।
অন্য বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, "কিছু অংশ কাটো এবং অতিরিক্তি করো না।"
আরো কিছু দলীল-প্রমাণ থেকে নারীদের খৎনার সাধারণ অনুমোদনের ব্যাপারে জানা যায়। যেমন, বুখারি (৫৮৯১) এবং মুসলিমে (৫২৭) আবু হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "ফিতরাত হলো পাঁচটি কাজ অথবা পাঁচটি কাজ হলো ফিতরাতের অংশ। খৎনা করা, গোপনাঙ্গের চুল কামানো, গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা এবং বগলের চুল উঠানো।"
সহীহ মুসলিমে (৩৪৯) আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "যখন একজন পুরুষ চার অংশের মধ্যে বসে (তার স্ত্রীর দুই বাহু আর দুই পায়ের মাঝখানে) এবং দুইটি খৎনা-কৃত অংশ মিলিত হয় (অর্থাৎ, সহবাস), তখন গোসল ফরয হয়ে যায়।"
তিরমিযি (১০৯) ও অন্যান্য বর্ণনানুসারে, "যখন দুইটি খৎনা-কৃত অংশ মিলিত হয়............।"
ইমাম বুখারি একটি অধ্যায়ের শিরোনামে উক্ত শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছেন।
আল হাফিয ইবন হাযার (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) বলেন, "উপর্যুক্ত উপমা দিয়ে যা বুঝানো হয়েছে তা হলো, যখন পুরুষ এবং মহিলার খৎনা-কৃত অংশ মিলিত হয়।"
মহিলাদের খৎনা করা হয় মূত্রনালীর প্রবেশদ্বারের বাইরে থাকা চামড়ার একটি ছোট অংশ কাটার মাধ্যমে যা দেখতে অনেকটা মোরগের ঝুঁটির মতো। সুন্নাত হলো এর সম্পূর্ণ অংশ না কেটে কিছু অংশ কাটা। আল মায়সুয়া'হ আল ফিকহিয়্যাহ (১৯/২৮)
ইবন কুদামাহ (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) আল মুঘনিতে বলেন, "খৎনা করা পুরুষদের জন্য ফরয, আর মেয়েদের জন্য একটি সম্মান কিন্তু তাদের জন্য ফরয নয়।" এটাই অনেক আলেমের মত। ইমাম আহমাদ বলেন, "এটা পুরুষদের জন্য অধিক জরুরি তবে মহিলাদের জন্য এত জরুরি নয়।" (আল মুঘনি-১/৭০)।
মহিলাদের খৎনা করা হয় মূত্রনালির প্রবেশদ্বারের বাইরে থাকা ভগাঙ্কুরের একটি অংশ কাটার মাধ্যমে। সুন্নাত হলো এর সম্পূর্ণ অংশ না কেটে কিছু অংশ কাটা। (আল মায়সুয়া'হ আল ফিকিয়্যাহ-১৯/২৮)।
এ ব্যাপারে মহিলাদের মতামত নেওয়াই ভালো। যদি ভগাঙ্কুর বড় হয়, তাহলে এর কিছু অংশ কাটা যেতে পারে, অন্যথায় এটা না করলেও চলে। একেকজনের ভগাঙ্কুরের আকারে পার্থক্য থাকে এবং উষ্ণ জলবায়ু ও শীতল জলবায়ুর কারণেও পার্থক্য দেখা দিতে পারে।
কীভাবে খৎনা করতে হবে এই নিয়ে উম্মে আতিয়্যাহর যে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, তা আবু দাঊদের মতে যঈফ (দুর্বল)। তবে ইসলামে নারীদের খৎনার অনুমোদনের বিধান মূলত এই হাদীস থেকে গৃহীত হয়নি। বরং উপরোল্লেখিত বুখারি ও মুসলিম-এর সহীহ হাদিসগুলো থেকে এ রায় দেওয়া হয়েছে। তবে এর বাধ্যবাধকতার ব্যাপারে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। তিন রকমের মত আছে-
