What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাগানের বাগানে: পর্ব ৩ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
থানাকা না কেনা, ভিক্ষুর দাহ দেখতে মন না টানা, সূর্যাস্ত দেখার জন্য ছুটে চলা, নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়—এসবেই একটা দিন পার। উপাদেয় রাতের আহার সেরে ঘুম। অপেক্ষা ভোরের।

2H6ozw0.jpg


'থানাকা' মাখেন না, এমন কোনো বার্মিজ নারী-পুরুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। থানাকাগাছের বাকল গুঁড়া করে পেস্ট বানিয়ে দুই গালে মেখে থাকেন সবাই। কেউ কেউ আবার নানান নকশাও আঁকেন থানাকা দিয়ে। আমি এ দেশে আসার আগে ভেবেছিলাম, এঁরা বোধ হয় চন্দনের পেস্ট মাখেন মুখে, চন্দনের মতোই ঘিয়ে রঙের দেখতে। এ চন্দন নয়, থানাকা। থানাকার নিজস্ব একটা সুগন্ধ থাকে। সাধারণত প্রসাধনী, রূপচর্চা বা সানস্ক্রিন হিসেবে থানাকা মুখে মাখা হয়। এক দোকানের সামনে দাঁড়ালাম, আমিই বেশ থানাকা মেখে সাদা হয়ে গেলাম। নিজের জন্য রূপচর্চার জিনিস কেনা মানে তা চিরদিনের মতো বাক্সবন্দী করে রেখে দেওয়া। তাই ক্ষ্যান্ত দিলাম থানাকা থেকে।

hsFM9pQ.jpg


থানাকা মাখছেন এক তরুণী

বাজারের শৌখিন জিনিসপত্র ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় সবই পাওয়া যায়, একধারে মাছ, সবজির বাজার। আমাকে এমন মহা উল্লাসে ঘুরে বেড়াতে দেখে দু–একজন ভেবেই বসলেন, আমি স্থানীয় বা ইয়াঙ্গুনবাসী। ছোট চোখ, লম্বায় খাটো হয়ে আমার সুবিধাই হলো দেখছি।

শুধু ওল্ড বাগান নয়, নতুন শহরেও উপাসনালয়ের কমতি নেই। অবশ্য একে শহর বলা চলে না, দেখতে গ্রামের মতোই অজস্র বাঁশঝাড় আর কয়েকটা শিমুলগাছও দেখলাম। একটি প্যাগোডার সামনে দেখি, ভিড় আর ভিড়ের মাঝখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমি ভাবলাম, আগুন লেগেছে, কিন্তু কেউ নেভাচ্ছে না কেন! স্কুটি এক পাশে রেখে কাছে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, একজন ভিক্ষুর দেহান্ত হয়েছে আর তাঁকে এখানে দাহ করা হচ্ছে। মহিলাদের কেউ কেউ দেখি কাঁদছেন। আমি জীবনে এই প্রথম কোনো ভিক্ষুর দাহ করা দেখলাম। খুব মনোগ্রাহী লাগল না। চোখের সামনে একটা দেহ পুড়ছে, দেখতে অস্বস্তি হচ্ছিল।
সরে এলাম।

3vEdU5x.jpg


দূর থেকে দেখা যায় মন্দিরগুলো

এখন প্রায় বিকেল হতে চলল। স্কুটি ঘুরিয়ে দু–একজনকে জিজ্ঞেস করেই পথের হদিস মিলল। ওল্ড বাগানের একটাই মূল সড়ক, পিচঢালা। এর ডানে–বাঁয়ে লাল মাটির পথ চলে গিয়েছে। আর মূল টেম্পলগুলো দূর থেকেই চেনা যায়। প্রতিটি টেম্পল পিরামিড আকারের হলেও স্থাপত্যশৈলী আলাদা বলে আলাদা করে চেনা যায়।
আমি এসে পৌঁছেছি ধাম্মাইয়াংগি টেম্পলে।

