ক্যালিগুলা পাগলাটে রোমান সম্রাট। অদ্ভুতভাবে পাগলামি এবং হিংস্রতার জন্য ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। পাগলামির কিছু উদাহরণ নিম্নে দিলাম:
- ঘোড়ার দৌড়ে তিনি একবার বাজি ধরেছিলেন। তার দল হেরে যায়। বিপক্ষ বিজয়ী দলের যারা আনন্দ করেছিল তাদের সবাইকে তিনি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
- অনেক ইতিহাসবিদ ধারণা করেন, কিশোর বয়সে তিনি তার বোন দ্রুসিলার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন।
- বন্দিদের অত্যাচারের দৃশ্য দেখে আনন্দ লাভ করতেন। নিরীহ জনতাকে ধরে ক্ষুধার্ত সিংহের খাঁচায় ভরে দিতেন।
- ক্যালিগুলা নতুন ফরমান জারি করে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সকলের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এদের মধ্যে কিশোর গেমেলাসও ছিলেন। পাগলামির চূড়ান্ত করে তিনি তাদের পিতামাতার চোখের সামনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার হুকুম দেন। জল্লাদখানা অসহায় পিতামাতার কান্নায় ভারী হয়ে উঠলো। রোমের সেই ভারী বাতাসকে আরো ভারী করতে ক্যালিগুলা ঘোষণা করলেন, তিনি আর মানুষ নন, একজন দেবতায় রুপান্তরিত হয়েছেন।
- তার জন্মদিন ভুলে যাওয়ার অপরাধে দুই উপদেষ্টাকে কতল করেছিলেন তিনি।
- রাজস্ব ঘাটতি মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত নেন তিনি রাজপতিতালয় খোলার। সেখানে ১৪ বছর বয়সী তরুণী থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা পর্যন্ত সব রাজকীয় নারীদের বাধ্যতামূলক পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতে হবে দুই সপ্তাহের জন্য। যৌন বিকারগ্রস্ত জনতা লুফে নিলো সম্রাটের এই প্রস্তাব। অনেক নারী সম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। কিন্তু এখানেও লাভ হলো সম্রাটের। তিনি আত্মহত্যার অপরাধে সেই পরিবারের পুরো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে দেন। শূন্য রাজকোষাগার আবার ভরে উঠে অর্থের ঝনঝনানিতে।
- ক্যালিগুলা ছিলেন ভয়ানক যৌন বিকারগ্রস্থ।অবাধ যৌন সংসর্গের ফলে তিনি নিউরোসিফিলিস নামে এক জটিল রোগে আক্রান্ত হন যা তার মৃত্যু পর্যন্ত টিকে ছিলো।এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ভয়াবহ রকমের যৌন বিকৃতি দেখা দেয়। যা ক্যালিগুলার ক্ষেত্রেও ঘটেছিল। অসংখ্য অভিজাত শ্রেণীর সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকের স্ত্রী কন্যাদের সাথে তাঁদের স্বামীদের সম্মুখেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন তিনি।
- ঘোড়াকে তিনি এতটাই ভালোবাসতেন যে, একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একে রোমের সিনেটরের মর্যাদায় উত্তীর্ণ করবেন। কেউ কেউ ধারণা করেন তিনি ঘোড়ার সঙ্গে সঙ্গম করতেন।
- ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকার জন্য তিনি জার্মান ও ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। তবে তিনি কিন্তু যুদ্ধ আর করলেন না। তিনি সেনাবাহিনীকে আদেশ দিলেন যেন সাগরের নুড়িপাথর ঝিনুক নলখাগড়া সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়। তিনি দেশে ফিরলেন সেই পাথর, ঝিনুকের সংগ্রহ নিয়ে। সেই ঝিনুক বোঝাই পেটরা দেখে জনতা ভাবলো সোনা-রূপা বোঝাই করে সম্রাট রোমে ফিরেছেন। তারা জয়ধ্বনি দিয়ে সম্রাটকে বরণ করে নিলো।
- ৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি একটি খেলার অনুষ্ঠানে একজন দেহরক্ষী প্রথম ক্যালিগুলাকে ছুরিকাঘাত করে বসে। এরপর মুহূর্তের মধ্যে কয়েকজন প্রিটোরিয়ান রক্ষী ক্যালিগুলাকে ঘিরে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। ইতিহাসবিদদের মতে, মোট ৩০ বার তাকে ছুরিকাঘাত করার মাধ্যমে হত্যা করা হয়। ক্যালিগুলার নাম এবং বংশ চিরতরে রোমের মাটি থেকে মিশিয়ে দিতে তার স্ত্রী এবং সন্তানদেরও হত্যা করা হয়।