(১) পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই এটা ফরয। এটাই শাফেঈ এবং হাম্বলি মাযহাবের মত। মালেকিদের মধ্যে আল ক্বাদি আবু বকর ইবন আল আরাবি (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) এই মতকে সমর্থন করেছেন।
ইমাম নববি (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) আল মাজমু (১/৩৬৭) গ্রন্থে বলেন, আমাদের মতে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই খৎনা করা ফরয। আল খাত্তাবির মতে এটাই অনেক সালাফের মত। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন আহমাদ, তিনিও এটাকে ফরয বলেছেন। এটাই সুপরিচিত সঠিক মত এবং ইমাম শাফেঈ হতে বর্ণিত, এবং অধিকাংশই বলেছেন, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য এটা ফরয। (দেখুন- ফাতহ আল-বারি ১০/৩৪০; কিশশাফ আল-ক্বিনা ১/৮০)
(২) পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই খৎনা করা সুন্নাত। এটা হানাফি ও মালেকিদের মত, এবং ইমাম আহমাদের এ বিষয়ে একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবন আবেদীন আল হানাফি (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) তাঁর হাশিয়াহ (৬/৭৫১) গ্রন্থে বলেন, আল সিরাজ আল ওয়াহহাজ-এর কিতাবুৎ তাহারাহ-তে আছে, জেনে রাখো যে খৎনা করা আমাদের (হানাফিদের) মতে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই সুন্নাত। (দেখুন- মাওয়াহিব আল জালিল ৩/২৫৯)।
(৩) খৎনা করা পুরুষদের জন্য ফরয এবং মহিলাদের জন্য উত্তম ও মুস্তাহাব। এটা ইমাম আহমাদের তৃতীয় একটি মত এবং কিছু মালেকিও এই মতকে সমর্থন করেন, যেমন সাহনুন। আল মুয়াফাক্ব ইবন ক্বুদামাহও তাঁর আল মুঘনি গ্রন্থে এই মতকে সমর্থন করেছেন। (দেখুন- আল তাহমিদ ২১/৬০; আল মুঘনি ১/৬৩; ফতোয়া আল লাজনাহ আল দা'ইমাহ ৫/২২৩)।
খৎনা করা সুন্নাত, পাঁচটি ফিতরাতের মধ্যে একটি এবং তা পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই। ব্যতিক্রম হচ্ছে, এটা পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক কিন্তু মহিলাদের জন্য সুন্নাত এবং উত্তম।
তাই এটা স্পষ্ট যে, খৎনা করার বিধান পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য এই বিষয়ে ইসলামের সকল ফকিহগণ একমত। কেউ একে মাকরুহ অথবা হারাম বলেননি।
আমাদের জন্য এতটুকু জানা যথেষ্ট যে খৎনা করার বিধান ইসলামে সাব্যস্ত। তবে অন্তরের প্রশান্তির জন্য নিচে কিছু গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করা হলো। আমরা (পেজ) এসকল গবেষণার অকাট্যতার দায়ভার নিচ্ছি না। কিন্তু মুসলিমদের পক্ষ থেকে আসা সাক্ষ্য হিসেবে এগুলোর নির্ভরযোগ্যতায় বিশ্বাস রাখছি।
মহিলাদের খৎনা করার বিধান এমনিই প্রযোজ্য হয়নি, এর পেছনেও প্রজ্ঞা রয়েছে এবং এটা অনেক সুফল বয়ে আনে। এরকম কিছু সুফলের কথা উল্লেখ করে ড হামিদ আল গাওয়াবি বলেন,