বৌদ্ধ ধর্মচর্চার জন্য এ মন্দির বা প্যাগোডাটি ১১৬৯ সালে নির্মাণ করেন রাজা নারাথু। উপাসনালয়টি আকারে বাগানের অন্য উপাসনালয়গুলো থেকে বড়। পিতা আলায়ুংসিথুকে হত্যা করে ক্ষমতায় বসার পর রাজা নারাথু অনুশোচনায় ভুগতে থাকেন। পাপমোচন করার জন্য তিনি এ মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি পিরামিড আকারের, বাগানের অন্যান্য মন্দিরের মতোই দেখতে। আসলে অন্যান্য মন্দির ধাম্মাইয়াংগি মন্দিরের অনুসরণে নির্মাণ করা হয়েছে। বার্মিজ পুরাণে বলা হয়ে থাকে যে রাজা নারাথু সিংহলী দ্বারা আক্রমণের কারণে মন্দিরটির কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। কাজ পরে অন্য রাজা শেষ করেন। আজ অবধি ধাম্মাইয়াংগি টেম্পল বাগানের সবচেয়ে বড় টেম্পল হয়ে রয়ে গেছে এবং এত ভূমিকম্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগেও উপাসনালয়টির কোনো ক্ষতি হয়নি।

1e0edID.jpg


ধাম্মাইয়াংগি টেম্পল, ছবি: উইকিপিডিয়া

ভেতরে প্রবেশমুখে একটি তোরণ। অন্যান্য উপাসনালয়ের তোরণের চেয়ে আলাদা এবং অনন্যসাধারণ। তোরণ ভেদ করে ভেতরের প্রশস্থ আঙিনায় পশরা বসিয়েছেন হস্তশিল্পীরা। এখানেও ল্যাকার ওয়ার্ক, কাঠ ও পিতলের ছোট ছোট মূর্তি, মুখোশ, স্যান্ডপেইন্টিং, পাপেট সবই পাওয়া যাচ্ছে; যা বাজারে দেখিনি, এমন কিছু ডেকোরেশন পিস এখানে বেশ গাছের ডালে ডালে ঝুলে আছে। এখানেই প্রথমবার পিসোর সঙ্গে আমার দেখা।

মূল মন্দিরের ভেতরে বুদ্ধের চারটি মূর্তি আসন গ্রহণ করে আছে চার দিকের দেয়ালে চারমুখী হয়ে। এক মূর্তি থেকে অন্য মূর্তির দিকে যেতে হলে লম্বা প্যাসেজ পার হয়ে যেতে হয়। মূর্তিগুলো টিলোমিনলো টেম্পলের মতো সোনায় সোহাগা নয়, মানে তাম্রনির্মিত নয়, সিমেন্টের তৈরি মূর্তি, খয়েরি বসনে আবৃত।

3n9LPd6.jpg


সাধারণ ভিক্ষুদের পোশাকের রং এখানে খয়েরি

সাধারণ ভিক্ষুদের পোশাকের রং এখানে খয়েরি। এখন অবধি কোনো উপাসনালয়ে একজনের বেশি ভিক্ষুকে দেখিনি। অথচ এখানে নাকি কয়েক হাজার ভিক্ষুর বাস। বাকিরা কি ভোজবাজির মতো মিলিয়ে গেলেন! অবশ্য বাগানে প্রথম দিনেই এত আবিষ্কারের নেশা মাথায় চাপা ঠিক নয়। বাকি দুদিন তাহলে সদ্য কাটা ধানখেতের শুকনা চেহারা মোবারক দেখে কাটাতে হবে।

ধীরে ধীরে বিকেল নামছে। বাইরের গরম হাওয়া আস্তে আস্তে পর্দা নামিয়ে শান্তির পাপড়ি বোলাচ্ছে গায়ে। আমি একজন ভ্রমণার্থীর কাছে শুনে এসেছি যে এখান থেকে সূর্যাস্ত খুব সুন্দর দেখা যায়। টেম্পলের ওপরের দিকে যাওয়ার জন্য টেম্পলের গায়েই সিঁড়ি আছে। তবে বেশি ওপরে যাওয়ার নিয়ম নেই, পুরোনো উপাসনালয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা আছে। প্রতিটি উপাসনালয়ে তাই একই নিয়ম করে দেওয়া আছে, তিনতলার ওপরে চড়া নিষেধ। তবে মাঝেমধ্যে কিছু বাঁদর ট্যুরিস্ট তিন তলার ওপরে চলে যেতে চান। আর এই শূন্য বিরান শুষ্ক ধরিত্রীর ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে একঝাঁক স্থানীয় লোক রে রে করে তেড়ে আসেন। কীভাবে যে এঁরা টের পান, কে জানে। আমার পাশে ততক্ষণে নেদারল্যান্ডস থেকে আসা একটি ছেলে এসে বসেছেন, তাড়া খাবার গল্পটা তিনিই বললেন। গতকাল একই জায়গায় চারতলার সিঁড়ি চাপতেই তাঁকে নিশানা করা হয়েছিল।

