মানুষ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে পরিবার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এমনকি কাজের সূত্রে বিদেশেও বসবাস করতে হয় অনেককে। ধীরে ধীরে কর্মব্যস্ততা মানুষকে নানাভাবে আঁকড়ে ধরে। সময়ের অভাবে নিয়মিত দেখা করা বা কথা বলা হয়ে ওঠে না সবার সঙ্গে। কিন্তু পরিবার বলে কথা, যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন বা যত দূরেই থাকেন না কেন, তাদের জন্য কিছুটা সময় বের করতেই হবে। হতে হবে একটু আন্তরিক ও উদ্যোগী।
প্ল্যান করে নিয়মিত খোঁজখবর নিতে হবে সবার। কারণ, পরিবারের প্রতি আন্তরিকতাই আপনাকে দেবে মানসিক প্রশান্তি। শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষ স্মৃতি রোমন্থন করতে ভালোবাসে। বিশেষ করে ছোটবেলার দিনগুলোয় বেশি ফিরে যেতে চায় সবাই। পারিবারিক আড্ডাগুলোতে ভাইবোনের সঙ্গে কাটানো অতীত সময় নিয়েই বেশি আলাপচারিতা হয়। কারণ সেই মুহূর্তগুলো চিরন্তন, যা চোখের সামনে ভেসে উঠবে বারবার। সে স্মৃতি যত দুষ্টুমিরই হোক না কেন, তা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। সুতরাং পরিবারের সঙ্গে যত বেশি আন্তরিক থাকবেন, চিরন্তন সেই মুহূর্তগুলোও আপনার পাশে থাকবে।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই মূলত বাড়ি থেকে দূরে সরতে থাকে অনেকে। এরপর কর্মজীবন। একই বিষয় ঘটে ভাই বা বোনদের ক্ষেত্রেও। পড়াশোনা বা কাজের সূত্রে একে একে সবাইকে। হয়তো কোনো দূরের দেশ বা শহরে নোঙর করতে হয়। তাই হয়তো দেখা হয় বছরে একবার বা তিন, চার বছরে একবার দেখা হয়। আবার একই শহরে থেকেও হয়তো রোজ রোজ দেখা–সাক্ষাতের সময়টুকু পাওয়া যায় না।
দূরে থাকলে ফোনেও খোঁজ নেয়া য়ায়
ব্যস্ত জীবনের এই ব্যস্ত রুটিনের চাপে কখনো কখনো ব্যক্তিগত সম্পর্কের বুনন আলগা হতে থাকে। ভালোবাসার, স্নেহের, মমতার টান থাকলেও তার বহিঃপ্রকাশ নেমে যায় শূন্যের কোঠায়। এমনটা একেবারেই কাম্য নয়। সময় থাকতে ঝালিয়ে নেওয়া উচিত সম্পর্কগুলো। নিছক কাজের চাপ বা অজুহাতে বা দূরত্বের কারণে সম্পর্কের এই অমূল্য বন্ধনগুলোকে তো আর আলগা হতে দেওয়া যায় না। সম্পর্কে ছেদ পড়লে অতীত স্মৃতিগুলোও আর মধুর থাকে না। অপর দিকে এখন পৃথিবীজুড়েই চলছে করোনা মহামারি, যা মানুষকে অনেকটাই গৃহবন্দী করে ফেলেছ।
আত্মীয়–পরিজনের সঙ্গে দেখা–সাক্ষাৎও অনেক কমে গিয়েছে। তাই দূরত্ব, ব্যস্ততা বা মহামারি যা–ই থাক, সব ভুলে সম্পর্কের প্রতি আন্তরিক হন। উৎসব ও বিশেষ দিনগুলোতে আড্ডা দেওয়া না গেলেও ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ভুলবেন না। অনেকে মেসেজেই কাজ সেরে ফেলেতে চান। কিন্তু ডিজিটাল এই সময়ে ফোন বা গ্যাজেটেও আড্ডা দেওয়া সম্ভব। সে সুযোটাই বা ছাড়বেন কেন। কখন কে খোঁজখবর নেবে সে অপেক্ষায় না থেকে নিজ আন্তরিকতায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
দিন দিন পরিচিত মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকে, তেমনই সম্পর্কের পরিধিও বাড়তে থাকে। অফিস, সংসার, সন্তান, কলিগ নিয়ে ব্যস্ততা এতই বেশি থাকে ভাইবোন বা অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার সময় হয় না।
উভয় পক্ষের জন্যই এটি সত্যি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। সপ্তাহের অন্তত একটি দিন এক ঘণ্টা সময় তাদের জন্য খরচ করতে কার্পণ্য করবেন না। শুধু প্ল্যান করলেই হবে না, তা কার্যকর করতে হবে। নিজে আন্তরিক হলে অন্যরাও আপনার প্রতি আন্তরিক হবে। যারা একই শহরে আছে, তাদের নিয়ে ছুটির দিনে একসঙ্গে লাঞ্চ বা ডিনারের আয়োজন করতে পারলে তো কথাই নেই। আয়োজন অনেক বড় হতে হবে তা নয়, শুধু আন্তরিকতা আর ভালোবাসা থাকলেই হবে। কিছুটা সময় একসঙ্গে থাকুন, আড্ডা দিন, প্রাণ খুলে কথা বলুন আর হাসুন। জীবনে সুন্দর মুহূর্তের সংখ্যা বাড়বে। এতে মানসিকভাবে অপনি আরও দৃঢ় হয়ে উঠবেন।