"খৎনাবিহীন মহিলাদের ক্ষেত্রে ল্যাবিয়া মাইনরার নিঃসরণ জমা হয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে, এবং তা এই অস্বস্তিকর গন্ধ বাড়াতে থাকে যা যোনি অথবা মূত্রনালীতে ইনফেকশান সৃষ্টি করতে পারে। খৎনা না করার কারণে আমি এরকম অনেক অসুস্থতা দেখেছি।
খৎনা ভগাঙ্কুরের অত্যধিক সংবেদনশীলতা হ্রাস করে। এই অধিক সংবেদনশীলতার ফলে উত্তেজিত অবস্থায় এটি তিন সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে যেতে পারে, যা স্বামীর জন্য বিশেষ করে যৌনমিলনের সময় খুবই অস্বস্তিকর।
খৎনা করার আরেকটি সুবিধা হলো এটি ভগাঙ্কুরের উদ্দীপনায় বাধা দেয়। এই উদ্দীপনা এটাকে এত লম্বা করে দেয় যে, ব্যথার সৃষ্টি করে।
ভগাঙ্কুরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী খিঁচুনি হওয়া খৎনার দ্বারা প্রতিহত হয়।
খৎনা অত্যধিক যৌনাকাঙ্ক্ষা কমায়।
অনেকে দাবি করে যে মহিলাদের খৎনা কামহীনতা সৃষ্টি করে। ড গাওয়াবি তাদের মতামত খণ্ডন করে বলেন যে, খৎনা করা মহিলা ও খৎনাবিহীন মহিলার মধ্যে তুলনামূলক এমন কোনো ভালো পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এই দাবিটি করা হয় না।
কাম-অনাসক্তিতার অনেক কারণ রয়েছে। ফেরাউনের আমলের খৎনা পদ্ধতিতে তারা সম্পূর্ণ ভগাঙ্কুরই কেটে ফেলতো। এটিই কামহীনতা সৃষ্টি করে। কিন্তু এটা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশিত খৎনা পদ্ধতির সাথে সাংঘর্ষিক। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যথার্থই বলেছেন, "একেবারে কেটে ফেলো না।।" অথচ ওই সময়ের চিকিৎসাবিজ্ঞান এই স্পর্শকাতর অঙ্গ ও এর স্নায়ু সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না।
(লিওয়া আল-ইসলাম ম্যাগাজিন, সংখ্যা ৮ ও ১০-এ প্রকাশিত "খিতানুল বানাত" আর্টিকেল থেকে সংগৃহীত)
সিত্তুল বানাত খালিদ নাম্নী একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ "খিতানুল-বানাত রু'য়াহ সিহহিয়্যাহ" (স্বাস্থ্য বিবেচনায় মহিলাদের খতনা) নামক আর্টিকেলে বলেন, আমাদের নিকট মহিলাদের খৎনা করা হলো সর্বোপরি ইসলামের প্রতি আনুগত্য, যা একে উৎসাহিত করে, ফিতরাতের অংশ ও সুন্নাত বলে আখ্যা দেয়। ইসলামের পরিধি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, এবং এতে যা আছে সবকিছুতেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এমনকি স্বাস্থ্যের দিক দিয়েও। যদি এর কল্যাণ এখন না দেখা যায়, তাহলে তা ভবিষ্যতে আবিষ্কার হবে। এমনটিই ঘটেছে পুরুষদের খৎনার ব্যপারে- বিশ্ব এখন এর সুফল জানে এবং কয়েকটি বিরোধী গোষ্ঠী ছাড়া এটি সব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
তারপর তিনি মহিলাদের খৎনা করার কয়েকটি স্বাস্থ্য সুবিধা উল্লেখ করে বলেন,
এটা মহিলাদের মাত্রাতিরিক্ত যৌন-বাসনা হ্রাস করে।
অস্বস্তিকর গন্ধ দূর করে যা যৌনাঙ্গের অগ্র-ত্বকের ভেতরে দুর্গন্ধময় নিঃসরণের ফলে সৃষ্টি হয়।
মূত্র-ঘটিত রোগ সংক্রমণ হ্রাস করে।
প্রজনন প্রক্রিয়ায় রোগ সংক্রমণের ঘটনা হ্রাস করে।