দু–একজন করে ট্যুরিস্ট এসে ভিড় বাড়াচ্ছেন সূর্যাস্ত দেখার জন্য। তাঁদের মধ্যে প্রবীণ কেউ নেই। বেশির ভাগই ইউরোপের ভ্রমণার্থী।

বাতাস একটু একটু করে রাগ হারাচ্ছে। সেই গনগনে রাগী চেহারাটা আর নেই। বেশ একটু লাজুক লাজুক ভাব এসে গেছে। কিন্তু সারা দিন যা ভুগিয়েছে, তাতে লজ্জা পেলেও আমার তো এখন বকে দিতেই ইচ্ছা করছে।

xe3isL7.jpg


বাগানে সূর্যাস্ত

এরই ফাঁকে সুয্যিমামাও বেশ একটা লালচে কমলা জামা গায়ে পুরো দিগন্তে রং ছড়িয়ে বসে আছেন। এখন বাগানকেও অতটা রুক্ষ, শুষ্ক দেখাচ্ছে না। একটু মায়াবীও লাগছে, রহস্যময়। সূর্য মিলিয়ে গেলেও দর্শনার্থীর দল কিন্তু নেমে যায়নি। এরা বেশ নিজেদের মধ্যে মেতে আছে। আমিও দুজন বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছি এখানেই। ইসরায়েল থেকে আসা ইয়েল আর সিঙ্গাপুর থেকে আসা রিভিয়ান। ইসরায়েলের ছেলেমেয়ে আগে অন্য দেশে দেখলেও আলাপ হলো এই প্রথম। চমৎকার একজন মানুষ। আমাকে বাগান সম্পর্কে অনেক টিপস দিলেন। কথা বলতে বলতে নিচে নামলাম। ইয়েল নিজেও বাইক ভাড়া করেছেন। আমি বেরিয়েই যাচ্ছিলাম, ইয়েল তখন তাঁর স্কুটি বের করছেন। খুব অবাক হয়ে দেখলাম, তাঁর ডান হাত কবজি থেকে প্রায় নেই। বাঁ হাত দিয়ে স্কুটি চালাবেন! আবার একা ট্রাভেল করছেন। ইয়েলের সাহস ও ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানতে একটুও খারাপ লাগছিল না।

সকাল থেকে ঘুরছি। এবার হোটেলে ফিরতে হবে। কিন্তু কোথায় যে হোটেল, তা–ই মনে নেই। চাবিও রেখে এসেছি। মোবাইলে ই–মেইল দেখার উপায় নেই, কারণ সিম কার্ড নেই। এসব অবশ্য নতুন কিছু নয়। যে শহরে আমি থাকি, সেখানে বাড়ি ভাড়া করে বাড়ির পথ ভুলে যাই আর এ তো হোটেল।

যে পথ দিয়ে এসেছি, সে পথ ধরে চললাম। পথটা চেনা, তাই তিন কিলোমিটারের মধ্যেই পেয়ে গেলাম হোটেলটা।

s4Xtls6.jpg


পুরনো মন্দিরের সামনে লেখক

রাতের খাবার খেলাম হোটেলের রেস্টুরেন্টে। এখানকার রাইস নুডলস উইথ কোকোনাট সস। সঙ্গে চিংড়ি। খুবই সুস্বাদু রান্না। কোথাও খাবার না পেলে এ খাবার খেয়ে কয়েক দিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে।

এক ঘুমে রাত কাবার করতে হবে। কারণ, সূর্যোদয় দেখতে হলে ঘুম থেকে উঠতে হবে ভোরে, কাক ডাকারও আগে।

* লেখক: ফাতিমা জাহান
 

Users who are viewing this thread

Back
Top